ঘটনার শুরু ঢাকা বিমানবন্দরে । নির্ধারিত সময়ের ঘন্টা দুয়েক আগে বিশাল লাইনে দাড়ালা। এমন সময় ঘোষণা, যাদের বিদেশী পাসপোর্ট তাদের জন্য বিশেষ লাই। হতেই হবে, ওরা এত কষ্ট করে এই দেশে আসছে, এটুকু না করলে কিভাবে হবে। যাই হোক, এক সময় immigration এর সময় হলো।
ওখানে বসা ব্যক্তিটি সরু চোখে তাকিয়ে আমার জীবন ইতিহাস জানতে চাইলো। আসলেই তো, দেশের ছেলে কেন বিদেশে পড়তে যাবে? ঘটনা সন্দেহজনক। তারপর নানা জায়গায় ফোন করে দয়া করে ছেড়ে দিল। আমার যাত্রাপথ ভারত হয়ে বেলজিয়াম, তারপর কানাডা। ভারতীয়রা আবার আরেক কাঠি সরেস।
আমার কাছে VLSI কি বস্তু তা না বুঝে ছাড়বেই না। যাই হোক, এমন করে কানাডা এসে পৌছালাম। আমার চোখে তখন রঙিন স্বপ্ন। কানাডার লোকরা নাকি ভয়ানক অতিথিপরায়ন (বিশেষ করে মেয়েরা) । সে আশায় university এর ডর্মে এসে উঠলাম।
প্রথমেই ৫০০ ডলার এর মুরগির খোপ এর মত রুম দেখে আশ্চর্য হলাম । কানাডায় আর যাই হোক, জায়গার তো অভাব নেই । ফ্লাট টাও সেরকম । অপরিষ্কার আর নানা নষ্ট আপ্প্ল্যায়ান্সে এ ভর্তি । সবগুলো কাগজে লিখে housing এ দিয়ে আসলাম ।
সেখানের মেয়েটা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, দুদিনেই ঠিক করে দিয়া হবে (সে দুদিন তিন মাসেও হলো না ) । আমার রুমমেট সবাই বাংলাদেশী. তো ঘুরতে ঘুরতে পাশের ফ্লাট এ গিয়ে অবাক । সব কিছু ঝকঝকে। ঘটনা কি? একটা রুমমেট বলল এটাকেই বলে racism। পাত্তা দিলাম না. এটা হয়ত কম্পিউটার এর ভুল, বাঙালির ভাগ্য খারাপ।
যাই হোক, নির্ধারিত দিনে প্রফেসর এর সাথে দেখা করতে গেলাম। দেরী হবে কিনা তা ভেবে একটু ১০ মিনিট আগেই গেলাম । সে আমাকে দেখে বলল "please wait outside " । ঠিকই তো, আমি নাহয় ৬০০০ মাইল পারি দিয়ে আসছি, তাই বলে নিয়ম বলে একটা কথা আছে না । দেখা হবার পর নানা প্রসঙ্গে আলোচনা হলো, কি কি কারণ আমার ফান্ড বন্ধ হতে পারে, তার বিস্তারিত আলোচনা ।
লে হালুয়া, আসলাম মাত্র, এখনি ৭৫ % এর খরগ. যাই হোক, ক্লাস শুরু হলো এবং আমি যারপরনাই হতাশ হলাম । ক্লাস্সে একটাও মেয়ে নাই । (যারা ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন, তারা এখন থেকেই কপাল চাপড়ান, দেশ/বিদেশে কোনো খানেই মেয়েরা এই ফালতু বিষয় পরে না ) আর সব ক্লাসমেট চাংখু. তো ক্লাস শুরু হলো, এর মধ্যে আমি বাইরে বাসা খোজা শুরু করে দিয়েছি । কানাডায় এসে কানাডিয়ানদের সাথে থাকবোনা এটা কেমন কথা। ওদের দেশে আবার কড়া নিয়ম, বাসা ভাড়া করতে কোনো জাতি বর্ণ আলাদা করা যাবে না।
তো যখনই মেল দেই, কোনো উত্তর নাই। একজন বাঙালি বুদ্ধি দিলো, মেল এ নিজের নাম দিবানা, yo yo স্টাইলে মেল দিবা, তাইলে উত্তর পাবা । কথা সত্য, কদিনেই অনেক উত্তর পেয়ে গেলাম, তা দেখে পছন্দ করতে দেখতে গেলাম, ভদ্র মহিলা আমাকে দেখে প্রথমেই বলল "o! i thought u're a canadian! ". যাই হোক, ওরা আবার অনেক বিনয়ী, সামনা সামনি তো আর না করতে পারে না । তো উঠে পড়লাম নতুন বাসায়। দেখা যাক সামনে কি হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।