সরকারের আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডে ক্রমশ সংঘাতের পথে এগুচ্ছে জাতীয় রাজনীতি। বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও রিমান্ডের ঘটনা রাজনীতিতে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিরোধীদলীয় নেতাকে বাড়িছাড়া করা, সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার ও নির্যাতন, মগবাজারে গাড়ি পোড়ানোর এক মামলায় ১০ জাতীয় নেতাকে গ্রেফতার ও রিমান্ড, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার বিরুদ্ধে বিষোদগার ও বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, হরতাল ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বিরোধী দলকে মাঠে নামতে না দেয়াসহ নানা ইস্যুতে পরিস্থিতি ক্রমশ সংঘাতময় হয়ে উঠছে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। সমঝোতা কিংবা জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্যের সম্ভাবনাও কমে গেছে।
গত ২৭ জুনের হরতালে মগবাজারে গাড়ি পোড়ানো মামলায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কমপক্ষে ১০ জাতীয় নেতাকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়া হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক রাখা হয়েছে ৬ জন জাতীয় নেতাকে।
এসবের মাধ্যমে বিরোধী নেতৃত্বে শূন্যতা সৃষ্টিতে সরকার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান সময়ের ঘটনাগুলো স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের পরিস্থিতির চেয়েও ভয়াবহ বলে তাদের অভিযোগ। সরকারের ব্যর্থতার সব ইস্যুতেই হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে পুলিশ কিংবা সরকারি কর্মকর্তারা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করছে।
আর এসব মামলায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিরোধী দলেরও রাজপথে কঠোরতা প্রদর্শনের বাইরে কোনো পথ খোলা নেই। পুলিশ, র্যাব দিয়ে হরতালের মতো কর্মসূচি ঠেকাতে সরকারের উগ্রতায় সংঘাতের পথই উত্সাহিত হচ্ছে। গত ৩০ নভেম্বর হরতালের আগের দিন রাজধানীতে বিক্ষিপ্তভাবে প্রায় দু’ডজন গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা এরই প্রমাণ বহন করে। গত রোববার চট্টগ্রামে হরতালের পক্ষে কোনো মিছিল-সমাবেশও করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ঘর থেকেই বের হতে না দেয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি নেতিবাচক বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। এটা সংঘাতের রাজনীতিকে উস্কে দেবে বলে তাদের অভিমত।
গত অক্টোবরের শেষের দিকেও বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এক ব্রিফিংয়ে জাতীয় সংসদ কার্যকর করতে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এরপর ঘটে যাওয়া দুটি বড় ইস্যু বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করা এবং সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের পর এ পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন।
বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
গত শনিবার চীন সফর-যাত্রায় ঢাকা বিমানবন্দরে পুলিশি বাধায় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সরকারকে পুরোপুরি ব্যর্থ অভিহিত করে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান জানান। এদিকে বিমানবন্দরে ঢুকতে বাধা দেয়া ও ধস্তাধস্তির ঘটনায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমুদ্দিন আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ অজ্ঞাত আরও দুই ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। রোববার গভীর রাতে আমানউল্লাহ আমানের ডিওএইচএসের বাসায় পুলিশ হানা দেয়। তল্লাশি চালানোর সময় তিনি বাসায় ছিলেন না।
এভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এমনকি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা মামলায়ও তাদের হয়রানি চলছে। দু’আমলের অসংখ্য মামলার আইনি লড়াই নিয়েই ব্যস্ত রাখা হচ্ছে বিরোধী দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।
গ্রেফতারের মাধ্যমে বিরোধী নেতৃত্বে শূন্যতা সৃষ্টির চেষ্টা : দুটি ইস্যুতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও অন্যতম বৃহত্ দল জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ আর গত ২৭ জুনের হরতালের আগের দিন মগবাজারে গাড়িতে আগুন দেয়ার অপরাধে সরকারের গ্রেফতার অভিযান চলছে। শুধু গাড়িতে আগুন দেয়ার মামলায়ই বিএনপি ও জামায়াতের ১১ নেতাকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়া হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধে আটক রাখা হয়েছে ৬ নেতাকে।
শুধু গাড়িতে আগুন দেয়ার মামলায় এ পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এমপিকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়া হয়। এ মামলায় মির্জা আব্বাস ৯৯ দিন কারান্তরীণ ছিলেন। রিমান্ডে নেয়া হয় একাধিকবার। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এই গাড়ি পোড়ানো মামলায় গত ১৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের সময়ই তাকে মেরে ফেলার জন্য অমানুষিক নির্যাতন করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। নির্যাতনে অসুস্থ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আদালতে হাজির করে ওইদিনই পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। গত রোববার তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো মামলায় চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলকেও রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও রফিকুল ইসলাম খানকে মগবাজারে গাড়ি পোড়ানো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বার বার রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল।
আর এসব রিমান্ডে তারা গাড়ি পোড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের একাধিক ব্রিফিংয়ে অবহিত করেছেন। রিমান্ডে নেয়া হলেও জামায়াতের শীর্ষ ৫ নেতা গাড়ি পোড়ানো মামলায় জামিন পেয়েছেন এবং গতকাল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ তাদের জামিন বহাল রেখেছেন। তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক রাখা হয়েছে।
এক গাড়ি পোড়ানো মামলায় ১১ নেতাকে গ্রেফতার, রিমান্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে জাতীয় নেতাদের আটক রাখার বিষয়টিকে জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন অনেকে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, ‘এসব গ্রেফতার, রিমান্ড ও আটকের ঘটনা এদেশের জনগণ আগেও দেখেছে।
প্রতিবাদ ও প্রতিরোধও করেছে। বিরোধী নেতৃত্বে ভীতির সঞ্চার করতে তারা এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে জনগণ এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে। ’
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, বায়াত্তর-পরবর্তী সময়ে জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে সিরাজ শিকদারসহ অনেক জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। কারান্তরীণ করা হয়েছিল অনেককে।
ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনসহ অনেকে জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে বেড়িয়েছেন, আর শোষণহীন সমাজ গঠনের লড়াই করেছেন। আজকের বাংলাদেশেও আধিপত্যবাদীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ওই একই শক্তি প্রতিবাদী নেতৃত্বকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে। গ্রেফতার, নির্যাতন, রিমান্ড, গুপ্তহত্যা করা হচ্ছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী বলেন, টিপাইমুখে বাঁধ, চট্টগ্রাম বন্দর, ট্রানজিটসহ জাতীয় স্বার্থবিরোধী ইস্যুগুলোতে যারাই প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করছেন, সরকার তাদের টার্গেট করে গ্রেফতার-নির্যাতন চালাচ্ছে। সরকার মনে করেছে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি যেভাবে বিরোধিতা করে যাচ্ছেন, তাতে প্রতিবেশী দেশের জন্য ট্রানজিট ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ সরকার কোনোভাবেই দিতে পারবে না।
সরকারের ভ্রান্তনীতি বিরোধী অন্যতম বলিষ্ঠ নেতৃত্ব সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপিকে এজন্যই গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিন ঘটনায় ৪৮ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকার সমর্থিতদের মামলাগুলো ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সারাদেশে শুরু হয় বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা দায়েরের পালা। সরকারের ব্যর্থতার কারণে সংঘটিত নানা ঘটনায়ও হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেয় পুলিশ। আর এসব মামলায় গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের।
রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে মামলা এখন রুটিন ওয়ার্কের মতো চলছে।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দায়িত্ব নেয়ার পর বর্তমান সরকার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার নামে ৬ হাজার ৩৯২টি মামলা প্রত্যাহার করেছে। আর এতে কমপক্ষে ৫০ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী মুক্তি পেয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সমসংখ্যক মামলা দেয়া হয়েছে।
গার্মেন্টে বিক্ষোভ কিংবা স্থানীয় যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে।
এ সরকারের আমলে বড় চারটি ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার গার্মেন্ট কর্মী, সাধারণ মানুষ ও বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে গার্মেন্টে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলায় ২৫ হাজার শ্রমিককে আসামি করা হয়। গত ২৫ অক্টোবর জমি দখল নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় চার হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। আর এর দু’দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তৃতায় রূপগঞ্জের ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করার নির্দেশনা দেন।
গত ১১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে ছয় বিএনপি কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ বাদী হয়ে সাত কেন্দ্রীয় নেতাসহ দুই হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে।
এরপর রেলওয়ে কর্মচারীরা তিনটি এবং জেলা প্রশাসকের অফিসের এক কর্মচারী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও যুবলীগ নেতা অ্যাডভোকেট গোলাম হায়দার বাদী হয়ে একটি করে মোট আটটি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় ১৬ হাজার বিএনপির অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এ মামলায় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এমনকি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ ঘটনায় প্ররোচনা জোগানোর অভিযোগ আনা হয়। আর সরাসরি আসামি করা হয় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আসম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমকে।
টঙ্গীতে পুলিশের গুলিতে তিন গার্মেন্ট কর্মী নিহত হওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনায় ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর তিন হাজার শ্রমিককে আসামি করে মামলা দায়ের করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুই হাজারেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় ৬৫ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। প্রতিটি মামলায়ই হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হচ্ছে। ’ তিনি বলেন, ‘এ সরকার ভুলে গেছে হামলা-মামলা দিয়ে কোনো স্বৈরাচারী এদেশে ক্ষমতায় টিকতে পারেনি।
এবারও পারবে না। মামলায় আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি জনগণকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ’
সব ব্যর্থতাকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সঙ্গে তুলনায় জনমনে সন্দেহ : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তোড়জোড় শুরু করে। একপর্যায়ে যুদ্ধাপরাধ নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে।
এদিকে সরকারের সব ব্যর্থতা ও অক্ষমতাকে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভ, গার্মেন্ট কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, রূপগঞ্জে ভিটেমাটি রক্ষায় সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুত্-পানি সঙ্কটের প্রতিবাদে বিরোধী দলের কর্মসূচি কিংবা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অশ্লীলতাকে সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার ও রায় কার্যকর করার আগে দেশে যত ঘটনা ও অঘটন ঘটেছে তার প্রতিক্রিয়া প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-নেতারা একইভাবে বলতেন যে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করার জন্য এসব করা হচ্ছে।
এ প্রচারণায় সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন নাগরিকরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের ইস্যু ৪০ বছর ধরে চলে আসছে। যে কোনো সরকার এসে এটি বাস্তবায়ন করতে পারে।
কিন্তু আজকে একজন নাগরিক বাজারে গিয়ে যদি লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে উদ্বিগ্ন হন, তার দায় সরকারকে নিতেই হবে। জনঅধিকারকে অন্য ইস্যুর সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে চলবে না। ’
বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ পরিচালনায় সরকার নানা স্ট্রাটেজি নিতেই পারে। কিন্তু জনগণের অধিকারসংশ্লিষ্ট বিষয়কে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা বানানো অনুচিত। এ ধরনের কর্মকাণ্ড জনগণই সব সময় প্রত্যাখ্যান করে থাকে।
’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার আর ভোজ্যতেলের দাম এক পাল্লায় মাপলে চলবে না। ’
আমার দেশ খেকে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।