অপেক্ষায় আছি সেই পলিনেশিয়ান তরুণীর যার বাম কানে সাঁজানো লাল জবা...
আজ কলাভবনে গিয়েছিলাম ঘোরাঘুরি করতে। র' চা খাচ্ছিলাম বন্ধুর সাথে কড়ই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ জনৈক ছোটভাই, বন্ধুর সাথে দেখা। কাছে এগিয়ে এসে জানালো অপরাজেয় বাংলার সামনে অজিত রায় নামে কোন এক মুক্তিযোদ্ধা আমরণ অনশন করছেন। কৌতুহলী হয়ে এগিয়ে গেলাম।
মুক্তিযোদ্ধা অজিত রায় শুয়ে ছিলেন একটা ধুসর চাদর মুড়ি দিয়ে। তাঁর চেহারাটা আমি দেখতে পাইনি। মুখ ঢেকে রাখলেও মাথার প্রায় পেকে যাওয়া সাদা চুলগুলো দেখা যাচ্ছিল।
আমার মত কৌতুহলী দু'একজন দর্শক আর কোন পত্রিকার একজন ফটোগ্রাফার ও প্রতিবেদককে দেখা গেল ওখানে। উনি একটি ব্যানার টানিয়েছেন যেখানে লেখা আছেঃ
মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা, অধিকার এবং সন্মানের দাবী আদায়ের লক্ষে অজিত রায়ের আমরণ অনশন
তিনি অনশন শুরু করেছেন আজ সকাল দশটা থেকে।
কিছু লিফলেট ছিল তাঁর পাশে রাখা। একটা তুলে নিলাম আলগোছে। মোট দশটি দাবী উনি রেখেছেন-
১. মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সকল রাষ্ট্রীয় পরিবহনে (ট্রেন, বাস, লন্চ, স্টীমার) বিনা ভাড়ায় ভ্রমন এবং সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা, পথ্য ও ঔষধ দিতে হবে।
২. মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার টাকা) উন্নিত করতে হবে এবং প্রতি বছর বোনাস ভাতা দিতে হবে।
৩. অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পোষ্যদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিখরচায় লেখা পড়ার সুযোগ দিতে হবে।
৪. মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্যদের চাকুরী ৩০% কোটা নিশ্চিৎ করার লক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কতজন প্রার্থী এবং কতভাগ কোটা পূরণ করা হয়েছে, প্রতিটি নিয়োগে তা স্বচ্ছতার সাথে প্রকাশ করতে হবে।
৫. মহান জাতীয় সংসদে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০% আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে।
৬. ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের পূণর্বাসন এবং রেশনের দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে পূর্ণমন্ত্রী দিতে হবে।
৮. ৭ নং সেক্টরের ১ম সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর নাজমূল হককে (১৯৭১ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর ভারতের শিলিগুড়িতে জীপ দূর্ঘটনায় নিহত) "জাতীয় বীরের" খেতাবে ভূষিত করতে হবে।
৯. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
১০. মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, সোরওয়ার্দী উদ্যানে ৭ই মার্চের বঙবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনের স্থান এবং পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পনের ঐতিহাসিক স্থানটি থেকে শিশুপার্ক স্থানান্তরিত করে দ্রুত সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. মহান জাতীয় সংসদ চত্বরে কবর স্থান বানানো বন্ধ করতে হবে এবং ইতিপূর্বে স্বৈর শাষকগন স্বাধীনতার বিরোধীদের এই স্থানে সমাহিত করেছে, তাদের সমাধি অন্যত্র দ্রুত স্থানান্তরিত করে মহান জাতীয় সংসদের পবিত্রতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
পোস্টারে দাবীগুলো লেখা রয়েছে তার কিছু ছবি-
লেখাটি শেষ হয়েছে এভাবে-
অজিত রায় (মুক্তিযোদ্ধা)
গ্রামঃ গোহাড়া,
উপজেলাঃ হাকিমপুর
জেলাঃ দিনাজপুর।
মুঠো ফোন নাম্বারঃ- ০১৭২৬-৩১৫২০৭
স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হয়ে গেলেও একজন মুক্তিযোদ্ধা অজিত রায়কে কেন মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা, অধিকার এবং সন্মানের দাবী আদায়ের লক্ষে আমরণ অনশন কর্মসূচীতে যেতে হয় ভেবে লজ্জিত হই, মাথা নুয়ে পরে।
আমি ফিরে আসি...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।