আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অরক্ষিত বাংলাদেশ-২



অরক্ষিত বাংলাদেশ-২ ভজন সরকার ‘ঢাকা শহরের প্রথম শ্রেণীর পত্রিকার প্রথম পাতার সিকি পৃষ্ঠা জুড়ে বিজ্ঞপ্তি । সুসংবাদ, কানাডায় বাংলাদেশ থেকে কৃষক আমদানি । দীর্ঘদিন কানাডায় বসবাসকারী কৃষিকাজসহ সকল কাজে পারদর্শী একমাত্র বাংলাদেশী এজেন্ট । কানাডায় পাড়ি দেবার আগে হাতে-কলমে কানাডার কৃষিকাজের নমুনা অভিজ্ঞতা শেখানো হবে। ’ এই সংবাদটা পইড়্যা আমার এক বন্ধুর তো মাথা খারাপ হবার জোগাড় ।

দশ টাকা মিনিটে ঢাকা থেকে ফোন , ‘ বন্ধু, মাজেজাটা ক তো শুনি । ’ আমি এর মাথামুণ্ডু কিছুই জানি না । বাংলাদেশের কোন এক মন্ত্রী নাকি কোন খেয়ালে এই কথা কইছে । তার পর থ্যাইকা দালাল চক্রের ঘুম হারাম । এমনি পারলে কানাডার রাজধানী অটোয়ার পার্লামেন্ট ভবনে কিংবা প্রধানমন্ত্রী ষ্টিফেন হারপারের ডেপুটি বানাইয়া পাবলিক লইয়া আসে কিছু কিছু আদম ।

তারপর আবার মন্ত্রীর এই কথা । নাচুনী বুড়ির নাচন থামায় সেটা কার সাধ্যি এখন ? আমার বন্ধুও মহা উৎসাহী । এর পেছনের কারণ, আর্থিক না হলেও সামাজিক তো বটেই । কানাডা না গেলে নাকি মান-সম্মান আর বাঁচানো যাচ্ছে না । পিতৃকুলের কাছে না হইলেও শ্বশুরকুলের কাছে তো অবশ্যই ! আমার এই বন্ধুটির অবস্থা আবার লেজে-গোবরে ।

গ্রামের পোলা বিয়া করছে টাউনে । তাও আবার বৌয়ের চৌদ্দগুষ্ঠি নাকি থাকে কানাডা আর আমেরিকায় ? শ্বশুর বাবাজি বিয়ের আগে বায়োডাটা দেখছিলেন ঠিকই কিন্তু পোলা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ওরফে বুয়েটে পড়লেও একটু যে লাল পিঁয়াজের দোষ আছে সেটা পরীক্ষা করেন নাই । কিংবা করলেও ভাবছেন , একটু আধটু দোষ যৌবনে থাকেই । একটু মার্ক্সবাদী হওয়া, শ্রেণী সংগ্রামের নামে একটু আধটু মহিলা কমরেডগণের সাথে পিটিস-পিটিস তেমন দোষের কিছু না । তা ছাড়া নিজের মেয়েও কি বৃষ্টিধোয়া তুলসী পাতা ? আসলে আমার বন্ধুটি যে, মহা ঘাউড়া সেটা শ্বশুর বাবাজি ভুল করছিলেন তখন ।

অন্তত আমার সাথে দেখা হইলে আমি সেটা বইল্যা দিতাম । সোভিয়েত ইউনিয়নের গ্লাসনস্তে পৃথিবীব্যাপি গ্লাস নষ্ট হইয়া, ভাইঙ্গা চুইড়্যা খান খান হইয়া গেছে কিন্ত আমার বন্ধুটি দুর্যোধনের ধনুক উঁচাইয়া অপেক্ষায় আছে, আবার একদিন আইবো । আমরা করবো জয় একদিন, নিশ্চয় !!! সে যাই হোক, বন্ধুর বৌয়ের কথা বার্তায় আত্মীয়-স্বজনের কানাডা থাকার ফুটানি । তারপর যোগ হইছে, টেলিভিশন চ্যানেলের মহা যন্ত্রণা । আশির দশকে নায়ক-নায়িকার বাবা মা ইন্ডিয়া যাইতো কামে -অকামে ।

বিমান বন্দরের রানওয়েতে আনোয়ার হোসেন যে সেই একখান ভিডিও ধারণ করছিলেন, সেইটা দেখাইয়া বিমানের ভোঁ দৌঁড় । একই চিত্র ! বিমান না উড়লে কি হইবো, টেলিভিশনে বিমানের বলাকারা ঠিকই উড়াল মারতো প্রায় রাতেই প্রসংগে অপ্রসংগে । তার কিছুদিন পর আসলো ব্যাঙ্কক - সিংগাপুর যাওনের হিড়িক । নায়িকা নায়ককে ফালাইয়া বাবা-মার সাথে ব্যাঙ্কক -সিংগাপুর চইল্যা গেলো ফুরুৎ কইরা । এখন নাকি শুরু হইছে কানাডা ।

সবাই খালি কানাডা যায় । সবাই কানাডা থাকে । কদবানুর সাথে হিরামনের নায়ক কুদ্দুস প্রেম করছে । কদবানুর বাপের পছন্দ না । কদবানুর বিয়া ঠিক হইলো ।

পোলা কানাডা থাকে । কিংবা নায়কের খালা কানাডা থাকে, তাই বিয়া পিছাইয়া গেছে । দেখা গেলো নায়িকার চাচা টরন্টোতে নায়কের খালার বাসায় ড্যানফোর্থের কাবাব হাউজ থেকে কাবাব লইয়া উপস্থিত । এইটা যদি মাঝে মাঝে কানাডা- আমেরিকা ঘুইরা যাওয়া আমার নাট্যকার বন্ধু আনিসুল হক মারতো, তবেও কথা আছিল । কানাডা বানান তো দুরে থাক, কানাডা উচ্চারণ করতেও যে নাট্যকার বত্রিশ বার হোঁচট খায়, কানাডা নর্থ আমেরিকায় না, এন্টার্টিকায় সেটাও যারা জানে না, তাদের নাটকেও নায়ক সি এন টাউয়ারের উপরে উঠ্যা লেক ওন্টারিও দেইখ্যা প্রশান্ত মহাসাগর বইল্যা চিক্কুর মারে আর গান গায় ।

এই হইলো আজকের কানাডা বিষয়ক টেলিভিশন প্যাকেজ নাটকের প্যাকেট । আর আমার বন্ধুটির ঝামেলার সূত্রপাতও সেখানেই । বন্ধুটির বৌ যখন এক দশকেও বন্ধুকে একপাও নড়াতে পারে নাই তার অবস্থান থ্যাইকা । কৃষক আমদানির কথা শুইন্যা এইবার কই মাছের তেলেই কই মাছ ভাজার ফন্দি আঁটছে । ‘সারাজীবন কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলনের নামে মইরা গ্যালা কিন্তু নিজে লোক লজ্জার ভয়ে কৃষক হইলা না ।

এইবার চলো কানাডা গিয়া কৃষক হও । লোকেও দেখবো না, টাকাও ভাল, আদর্শও ঠিক থাকবো। ’ আমার বন্ধুটি আর না করতে পারে নাই । অর্ধাঙ্গীনির যুক্তির কাছে পুরাটাই হার মানতে হইছে । শেষে আমারে ফোন করছে মাজেজা জানার জন্যে ।

আমার বন্ধুর আকুল জিজ্ঞাসা ,‘ বন্ধ, কৃষিকাজ তো আমার দ্বারা হইবো না, সেটা জানি । আর কি কিছু হইতে পারমু । ’ আমি বললাম,‘ সে ব্যাপারে তোমারে আমি এক শত ভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, তুমি অনেক কিছুই হইতে পারবা । এই ধর আমার কথাই, আমি যেমন লেখক হইছি । আরও অনেকে অনেক কিছুই হইছে ।

সকলের কথা এক সিটিংয়ে বলা যাবে না বন্ধু । সে সম্ভাবনার কথা অন্য দিন কওন যাইবো । ’ টেলিফোনের ওপারে বন্ধুর বুকে পুলিশের মৃদু লাঠি চার্জের মত মৃদু আশার সঞ্চার হইছে বইলা মনে হইলো । ‘তুই কেমন আছিস , বন্ধু । ’ আমি বললাম ,‘ ভাল আছি ।

শরীর চর্চার মধ্যে আছি । দৌঁড়ের মধ্যে আছি । ’ বন্ধু আবার খানিকটা ঝাপসা দেখলো মনে হইলো । আমি বললাম ,‘ আর মিনিট খানিক বাকী আছে আমার টেলিফোন কার্ডে । এর ফাঁকে তোকে একটা গল্প বলি ,তবেই কাদাপানির মত সব স্বচ্ছ মনে হইবো ।

’ একজন টরন্টোর রাস্তায় হাঁটতেছিলো । হঠাৎ দেখে একটা সাইন বোর্ড । ভেতরে আসুন , বিশ টাকায় বিশ পাউন্ড ওজন কমান । মেদ ভূঁড়ির যন্ত্রণায় অস্থির লোকটা কিছুটা আশার আলো দেখলো । বিশ টাকা দিয়ে ভেতরে ঢুকেই দেখে , মহা সুন্দরী এক রমণী উত্তেজক পোশাকে দাঁড়িয়ে ।

কাছে এসে বললো,‘ আমি সামনে দৌঁড়াবো , যদি তুমি আমাকে ধরতে পার তবে আমরা দুজন একত্রে থাকবো । ’ নর্থ আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ রমনীদের কাছে পেতে কার না আশা জাগে ? কিন্তু দুর্ভাগ্য , সুন্দরী এত দ্রুত দৌঁড়ায় যে, লোকটার পক্ষে আর তাকে ধরা সম্ভব হলো না । কিন্তু নিরাশ হলো না । পর পর দুই সপ্তাহ সকাল সন্ধ্যে দৌঁড় প্রাকটিস করে আবার গেলো সেইখানে । এই বার ধরবেই ।

কিন্তু না । এই বার বিরাটাকায় এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক তাকে বললো,‘ তুমি আমার সামনে দৌঁড়াবে । আমি যদি তোমাকে ধরতে পারি তবে তুমি আর আমি একত্রে থাকবো । ’ ইজ্জতের ভয়ে লোকটা আবার দৌঁড় শুরু করলো । টেলিফোনের ওপারে আমার বন্ধুটি মন্ত্রমুগ্ধের মত আমার কথা শুনছে ।

আমি বললাম ,‘ যখন কানাডায় আসি তখন সামনে সোনার হরিণ ছিল । ধরবো বলেই দৌঁড়াচ্ছিলাম । এখানে এসেও সেই দৌঁড়ের মধ্যেই আছি । এখন আর সামনে তেমন স্বপ্ন নাই । তবুও দৌঁড়েই আছি পেছনের দু:স্বপ্নের ভয়ে , ইজ্জতের ভয়ে।

’ সস্তা টেলিফোন কার্ডের সময় শেষ । টেলিফোন লাইনটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো হঠাৎ । Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.