রোববার রাজধানীর কুড়িল উড়ালসেতু উদ্বোধন করে তিনি বলেন, “আজ আমরা যে পরিকল্পনাগুলো হাতে নিয়েছি সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে। এর জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। ”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিশদ বিবরণও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমি জানি না বাংলাদেশের জনগণ আবার কি সেই অন্ধকার যুগে ফিরে যেতে চায়। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, কালো টাকা, দুর্নীতি- সেখানেই ফিরে যেতে চায়।
”
“সেই অন্ধকার যুগেই আমরা ফিরে যাব? নাকি আলোকিত পথে আমরা এগিয়ে যাব? আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, যেন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি। ”
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি ইংগিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতা বলেছেন উনি নাকি নতুনভাবে দেশ পরিচালনা করবেন। অর্থাৎ নতুনভাবে দুর্নীতি করার নতুন কোনো পদ্ধতি তিনি আবিষ্কার করবেন। ”
বর্তমান সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা ক্ষমতায় থেকেও অনেকগুলোতে হেরে গেছি। জনগণ ভোটের মালিক তারা ভোট দেবে।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে আমরা তাকেই মেনে নেব।
“তবে সৎ ব্যক্তিকে রেখে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের বেছে নিলে আমাদের কিছুই বলার নেই। জনগণকে আমি সতর্ক করে বলতে চাই, তারা যেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ও যারা দেশের উন্নয়ন করে- তাদেরকে ভোট দেয়। ভোট তাদের আমানত, এটা যেন অপাংক্তেয়দের দান করে খিয়ানত না করেন।
”
সরকার গঠনের পর এমন কোনো খাত নেই- যেখানে উন্নয়ন হয়নি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এরই অংশ কুড়িল ফ্লাইওভার। দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ ছিল বলে এই সেতুর কাজ দ্রুত শেষ হয়েছে। ”
বিগত বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিকে তারা ‘নীতি হিসাবে’ গ্রহণ করেছিল বলেই উন্নয়নমূলক কোনো কাজ সামনে এগোয়নি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ হয়ে গিয়েছিল ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির’ দেশ।
পাঁচবার দুর্নীতিতে দেশ ‘চ্যাস্পিয়ান’ হয়েছিল।
“খাম্বা লিমিটেড ও ড্যান্ডি ডায়িংয়ের নামে সোনালী, জনতা এবং বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৯৮০ কোটি টাকার মতো তারা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে সুদসহ মওকুফ করিয়েছে। দেশের অগ্রগতি তাদের মূল কথা ছিল না। মূল কথা ছিল কীভাবে টাকা বানানো যায়।
”
খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে যদি তিনি কালো টাকা বানান, দুর্নীতি করেন আর জরিমানা দিয়ে তাকে তা শোধ করতে হয় তাহলে দুর্নীতি কোন পর্যায়ে ছিল তা বিবেচনা করে দেখবেন আর এই সরকারের সঙ্গে তুলনা করে দেখবেন। ”
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে আগের সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি সরকার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হলে সামনে এগোতে পারে না।
“এখন নিজেদের অর্থায়নে কাজ শুরু করতে পদ্মা সেতুর টেন্ডার হয়েছে। ২০০১ সালের বিএনপির দুর্নীতির কারণে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দেয়। ”
বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও মানুষের মাথাপিছু আয় ও রিজার্ভ বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় এখন বিদেশে গিয়ে মানুষ চাকরি করতে পারছে।
এইচএসসিতে এবার পাসের হার কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে পরীক্ষার মধ্যে বিরোধী দলের হরতালকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সরকার চেয়েছিল পাসের হার বৃদ্ধি করবে, কিন্তু তা হয়নি।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শওকত হোসেনের সভাপতিত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী সাহারা খাতুন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান, স্থানীয় সাংসদ এ কে এম রহমত উল্লাহ ও রাজউক চেয়ারম্যান নুরুল হুদা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমামসহ মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুড়িল মোড় থেকে প্রগতি সরণি পর্যন্ত তিন দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘কুড়িল উড়ালসেতু’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর পরপরই সেটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
এই ফ্লাইওভার ব্যবহার করে উত্তরা ও বনানী থেকে সহজেই প্রগতি সরণি হয়ে রামপুরার দিকে যাওয়া যাবে। এর ফলে কুড়িল বিশ্বরোড ক্রসিং এলাকার যানজট অনেকটা দূর হবে বলে আশা করছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান।
২০১০ সালের ২ মে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। প্রথমে এর নির্মাণ ব্যয় ২৫৪ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে তা বাড়িয়ে ৩০৬ কোটি টাকা করা হয়।
প্রকল্পের পুরো অর্থ রাজউকের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হয়েছে।
রাজউক জানায়, এই উড়ালসেতুর উচ্চতা ৪৭ দশমিক ৫৭ ফুট, প্রস্থ ৩০ দশমিক ১৮ ফুট। এতে পাইল রয়েছে ২৯২টি, পাইল ক্যাপ ৬৮টি এবং পিয়ার রয়েছে ৬৭টি। এটি নির্মাণ করেছে প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।