আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাকশালের বৈধতা এবং শেখ মুজিব ও একজন জিয়া



প্রথমে বলি শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা( যেটা জিয়া দিয়েছেন) ঘোষণা দিতে পারেন আর না পারেন প্রটোকল অনুযায়ি ওনি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রথম কান্ডারি, আর এই ক্ষেত্রে জিয়াকে মুজিবের সাথে কখনোই তুলনা চলে না, আর তুলনা করা একেবারেই বোকামি কিন্তু গণ মানুষ কাকে কিভাবে দেখবে ? কে বেশি মহান তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার এখানে প্রটোকল আর পদমর্যাদা নিয়া চিল্লা-চিল্লি করে লাভ নাই। এক জন জিয়াকে শ্রেষ্ট্র মনে করতেই পারে তাকে জোর করে কখনো অধিক মুজিব ভক্ত বানানো যাবে না । এখন আসি বাকশালে, অনলাইনে ইদানীং অবশ্য এর আগেও হয়েছে, আম্বী লীগাররা তাদের ঐতিহাসিক লজ্জা ঢাকতে বাকশালের বৈশিষ্ট এবং বাকশালের কেতাবি মহিমা প্রচার করে থাকেন । শাসনব্যবস্থা হিসাবে বাকশাল কেমন ছিল আমি তাতে যাবো না, আমি শুধু বলবো বাকশালের বৈধতা নিয়ে । এখন, দেখি বাকশাল কিভাবে পাস হয় ।

“সংসদের ২ঘন্টা ৫মিনিট স্থায়ী ঐ অধিবেশনে স্পীকার ছিলেন আব্দুল মালেক উকিল। বিলের বিরোধিতা করে তিনজন বিরোধী ও একজন স্বতন্ত্র সদস্য ওয়াক আউট করেন। এরা হলেন জাসদের আবদুল্লাহ সরকার, আব্দুস সাত্তার ময়নুদ্দিন আহমেদ ও স্বতন্ত্র সাংসদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। আতাউর রহমান খান আগেই সংসদ অধিবেশন থেকে বেরিয়ে আসেন। বিলটি উত্থাপন করা হলে আওয়ামী লীগের দলীয় চীফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন মৌলিক অধিকার স্থগিত রাখার প্রেক্ষিতে কোন প্রস্তাব উত্থাপনের সুযোগ না দেবার আহ্‌বান জানান।

এই পর্যায়ে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের জনাব আতাউর রহমান খান বৈধতার প্রশ্ন উত্থাপন করে আলোচনার সুযোগ দানের জন্য স্পীকার জনাব মালেক উকিলকে অনুরোধ করেন। কিন্তু স্পীকার তা নাকচ করে দেন। পরে কন্ঠভোটে চীফ হুইপের প্রস্তাব গৃহিত হয়। ” -অজানা উক্তি, ফেবু পেইজ থেকে পেয়েছে কিন্তু লেখকের নাম পায় নি । কেন বাকশাল অবৈধ ? আপনি, কোন ভাবেই গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত হয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষার শপথ নিয়ে এভাবে আমূল পরিবর্তন আনতে পারেন না, এমনকি এই পরিবর্তন নূন্যতম গ্রহনযোগ্য হতে পারে না এ জন্য যে ১৯৭৩ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতিকে এর কোন ইশারা ইঙ্গিত পর্যন্ত দেয় নি, শুধু মাত্র ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য এই বিধান জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।

হ্যা, বৈধ ভাবে বাকশাল করা যেত, যার জন্য অবশ্যই গণভোট আহ্ববান করা উচিত ছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ তা করে নি ( ওহ ফিলিং সো সুইট- চাইলে ৭৩ মার্কা ভোট দিয়ে তা করতে পারতো ) । অতএব, যারা বাকশালের মহিমার সুর তোলেন তাদের বলছি, বাকশাল হচ্ছে গণতন্ত্রকে পালা ক্রমে ধর্ষণ, ওপেন ধর্ষণ , যারা নূন্যতম গণতান্ত্রিকবোধ নিজের মধ্যে লালন করে, তারা কখনো বাকশালের প্রশংসা করতে পারে না । প্রেসিডেন্ট জিয়া!! বৈধ না অবৈধঃ যে পার্লামেন্ট গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ও গণতন্ত্রের শ্রেষ্টত্ব ঘোষণার জন্য ছিল, সেই পার্লামেন্টে গণতন্ত্র মৃত্যু বরণ করলো, তাই সেই পার্লামেন্টের কাছে আর গণতন্ত্র প্রেমি জনতার আর চাওয়া ও পাওয়ার কিছুই রইলো না? এখন জটিল প্রশ্ন ঐ অবস্থায় কিভাবে বৈধ ভাবে গণতন্ত্র ফিরে আসা সম্ভব ছিল ? ১। ঐ কলংকিত পার্লামেন্ট ভুল বুঝতে পেরে লাইনে আসলে ? ২। গণঅভ্যুত্থানে বা বিপ্লবে ঐ সরকারের পতন হলে ।

কিন্তু, দুঃখ জনক ভাবে কোনটিই হয় নি ? একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা কারা হয় সপরিবারে, যার মাধ্যমে বাকশালের পর জাতি আবার আরেকটি কলঙ্কের অংশীদ্বার হলো । ঐ সময়ে গণঅভ্যুত্থানে মুজিব সরকারকে উৎখাত করাই ছিল গণ মানুষের চাওয়া, যা হলে আওয়ামী লীগ সারা জীবনের জন্য মৃত্যু বরণ করতো কিন্তু তাদের সৌভাগ্য ১৫ ই আগষ্টের নির্মম হত্যা কান্ড তাদের পতিত জন সমর্থনকে স্থায়ী করে ফেলে জাতির বিশাল একটা অংশের মধ্যে । এরপর, দেশে শুরু হয় অচলাবস্থা অভ্যুত্থান আর পাল্টা অভ্যুত্থান, এক সময় ৭ই নভেম্বরের সেই সিপাহী-জনতার বিপ্লব সংঘঠিত হয়, প্রেসিডেন্ট জিয়া ক্ষমতা নেন, এখন তার ক্ষমতা আরোহণকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন আসে যে ওনি কি লিজিটিমেট শাসক ? অথচ ওনিই বাকশাল বাতিল করে , দেশে আবার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন । এখন, আবারো প্রশ্ন, গণতন্ত্রহীন ঐ অবস্থায় কিভাবে বৈধ শাসক আসতে পারে ??? একটা এথিকাল দিক হলো, ঐ সময় বিচারবিভাগ যদি ঐ সরকারকে সেইফ পাস দেয়, তাহলে তা বৈধ হওয়ার জন্য একটি ইলেকশন করতে পারে । বাস্তবে তাই, হয়েছে ১৯৭৮ সালে একটি সংসদ ইলেকশন হয়, আর সেই সংসদই আবার দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনে, যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিনটা গ্রুপ অংশ নিয়েছে , আর সব চেয়ে বড় গ্রুপ ড কামালের নেতৃত্বে ৫৪টি আসন নিয়ে বিরোধী দলে ছিল ।

তাছাড়া জাসদ,ন্যাপ, কম্যুনিস্ট পার্টি সহ সব দল ঐ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে । বস্তুত আমার মতে যার জন্য প্রেন্সিডেন্ট জিয়া-উর রহমান একজন নিরঙ্কুশ বৈধ প্রেসিডেন্ট । যে লজিকে জিয়া অবৈধ ??? এ জন্য জিয়াকে অবৈধ শাসক বলা হয় যে ওনি কোন বৈধ সরকার ছিলেন না, তাই ওনার দ্বারা কোন নির্বাচন হতে পারে না, কিন্তু নেসেসিটি অব ডকট্রিন অনুযায়ী ঐ অবস্থা বাকশাল ছোঁড়ে ফেলতে হলে? এ ছাড়া কোন উপায় নেই , কারণ ঐ সময় নির্বাচিত সরকারের বাকশালই ছিল সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা । আর , এখানে কাউন্টারে আরেকটি লজিক দাঁড় করাতে পারি যে “ মুউনু-ফখরু কী সাংবিধানিক সরকার ছিল ?” না তারপরও কেন, তাদের নির্বাচনের ফসল আওয়ামী লীগ বৈধ । কেন ঐ নির্বাচন বৈধ নয়, কারণ তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য বিচার বিভাগ থেকে সেইফ পাস নিয়েছে ।

সো একই লজিকে জিয়াউর রহমান একজন বৈধ প্রেসিডেন্ট এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রে নতুন প্রাণ দানকারী । আর, আমি বিশ্বাস করি, ৫ম সংশোধনী বাতিলের রায়ে ন্যায় বিচার হয় নি। -জিয়া মুক্তিযুদ্ধাদের হত্যা করেছে লাল-বিপ্লবের বাশিওয়ালা কর্ণেল তাহের সহ ব্লা ব্লা , এই ধরণের ক্যাচালে আমি রাজি না, সেই দিকে যাবেন না । সেই ক্যাচাল তুলতে হলে এইখানে যান এরপরও আম্বী লীগাদের নিকট জিয়া অবৈধ সামরিক শাসক, তাদের কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে , মুজিব ও জিয়া নিয়ে কিছু কথা বলি ?? হে, আওয়ামী লীগাররা , তোমারা কী জানো ? এই বাংলাদেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পথ চালা নিয়ে মুজিব একজন বাতিল মতের প্রবক্তা । ওনি নিজ হাতে ওনার দল ও ওনার সারাজীবনের সংগ্রামী দর্শন হত্যা করেছেন ।

আহা আহা , আমাকে এখন গালি দিবে ? দাও চটি পিয়াল ভক্তের গালিই অস্ত্র । “"আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের পথ দেখানো বাংলাদেশে বাস করি না , আমারা জিয়াউর রহমানের পথ দেখানো বাংলাদেশে বাস করি । বুদ্ধিবেশ্যারা এটা স্বীকার না করলেও কিছু যাই আসে না । দ্বি-লীয় সিস্টেমে বিএনপিকে মুসলিমলীগের মত বিলীন করে দেওয়া হচ্ছে দিবা স্বপ্ন । শহরে তুলনামূলক সচেতন নাগরিক বেশি, তাই চার সিটি নির্বাচনে বিএনপিকে মুসলিম লীগের মত বিলুপ্ত করার দিবা স্বপ্ন আশা করি পর্যবেক্ষণ করবেন ।

১। বাংলাদেশের প্রধান দুইটা দল। আওয়ামী- বিএনপি । শেখ মুজিবুর রহমান তার দল আওয়ামী লীগকে হত্যা করেছেন, বাকশালের মাধ্যমে , জিয়া সেই দলকে আবার জীবিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন , আর বিএনপি তো তার নিজের হাতে গড়া । অতএব, আজকের বাংলাদেশের রাজনীতি জিয়াউ রহমানের দেখিয়ে দেওয়া ।

২। শেখ মুজিবুর রহমান সকল-শিল্প কারখানা জাতীয়করন করেছিলেন, মালিকদের বাধ্য করেছিলেন তার নিজের কারখানা জাতীয়করণ করতে, জিয়া এসে বেসরকারি কারখানাগুলো মালিকদের নিকট ফিরিয়ে দেন । সুতুরাং বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতির কাঠামো শেখ মুজিবের আদর্শের ন্যায় নয় বরং জিয়ার চিন্তা ও ধারণার । ৩। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা লাভের সবচেয়ে বড় সেক্টর রেমিটেন্স যার ৭০ ভাগ আসে মধ্য-প্রাচ্যের দেশ থেকে যার সুচনা হয়েছিলো জিয়াউর রহমানের একান্ত চেষ্টায় ।

৪। স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক এগুলো জিয়াউর রহমান চালু করেন । ৫। শেখ মুজিবের তৈরী বাংলাদেশ চলছে জিয়াউর রহমানের দেখানো পুঁজিবাদি মিশ্র অর্থনীতির চাকায় । আজকের, এই বাংলাদেশে শেখ মুজিবের সংগ্রামের ফসল কিন্তু তা চলছে জিয়াউর রহমানের দেখিয়ে দেওয়া পথে, একি লজ্জা জাতির জনকের চিন্তা-চেতণা তার সংগ্রামের ফসল বাংলাদেশে আজ বাতিল ” এইটা, গত মে মাসে তোলাপোকা আজাদের স্ট্যাটাসে কমেন্ট করা আমার এক ফেবু বন্ধুর কমেন্ট, যেখানে সে বিএনপিকে বিলুপ্ত ও জনবিছিন্ন দল হিসাবে উপস্থাপন করেছিলো !!! কমেন্টটি ছিল সেই স্টাস্টাসের তার জবাব ।

আমি, শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক বলি না , ছাগুদের মত ইব্রাহিম ( আ) এর যুক্তিতে নয়, আহমদ ছফার যুক্তিতে যার জন্য তাকে আওয়ামী লীগ মৃত্যুর পর বুদ্ধিজীবি গোরস্থানে দাফন করতে দেয় নি ছফা: আমি তোমার বাবাকে বাবা ডাকতে যাব কোন দুঃখে? তোমার বাবাকে পৃথিবীর সমস্ত লোক বাবা ডাকলেও আমি ডাকবো না, তাঁকে অনেকে জাতির পিতা বলে থাকেন, আমি বলি না, একই কারণ। মুক্তিযুদ্ধ আমার মা। আমীন: তা হলে পিতা কে? ছফা: সময়। সময়ের দাবি এবং পাকিস্তানীদের কার্যকলাপ। ৪৭ এর পর হতে দেশের উদরে জন্ম যন্ত্রণা শুরু হয়েছে, যা ১৯৭১ এর মার্চে প্রসব বেদনায় প্রদীপ্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে।

" বইঃ আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীব লেখক: মোহাম্মদ আমীন, সেখানের একটি সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া। পরিশেষে বলি, শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালির একজন শ্রেষ্ট সন্তান, ওনি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জাগিয়ে তুলেছেন, কিন্তু ওনিও একজন মানুষ তারও ভুল আছে, ওনি পূজনীয় ও সমালোচনার উর্ধ্বে এমন কোন ব্যক্তিত্ব নন । ওনাকে সম্মান করি । ঠিকই একই ভাবে জিয়াউর রহমানও সমালোচনার উর্ধ্বে নয়, কিন্তু হাম্বারা শেখ মুজিবকে এমন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে নিয়ে যায় যা রীতিমত ধর্মীয় আবেগকে হার মানায় ।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.