কারবালার ইতিহাসে কেয়ামত পর্যন্ত আগত মুসলমানদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা। ইতিহাসের এই রক্তাক্ত অধ্যায় একেক ঐতিহাসিক একেকভাবে উপস্থাপন করেছেন। দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতায় ঘটনাপ্রবাহ বিভিন্ন রঙে রঙিন হয়েছে। আমাদের উচিত, রক্তস্নাত এই দাস্তান থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে জানা এবং তা মানা। ইসলামী ইতিহাসের এই বেদনাবিধুর পাতায় মুসলিম জাতির জন্য রয়েছে সঠিক পথের দিশা। বিশেষভাবে যারা মুসলিম উম্মাহকে নেতৃত্ব দেবেন তাদের জন্য কারবালা প্রান্তরে প্রিয় নবীজীর দৌহিত্রের স্বপ্ন জীবন চলার পথে ত্যাগ ও আত্দত্যাগের আলোর মশাল হয়ে থাকবে। ৬১ হিজরির ২ মহররম। হজরত হোসাইন (রা) ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এবং সঙ্গে আগত অন্য সঙ্গীরা কুফাবাসীদের প্রতারণা ও ওয়াদা ভঙ্গের বিষয়টি পুরোপুরি বুঝতে পারলেন। তারা সেখানে হুর ইবনে ইয়াজিদের সহস্রাধিক সেনাবাহিনী দ্বারা বেষ্টিত হলেন। ইমাম হোসাইন (রা.) তখন কারবালা প্রান্তরে তাঁবু স্থাপন করলেন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলেন। রাতে ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখলেন, তাঁর নানা ভাইয়া ও উভয় জগতের সম্রাট, বিশ্ব নবী (সা.) কারবালা প্রান্তরে উপস্থিত! বহু বছর পর প্রিয় নানা ভাইয়াকে দেখে আদরের হোসাইন যেন চমকে উঠলেন। স্নেহের হোসাইনকে তিনি ডেকে বললেন, 'বৎস! ধৈর্য ধারণ কর। আমার সঙ্গে তোমাদের মহামিলনের শুভলগ্ন এগিয়ে এসেছে। আর বেশি দেরি নেই।' প্রিয় পাঠক! সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ মানব রাসূলে আরাবি (সা.) স্নেহধন্য হোসাইনকে শাহাদতের আগাম সংবাদ দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আদরের পরশ বুলিয়ে গেলেন। জান্নাতের প্রত্যাশায় ব্যাকুল হোসাইনও তা সানন্দে গ্রহণ করলেন। বেহেশতের যুবকদের সরদার ইমাম হোসাইন ঘুম থেকে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠলেন। বোন জয়নব ভাইয়ার আনন্দ-বেদনার এই নতুন অনুভূতি দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে ভাইয়া? তুমি এমন করছ কেন? শাহাদতের নেশায় বিভোর হোসাইন স্বপ্নের কথা বোনকে জানালেন। বললেন, 'বোন! আমরা শাহাদতের সাগর পাড়ি দিয়ে শীঘ্রই রাসূল (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হব। এ অভিশপ্ত পৃথিবীর অভিশাপ শৃঙ্খল ছিন্ন করে আখেরাতের পবিত্র রাজ্যে মহামিলনের আনন্দে পরিতৃপ্ত হব। আজ নানা ভাইয়া আমায় তাই বলে গেছেন।' ভাইয়ার মুখে ঈমানদীপ্ত এ কথাগুলো শুনে বোনের হৃদয়েও আত্দত্যাগের কোমল অনুভূতি জাগ্রত হলো। তাই আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের এই সদস্য বলে উঠলেন, 'আমরাও তাই করব ভাইয়া! নিয়তির অমোঘ নিয়মকে মেনে নিয়ে সব দুঃখ-বেদনা সানন্দে বরণ করে নেব।' অবশেষে ১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে ফোরাত নদীর তীরে আল্লাহর দরবারে নিজের জীবন উপহার দিলেন। মহান আল্লাহর কাছে শাহাদতের নজরানা পেশ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রতি যুগে জালিম অপশক্তির সামনে সত্য ও ন্যায়ের পথিকদের জন্য করণীয় বিষয় সম্পর্কে পথ বাতলে দিলেন। আজকের এই অশান্ত পৃথিবীতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে সঠিক পথের দিশা যেন দান করেন। তিনি যেন আমাদের তাঁর দেওয়া জান ও মাল তাঁর পথে ব্যয় করার সৌভাগ্য নসিব করেন। আমীন।
লেখক : খতিব, বাইতুর রহমত জামে মসজিদ, গাজীপুরা, টঙ্গী।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।