রমজান মাস। ৩ সেপ্টেম্বর, সাল ২০০৮। বিএসএমএমইউ (পিজি) হাসপাতালকে ঘিরে রেখেছিল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এবং জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ঔৎসুক্য জনতার আবেগ। তারেক রহমান জামিনে মুক্ত হওয়ার পর হাসপাতালের বারান্দার পাশে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো ছোট একটি কক্ষ থেকে উঁচু জানালা দিয়ে একটি হাতের সামান্য ইশারার মুহূর্তটুকুর জন্য প্রতীক্ষায় ছিল অগণিত নেতা-কর্মী। সেদিন ছোট কক্ষটিতে উপস্থিত থেকে যে অনুভূতি পেয়েছিলাম তা আজো অম্লান হয়ে আছে। সোমবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮, ১০ রমজান সারা দিন পেরিয়ে সন্ধ্যায় ইফতার ও নামাজের পর নেতা-কর্মীরা লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ নেতাকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য সেদিন লন্ডন যাচ্ছিলেন। তিনি নেতা-কর্মীদের আবেগ-অনুভূতি গ্রহণ করে কেবলই দোয়া চাইলেন। তারেক রহমান শহীদ জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরি। অমিত সম্ভাবনাময় এক তরুণ নেতা হিসেবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী দল গোছানোর কাজে আত্দনিয়োগ করেছিলেন। তার এসব কর্মকাণ্ড দেখে সাধারণ নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হয় এবং ক্রমাগত রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচির সফলতায় সমাজের সর্বস্তরে তার গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে মজবুত করে তোলে। একদিকে সরকারের রাষ্ট্রীয় সব সফল কর্মসূচি, অন্যদিকে তারেক রহমানের দলীয় সফল কর্মসূচি_ প্রতিপক্ষের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তে ঈর্ষাকাতর হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এসব ষড়যন্ত্র ব্যাপকভাবে দেশে-বিদেশে প্রচার-প্রপাগান্ডার সহযোগী হয়ে আবিভর্ূত হয়। অপধারার কিছু বুদ্ধিজীবী, সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মী নানা কিসসা-কাহিনীর মধ্য দিয়ে তিলকে তাল বানিয়ে প্রচার করতে থাকে।
সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর, ২০০৬ এ রাজধানীর পল্টনসহ কয়েকটি এলাকায় আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার তাণ্ডবলীলায় প্রায় ২১টি তাজা প্রাণ হারায়। দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এমন প্রপাগান্ডা শুরু হয়। দেশ বাঁচানোর কথা বলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জরুরি আইন জারির মধ্য দিয়ে ১১ জানুয়ারি, ২০০৭ ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে জেনারেল মইন উ আহমেদের তত্ত্বাবধানে এবং ফখরুদ্দীনের আত্দীয় ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত হয় অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শুরু হয় গভীর ষড়যন্ত্র। দেশের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ দুই নেত্রীসহ অসংখ্যক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। সরকারের ভেতরের একটি অংশ গোপন অভিলাষে আরও একটি কার্যক্রম শুরু করে, যার নাম দেওয়া হয় 'সংস্কার'। সরকারের ভুলনীতির ফলে 'সংস্কার' কার্যক্রম দেশ ও জনগণের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ভেতরে ভাঙনের সূত্রপাত তৈরি হয়। সরকারের ছত্রছায়ায় দলের অতীতের সুবিধাভোগী অংশটি বিপ্লবী হয়ে ওঠে।
জরুরি আইনের মধ্যে রাজনৈতিক দলের মূল স্রোতধারা সরকারের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। দলীয় প্রধানসহ শীর্ষ নেতারা কারাগারে। দিশাহারার মধ্যেও প্রায় দুই বছর দেশনেত্রী ও তারেক রহমানের প্রতি সাধারণ নেতা-কর্মীরা অফুরন্ত আবেগ-অনুভূতি শ্রদ্ধাভরে প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদিনের আবেগ-অনুভূতি পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশ পায় ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ এর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। অর্থাৎ সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জামিনে মুক্ত হয়ে জনসমুদ্রে আসার পর। আর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বর্তমানে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আগামী দিনের জাতীয়তাবাদের প্রতীক তারেক রহমান বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদায়লগ্নে পিজি হাসপাতাল ও বিমানবন্দর এলাকায় মানুষের চোখের পানিতে একাকার। হাজার হাজার মানুষের চোখের পানি, লাখ লাখ মানুষের আবেগ-অনুভূতির শেষ পরিণত শুভ হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং তারেক রহমানের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ২৪ জুলাই বুধবার যুক্তরাজ্যে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলপূর্ব এক আলোচনাসভায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নয়নের রূপরেখা উপস্থাপন করেন। যে রূপরেখায় তিনি বলেছেন, 'অতীতমুখিতা নয়, দৃষ্টি দিতে হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দিকে'। ঠিক একইভাবে ২১ জুলাই জাতীয় সংসদ মেম্বার হলে (এলডি হল) মহানগর বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে নতুন ধারার, আমরা যদি নির্বাচিত হতে পারি তবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সৎ ও যোগ্যদের নিয়ে দেশ পরিচালিত করব।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশদরদী তারেক রহমানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসীর প্রত্যাশা, আজ জাতির দুর্দিনে তারা সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। তবেই ১৬ কোটি মানুষের সেদিনের আবেগ-অনুভূতির শেষ পরিণতি শুভ হবে।
লেখক : সাংস্কৃতিক কর্মী।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।