আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যালে নৃত্যের পর এবার মেশিন-দুর্নীতি : ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোটি টাকা গচ্চা



আবারও খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। অনিয়ম আর দুর্নীতির গ্যাঁড়াকলে পড়ে সত্যিকার অর্থেই এই প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা এখন ত্রাহি মধুসূদন। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, এটার দেখভাল করার জন্য সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। দেশে ইসলামচর্চার একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান, যার রয়েছে সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, সেইরকম প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে যদি বর্তমান মহাপরিচালকের মতো কাণ্ডজ্ঞানহীন এবং দায়িত্বে উদাসীন কর্মকর্তা বসানো হয়, তাহলে কী বিশাল সর্বনাশ হতে পারে, তারই জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত বর্তমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এর আগে এই ব্যক্তিটি দেশের খ্যাতনামা ওলামা-মাশায়েখদের সমাবেশে মার্কিন তরুণ-তরুণীদের দিয়ে ব্যালে ড্যান্স পরিবেশন করিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিয়েছিল দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষদের।

ইসলামের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত একটি মহত্ প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত্ করে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা যায়, তারই নজির ছিল ওটি। দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়, যার রেশ এখনও আছে। আগামী ২৬ মার্চ আসছে আরও একটি হরতাল। তারপরও আমাদের সরকার বাহাদুর এই আপদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঘাড় থেকে বিদায় করেনি। এই না করার ফলে কী হতে পারে, তারই কিঞ্চিত্ নতিজা এসেছে পত্রিকার পাতায়।

এবারের প্রসঙ্গ দুর্নীতি, অনিয়মের জঞ্জালে কীভাবে প্রতিষ্ঠানটি হাবুডুবু খাচ্ছে তারই কিছু বিবরণ। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নানা অনিয়মের ধারাবাহিকতায় এবার যুক্ত হয়েছে প্রেস মেশিন কেনার নামে কোটি টাকার দুর্নীতির এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ব্ল্যাংক রিসিভিং ফরমে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর গ্রহণ করে, অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে জালিয়াতির মাধ্যমে করা হয়েছে এই দুর্নীতি। ফলে ৪৫ লাখ টাকার প্রেস মেশিন কিনতে হয়েছে এক কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা দিয়ে। গচ্চা গেল বিপুল অঙ্ক।

দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে নিম্নমানের কমদামি মেশিন বুঝে রাখার জন্য মেশিন আসার আগেই এবং মেশিন না দেখে ব্ল্যাংক রিসিভিং ফরমে রিসিভিং কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর নিয়ে রাখে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, এজন্য সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি পরিবর্তন করে সেখানে মহাপরিচালকের অনুগত লোককে বসানো হয়েছে। দরপত্রে ছাপা মেশিন কেনার কথা বলা হলেও মেশিনের যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য কমদামি মেশিন বুঝিয়ে দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল। আবার যেদিন মেশিন কেনার কার্যাদেশ দেয়া হয়, সেদিনই মেশিন বুঝে পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে কাগজে-কলমে। ২৩ মে মেশিন কেনার জন্য গ্লোবাল কালার স্ক্যান নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মেশিন সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়।

গ্লোবাল কালার স্ক্যানের চালান মূল্যে মেশিন সরবরাহের তারিখও লেখা হয় ২৩ মে, যা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে পরিষ্কার অনিয়মের মাধ্যমে ক্ষেত্রবিশেষে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ তছরুপ করা হয়েছে একটি মেশিন কেনার নামে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কোনো কালে দুর্নীতি ছিল না, এমন নয়। তবে তা কালেভদ্রে পত্রপত্রিকার পাতায় আসত। তাও খুব বড় মাপের কিছু ছিল না।

কিন্তু এই মহাপরিচালকের আমলে অনিয়ম এবং দুর্নীতিই যেন নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা কখনও কারো কাম্য হতে পারে না। আর এই কাণ্ডজ্ঞানহীন মহাপরিচালকের সঙ্গে সরকারের এমন কী স্বার্থ জড়িত আছে যে কারণে বিতর্কিত একটি লোককে তার স্বেচ্ছাচার চালানোর সুযোগ দিতে হবে। আমরা মনে করি ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান বড়। এর পাশাপাশি আছে সরকারের ইমেজের প্রশ্ন। সেই ইমেজ যেন এমন না হয় যে, তা সরাসরি ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে।

সেজন্য এখনই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। সব অনিয়মের মূলোত্পাটন করে, সব ধৃষ্টতার কপাট রুদ্ধ করে, কার্যকর এবং ইতিবাচক কিছু করা এখন সময়ের দাবি। আমার দেশ থেকে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.