আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনৈতিক সংহতি ও বিজয়ে শত্রুপক্ষের মুখোশ



রাজনৈতিক সংহতি ও বিজয়ে শত্রুপক্ষের মুখোশ ফকির ইলিয়াস ================================ স্বাধীন বাংলাদেশে আরেকটি মহান বিজয় দিবস পালিত হলো। ত্যাগ আর প্রত্যয়ের চেতনা নিয়ে বাঙালি জাতি আবারও স্মরণ করল মহান শহীদদের। যাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছিল এই ভূখ-। বাংলাদেশে স্বাধীনতার চলি্লশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বর্তমান সরকার বিদেশি চারশ' ব্যক্তিকে বিশেষ সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি নামগুলো যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই কাজটি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও জনগণের অনেক আগেই করা উচিত ছিল। কারণ কিছু পরাশক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করলেও গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী মজলুম মানুষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করেছিল। যার যার সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছিল। প্রতিবেশী ভারতের কৃষক-শ্রমিক জনতা তাদের সিনেমা দেখার টিকিট থেকে শুরু করে অনেক সেবা খাতের সঙ্গে অতিরিক্ত কর প্রদান করে বাংলাদেশের কোটি কোটি শরণার্থীকে সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল।

এমনকি সেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' এর আয়োজনে লাখ লাখ ডলারের টিকিট কেটে হাজির হয়েছিল মার্কিন নাগরিকরা। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরোধিতা করেছিল। যারা বাংলাদেশের মানুষের পাশে সেদিন দাঁড়িয়েছিলেন তাদের ঋণ কোন দিন শোধ হবে না। তারপরও বাংলাদেশের মানুষের উচিত সেই বন্ধুদের সম্মাননা জানানো। এই যে সম্মাননা মূলত এর মাধ্যমে দেশ ও জাতিই সম্মানিত হবে।

এই প্রজন্মের সন্তানেরা জানতে পারবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে যেসব দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে, তাদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশে খুব কম সময়ে যে অধিক হারে গণহত্যা হয়েছে এর পেছনে নেপথ্য উদ্দেশ্য ছিল। আর সেই উদ্দেশ্যটি ছিল এই জাতি যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। সবচেয়ে অবাক করা কথা হচ্ছে, জাতিকে পঙ্গু করে দিতে সেই পশ্চিমা হায়েনারা ব্যবহার করেছিল এদেশীয় দোসরদের। পশ্চিমা খানসেনারা যখন দেখছিল তাদের আত্মসমর্পণ অনিবার্য তখন তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছিল এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের।

সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন এখনো শহীদ পরিবারের সন্তানেরা। একজন শহীদের সন্তান, এদেশের কৃতী দুই শিল্পী সাদী মহম্মদ কিংবা শিবলী মহম্মদ যখন বলেন, 'চোখের সামনেই পড়ে থাকতে দেখলাম পিতার নিথর দেহ'। তখন গোটা জাতিকেই আবারও অাঁতকে উঠতে হয়। কিন্তু খুবই বেদনার কথা হচ্ছে, সেই সব ঘাতক রাজাকার চক্র এখনো কিন্তু বসে নেই। মহান বিজয়ের পর বারবার তারা খোলস পাল্টে এখনো জাতিকে ছোবল দিতে চাইছে।

জাতি এখনো তাকিয়ে দেখছে তথাকথিত 'ওলামা মাশায়েখ'-এর ব্যানারে এই বিজয়ের মাসেই দেশে হরতাল ডেকেছে একটি চক্র। এরা কারা? এদের আসল পরিচয় কী? একাত্তরে তাদের ভূমিকা কেমন ছিল? এসব বিষয় খুব স্পষ্টভাবে জাতির সামনে উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন। যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বই স্বীকার করতে চায়নি তারা এখন দেশের 'সার্বভৌমত্ব' নিয়ে শংকিত! কেমন আজব ফাঁদ পেতে রাষ্ট্রের মানুষকে প্রতারিত করতে চাইছে তারা। যারা একাত্তরে এই মাটিতে দাঁড়িয়ে বলেছিল, 'ভারত'- এই দেশ দখল করে নেবে, সেই শক্তিই চলি্লশ বছর পর একই কথা বলছে। অথচ ধর্মীয় লেবাসধারী এসব আগ্রাসী শক্তিই বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে জঙ্গিবাদী সংগঠন।

তালেবানি কায়দায় তারাই বাংলাদেশকে বানাতে চাইছে মিনি পাকিস্তান। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে এই দেশের গণমানুষের ঐক্যবদ্ধ শক্তির মুখোমুখি দাঁড়াবার শক্তি কোন প্রশিক্ষিত সৈন্যবাহিনীরও নেই। গেরিলারা সেদিন বীরদর্পেই ঘায়েল করেছিল পাকবাহিনীর সুসংহত স্থাপনা। সবই সম্ভব হয়েছিল মানুষের ঐক্যের ফসল হিসেবে। বাংলাদেশে বর্তমানে কি সেই ঐক্য প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়েছে; এই প্রশ্নটি নানা ভাবেই ঘুরে ফিরে আসছে।

'ব্যবসায়ীদের উচিত যারা হরতালের রাজনীতি করেন, তেমন রাজনীতিকদের সমর্থন না দেয়া'। একটি সেমিনারে সম্প্রতি এমন মতপ্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিকরা। তারা বলেছেন, ব্যবসায়ীদের দেয়া অর্থেই রাজনীতিকরা দল পরিচালনা করেন। আবার হরতাল দিয়ে এই ব্যবসায়ীদের মারাত্মক ক্ষতিও করেন। এটা কে না জানে, দেশের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে বিভক্ত।

শুধু ব্যবসায়ী কেন, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর নিজস্ব সংগঠন রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ব্যানারে। তার কারণও রয়েছে। দল দুটি ক্ষমতায় গেলে নিজস্ব ঘরানার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বাদ দেয়, মূল্যায়ন করে এমন অতীত ইতিহাস রয়েছে। উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বের একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে তার কেবিনেট নিজেদের মানুষ দ্বারাই সাজায়। সেটাই নিয়ম।

কিন্তু এই কেবিনেট সদস্যরা রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্রের জনগণকেই প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেন। বাংলাদেশে সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি বলেই, বিভিন্ন পেশাজীবী উন্মুখ হয়ে থাকেন, নিজের মতাদর্শের দল ক্ষমতায় গেলেই লুটেপুটে খাওয়ার। পদ এবং ক্ষমতা পাওয়ার। আর সে কারণেই গেল চার দশকে বাংলাদেশে একটি স্থায়ী লুটেরা বাহিনী নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। যাদের কাছে রাজনৈতিক আদর্শ বড় নয়, নিজেদের আখের গোছানোই বড়।

একটি প্রকাশিত খবরে দেখলাম এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপি মহাসচিব নিজেকে একজন ঝানু প্রগতিবাদী বলে দাবি করেন। কিন্তু তার অসংলগ্ন কথাবার্তা গোটা জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। ' খন্দকার দেলোয়ার বাংলাদেশে তাঁবেদারির রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করেন। কারণ তার দল, তাদের আদর্শ মুচলেকা দিয়েছে সেই পরাজিত রাজাকার শক্তির কাছে। যারা এখনো মহান বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি।

তাই বিজয়ের শত্রুপক্ষ কে তা প্রজন্মকে জানতে হবে, চিনতে হবে। যারা মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে মুখোশ পরে আছে। তাদের স্বরূপ উন্মোচিত হওয়া খুবই জরুরি। বাংলাদেশে যারা রাজনৈতিক ঐক্য সংহতির কথা বলেন, তাদের ভাবতে হবে, সংহতি কার স্বার্থে হবে। কারা ধারণ করবে ভালোবাসার বাংলাদেশের পতাকা।

আর কারা এই দেশকে জঙ্গিবাদীদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছে এবং চাইবে। উদাহরণ তো কম তৈরি হয়নি। ২০০১ থেকে ২০০৫ সময়ে বাংলাদেশে কী ঘটেছে, তা কারও অজানা নয়। আমি বিশ্বাস করি এদেশের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই এগিয়ে যাবে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করবেই।

যে স্বপ্নটি প্রতিক্ষণ দেখতেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। নিউইয়র্ক। --------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ / ঢাকা/ ১৭ ডিসেম্বর ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - কাইয়ুম চৌধুরী

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.