রাজশাহীতে একজন রিক্সাচালকের সঙ্গে দেখা হলো। উনি ষাট টাকা উপার্জন হলেই ঘরে ফিরে বাচ্চাকে সময় দেন। কতটুকু উপার্জন হলে উনি উনার বাচ্চাকে তার মনের মতো করে গড়ে তুলতে পারবেন তা উনি জানেন। মাসলোর হায়ারার্কি অব নিডের তাড়নায় আমরা যারা খরগোস দৌড়ে শামিল তাদের জন্য ঐ রিক্সাচালক খুব বড় দার্শনিক,তাতে আমার অন্তত সন্দেহ নেই।
আমার পরিচিত বেশ কিছু মানুষকে ঢাকার আকাশ ঢাকা ব্যালকনীতে এমেরিকা-ক্যানাডা-অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হবার মরিয়া আকাংক্ষায় পায়চারী করতে দেখলাম।
দেশে মন টিকছে না, বাচ্চাদের বিদেশে পড়াতে হবে। আমরা সরকারী ইস্কুলে পড়েছি। আমরা পরাজিত মেঘ দল দেশের বাইরে যে কোন ইউনিভার্সিটি বা কোচিং সেন্টারে পড়াই, ট্যাক্সি চালাই, কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করি বা গিটার বাজিয়ে ভিক্ষা করি, এই সব কাজের শক্তি দিয়েছেন প্রাইমারী স্কুলের একজন পরাজিত মেঘ বা হাইস্কুলের একজন পরাজিত দার্শনিক।
রাজশাহী-ঈশরদীতে আমার স্কুলের বন্ধুরা যারা কচ্ছপ ছিলো, এখন তারা খরগোসদের চেয়ে সুখী। বাচ্চাকে স্কলাসটিকা বা মাস্টার মাইন্ডে পড়ানোর চ্যালেঞ্জ নেই।
আমার দুএকজন বন্ধু অস্ট্রেলিয়ায় বা ক্যানাডায় ইমিগ্র্যান্ট হয়ে খাবি খাচ্ছে। ঢাকার সেরা কর্পোরেট ম্যানেজার হুট করে আমাদের মতো পিটজা অর্ডার সাপ্লাই করতে পারবে না। কারণ মিনারেল ওয়াটার ছাড়া ওরা কলের পানি খায়নি। সরকারী কলেজের অধ্যাপক ক্যানাডায় ২০ হাজার ইউরো খরচ করে গিয়ে এখন হঠাত করে নাইট গার্ড হতে পারেননা, কারণ তারা আমাদের মতো রাত জেগে হল্লা করেননি।
আমার কতটুকু পেলে চলে, কেন আমার গাড়ী লাগবে, ঢাকায় বাসে চড়তে অসুবিধা, কিংবা সিনজিতে চড়ে রাত বিরেতে ফিরলেই ক্ষতি কী? ক্যানাডা এমেরিকায় ইউরোপের মতো বাস ট্রাম ব্যবহারের সুযোগ নাই।
গাড়ী কিনতে হবেই, সুশীল সমাজ সুখের পিছে ছুটে লাভ নেই। টরান্টো বা সিডনিতে সুখ নাই। অপ্রবাসী আর অঋণগ্রস্ত থাকাই সুখের আদি অকৃত্রিম সংগা। ঢাকায় সিএনজি বা ট্যাক্সিতে চড়লে বড় জোর মোবাইল ফোন ছিনতাই হবে, কিন্তু সুখের খোঁজে ক্যানাডা-এমেরিকা গেলে জীবনটাই ছিনতাই হবে।
সুশীল সমাজ আপনারা বরং ঢাকায় থাকুন, ছিনতাই কারী সন্ত্রাসী দের বিদেশ যেতে সাহায্য করুন।
ওরা ২৪/৭ কুকুরের মত পরিশ্রম করে রাজার মতো রেমিট্যান্স পাঠাবে অভাজন আতিউর রহমানের ব্যাংকে। মুহিত সাহেব জানেন কিভাবে বাংলাদেশের মুদ্রা মান ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে ওপরে তুলে নিয়ে যেতে হয়। একটু ধৈর্য ধরুন। নাহিদ সাহেবকে শিক্ষার মান বাড়াতে দিন। সমাজে শিক্ষক-সাংবাদিকদের সততার অগ্নিপরীক্ষা চলছে।
বাংলাদেশ সত্যের শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাংলাদেশী তরুণ কাঠ মিস্ত্রী অস্টম শ্রেণী পাশ কাজের গুণে মস্কোতে ডাক পাচ্ছেন। কিন্তু আপনাদের লেখাপড়ার যে হাল আপনারা ঢাকার বাইরে কোথাও কথিত সাফল্য পাবেন না। সাফল্য পাবে ক্যাডার-টেন্ডার সন্ত্রাসীরা। ওরা গোটা গোলকের ডলার-ইউরো ছিনতাই করে নিয়ে আসবে।
এরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির অনমনীয় যোদ্ধা। আর আপনাদের কথিত সাফল্যের তথ্য সংরহ করছে তিরিশের নীচের মুক্তিযোদ্ধারা।
সফল সুশীল সমাজ এবার একটু ট্র্যাফিক জ্যামে ভিক্ষার নিয়তিতে আটকে থাকা শিশুটির দিকে তাকান। জানি আপনাদের টকশোতে যাবার তাড়া, ভয়াবহ জ্যামে ডিজের বাংলিশ শিতকারে ফ্রয়েডীয় প্রশমন না করে ভিক্ষুক শিশুটির হাতে আপনার কালো টাকা তুলে দিন, সোয়েটার বিতরণ করুণ, কম্বল বিতরণ করুণ। ইমিগ্র্যান্ট হবার উদগ্র কামনায় বাংলাদেশের টাকা স্ট্যাচু অব লিবার্টিতে জমা দিয়ে ভিক্ষুকের পরিণতি বরণ করবেন না।
বাংলাদেশের টাকা কোথাও যাবে না বরং কথিত সার্টিফিকেটহীন শ্রমিকদের দেখে শিখুন। উনারা আমাদের হিরো যারা রক্ত পানি করে ডলার-ইউরো নিয়ে আসবেন দেশে।
অভিবাসী হবার আত্মকেন্দ্রিকতা আপনাদের হিরো থেকে জিরো করে ফিরবে। আমি আপনাদের এসব বলার কে। আপনাদের দেয়ালে বছরের পর বছর মাথা খুঁটে আপনাদের দম্ভ টলানো গেলো না, ঢাকার গজদন্তের মিনার গুলো ধসে পড়বে ২০১২র মধ্যে।
ঢাকা তখন হয়ে যাবে মৃত জোনাকির থমথমে চোখ। আমরা অশিক্ষিত, বাজে ইংরেজী উচ্চারণের গর্দভেরা তখন তিম্বাক্তুর বা ডারফুরের কুসুমকলি স্কুলে পড়িয়ে দিব্যি বেঁচে থাকবো, কাঠ বডি কুড়িল বাংলাদেশ বিমানে চড়ে মাকে দেখতে গ্রামে যাবো। ঢাকাতো আমাদের মতো গবেটদের জন্য নেহাত টার্মিনাল। আপনাদের ঢাকা আপনাদের থাকুক। আমরা মফিজেরা ছিলাম,আছি,থাকবো।
এটিএন বাংলায় আপনাদের রেড কার্পেট শো দেখবো। আর লিখবো অ আ ক খ অনলাইন মিডিয়ায়। সুতরাং ভাববেন না গেম ইজ ওভার। এমনকি ওয়াক ওভারো নয়। লস্ট ইয়েস, ডিফিটেড নো!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।