আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাইট হো,জীভস-----৮ম অধ্যায়



রাইট হো, জীভস রূপান্তরঃ শরীফুল হাসান আট টাপি গ্লসপের সাথে আপনাদের আগে পরিচয় হয়েছে কিনা জানিনা, আমি যে তার ছোটবেলার বন্ধু এটা সে মাঝে মাঝে ভুলে যায় বলে আমার ধারনা। ড্রোনসে সে আমাকে একবার ধাক্কা দিয়ে সুইমিং পুলে ফেলে দিয়েছিল বোকার মতো, আমার পরিষ্কার মনে আছে। শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অপরাধ ছিল সেটা। যদিও আমি উদার মনে ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু ঘটনাটা একেবারে ভুলে যাইনি।

এখন আমার কাছে সুযোগ আছে ওকে জব্দ করার, কিন্তু আন্ট ডাহলিয়ার সাথে আমি ওয়াদাবদ্ধ। এই মুহুর্তে আমি মনে প্রানে চাইছি এই যুগলকে আবার এক করে দিতে। আমি টাপির দিকে তাকালাম। আমার তাকানোর মাঝে সহানুভুতি মিশিয়ে দিলাম, যাতে সে একটু সহজ হতে পারে, হাতে একটু চাপ দিলাম, খুব আন্তরিকভাবে আর কাঁধেও হাত রাখলাম। ‘হেই টাপি,’আমি বললাম‘কেমন আছো?’ আমার আন্তরিক সম্ভাষনের উত্তর পেলাম না, বেচারা কেমন ঝিমিয়ে পড়েছে।

আমি হাতটা ছেড়ে দিলাম,আর পুরানো রীতিতে ফিরে গেলাম, একটা সিগারেট বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে। সে ঠিকভাবেই নিল। ‘তুমি তাহলে এসেছো, বার্টি’ টাপি বলল ‘আমি এসেছি’ ‘এখান দিয়েই যাচ্ছিলে না থাকতে এসেছো?’ আমি একটু ভাবলাম। ওকে বলা যায় যে এঞ্জেলার সাথে ওর ঝামেলাটা মিটিয়ে ফেলাই আমার আসার আসল উদ্দেশ্য। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো বিষয়টা ওকে ভেঙ্গে না বললেও চলে।

‘ঠিক নেই’ আমি বললাম, ‘থাকতেও পারি আবার চলে যেতেও পারি,’ সে মাথা ঝাঁকালো। অনেকটা উদ্দেশহীনভাবে। একমনে বাগানের দিকে তাকিয়ে রইলো। এখন ওকে দেখাচ্ছে একটা বুলডগের মতো, যার কাছে থেকে একটুকরো কেক কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমার মতো বিচক্ষন ব্যক্তির পক্ষে ওর মনে কি চলছে তা বোঝা মোটেই অসম্ভব না, এই গুনটা আমার আছে, কাজেই সে যা বলল আমি মোটেই অবাক হলাম না।

‘আমার ঘটনাটা নিশ্চয়ই তোমার কানে গেছে, এঞ্জেলাকে নিয়ে?’ ‘হমম, আমি শুনেছি,’ ‘আমারা আলাদা হয়ে যাচ্ছি’ ‘শুনেছি, খানিকটা দ্বন্ধ, ওই হাঙ্গরটা নিয়ে’ ‘হ্যা, আমি বলেছি ওটা সাধারন একটা মাছ ছিল’ ‘হমম, আমিও তাই শুনেছি’ ‘কার কাছ থেকে শুনলে’ ‘আন্ট ডাহলিয়া’ ‘উনি নিশ্চয়ই আমাকে অনেক অভিসম্পাত করছেন’ ‘আরে নাহ, একেবারেই না, তবে উনার ধারনা তোমার আরেকটু কৌশলের সাথে বিষয়টা সামলানোর দরকার ছিল। ’ ‘কৌশল!’ ‘আমিও আন্টের সাথে একমত না হয়ে পারিনি। এঞ্জেলাকে এভাবে কষ্ট না দিলেও পারতে তুমি, হোকনা সে হাঙ্গরটা নিয়ে বাড়াবাড়ি কথা বলে ফেলছিল। হাঙ্গরটাকে সাধারন একটা মাছ না বললে সে এতোটা কষ্ট পেতোনা। ’ আমি দেখলাম বেচারা আরো মুষড়ে পরলো আমার কথা শুনে।

‘তুমি শুধু ওর দিকটাই দেখলে?আমার দিকটা দেখলে না’ সে বলল খুব আবেগঘন কন্ঠে। ‘তোমার দিক?’ ‘তা হয়তো তুমি দেখবে না,’ টাপি বলল একটু উচু স্বরে, ‘এঞ্জেলা বলেই যাচ্ছিল, আমি ভাবলাম ওকে একটু থামাই’ ‘বলেই যাচ্ছিল?’ ‘একনাগাড়ে, আমি শুধু শুনছিলাম আর সায় দিয়ে যাচ্ছিলাম,হাঙ্গর হাঙ্গর শুনতে আমার মোটেই ভালো লাগছিল না, কথা ঘোরানোর জন্য আমি বলেছিলাম সাধারন মাছের কথা, এই তো। আসলে আমার মন পড়েছিল আনাতোল ডিনারে কি উপহার দেবে সেটা নিয়ে। আমি সেকথা ওকে বলতেই আরো রেগে গেলো বলল আমি নাকি খাওয়া ছাড়া আর কিছুই বুঝিনা। কিন্তু তা মোটেও ঠিক না’ ‘ঠিক’ ‘ডিনারে আনাতোল কি দেবে সেটা নিয়ে চিন্তা করাতে তো দোষের কিছু নেই, তাই না’ ‘অবশ্যই না, এটা আসলে একজন শিল্পীকে সম্মান জানানোর মত ব্যাপার।

’ ‘ঠিক তাই’ ‘আসলেই...’ ‘আচ্ছা?’ ‘আমি আসলে বলতে চাচ্ছিলাম যে এত ছোট একটা ঘটনার জন্য বিচ্ছেদ হওয়াটা মোটেই ঠিক না যেখানে সামান্য একটু দুঃখ প্রকাশ...’ সে আমার দিকে তাকালো। ‘তুমি নিশ্চয়ই বলতে চাচ্ছোনা যে আমি নিচে নেমে আসবো?’ ‘নেমে আসলে খুব ভালো হতো,বুড়ো খোকা’ ‘আমি স্বপ্নেও নেমে আসার কথা ভাবতেও পারিনা’ ‘কিন্তু টাপি...’ ‘না, আমাকে দিয়ে হবে না’ ‘কিন্তু তুমি তাকে ভালোবাস, তাই না?’ মনে হলো আসল জায়গায় হাত দিয়েছি। সে যেন একটু কেঁপে উঠলো। ‘আমি ওকে ভালোবাসি’ সে বলল, ‘খুব, কিন্তু তারপরও আমার ধারনা তার একটু শাস্তি হওয়া উচিত’ ‘কি বলছো টাপি’,আমি বললাম। ‘কি বলছো টাপি বলে লাভ হবেনা’ ‘তোমার কথায় আহত হলাম টাপি,আমি অবাক হচ্ছি সেই হাসিখুশী তরুন গ্লসপ ছেলেটা কোথায় হারিয়ে গেল’ ‘হাসিখুশী তরুন গ্লসপ! আচ্ছা, তাহলে সেই মিষ্টি,আন্তরিক মেয়েলী স্বভাবের এঞ্জেলা কোথায়?আমাকে বলে কিনা আমার থুতনিতে দুটো ভাঁজ!’ ‘সে তাই বলেছে?’ ‘হ্যা,তাই’ ‘ওহ, ভুলে যাও, মেয়েরা তো কত কথাই বলে, ওর কাছে যাও, সব ঠিক হয়ে যাবে’ সে মাথা নাড়লো।

‘অনেক দেরী হয়ে গেছে, আমার পেট নিয়েও সে অনেক কথা বলেছে যা ভুলে যাওয়া সম্ভব না’ ‘কিন্তু টাপি, একটু বোঝার চেষ্টা করো, তুমিও তো ওর টুপি পড়া দেখে একবার বলেছিলে যে চাইনিজদের মতো দেখাচ্ছে’ ‘এঞ্জেলাকে সেরকমই দেখাচ্ছিল। সেটা তো কোন বাজে কোন মন্তব্য ছিলনা,সুন্দর সমালোচনা বলতে পারো, যাতে সে নিজেকে সবার সামনে ছোট না করে। ’ আমার মনে হতে লাগলো এই ব্যাপারে আমাকে আমার পূর্নশক্তি আর বুদ্ধি লাগাতে হবে। বিয়েটা যদি ঘটাতেই হয়, তাহলে সোজা পথে হাঁটলে আর চলবে না। আন্ট ডাহলিয়ার সাথে কথা বলার সময় মনে হয়েছিল, ব্যাপারটা ছোটখাট ঝগড়ার বেশী কিছু না, কিন্তু এখন দেখছি পানি অনেকদুর গড়িয়েছে।

টাপির কথায় বোঝা যাচ্ছে যে এঞ্জেলা এখনও তার মনের রানী, অন্যদিকে,যাই ঘটুক না কেন, এঞ্জেলাও টাপিকে ভুলে যায়নি। এই মুহুর্তে সে হয়তো বোতল দিয়ে টাপির মাথায় বাড়ি দিতেও দ্বিধা বোধ করবেনা। কিন্তু মনে মনে সে এখনও টাপিকে ভালবাসে। শুধু তাদের আহত অগংকার তাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে। আমার মনে হলো টাপি যদি একটু এগোয় তাহলেই ব্যাপারটা সহজ হয়ে যায়।

আমি আবারো আঘাত হানার প্রস্তুতি নিলাম। ‘মেয়েটা আসলে খুব ভেঙ্গে পড়েছে,টাপি’ ‘তুমি কিভাবে জানো? তোমার সাথে দেখা হয়েছে? ‘এখনো না, কিন্তু আমার বাজি ধরতে পারি। ’ ‘মনে হয়না’ ‘সে এখন মুখোশ পড়ে আছে, জীভসও এমন করে যখন আমি ওর উপর প্রভাব খাটাই’ ‘আমাকে দেখে এমনভাবে নাক কুচকালো তখন মনে হল আমি কোন নর্দমার চেয়েও খারাপ’ ‘ওটাই তো ওর মুখোশ, আমি এখনো নিশ্চিত সে তোমাকে ভালোবাসে, শুধু তুমি একটু নরম হয়ে কথা বললেই হবে’ আমি দেখলাম সে একটু যেন নরম হলো। ‘তোমার আসলেই তাই ধারনা?’ ‘অবশ্যই’ ‘হমম’ ‘তুমি যদি ওর কাছে যেতে চাও...’ সে আবার মাথা নাড়ালো। ‘আমি যেতে পারবো না,খুব খারাপ দেখাবে জিনিসটা।

আমার আত্মসম্মান সাথে সাথে ধূলোয় মিশে যাবে। আমি মেয়েদের চিনি, পাত্তা দিলেই মাথায় উঠে বসবে’, সে একটু থামলো,‘আমার মনে হয় অন্য কোনভাবে তাকে বলো যে আমি আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তুত, ওর সাথে দেখা হলে আমি কি হাই তুলবো, কি মনে হয় তোমার?’ ‘ও বুঝে যাবে এটা তোমার অভিনয়’ ‘ঠিকই বলেছো’ আমি আরেকটা সিগারেট ধরালাম আর বিষয়টার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। উষ্টারদের সাথে যেমন হয় আর কি, আমি একটা বুদ্ধি পেয়ে গেলাম। ‘পেয়ে গেছি টাপি, এমন বুদ্ধি যাতে সাপও মরবে আবার লাঠিও ভাংবে না, আজ রাতে তুমি ডিনার কোরনা,খুবি কাজে দেবে বুদ্ধিটা, সে বুঝে যাবে তুমি খাবারের প্রতি কতোটা অনুরক্ত’ সে রাগান্বিত চোখে তাকালো। ‘আমি খাবারের প্রতি অনুরক্ত!!’ ‘না,না’ ‘আমি কখনোই খাবারের প্রতি অনুরক্ত নই’ ‘ঠিক, আমি বলতে চাচ্ছিলাম...’ ‘আমাকে খাবারের প্রতি অনুরক্ত বানানোর এই বুদ্ধি বানচাল করো, বার্টি’ টাপি বলল ‘আমি সাস্থ্যবান, কিন্তু খাবারের দিকে আলাদা কোন ঝোক তো আমার নেই।

আমি আনাতোলকে একজন শিল্পীর মর্যাদা দিই,সে আমার সামনে যা রাখবে তা খেতে আমি মোটেই দ্বিধা বোধ করবো না, কিন্তু তুমি যখন বললে আমি খাবারের প্রতি অনুরক্ত...’ ‘তোমার কথাই ঠিক, আমি বলতে চাচ্ছিলাম এঞ্জেলা যখন দেখবে যে তুমি ডিনার করোনি, তখন সে বুঝতে পারবে তুমি কতো কষ্টে আছো, হয়তো সে নিজেই তখন তোমার কাছে ক্ষমা চাইবে’ টাপি খুব মনোযোগ দিয়ে আমার প্রস্তাব শুনলো। ‘ডিনার করতে মানা করছো, তাই তো?’ ‘হ্যা’ ‘আনাতোল যে ডিনার তৈরি করবে তা দূরে ঠেলে দিব?’ ‘হ্যা’ ‘একবার চাখবোও না?’ ‘না’ ‘আরো সোজাসুজি বলি, আজ রাতে, তুমি চাচ্ছো ডিনারের টেবিলে খানসামা যখন আনাতোলের হাতে রান্না করা ডিশ পরিবেশন করবে তখন আমি তা না খেয়েই চলে আসবো?’ ‘হ্যা’ সে তার ঠোট কামড়ালো, বোঝাই যাচ্ছে তার মনের ভেতর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম তার চেহারা চকচক করে উঠলো। ‘ঠিক আছে তাহলে’ ‘তুমি রাজি?’ ‘রাজি’ ‘খুব ভালো’ ‘কাজটা খুব কষ্টের বার্টি’ আমি ওর জন্য একটা পথ খুলে দিলাম। ‘কষ্টটা সাময়িক।

সবাই ঘুমিয়ে গেলে তুমি লুকিয়ে কাজ সেরে নেবে’ সে উৎফুল্ল হলো। ‘একদম ঠিক’ ‘কিন্তু রাতের ঐ সময়টা পরিবেশ একটু শীতল হয়ে আসে’ ‘একটু ঠান্ডা হয়তো থাকে’ টাপির গলায় আনন্দ প্রকাশ পাচ্ছে ‘আজ লাঞ্চে যে পাই ছিল ওর কিছুটা বাকি আছে, আনাতোলের সেরা রান্না। আজ রাতেই বাকিটা সাবাড় করতে হবে’ ‘তাহলে ডিনারে আজ কিছু খাচ্ছো না, এই কথা রইলো?’ ‘অবশ্যই’ ‘খুব ভালো’ ‘বুদ্ধিটা চমৎকার। জীভসের বুদ্ধি ভালো না হয়ে যায়ই না। ওকে বলে দিও আমি ওর প্রতি খুব কৃতজ্ঞ’ আমার হাত থেকে সিগারেটটা পড়ে গেল।

মনে হল কেউ যেন আমার গালে হঠাৎ চড় বসিয়ে দিয়েছে। ‘তুমি কি বলতে চাচ্ছো তোমাকে এইমাত্র যে বুদ্ধিটা দেয়া হলো তা জীভসের?’ ‘অবশ্যই তাই। আমার সাথে দুষ্টুমী করোনা, বার্টি। এই রকম চিন্তা তোমার মাথায় হাজার বছরেও আসবেনা’ চারপাশে একটু নিরবতা নেমে এলো। ‘এসো টাপি’ আমি বললাম, খুব শীতল স্বরে, ‘আমাদের যাওয়া দরকার।

ডিনারের জন্য তৈরি হতে হবে’

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.