গণমাধ্যমকর্মী, চেয়ারম্যান - উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান, সদস্য সচিব - সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন।
জনশক্তি রপ্তানির সংকট
সরকার জনশক্তি রপ্তানি খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে কোনো পর্যায়েই গাফিলতি সহ্য করা হবে না। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের উদ্বোধনী ভাষণে একথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনশক্তি রপ্তানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত।
অথচ এ েেত্র প্রতারণা-দুর্নীতি, অনিয়ম-গাফিলতির অভিযোগ সীমাহীন। সরকারের তরফ থেকে বারবার আশ্বাস-আশাবাদ ও নানা তৎপরতার কথা বলা হলেও এ খাতে তেমন গতি সঞ্চার হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর এই সতর্কবাণী খুবই সময়োপযোগী।
গত শনিবার জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জনশক্তি রপ্তানি খাতে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে এ ব্যাপারটা পরিষ্কার যে, জনশক্তি রপ্তানি খাতে অনিয়ম এবং সংকট-সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। এসব অনিয়ম দূর করা ও সংকট সমাধানে তার সদিচ্ছা-আন্তরিকতারও অভাব নেই। কিন্তু প্রশ্ন থাকে, সরকারের উদ্যোগের বাস্তবায়ন নিয়ে। আমরা দেখেছি, মহাজোট নেতৃত্বাধীন সরকার মতাসীন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর করেন এ দেশের জনশক্তির প্রধান রপ্তানি-বাজার সৌদি আরবে।
তখন সৌদিতে বাংলাদেশী শ্রমিক রপ্তানির েেত্র অচলাবস্থা ছিল।
সে সফরে প্রধানমন্ত্রী অচলাবস্থা নিরসনে এবং সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট দেশের আশ্বাস লাভ করেন। এছাড়া মালয়েশিয়াসহ অন্য জনশক্তির বাজার দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনা হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে এসব আশ্বাস বাস্তবায়নে তেমন গতি দেখা যায়নি। বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়ার জন্য সহজ শর্তে ঋণদান এবং প্রবাসী কর্মীদের সহায়তা ও বিনিয়োগের জন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক স্থাপন এবং বৈধ চ্যানেলে প্রবাসীদের অর্জিত অর্থ দেশে পাঠানো সহজ করতে বিভিন্ন দেশে ব্যাংকের শাখা খোলাÑ এসব অবশ্যই জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির স্বার্থে ও প্রবাসীদের কল্যাণে বর্তমান সরকারের প্রশংসনীয় কাজ। এছাড়া বিদেশীগামীর সব তথ্য সংবলিত স্মার্ট কার্ড চালু, বিদেশগামীদের জন্য প্রশিণের ব্যবস্থা, প্রবাসীদের ভোটার করার ব্যাপারে আইন প্রণয়নসহ যে উদ্যোগগুলোর কথা প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেনÑ সেগুলোও খুবই ইতিবাচক।
এগুলোর সুফল কাক্সিত লোকদের কাছে পৌঁছানোই বড় কাজ।
জনশক্তি রপ্তানি খাতে প্রতারক-দালালদের দৌরাত্ম্য নির্মূল এবং বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিকদের সমস্যা-সংকট দেখার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস বা মিশনগুলোকে তৎপর করা- এ দুটি ব্যাপার নিশ্চিত করা গেলে জনশক্তি বাজার নিয়ে সংকট বহুলাংশে দূর হয়ে যাওয়ার কথা। এখনো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদেশ গমনেচ্ছু মানুষ দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি টাকা গুনছেন, অনেকে সর্বস্ব খুয়াচ্ছেন। অন্যদিকে প্রবাসী শ্রমিকদের একটি প্রধান অভিযোগ হলো- তারা প্রয়োজনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা পান না।
দূতাবাস বা বিদেশ মিশনগুলোর প্রধান কাজই তো হওয়া উচিত সে দেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা।
কর্মকর্তারা সক্রিয় থাকলে বিদেশে বাংলাদেশীদের কাজ নিয়ে, পাওনা আদায় নিয়ে, আইনি ব্যাপার নিয়ে এতোটা নাজুক অবস্থায় পড়ার কথা নয়। তবে ইতিমধ্যেই কয়েকটি দেশে লেবার অ্যাটাশে নিয়োগের নির্দেশ দেয়া, বাংলাদেশের মিশনগুলোকে আরো আন্তরিক ও দতার সঙ্গে সেবার মান বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও সতর্কবাণী পালিত হলে এবং যে উদ্যোগগুলোর কথা তিনি জানিয়েছেন, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে জনশক্তি রপ্তানি খাতের চিত্র অন্যরকম হতেই পারে। আমরা সে প্রত্যাশাই রাখি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।