আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারী + বিদ্বেষ = নারীদ্বেষ (কেবল মাত্র পুরুষদের জন্য, নারীগন নিজ দ্বায়িত্বে পড়িবেন)

জন্মের প্রয়োজনে ছোট ছিলাম এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি

কোন এক সাহিত্যিক একদা বলিয়াছিলেন, ‘একালের নারীরা যেন একেকজন মা কালী’র রূপ ধারন করিয়া রহিয়া আছে। তবে মা কালী’র সহিত তাহাদের পার্থক্য রহিয়াছে একটি জায়গায়। তিনি তাহার পতিদেব এর বুকে পা রাখিবার পর লজ্জ্বিত হইয়াই হোউক, শ্রদ্ধার কারনেই হোউক কিংবা লোক দেখানোর হেতুতেই হোউক আপন জিহ্বায় কামড় দিয়াছিলেন। কিন্তু বর্তমানের মা-কালীরা সেই সৌজন্যবোধটুকু দেখাইবার কষ্টটুকু না করিয়া কেবল পদদ্বলিত করিয়াই যাইতেছে। ’ অদ্য উক্তিগুলাই কেবল বারংবার স্বরনে আসিতেছে।

নারী জাতীর উপর বিদ্বেষ বরাবরই কম ছিল তবুও কিছু কথা ফাঁদিবার ইহাই মোক্ষম সময় বলিয়া প্রতিগনিত হইতছে। এব বন্ধুর কথা বলি। গেল দিন কতক আগে তাহার সাথে পরিচয়। বন্ধুমহলে সেই দিন আড্ডা চলিতেছিল নানা বিষয়ে। আলাপচরিতার আবশ্যক বিষয় হিসাবে নারী জাতীদের লইয়া কথা উঠিল।

তখন তাহাদের মন্ডুপাত করিতে কে কতখানি সিদ্ধহস্ত তাহারই যেন প্রমান হইতেছিল। সেই বন্ধু নানা উক্তিতে, নানা বিশেষনে, নানা কৌতুকের মধ্য দিয়া নারীদের ব্যবচ্ছেদ করিতেছিল। সকলেই মগ্ধ হইয়া যাইতেছি তাহার বাকপটুতায়। বাক্যবানে নারীদের ব্যবচ্ছেদ করিতে করিতে তাহার মুখ রক্তিম হইয়া যাইতেছিল। হঠাৎ তাহার মুঠোফোনটি বাজিয়া উঠিল।

নিমিষে দেখিতে পাইলাম তাহার রক্তিম মুখখানা পান্ডুর বর্ন ধারন করিল। ফোনটি ধরিয়া কিয়দক্ষন ‘হু’ ‘হা’ বলিয়া আমাদিগের দিক এক বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকাইল। কি তাহার চাহুনি ! মনে হইল কে যেন পৃথিবী হইতে তাহার সমস্ত ধন কাড়িয়া লইয়াছে, তাহার অন্তর হইতে সমস্ত নির্জাস বাহির করিয়া লইয়াছে। যে কিনা একটুক্ষন আগে বাক্যের তুমুল ঝড় তুলেতেছিল সেই কিনা এক্ষন নির্বাক প্রস্তরখন্ডে পরিনত হইয়াছে। খানিক ভাবিয়া আমতা আমতা করিয়া কহিল. ‘অমার এইবার একটু উঠিতে হইতেছে।

’ বলিয়াই তাহার তৎক্ষনাৎ প্রস্থান। পরে জানিতে পারিলাম সে কাহাকে যেন কোথাও অপেক্ষা করিবার কথা বলিয়া ভুলিয়া যাইবার মত অপরিনামদর্শী কর্ম সাধন করিয়াছে এবং তাহার ফলশ্রুতী স্বরূপ অনাগত দিন গুলিতে তাহার জীবন কি পরিমান দূর্বিষহ হইতে যাইতেছিল সেক্ষনের চেহারা স্মরন করিলেই সহজেই অনুমেয়। ভাবিতে পারিলাম না হাসিব নাকি তাহার জন্য কিঞ্চিৎ ব্যাথিত হইব। তবে একটি কৌতুক মনে পড়িয়া গেল তৎক্ষনাৎ। তখন জার্মান দেশে নারী জাগরন শুরু হইয়াছে হইয়াছে করিতেছে।

সকল উচ্চপদে নারীরা আগ্রাসী হইয়া দখল করিতেছে। শুধু তাহাই নহে। নারীরা তাহাদের স্বরুপে অবতীর্ন হইয়া নীরবে পুরুষদের বিদীর্ন করিয়া যাইতেছে আপন খেয়ালে। তখন ইহা লইয়া চিন্তিত জার্মান পুরুষেরা একটি সভার আয়োজন করিল। বিষয় ছিল, “পুরুষের উপর নারীর অত্যাচার ও তাহার সম্ভাব্য প্রতিকার (যদি আদৌ থাকে)”।

সকলে তাহাদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা, মত ও অভিমত দিয়া সভাটিকে প্রানবন্ত করিয়া তুলিয়াছে। ঠিক সেই সময়ে একজন বার্তাবাহক আসিয়া সংবাদ দিল জামার্ন নারীরা এই গোপন বৈঠকের সন্ধান লাভ করিয়াছে এবং সকলে কোমরে কাছা বাধিয়া এর মোক্ষম জবাব দিতে আসিতেছে। এই সংবাদ পাইয়া যে যাহার মত পালাইতে লাগিল। কিন্তু সভাপতি মহাশয় তাহার কেদারা হইতে এক চুল ও নড়িল না। সকলে পেছন ফিরিয়া সভাপতিকে ডাকিতে লাগিল।

আপন প্রান লইয়া বাচিবার শেষ সুযোগখানা হাতছাড়া হইয়া যাইতেছিল সভাপতিকে তিরস্কার ও করিতে লাগিল। কিন্তু সভাপতি মহাশয় এর যেন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তাহাতে। শেষে অকুতোভয় দুই বীর তাহাকে উদ্ধার করিবার মহৎ ব্রত লইয়া উপানত হইলে দেখিতে পায় তাহার স্ত্রী আসিবার সংবাদে অকুতস্থলেই তাহার হৃদস্পন্দন বন্ধ হইয়া গিয়াছে। আমি ভাবিয়া পাইনা কি ভীতিকর জাগতিক অথবা অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতা রহিয়াছে নারীদের মাঝে? কেন তাহাদের ভয়ে এত ভীত হইতে হইবে। তবে তাহা টের পাইলাম দিনকতক পূর্বে।

আরীফ নামক আরেক বন্ধুর কথা কহিতেছি। সদ্যই তাহার বিবাহ হইয়াছে। তাহাকে কহিলাম তোমার দাম্পত্য জীবন জানিবার খুবই স্বাদ জাগিয়াছে মনে। শুনিয়া একগাল হাসিয়া বলিল, ‘দাম্পত্য জীবন নাকি দাম্পত্য যুদ্ধ কোন টা শুনিতে চাও?’ উত্তর শুনিয়া একটু নড়িয়া চড়িয়া বসিলাম। উৎসাহ গোপন করিয়া বলিলাম, বল যাহা তোমার মনে লয়।

সে কহিল কলহ প্রায়শঃই হয়। তবে তাহা একতরফা। বলিলাম, যেমন ? সে কহিল, আমার বউ নানা অভিযোগে আমাকে অভিযুক্ত করিয়া ঝগড়া বাধাইতে আসে। কিন্তু আমি তাহাকে কোনরূপ বাধা না দিইয়া বরং সমস্ত অভিযোগ মানিয়া লই। তাহাতেই শান্তি।

কহিলাম, সে আবার কেমন তর কথা! আরিফ খানিকটা বিষন্ন হইয়া বলিল, ‘বন্ধু, নারীরা আক্রমন করিয়া আনন্দ পায়। তাহার কষ্ট দিয়া তৃপ্ত হয়। আমার বউ যাহা লইয়া ঝগড়া করে তাহা ঝগড়া করিবার মত কোন বিষয় বলিয়াই আমার কাছে প্রতিয়মান হয় নাই কোন কালে। বরং সমস্ত উদ্ভট অযৌক্তিক বাক্যালাপ। তাহাকে যদি যুক্তিতে বুঝাইতে চাই তবে তাহার পরাজয় নিশ্চিত।

এবং তৎপরবর্তী সংসারে যে অমোঘ ক্ষতি সাধন হইবে তাহা দশখানা পারমানবিক বোমাও করিতে পারিবেনা” আমি বেশ বুঝিতে পারিলাম। বাস্তবিকই নারীরা সর্বদাই জিতিতে চায়। তারা ভালবসিয়া জিতিতে চায়, বিবাহ করিয়া জিতিতে চায় এবং পরবর্তীতে যুদ্ধ করিয়া জিতিতে চায়। ইহার ব্যত্তয় হইলেই মানব জীবনে বিপর্যয় নামিয়া আসে। আর তাহারা তখনই নিজেদের জয়ী বলিয়া ক্ষান্ত হয় যখন তাহারা দেখিতে পায় তাহার সঙ্গের পুরুষকে সে যথেষ্ট পরিমান মানষিক যন্ত্রনা দানে সক্ষম হইয়াছে।

আর ইহাতেই পুরুষের এত ভয়। মনে পড়িল নেপোলিয়ানের সেই উক্তিখানা। তিনি পুরুষদের উদ্দেশ্যে বলিয়াছিলেন, “তোমরা যদি যুদ্ধ বন্ধ করিতে চাও তবে ভালবাস। আর যদি যুদ্ধই করিতে চাও তবে বিবাহ কর এবং জানিয়া রাখ সেই যুদ্ধে তোমাদের কেবল পরাজয়ই হইবে। ” আহা! ভাবিয়া পাইনা তাহলে আমার কেন সেই নারীদের লইয়া বন্ধনা করি।

চকিতে কোন সুহাসীনিকে দেখিলে তাহার নিকট হৃদয় সমর্পন করিতে শশব্যস্ত হইয়া পড়ি। তাহাদের লইয়া কবিতা-গান রচনা করিয়া কাগজের সংকট ফালাইয়া দেই। সভ্যতা-সম্রাজ্য এমনকি আপন কর্নপাত করিতেও পিছপা হইনা। অথচ তাহারা কি নিতান্ত অবহেলায়-অবজ্ঞায় তাহা উপেক্ষা করিয়া যায়। ভাবিয়া পাইনা হৃদয় তৈরির জন্য এমন কঠিন, নিরেট ইস্পাত বিধাতা কোথা হইতে পাইলেন।

আজ এত কথা বলিবার হেতু একটু ভিন্ন কারনে। নিতান্ত বিষাদে মন আচ্ছন্ন বলিয়া আজ এত আক্ষেপ। কিছুকাল পূর্বে অতিসয় উৎসাহ উদ্দিপনা লইয়া সাহিত্যচর্চায় ঝাপাইয়া পড়িয়াছিলাম। বহুকালের অনভ্যাস দ্রুতই কাটাইয়া উঠিবার আপ্রান চেষ্টা চালাইতেছি। একদা মনে খুব মেঘ জমিল।

মৃত্যুবিষয়ক নানা চিন্তা সেই মেঘে ভর করিয়া তাহার রং কৃষ্ণ বর্ন ধারন করিল। কলম লইয়া সেই ভাবের বহিঃপ্রকাশ করিতে করিতে ক্ষনে ক্ষনে আমার নেত্র তখন সিক্ত হইয়া উঠিতেছিল। অতঃপর লিখিলাম অহেতুক মৃত্যু বিলাস .... কিন্তু হায়! যখন সেই দুঃখ বিজড়িত সাহিত্যকর্মটি যখন একজন নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন, চন্ডাল নারীর হাতে উপনীত হইল তাহা সেই মুহুর্তে তাহা একটি রম্যরচনায় পর্যবেশিত হইল। তাহা লইয়া হাসিয়া - কুদিয়া তাহার চোখ মুখ লাল হইয়া গেল। হাসির দমকে তাহার গলার স্বর ভাঙ্গিয়া গেল।

সেই ফ্যাসফ্যাসে গলা লইয়া আমার রচনার রম্যদিক গুলি আমাকেই শোনাইতে লাগিল। কি নির্মম। আমি বাকরুদ্ধ হইয়া গেলাম। আমার হাত হইতে কলম পড়িয়া গেল। হতাশায় ডুবিয়া গেলাম।

শরৎদার (শরৎচন্দ্র চট্টোপধ্যায়) উপর বড় বেশি ইর্ষান্বীত হইয়া উঠিলাম। ভাগ্যদেবতা কি নির্ভাবনায় তাহার উপর ভর করিয়াছিল। অথচ তিনি যদি এ যুগের সাহিত্যিক হইতেন আর তাহার পাঠিকারা যদি এই কলিকালের মা-কালীরা হইত তবে তিনি নিশ্চিত বিখ্যাত রম্যলেখক এবং তাহার সাহিত্যকর্ম সমূহ বিলক্ষন শ্রেষ্ঠ রম্যসাহিত্য হিসাবেই মূলায়িত হইত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.