আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাইট হো, জীভস--এক



রাইট হো, জীভস মূলঃ পি,জি,ওডহাউস রুপান্তরঃ শরীফুল হাসান এক “জীভস,” আমি বললাম, “খোলাখুলি একটা কথা বলি?” “অবশ্যই, স্যার। ” “শুনে তুমি কষ্ট পেতে পারো। ” “পাবো না, স্যার। ” “ঠিক আছে, বলছি। ’ পাঠকগন, বিভ্রান্ত হবেন না, আমি আসলে শুরুটা ঠিকমতো করতে পারছি না।

অন্য দিকে চলে গেছি। জানিনা আপনাদেরও আমার মত অভিজ্ঞতা হয় কিনা, কিন্তু গল্প শুরু করাটা আমার কাছে খুব ঝামেলার একটা ব্যাপার মনে হয়। শুরুটাই যদি খারাপ হয় তাহলে পুরোটাই বৃথা। আপনি যদি বোকার মতো শুরুতেই অনেক সময় নেন, আয়েশ করে পরিবেশ তৈরি করতে যান, পরিস্থিতি আপনার হাতের বাইরে চলে যাবে, শ্রোতারা আপনার কথায় কান দেবেনা । আবার যদি বেশি তাড়াহুড়ো করেন তাহলে ঘটবে উল্টো কাহিনি, শ্রোতারা শুধু ভ্রু কোঁচকাবে আর এমন ভাব করবে যে আপনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা।

যে কথাগুলো দিয়ে শুরু করছিলাম তা আসলে গুসি ফিঙ্ক নটল, মেডেলিন বাসেট, আমার কাজিন এঞ্জেলা, আমার ডাহলিয়া ফুফু, আঙ্কেল টমাস, তরুন টাপি গ্লসপ আর রাধুঁনি আনাতোলকে নিয়ে আমার বর্তমান কাহিনির একটা অংশ মাত্র। শুরু করার আগে আমার একটু পিছু ফেরা উচিত, ঘটনা পুরো বিচার করলে দেখা যায়, এর সূত্রপাত কানসে ভ্রমন থেকে। যদি কানেসে না যেতাম তাহলে মিস বাসেটের সাথে দেখা হতো না, কেনা হতো না সাদা কোট, এঞ্জেলা ঐ হাঙ্গরের মুখোমুখি হতো না আর ডাহলিয়া ফুফু ব্যাকারেট খেলায় হেরে যেতেন না। সত্যি, কানেস হচ্ছে সব নষ্টের গোঁড়া। ঠিক আছে, সব খুলে বলছি আমি।

কানেস গিয়েছিলাম জীভসকে ছাড়াই, সে যেতে চায়নি কারন জুনের শুরুতেই ছিল এসকট রাউন্ড বলে একটা উৎসব। আমার সাথে ছিল ডাহলিয়া ফুফু, তার মেয়ে এঞ্জেলা, টাপি গ্লসপ, এখানে বলে রাখা ভালো, টাপি এঞ্জেলার বাগদত্ত, ছেলেটা যোগ দিয়েছিল একেবারে শেষ মুহুর্তে। ডাহলিয়া ফুফুর স্বামী, টমাস আঙ্কেল, বাড়িতেই থেকে গেলেন কেন না দক্ষিন ফ্রান্স তিনি একবারেই সহ্য করতে পারেন না। তো আপনারা একটা লে-আউট পেয়ে গেলেন- ডাহলিয়া ফুফু, এঞ্জেলা আর আমি জুনের শুরুতে কানেসের উদ্দেশে রওনা দিলাম। আমরা কানেসে ছিলাম প্রায় দুই মাস, সময়টা সবার ভালোই কাটছিল শুধু ব্যাকারেট খেলায় হেরে ডাহলিয়া ফুফু তার জামা খুইয়ছেলিনে আর এঞ্জেলা মুখোমুখি হয়েছিল ভয়ংকর এক হাঙ্গরের।

জুলাইএর পঁচিশ তারিখে আমি, ডাহলিয়া ফুফু আর এঞ্জেলাকে নিয়ে লন্ডন ফিরে এলাম, জুলাইএর ছাব্বিশ তারিখ সন্ধ্যায় আমরা যে যার পথ ধরলাম, ডাহলিয়া ফুফু তার উরসেস্টারশায়ারে ফিরে গেলেন। সেখানে টাপি গ্লসপের সাথে ওদের দেখা হওয়ার কথা, আমি সোজা ফিরে এলাম আমার ফ্ল্যাটে, ব্যাগপত্র রেখে একটু পরিষ্কার হয়ে চলে গেলাম ড্রোনসে রাতের খাবারের জন্য। ফ্ল্যাটে ফিরে গোসল শেষে কাপড়-চোপড় পড়ে তৈরি হচ্ছিলাম, তখন আচমকাই আমাদের কথার মাঝখানে জীভস গুসি ফিঙ্ক নটলের নাম তুললো। যতটা সম্ভব আমাদের কথাবার্তা হয়েছিল নিম্নরুপঃ “জীভস, ফিরে এলাম আপন ঠিকানায়, কি বলো?” “জী, স্যার। ” “মানে বলতে চাচ্ছি, ঘরে ফিরলাম।

” “একদম ঠিক, স্যার। " “মনে হচ্ছে অনেক দিন পর ফিরলাম। ” “জী, স্যার। ” “সময়টা ভালো কেটেছে এসকটে তোমার, তাই না?” “আপনার সাথে একমত, স্যার। ” “কিছু জিতেছো?” “অধমের জন্য পযাপ্ত, স্যার।

” “জীভস, আর কি খবর বলো? কেউ কি আমার খোঁজ করেছিল অথবা কোন ফোন?” “মিঃ ফিঙ্ক নটল, স্যার, উনি প্রায় প্রতিদিনই আসতেন। ” আমি তাকালাম, ভুল শুনছি কি না বোঝার চেষ্টা করছিলাম। ‘মিঃ ফিঙ্ক-নটল?’ ‘জী, স্যার। ’ ‘তুমি নিশ্চয়ই বলছোনা যে মিঃ ফিঙ্ক-নটল?’ ‘জী, স্যার। ’ ‘কিন্তু মিঃ ফিঙ্ক-নটলতো লন্ডনে নেই?’ ‘আছেন,স্যার।

’ ‘হুম, মাথা ঘুরছে জীভস। মনে হচ্ছে আমি উড়ে যাচ্ছি। ’ আপনাদের বলছি কেন উড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হচ্ছে, জীভসের কথাগুলো আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। এই ফিঙ্ক-নটল হচ্ছে এমন এক চীজ যে লন্ডন সহ্য করতে পারেনা তবু এর সাথে আপনার জীবনে চলার পথে নানাভাবে দেখা হবেই। শ্যাঁওলাঢাকা লিঙ্কনশায়ারের এক অজ পাঁড়াগায়ে সে বছরের পর বছর পড়ে থাকে, এমন কি ইটন আর হ্যারোর ম্যাচ দেখতেও সে লন্ডন আসেনা ।

একবার আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার হাতে কি অনেক কাজ যার জন্য লন্ডনে আসার সময় পাওনা, সে বলল, ব্যাপারটা তা না, ব্যাপার হচ্ছে ছোট গুইসাপ, বাগানের পুকুরে সারাদনি বসে বসে গুইসাপের বাচ্চাদের কাজকারবার দেখতে দেখতে তার সময় চলে যায়। আমি কল্পনা করতে পারছিলাম না এমন কি ঘটল যা তাকে এই মহান শহরে টেনে এনেছে। গুইসাপের বাচ্চার সরবরাহ কম না হওয়া পযন্ত সে কখনই ঐ গ্রাম ছাড়বেনা এটা আমি বাজি ধরতে রাজি ছিলাম। ‘তুমি নিশ্চিত?’ ‘জী, স্যার। ’ ‘নামটা ঠিকমতো শুনেছো তো? ফিঙ্ক-নটল?’ ‘জী, স্যার।

’ ‘ভালো, খুব আশ্চয্যজনক ব্যাপার। গত পাঁচ বছর সে একবারও লন্ডন আসে নি। সবসময় বলতো এখানে তার দম বন্ধ লাগে। এতোদনি পযন্ত সে আঠার মতো গ্রামে আটকে ছিল, গুইসাপবেষ্টিত হয়ে। ’ ‘স্যার?’ ‘গুইসাপ আর ওদের বাচ্চারা, জীভস, মিঃ ফিঙ্ক-নটলের প্রান।

তুমি নিশ্চয় পানির গুইসাপের নাম শুনেছো। ঐযে একধরনের প্রানী যারা পুকুরে বড়ো হয়। ’ ‘ওহ, স্যার, সালামানডার পরিবারের মোলগে গোত্রের জলজ সদস্য। ’ ‘একেবারে ঠিক, গুসি ওদের প্রায় দাসের মতো। স্কুলেও সে ওদের সাথে নিয়ে যেত’।

‘আমার ধারনা অনেক বাচ্চাই এটা করে, স্যার। ’ ‘মনে আছে, সে ঐ গুইসাপরে বাচ্চাদরে ওর পড়ার ঘরে রাখতো, কাচরে একটা চৌবাচ্চা বানিয়ে নিয়েছিল। পুরো ব্যাপারটাই ছিল বিদ্ঘুটে। আমরা গুসির এই ব্যাপারটাকে খুব একটা পাত্তা দিইনি। এখন দেখা যাচ্ছে জিনিসটা অনেকদুর গড়িয়েছে।

’ ‘ঠিক বলেছেন স্যার। ’ ‘একদম ঠিক জীভস, এটা ওর মাথায় চেপে বসেছে। গুইসাপেরা ওকে দখল করে নিয়েছে, সে এসেছিল মানুষ হয়ে কিন্তু ওর জীবনটা শেষ হচ্ছে ঐ আজব প্রানীদের পেছনে। আমার ধারনা, সে ওদের কাছে নিজেকে আত্মসমর্পন করেছে। ’ ‘তাই মনে হয় স্যার।

’ ‘সত্যি কথা জীভস, গত পাঁচ বছরে কোন শরতে সে লিঙ্কনশায়ারের ঐ গুহা থেকে বের হয়নি, পুরোটা সময় ওর কাজ ছলি এক দিন পর পর সেই কাঁচের চৌবাচ্চায় পরিষ্কার পানি ঢালা। তাই তুমি যখন বললে সে হঠাৎ দেখা দিয়েছে আমি অবাক না হয়ে পারিনি। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছিনা। এখনও মনে হচ্ছে কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। যে ঘুঘুটা আমার খোঁজে এখানে এসেছিল আমার মতে সে অন্য প্রজাতির ফিঙ্ক-নটল।

আমি যে বস্তুটাকে চিনি সে শিঙ্গের চশমা পড়ে আর ওর মুখখানা দেখতে মাছের মতো। এই বিষয়গুলো কি তোমার তথ্যের সাথে মেলে?’ ‘যে ভদ্রলোক এখানে এসেছিলেন উনি শিঙ্গের তৈরি চশমা পড়েছিলেন, স্যার। ’ ‘আর তাকে অনেকটা পাথরের টুকরোর মতো দেখাচ্ছিল?’ ‘আপনার এই উদাহরনটা অনেকখানি মিলে যায়, স্যার। ’ ‘তাহলে সে অবশ্যই গুসি, কিন্তু এমন কি ঘটল যে সে লন্ডনে চলে এলো?’ ‘আমি ঘটনাটা একটু ব্যাখ্যা করতে পারি, স্যার। মিঃ ফিঙ্ক-নটল আমাকে এই শহরে আসার উদ্দেশ্যটা বলেছেন।

উনি এসেছেন কেননা ঐ তরুনীও লন্ডনে আছনে। ’ ‘তরুনী?’ ‘জী, স্যার। ’ ‘তুমি নিশ্চয়ই বলতে চাচ্ছনা যে সে প্রেমে পড়েছে?’ ‘জী, স্যার। ’ ‘আচ্ছা, আমি পপাত ধরনীতল হলাম, বুঝলে জীভস’। আসলেই তাই, কৌতুক কৌতুকই, কিন্তু এর একটা সীমা আছে।

এখন আমি এই আজব ঘটনার অন্যান্য দিকগুলোও বিচার করছি। ধরে নিলাম সে দুনিয়ার সব ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে চলে গেছে এবং প্রেমে পড়েছে, কিন্তু আমার ফ্ল্যাটে ওর বারবার হানা দেয়ার কারনটা কি? এইসব সময় একজন বন্ধুর প্রয়োজন পড়তেই পারে কিন্তু আমাকেই বেছে নেয়ার কোন কারন তো দেখতে পাচ্ছিনা। এমন নয় যে আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম না, একসময় আমাদের মধ্যে প্রায়ই দেখাশোনা হতো, কিন্তু গত দুই বছর ওর কাছ থেকে একটা পোষ্টকার্ডও পাইনি আমি। আমি জীভসকে সব বললাম। ‘আমার কাছে ওর আসাটা একটু অদ্ভুত, কিন্তু সে এসেছে, অবশ্বিাসরে কোন অবকাশ নেই এখানে।

ওর নিশ্চয়ই খুব খারাপ লেগেছে যখন আমাকে পায়নি। ’ ‘মোটেও না, স্যার। মিঃ ফিঙ্ক-নটল তো আপনার কাছে আসেন নি। ’ ‘ঠিকমতো বলো জীভস, তুমি এতক্ষন আমাকে তাই বলছিলে। ’ ‘উনি আমার সাথে দেখা করার জন্যই এসেছিলেন,স্যার।

’ ‘তোমার সাথে? কিন্তু আমি তো জানি তোমাদের আগে কখনো দেখা হয়নি। ’ ‘উনি এখানে না আসা পযন্ত আমার সেই সৌভাগ্য হয়নি স্যার, মনে হয় উনার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মিঃ সিপারলী আমার কথা উনাকে বলেছেন যে আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারি। ’ রহস্য পরিষ্কার হলো। সব বুঝতে পারলাম। আমার বলতে দ্বিধা নেই গত কয়কেবছরে পরামর্শক হিসেবে জীভস বেশ নাম কামিয়েছে, আমার পরিচিত মহলের কেউ কোন গাড্ডায় পড়লে নির্দ্বিধায় জীভসের কাছে তা চালান করে দেয়।

জীভস তখন ক কে উদ্ধার করে। ক একসময় খ কে পাঠায়, যখন সে খ এর সমস্যা সমাধান করে, খ পাঠায় গ কে আর ক্রমান্বয়ে একজন আরকেজনকে পাঠাতেই থাকে। আর এভাবেই জীভসের পরামর্শ দেয়া বাড়ছেই। বুড়ো সিপ্পি এলিজাবেথ মুনের সাথে জড়ানোর জন্য জীভসের প্রচেষ্টায় মুগ্ধ। কাজেই এটা খুবি স্বাভাবিক যে সে গুসিকেও জীভসের কথা বলবে।

‘ওহ, তো তুমি ওর জন্য কাজ করছো?’ ‘জী,স্যার। ’ ‘হমম, এখন বুঝতে পারছি। তো গুসির সমস্যা কোথায়?’ ‘আজব মিল বলতে পারেন স্যার, মিঃ সিপারলীকে যেমন সাহায্য করতে হয়েছিল এখনেও প্রায় এক কাহিনী। সন্দেহ নেই মিঃ সিপারলীর সেই ঝামেলাটা আপনার মনে আছে, স্যার। উনি মিস মুনের মারাত্মক অনুরক্ত ছিলেন, এমনকি উনার কথা বলাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল’।

আমি মাথা নাড়লাম। ‘সিপারলী কেসটা আমার মনে আছে। তুমি বলছো গুসিও ঠিক একই ম্যানহোলে পড়েছে’। ‘প্রতি বার বিভিন্নভাবে সে বিয়ের প্রস্তাব তৈরি করে কিন্তু শেষ পযর্ন্ত তার সাহস হয়না’। ‘তারপরও ঐ তরুনীকে সে তার স্ত্রী হিসেবে পেতে চায়, তাই তো?’ ‘অক্ষরে অক্ষরে, স্যার।

’ মজা পাচ্ছি। ‘এটা আসলে অবধারিতই ছিল। প্রকৃতির এই খেলায় এই ছোঁড়াও ঘায়েল হবে এটা কখনো চিন্তা করিনি। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে এই পথটা তার জন্য একটু কঠিন’। ‘জী, স্যার।

’ ‘ওর জীবনের দিকে তাকিয়ে দেখো। ’ ‘জী, স্যার। ’ ‘আমি নিশ্চিত সে বছরকে বছর কোন মেয়ের সাথে কথা বলেনি। এটা আমাদের জন্য একটা শিক্ষা যে কখনই নিজেকে অজ পাড়াগাঁয়ে বন্দি করে রাখতে নেই এবং ঘন্টার পর ঘন্টা কাঁচের চৌবাচ্চার দিকে তাকিয়ে থাকা ঠিক নয়। এগুলো করলে উদ্ধত পুরুষ হিসেবে কখনই প্রতিষ্ঠা পাওয়া যাবেনা।

আমাদের সামনে দুটো পথ খোলা আছে, আমরা অজ পাড়াগাঁয়ে থেকে সারাদিন কাঁচের চৌবাচ্চার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি অথবা যৌবন উপভোগ করতে পারি। কিন্তু দুটোই একসাথে করা যাবেনা’। ‘না স্যার। ’ গুসির সাথে শেষ কবে দেখা হয়েছিল মনে পড়লো, প্রায় দুই বছর আগে। সেবার যাত্রাপথে ওর বাড়িতে বিরতি নিয়েছিলাম, দুপুরের খাবারের সময় কিছু সবুজ ধরনের পা ওলা বস্তু দিয়ে সে আমাকে মজা দেয়ার চেষ্টা করেছিল।

ওদেরকে সে আদর করছিল ঠিক মায়ের মতো আর শেষ পযর্ন্ত ওদের এক সদস্য আমার সালাদের বাটিতে পড়ে গিয়েছিল। সেই ছবিটা এখনও চোখে ভাসছে। এই ছোঁড়ার জন্য আমার মায়া হচ্ছে। ওর জন্য ঐ তরুনীকে জয় করা খুবি কঠিন হয়ে যাবে যদি সেই মেয়েটা এখনকার আধুনিক মেয়েদের মতো হয়। আমার মনে হচ্ছে মেয়েটা সরেকমই হবে।

‘জীভস, ঠিক করে বলতো’, আমি বললাম, জানি খারাপটাই শুনব, “গুসির ওই মেয়েটা কেমন?” ‘আমার সাথে এখনো দেখা হয়নি, স্যার। মিঃ ফিঙ্ক-নটলের মতে উনি খুব আকর্ষনীয়া। ’ ‘মেয়েটাকে সে পছন্দ করে, তাই না?’ ‘জী, স্যার। ’ ‘সে কি মেয়েটার নাম বলেছে তোমাকে? আমি হয়তো চিনতেও পারি। ’ ‘মিস বাসেট, স্যার, মিস মেডেলিন বাসেট।

’ ‘কি?’ ‘জী, স্যার। ’ আমি ধাঁধায় পড়ে গেলাম। ‘জীভস! চমৎকার, দুনিয়াটা আসলে অনেক ছোট, তাই না, কি?’ ‘উনি আপনার পরিচিত, স্যার?’ ‘খুব ভালো করে চিনি, খবরটা পেয়ে একটু নিশ্চিন্ত হলাম, জীভস, আমার মনে হচ্ছে এখন কাজ করার মতো একটা পরিবেশের সৃস্টি হয়েছে। ’ ‘আসলেই স্যার?’ ‘অবশ্যই। স্বীকার করছি এই খবরটা জানার আগ পযন্ত আমি বেচারা গুসির যেকোন মেয়েকে যেকোন অবস্থায় আয়ত্তে আনার ক্ষমতা সম্পরকে সন্দিহান ছিলাম।

তুমিও নিশ্চয় আমার সাথে একমত হবে। ’ ‘মানতেই হচ্ছে আপনার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে, স্যার। ’ ‘ক্লিওপেট্রা ওকে কখনই পছন্দ করতো না’। ‘সম্ভবত না, স্যার। ’ ‘ওকে আসলে অন্য কেউই পছন্দ করতো না।

’ ‘জী, স্যার। ’ ‘কিন্তু যখন তুমি বললে তার আগ্রহ মিস বাসেটকে নিয়ে, তখন একটু আশার আলো দেখা যাচ্ছে। হয়তো মেডেলিন বাসেটের সাথে ওর মিলেও যেতে পারে। ’ এই বাসেট, কানেসে আমাদের সহযাত্রী ছিল, এঞ্জেলা আর বাসেটের মধ্যে এক অস্বাভাবিক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল যা সচরাচর দেখা যায়না। আমাদের বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে।

যদিও আমার গাম্ভীয্যর্পূন মুর্হূতগুলোতে আমি কখনই কোন নারী প্রজাতির দিকে এক পাও অগ্রসর হইনা। সবচেয়ে কষ্টদায়ক ও বিরক্তিকর ব্যাপার হচ্ছে যতবারই তার সাথে দেখা হয়েছে ততবারই আমি কথা বলার মতো ভাষা খুঁজে পাইনি। আপনারা জানেন মেয়েদের সাথে মাঝে মাঝেই এমন হয়। তারা যেন আমাদের ভেতর থেকে সাহস কেড়ে নেয়। মানে তাদের ব্যাক্তিত্ত্বই এমন যা গলার স্বরযন্ত্র অবশ করে দেয় এবং মস্তিস্ককে ফুলকপিতে পরিনত করে।

আমার এবং মিস বাসেটের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছিল, ওর উপস্থিতিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাট্রাম উষ্টার টাইয়ের গোড়া নিয়ে ব্যস্ত, নয়তো পা ঝাড়া দিচ্ছে, এদিক সেদিক তাকাচ্ছে, যা ছিল একেবারে বেকুবের মতো কাজ। বলে নিই, তার সৌন্দয্য আমাকে বেকুব বানায়নি, সে ছিল সুন্দর চোখের ব্লন্ড চুলের এক মিষ্টি মেয়ে, তাকে দেখে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয় না। আসলে আমার এই সমস্যার কারন ছিল তার সপ্রতিভ কথাবার্তা আর তার মানসিক আচরন। মানসকি আচরন বলতে বলতে চাইছি না সে কবিতা লেখে , কিন্তু তার কথোপকথন আসলে আমাকে সেটাই বলতে বাধ্য করে। আমার আর তার মানসিক সামঞ্জস্য একেবারেই নেই, কিন্তু গুসির সাথে সমীকরনটা একবারেই ভিন্ন।

আমার মধ্যে এই ধারনা কাজ করছে যে এই মেয়েটা ভাবুক প্রকৃতরি আর গুসিও অনেকটা একই রকম। গুসি হচ্ছে স্বাপ্নিক এক পাখি, সবাই নিজেকে এক অজ পাড়াঁগায়ে বন্দি রাখতে পারে না আর গুইসাপরে বাচ্চাদরে জন্য জান কোরবান করা তো আরো কঠনি ব্যাপার। যে কোনভাবেই হোক সে এখন প্রেমে পড়ে গেছে আর এই সুযোগটা ওদের দুজনের ছুঁড়ে ফেলা উচিত নয়। ‘মেয়েটা ওর জন্য একদম ঠিক,’ আমি বললাম। “শুনে খুব ভালো লাগলো, স্যার।

“সেও মেয়েটার জন্য একদম ঠিক, জীভস। ‘খুব ভালো, স্যার’, জীভস উত্তর দিল, ‘আমি এই ব্যাপারটায় এখনই নজর দিচ্ছি। ’ এখন পর্যন্ত আমি জানি আপনারাও স্বীকার করবেন যে সবকিছুতেই একটা সাম্য বিরাজ করছিল। মালিক আর কর্মচারীর মধ্যে অতি সাধারন মিষ্টি মধুর কথাবার্তা। কিন্তু ঠিক এই মুহুর্তে, আমি আফসোসের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি, ব্যাপারটা এক অপ্রীতিকর রাস্তায় মোড় নিয়েছে।

পরিবেশ আচমকাই বদলে গেছে, ঝড়ের মেঘ জমতে শুরু করেছে, ওর শষে কথাটা পরিবেশ পালটে দিয়েছে। আমি জানতাম, উষ্টার হাউসে আগেও এমন ঘটেছে। উপরের কথোপকথনের সময়, আমি আসলে আয়েশ করে তৈরি হচ্ছিলাম, একটা একটা করে মোজা, জুতো পড়ছিলাম, আর ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠছিলাম মানে ভেসট, সার্ট, টাই ঠিক করছিলাম আর জীভস নিচু হয়ে আমার জিনিসপত্র গোছাচ্ছিল। সে আমার দিকে এগিয়ে এলো হাতে সাদা মতো একটা বস্তু নিয়ে। ওটা দেখামাত্র আমার মনে হলো আরেকটা মনকষাকষির উপলক্ষ্য তৈরি হতে যাচ্ছে, আরেকটা দুঃখজনক সংঘর্ষ দুই শক্তিশালী মানুষের মাঝে, আর বারট্রাম, যে সত্যের পক্ষে লড়াই করে তার পুবপুরুষের মতো, সে কখনই হাল ছাড়বে না।

আমি জানিনা আপনিও আমার মতো এই গ্রীষ্মে কানেস গিয়েছিলেন কিনা, তাহলে আপনার মনে থাকবে, পার্টির প্রান হবার জন্য অনেকেই ক্যাসিনোতে সান্ধ্যকালীন ট্রাউজারের সাথে পিতলের বোতামওলা সাদা মেস জ্যাকেট পড়েছিল। যখনি সেই জ্যাকেট নিয়ে আমি কানেস ছাড়লাম তখনি ভাবছিলাম জীভস এই জিনিসটাকে কিভাবে নেবে। বিকেলের পোষাকের বেলায় জীভস মারাত্মক সেকেলে আর প্রতিক্রিয়াশীল, নরম পশমী কাপরের সার্টের বেলায়ও সে এমন করেছিল, এবার তো অবস্থা আরো শোচনীয় হবে মনে হচ্ছে। পাম বীচের ক্যাসিনো থেকে জ্যাকেটটা কেনার সময় আমারও কেমন উসখুশ লাগছিল কিন্তু তারপরও কেন জানি জিনিসটা কিনে ফেললাম। এবার দৃঢ় হতে হবে, সেভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিলাম।

“জীভস? আমি বললাম, যদিও আমার গলার স্বর ছিল কোমল, কিন্তু কেউ একজন আমার চোখের দিকে তাকালে বুঝতে পারতো সেখানে লৌহ কঠিন ভাব ঝিলিক দিচ্ছে। জীভসের মস্তিকের কাযক্ষমতা সম্পকে আমার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা, কিন্তু মালিকের কাছ থেকে কোন বশিষে দায়িত্ব কেড়ে নেয়া, এই ব্যাপারটা সামাল দেয়ার সময় এসেছে। এই মেস জ্যাকেট আমার প্রানের খুব কাছের বস্তু আর আমি প্রয়োজনে উষ্টার পরিবারের গৌরবগাঁথার সেই যুদ্ধের মতো লড়াই করে যাবো। “হ্যা, জীভস? আমি বললাম, “তুমি কিছু ভাবছো , জীভস?” “আমি ভয় পাচ্ছি আপনি কানেস ছাড়ার আগে অন্য কারো কোট নিয়ে চলে এসেছেন, স্যার। আমার লৌহ কঠিন ভাব একটু বাড়ালাম।

“না, জীভস,” আমি একই সুরে বললাম, “যে কোটটার কথা বলছো তা পুরোপুরি আমার, আমি ওখান থেকে কিনেছি। ” “আপনি এটা পড়েছেন, স্যার?” “প্রতি রাতে। ” “কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই এটা ইংল্যান্ডে পরার কথা ভাবছেন না, স্যার?” আমি দেখলাম আমরা আবার চুড়ান্ত মুহুর্তে চলে এসেছি। “আমি তাই ভাবছি, জীভস। ” “কিন্তু স্যার...” “তুমি কিছু বলছিলে, জীভস?” “এটা একবারেই মানানসই নয়, স্যার।

” “আমি তোমার সাথে একমত নই, জীভস। আশা করছি এই জ্যাকেটটা অনেক প্রশংসা পাবে। আগামীকাল সবার সামনে পঙ্গো টুইসলেটনের জন্মদিনে পড়ে যাবো আর এটা সবাইকে মাতিয়ে দেবে। আর তর্ক নয়, জীভস, আর কথা নয়। তুমি যাই বলোনা কেন, আমি এই জ্যাকেট পরবোই।

” “খুব ভালো, স্যার। ” সে হাবিজাবি জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেল। আমি এই বিষয়ে আরো কিছু বললাম না। আমি এই যুদ্ধে জিতেছি আর উষ্টাররা পরাজিত শত্রুর সামনে উৎসব করেনা। এখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে আমি ওকে হাসিমুখে বিদায় জানালাম আর পরামর্শ দিলাম যেহেতু আমি রাতে বাইরে খাবো, সে চাইলে বিকেলটা ছুটি নিতে পারে, চাইলে সিনেমাও দেখে আসতে পারে।

সে তেমন আগ্রহ দেখালো না। “ধন্যবাদ, স্যার। আমি এখানেই থাকছি। ” আমি ওকে পযবেক্ষন করলাম। “কোন সমস্যা, জীভস?” “না, স্যার।

আমার এখানেই ভালো লাগবে। মিঃ ফিঙ্ক-নটল বলেছিলেন তিনি আজ সন্ধ্যায় আসতে পারেন। ” “ওহ, গুসি আসছে, আসলেই? আচ্ছা, ওকে আমার ভালোবাসা দিও। ” “খুব ভালো, স্যার। ” “ওকে পানীয় আর যা লাগে আপ্যায়ন কোরো।

“ “খুব ভালো, স্যার। ” “ঠিক আছে, জীভস। ” আমি তারপর ড্রোনসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে এলাম। ড্রোনসে আমি পঙ্গো টুইস্লেটনের দিকে ছুটে গেলাম, ছোঁড়াটা তার আসন্ন বিয়ে নিয়ে বকবক করেই গেল, এই সংক্রান্ত খবর আমি আমার নিজস্ব সুত্র থেকে আগেই পেয়েছিলাম, ওর হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যখন বাসায় এলাম তখন প্রায় এগারোটা বাজে। দরজা খোলার সময় আমি সিটিং রুম থেকে কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছিলাম আর যখন সিটিং রুমে ঢুকলাম বুঝলাম কথা হচ্ছে জীভস আর এক জলজ্যান্ত শয়তানের মাঝে।

আর একটু খেয়াল করে দেখতে বুঝলাম এ হচ্ছে গুসি ফিঙ্ক-নটল, সেজে আছে ফাউষ্টের শয়তানের মতো।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.