বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের পূর্বে দেশের সকল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্থা করবার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। জামায়াত তার অতীত ইতিহাসের সাজা ভোগ করছে। বিত্রনপি আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাবার একমাত্র প্রতিপক্ষ হবার কারনে তাকেও আওয়ামী লীগের দমন পীড়নের স্বীকার হতে হবে। বিত্রনপি এবং জামায়াতের কার্যালয়ের তাই একই পরিনতি হয়েছে। দুই কার্যালয় কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।
দলগুলোর হাতে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বহাল রাখতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, তাদের উপর চালানো ভয়াবহ রাজনৈতিক দমনপীড়নকে জারি রাখবার জন্য যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী ইস্যুকে। যুদ্ধাপরাধের ইস্যু ছাড়া শেখ হাসিনার হাতে আর কোন কার্ড নেই। তাই এর অতি ব্যবহার ছাড়া উপায় নেই।
আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবি মহলের মাঝে এই একি যুক্তির পুনঃপুন ব্যবহার পরিলক্ষিত হতে দেখা যাচ্ছে।
চ্যানেল ৭১ এর টকশোতে বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষিতকে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান কিছুদিন আগে বলেছেন, এখন যা ঘটছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার নিউক্লিয়াসে আছে এই যুদ্ধাপরাধের বিচার। শুধু তিনি নন তার সাথে আছে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবি মহলের অনেকে। কিন্তু এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক কৌশলের কি কি বিষয়ের ফলাফলের ব্যপারে এখনও সন্দিহান এবং সেক্ষেত্রে তার করনীয় কি বা সম্ভাব্য কি করতে যাচ্ছে সে বিষয়ের দিকেই নজর ফেরাতে হবে।
প্রথমেই আসা যাক আগামী দশম নির্বাচনের প্রসঙ্গে। আওয়ামী এবং তার রাজনৈতিক শরিকরা বাজারে বহুলভাবে প্রচার করে আসছে যে যুদ্ধাপরাধের যে ট্রাইবুনাল আছে তাকে রক্ষার জন্য তাদের বিজয়ী হয়ে আসা দরকার।
কিন্তু কিভাবে? দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিচারে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। যদি কোন নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে বিত্রনপি এবং তার শরীক ১৮ দল ক্ষমতায় আসবে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নিজেও নিশ্চিত। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চোদশ সংশোধনী এক বড় বাধা হিসেবে ইতিমধ্যেই তার প্রতিপক্ষের কাছে প্রতিয়মান হয়েছে। তাই বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে বিত্রনপি নির্বাচনে আসবার ক্ষেত্রে তার অনাগ্রহের কথা জানিয়ে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনের মাঠ সাজানোর জন্য জাতীয় পার্টিকে ব্যবহার করার কথা ভেবে এসেছিল।
কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রধান এবং তার প্রতিনিয়ত অনিশ্চিত সিদ্ধান্তের কারনে আওয়ামী লীগ থেকে বহু চেষ্ঠার পরও তাকে দশম জাতীয় নির্বাচনে আনা যায় নি।
জাসদের(ইনু), ওয়ার্কাস পার্টি, জাতীয় পার্টি(মঞ্জু) এবং তরিকত ফেডারেশন সহ বামপন্থী আর ইসলামী কিছু গ্রুপকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে যাচ্ছে। তবে ইতিমধ্যেই কিছু কিছু আসনে একক প্রার্থী হবার কারনে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত হয়ে গেছে। একে ইলেকশান না বলে সিলেকসান বলাই ভাল। ৫ই জানুয়ারীর পূর্বে আগামী লীগ তার বিজয় সুনিশ্চিত করেছে।
এই সিলেকশান বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জন্য ভয়াবহ রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
এই পরিস্থিতিকে সামাল দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ এবং তার শরিকরা বিদ্যমান রাজনৈতিক আন্দোলনের ব্যাপারে “জঙ্গীবাদের” ধোঁয়া তুলেছেন। শুধু তাই নয় বর্তমানে যে ট্রাইবুন্যালের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে তাকে ব্যবহার করে বলতে চাইছেন আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসার সাথে এই যুদ্ধাপরাধের বিচার হবার বিষয়টা সংযুক্ত। তাই আমাদের যত বিরোধিতা হোক না কেন তাকে “জঙ্গীবাদী” লেবেল দিয়েই সারা পৃথিবীর কাছে তুলে ধরতে হবে। আগামী নির্বাচন নাকি “জঙ্গিবাদ” এই সিলেবাসের মধ্যে যে কোন একটিকে জনগনকে মেনে নিতেই হবে।
যদি জঙ্গিবাদ মেনে না নেন তাহলে আপনাকে মেনে নিতে হবে সিলেকশান, অন্যথায় জঙ্গিবাদ তকমা নিয়ে রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের মুখোমুখি হতে হবে।
ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবি মহল গনতন্ত্রকে রি-ডিফাইন করবার কথা বলছেন! এমনই শুনলাম ইন্ডিপেনন্ডেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরাফাতের মুখে। রি-ডিফাইন করবার মধ্যে দিয়ে আরাফাত যেটা বুঝাতে চাইলেন তাহল বাংলাদেশের “গনতন্ত্র” নতুন করে শিখতে হবে এবং এই শেখানোর দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি আর তার আওয়ামী লীগ। যাই হোক, গনতন্ত্র নামক এক আজব চিড়িয়াকে এখন শিখতে হবে জেনে আমোদিত বোধ করছি। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে শাসক শ্রেনীর বিবাদমান দুইপক্ষ ব্যতীত অন্য অনেকেই আমাদেরকে গনতন্ত্র শিখেয়েছেন।
তাদের ফলাফলগুলো খুব ভাল হয়নি।
আওয়ামী লীগ তার সিলেকশান পর্বকে যদি শক্তিশালী ভিত্তি দিতে চায় তাহলে বাংলাদেশকে স্বাভাবিক রেখে অস্বাভাবিক এই কাজটা সে করতে পারবে না। তাই তাকে ফিরে যেতে হবে বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের নবম ক ভাগে বর্নিত জরুরী অবস্থা জারীর বিধানাবলীতে। তবে বলে রাখা ভাল যে বাংলাদেশে এখনও জরুরি অবস্থা চলছে। কারন হিসেবে যদি আমরা ৩৭,৩৮,৩৯ অনুচ্ছেদের দিকে তাকাই তাহলে খুব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
জরুরী অবস্থা জারীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরের প্রয়োজন পড়ে। শেখ হাসিনার সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা আছে বলে আমার জানা নেই। ১২০ দিনের জরুরী অবস্থা জারীর ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ভেতরে ইতিমধ্যেই আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগের অনেক নীতিনির্ধারকের বিভিন্ন আলোচনায়ও সে ব্যাপারটা স্পষ্ট হতে শুরু করছে। তাই আরাফাতের গনতন্ত্র রি-ডিফাইন একটি বাচালতা ছাড়া আর কিছু নয়।
মৌলিক অধিকার হরন করবার ক্ষেত্রে সাংবিধানের জরুরি অবস্থার যে বিধানাবলী আছে তার ব্যবহার মানে গনতন্ত্র রি-ডিফাইন কিনা সামনে এ ব্যাপারটা পরিষ্কার হতে শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা কি করতে চাচ্ছেন? দেশকে পরিকল্পিতভাবে অরাজক করে তিনি ক্ষমতা নিজের হাতে রেখে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালকে কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। তার এই পরিকল্পনাকে বাস্ববায়নের জন্য আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারতের গ্রীন সীগন্যাল তিনি পেয়েছেন। কিন্তু ভারতের বাইরে আন্তর্জাতিক মহলে এর সিলেকশানের গ্রহনযোগ্যতা থাকবে না।
কিন্তু এই অনৈতিক কাজকে বহাল তবিয়তে রাখতে রাষ্ট্রকে আরো ফ্যাসিবাদি করে তুলতে হবে।
এখানে নিয়মতান্ত্রিক বিরোধিতাকে দমন বা নির্মূল করতে হবে। এর প্রথম নজির হিসেবে মিডিয়াগুলোর উপর বাড়তে পারে সরকারী নিয়ত্রন যার ফলাফল আমরা এখনই পরিলক্ষিত হতে দেখছি। মিডিয়ার টকশোগুলো নিয়ত্রনের জন্য অলরেডি সরকার একধরনের নীতিমালার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে। টকশো থাকবে কিন্তু সেখানে আওয়ামী লীগ বিরোধিতার পরিবর্তে থাকবে আওয়ামী কীর্তি স্তুতি। টিভি মিডিয়ায় টকশোগুলোতে কারা কথা বলবেন সেক্ষেত্রে খুব একটা রাখডাক না করেই বলা যায় আওয়ামী বুদ্ধিজীবিকুলের প্রতিনিধিরা।
তারা আমাদেরকে জনগনের চিন্তা আর বিবেকের স্বাধীনতার পরিবর্তে শেখাতে চাইবেন আওয়ামী লীগ এর ক্ষমতায় থাকার অর্থ গনতন্ত্র এবং পাইকারীহারে রাস্তায় মানুষ মারা মানে “আইনশৃংঙ্খলা রক্ষা”। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষাকে শিকার হতে হবে রাবার বুলেট, র্যা ব আর বিজিবির গুলি।
আওয়ামী লীগের এক নেতা ইতিমধ্যেই এই অবস্থা সৃষ্টির কথা বলেছেন। এছাড়া কিছুদিন আগে শেখ হাসিনার উপদেষ্ঠা গ্রুপ তাকে এই পথে হাটতেই হবে এধরনের বুদ্ধি দিয়েছেন বলেই আমরা জানি। তাই চলমান আন্দোলনকে দমাতে কত মানুষের লাশ পড়বে তা বলতে পারবো না।
তবে সেজন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। “কোন দেশে কফিনের ব্যবসা বাড়ার লক্ষন উচুমানের গনতন্ত্র” এটাই গনতন্ত্রের সেই কাঙ্খিত রি-ডেফিনেশন যা কিছু অধ্যাপক আমাদের ইতিমধ্যেই বোঝাতে চেয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধের বিচারকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল। এর আগে স্বৈরতন্ত্রের ব্যাপারে “অখুশি” না হবার যেমন কৌশল ছিল। নীতি আর কৌশলের পার্থক্য নেই এই ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে রক্ষীবাহিনীর আমল যারা নিজেদের স্বচক্ষে দেখেন নি এবার তারা সেটাকে দেখবেন। আওয়ামী লীগ তার অঙ্গসংগঠনকে অস্ত্র সাপ্লাই করবার জন্য ইতিমধ্যেই বিশেষ কার্যক্রম গ্রহন করতে যাচ্ছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং সেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীদেরকে বিশেষ ট্রেনিং আর অস্ত্র দিয়ে নামানো হবার কথা শুনতে পাচ্ছি। যদিও অবাক হবার কিছু নেই, বাকশালের সময় এই ধরনের ঘটনা দেখা গেছে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনে গঠিত সরকারকে রক্ষায় রাস্তায় ইতিমধ্যে নামানো হয়েছে বিজিবি।
এই সরকার জনগনের ঘাড়ের উপর চেপে রাখতে কিলিং মিশনে নেমে গেছে রাষ্ট্রের বাহিনীগুলো। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কঠোর হস্তে দমন করার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক হানিফ। জনগনের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু। বাংলা রাইখের উত্থান হল। (প্রথম কিস্তি)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।