একজন নগর পরিকল্পনাবিদ যে কিনা পৃথিবীরর বাইরে থেকে পৃথিবীকে দেখতে, জানতে ভালোবাসে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম দিন ক্লাসে যাওয়ার সময় নতুন ক্লাস, নতুন সময়, ইত্যাদি সবকিছু ছাপিয়ে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল দোতালা বাসটি। ২০০৬ এর ফেব্রুয়ারি ২৮ থেকে ২০১০ এর মার্চ ১১, প্র্রতিদিনই আমি একই রকম আগ্রহ নিয়ে দোতালা বাসে উঠতাম। উপরে প্রথম সারির ডান কোনার সিট আমার অধিকারে ছিল ৪টি বছর। এই বাস থেকে আমার অনেক অর্জন তবে শ্রেষ্ঠ অর্জন হলো আমরা কয়েকজন যারা এখন অনেকজন।
দোতালা বাস নেই, আমারাও নেই কিন্তু কয়েকজন আছি একসাথে, হয়েছি অনেকজন। আজকে এই কয়েকজন, অনেকজন হওয়ার গল্প করব।
বাসে শুরুতে একাই যেতাম নীচের তলায় বসে। সেখানেই পরিচয় সোহেল ভাই (বিবিএ ০৫) নামের এক কথার জাদুকরের সাথে। সেই থেকে শুরু।
লিকু ভাই (ইংরেজি ০৫), তন্নী আপু (অর্থনীতি ০৪), জনি ভাই (ফার্মেসি ০৪) সহ আরো অনেকে যারা শিরোমনি থেকে উঠতাম তারা মিলে হলাম কয়েকজন। ওটাই বাসের প্রথম স্টপেজ ছিল। তো সবাই মিলে উন্নীত হলাম দোতালায়। সবার আগে স্ট্যান্ডে আসা, বাস না আসা পর্যন্ত জমপেশ আড্ডা,বাস আসলেই দ্রুত দোতালার প্রথম সারির সিট দখল নেয়া, সারা পথ মজায়, মজায় চলা, পথে হাইডি আপু (বিবিএ ০৫) কে তুলে নিতে উপর থেকে পা দাপিয়ে বাস থামাবার সংকেত দেয়া........আরও কত কি। বেশ চলছিল এভাবেই।
বছর ঘুরলো, দলে নতুন মুখ মামুন (ফার্মেসি ০৭ যার জীবনে রোমান্সের শুরু ও শেষ দুটোই এই দোতালা বাসে) সহ আরও অনেক। একজন কবিও পেলাম যার নাম কবি হিসাবে এতই পরিচিত ছিল যে আসল নাম মনেই নেই আমার। নতুন মুখ পেয়ে আমাদের কাজের পরিধি বাড়ল। বাস সময়মত না আসলে ডিপোতে গিয়ে বাস নিয়ে আসা, বাসে বহিরাগতদের ঢুকতে না দেয়া, রাস্তায় মারামারি তো বাস ঘুরিয়ে অন্য রুটে নেয়া, ইত্যাদি। বছর যায়, মুখ আসে।
কতজনের কথা বলি? তবে কয়েকজন যেমন ফয়সাল (গণিত ০৮), বিধান (বিবিএ ০৯), ফাহাদ (ইউআরপি ০৯), রিফাত (ফরেস্ট্রি ১০) ইত্যাদি মুখগুলির নিয়মিত যাত্রায় দোতালা বাসের শিরোমণি গং সগৌরবে এগিয়ে চলল। কোন স্বার্থ নেই, শুধুই বন্ধন, এক অটুট বন্ধন। এসময় সংঘে নারী মুখের আরো আগমন (রাখি (ইংরেজি ০৯) ও আরো অনেকেই) ঘটলো যাদের জন্য প্রায় বাস থামিয়ে রাখতে হত। আর তা পুষিয়ে নিতে আমাদের ড্রাইভার আংকেল এফ ১ এর ডেমো দেখাতেন। সব মিলিয়ে সময় এগিয়ে চলে, চলি আমরাও।
কয়েকজন হয়ে যাই অনেকজন।
একসময় আমাদের কাজের পরিধি বাসের বাইরে চলে এল। বিদায়ী সিনিয়রদের ফেয়ারওয়েল, নতুনদের বরণ শুরু হল। যাতে সবকিছুই ছিল ইনফর্মাল। সবাই নিজের মত এসে অংশ নিত, মজা করত।
লেখাপড়ায় সিরিয়াস ছেলেটিও ক্লাস ফেলে চলে আসত। আহা, দিনগুলো সেইরকম ছিল রে পাগলা!
আস্তে আস্তে বিদায় নিতে থাকল চেনা মুখ, আসতে থাকল নতুন মুখ। একসময় আমিও নিলাম বিদায়। আর একদিনতো দোতালা বাসেরই বিদায় ঘটল। কিন্তু আত্মার বন্ধন বিদায় নেয়নি।
সবাই আমরা এখনো একসাথে। যারা শিরোমনি থেকে বাসে উঠে সবাই এক প্রাণ। আমাদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আলোচনা হয়, অনুপ্রেরনায় তৈরি হয় নতুন সংঘ। বাসেে আসতে আসতে অনেক প্রাণের মিলনের থীমটা ছড়িয়ে যায়। আমারা থেমে থাকিনা।
এখনো ফেয়ারওয়েল আর নবীণ বরণ হয়, ইফতার পার্টি হয় যেমনটা কাল হল। আর তাতে থাকে আত্মার বন্ধন। কি সিনিয়র, কি জুনিয়র সবাই আমরা অটুট বন্ধনে বাধা।
সবকিছুর শুরু দোতালা বাস থেকে। কয়েকজন থেকে অনেকজন এই আমরা মিস করি আমাদের সেই সময়।
দোতালা বাসের গর্জন, রাস্তা দিয়ে সদম্ভ চলন, হুহু বাতাস ভুলতেই পারিনা আমরা কেউই। আর আমাদের অটুট বন্ধন..........সেটাতো সবসময় চোখের সামনে যেখানে সবাই একই সুরে বাধা।
গল্প শেষ। লিখতে পারিনি অনেক স্মৃতিই, অনেক কথাই। লিখে লিখে যে শেষ হবেনা এ গল্প.......তাই সমাপ্তিই সই।
অনেক নাম এখানে আসেনি সময়ের অভাবে। কিন্তু অনেকজনের প্রত্যেকের হৃদয়ে নামগুলি আছে, থাকবে। জয় আমাদের অটুট বন্ধন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।