মোতালেব মিয়া !! মোবাইল (ভ্রাম্যমাণ) ভিক্ষুক... রাজধানীর চলন্ত বাসগুলোতে ঘুরে ঘুরে করুণসুরে ভিক্ষা করে বেড়ায়...
...মগবাজার থেকে নিহানদের বাসে উঠেছে মোতালেব মিয়া। সুস্থভাবে বাসে লাফ দিয়ে উঠেই মুখটা করুন করে ফেললো, পেটে হাত দিয়ে পিঠটা অদ্ভুতরকমের বাকা করে ফেললো !!
... চিকন পাইপের মতো হাত পা আর সাদা শার্ট ময়লার আস্তরণে ঘিয়া কালারে রূপ নিয়েছে। এটাই মূল অস্ত্র মোতালেব মিয়ার...বয়স হয়তো ত্রিশ-পয়ত্রিশ হবে বড়জোর কিন্তুরোগ শোকের কারনে পঞ্চাশোর্ধ বুড়ো মনে হয় !!!
...
...বাসের পরিস্থিতি বুঝে কথা বলে উঠলো। সুন্দর করে সালাম প্রথমেই... “আব্বা-আম্মারা,আমি রোগা মানুষ, ঠিক মতো হাঁটতে চলতেপারি না... কাজ কাম করতাম পারি না। আর কয়দিন পরে ঈদ আইবো... ছোড মাইয়াডারে বাপ হইয়া ঠিক মতো খাওনও দিবার পারি না.. আপনারা একটু এই অভাগা বাপটার দিকে মুখ তুইলা তাকান... ” (কেঁদেই দিলো প্রায় মোতালেব মিয়া)
...কথাগুলো বলতে বলতেই চক্কর দেয় বাসে।
রমজান মাসে ভালো দান ছদকা করে মানুষ...বাস চলছে। টাকা উঠিয়েবাসের দরজায় গিয়ে দাড়ায় মোতালেব... মহাখালি আসার আগে আর বাস থামবে না। বাসের কন্ডাক্টরের সাথে মোতালেব মিয়ারএখন চলছে খুচরা টাকার বিজনেস !!! এখন মুখের সেই করুন ভাবটা নেই আর...
... মোতালেব মিয়ার পিছে পিছে নিহান ও নেমে গেলো বাস থেকে। “মামা” বইলা ডাক দিতেই আবার সেই করুন মুখ করে পিছন ফিরে তাকালো মোতালেব মিয়া...
...একটি টং দোকানে বসে আছে নিহান আর মোতালেব মিয়া !! শুধু চা খাওয়ার কথা থাকলেও মনের আনন্দে কলা-পাউরুটি খাচ্ছে মোতালেব মিয়া !!
- "চায়ে কি আর পেট ভরে কন ??"
নিহানের ইচ্ছা, ঈদ উপলক্ষে মোতালেব মিয়ার মেয়ের জন্যে একটাজামা কিনে দিবে ফুটপাত থেকে...ছাত্র মানুষ, সাধ থাকলেও সাধ্য নেই ভালো কিছু দেওয়ার... কম দামে পাইলে একটা জুতাও কিনে দিবে...
- তা মামা, আফনার মাইয়া কত্ত বড়??
-( দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মতালেব মিয়া) মাইয়া তো নাই ভাইজান। ।
ঢাকায় আইসা একটা বিয়া করছিলাম, সেই ঘরে একটা ছেলে ছিল। । বউ পোলারে লইয়া গেছে গা...
- তাহলে যে বাসে মেয়েরে খাবার দিতে পারেন না কইলেন??
-(মোতালেব মিয়া হাঁসতে হাঁসতে কইলো) ভাই, এডা কইলে ব্যাবসা ভালা হয়...আগে পোলার কথা কইতাম। পোলা থেইকা মাইয়ার কথাতে ব্যাবসা ভালা হয়...
...মোতালেব মিয়ার সাথে আরও অনেক কথা হয় নিহানের। একজনে হোটেলে কাম দিতে চাইছিলো, কষ্ট করতে ভালো লাগে না তাই ভিক্ষা করে... মোতালেব মিয়ার মেয়ের জন্যে আর জামা কিনে দেওয়া হয় না নিহানের... ঝিম মেরে বসে থাকে টং দোকানে।
ব্যাবসার তখন পিক আওয়ার, সময় নষ্ট করা যাবে না মোতালেব মিয়ার...রাস্তায়এসে দাঁড়ানো আরেকটা বাসে দৌড় দিয়ে উঠে গেলো মোতালেব মিয়া...
দূর থেকে নিহান দেখলো, পিঠ বাকা করে আবার মুখ করুণ করে ফেলেছে মোতালেব মিয়া...একটু পরই তার মেয়ের গল্প বলবে !!!
(একটি সত্য ঘটনার আলোকে লিখা...)
Collected.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।