পাবনায় সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগি্নসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জহুরুল ইসলাম নামের এক বিএনপি কর্মী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে। সে বনগ্রাম মধ্যপাড়ার আমিন উদ্দিন ড্রাইভারের ছেলে।
মঙ্গলবার পাবনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লায়লা শারমীনের আদালতে জহুরুল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সে জানায়, হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বাবলু সাহার ছেলে রাজিব সাহা যে স্ট্যাটাস দিয়েছিল সে সম্পর্কিত একটি প্রিন্ট কপি ওই এলাকার খোকন নামের এক যুবলীগ সমর্থক তার মালিকানাধীন রংধনু ফটোস্ট্যাটের দোকানে এনে প্রথম ফটোকপি করে। পরে ওই কপিটি আস্তে আস্তে ওই এলাকার সবার হাতে পেঁৗছে যায়। বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা এ হামলায় নেতৃত্ব দেয় বলেও জহুরুল স্বীকার করে। তবে এটি কোনো সর্বদলীয় হামলা ছিল না বলে সে আদালতকে জানায়।
এদিকে অধিক তদন্তের জন্য গতকাল পুলিশের দায়ের করা দুটি এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাবলু সাহার একটি মামলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গতকাল বিকালে গোয়েন্দা পুলিশ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বেয়াই বনগ্রাম মিয়াপাড়ার আলহাজ মোসলেম উদ্দিন খানের ছেলে তসলিম উদ্দিন খান (৩৫), আতাইকুলা থানার বনগ্রাম ৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি আবদুর রহমান খাজা এবং যুবলীগ কর্মী দুলালকে গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে মোট ১৫ জন গ্রেফতার হলো। বাবলু সাহার দায়ের করা মামলায় যাদের নামীয় আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অন্যরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন হিন্দু মহিলা জানান। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ঘটনার আগের দিন ১ নভেম্বর শুক্রবার সকালে রসুলপুর, মিয়াপুর, বহালবাড়িয়া, পূর্বপাড়া, পাইকপাড়া, বনগ্রাম চইরাপাড়া গ্রামের জাকির হোসেন, দেলোয়ার হোসেন মানিক, খোকন, ফজলু-১, পুবপাড়ার ফজলু মুন্সী, মান্নানের নেতৃত্বে যুবলীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থক ১০-১২ যুবক একত্রিত হয়ে কথিত ফেসবুকের কপি রংধনু ফটোস্ট্যাটের দোকান থেকে প্রিন্ট করে বাবলু সাহার দোকানে গিয়ে তার ওপর চড়াও হয় এবং তার ছেলে রাজিব ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করেছে বলে অভিযোগ করে। একই সঙ্গে তারা রাজিবকে তাদের কাছে তুলে দেওয়ার দাবি জানায়। এ সময় তারা পরের দিন শনিবার দুপুর ১২টায় বনগ্রাম বাজারে এ ঘটনার প্রতিবাদে হাটবারের দিন সমাবেশ আহ্বান করে। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এলাকার শত শত মানুষ পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় সুযোগসন্ধানী সন্ত্রাসীরা বাবলু সাহাসহ সুকুমার মাস্টার, বাঁশি রাজবংশী, সুরজিত সাহা, অনিল সরকার, সূভাষ সাহা, উত্তম কুমার, শিখা রানী সরকার, গোপাল সাহা, আনন্দ মোহন, কালা সাহা, নরেশ বিশ্বাস, রাজকুমার বিশ্বাস, হরিপদ সাহাসহ প্রায় ৩৫টি বাড়িতে এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটতরাজ করে। দুর্বৃত্তরা বাবলু সাহার বাড়ি ও মন্দিরে অগি্নসংযোগ করে। পাবনার পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, এদিকে অধিক তদন্তের জন্য পুলিশের দায়ের করা দুটি এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাবলু সাহার দায়ের করা একটি মামলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সুজানগর উপজেলার পেড়াডাঙ্গা বাজার থেকে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে মোট ১৫ জন গ্রেফতার হলো।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।