রফিক আজাদের নতুন বই (২০০৯) “কোনো খেদ নেই” পড়ছিলাম। তার একটু অংশ...
“সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মধুদা আগলে থাকতেন ক্যান্টিন। আগলে রাখতেন তিনি ছাত্র-বন্ধুদেরও নানান আপদ-বিপদ থেকে। কদাচিৎ তাঁকে অনুপস্থিত থাকতে দেখেছে কেউ। এ নিয়ে কেউ ঠাট্টা করলে মধুদা হেসে জবাব দিতেন, ‘এটাই তো আমার আসল সংসার।
দেশের সেরা ছাত্র ও সেরা মানুষদের কাছে পাওয়ার এই সুযোগ আমি হারাই কেমন করে? আমি তো ভাগ্যবান, কতো নামি-দামি মানুষ, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছেন, তাদের অনেকেই যে মধুর ক্যান্টিন থেকেও বের হয়েছেন, একথা তো আমিও দাবি করতে পারি। ’
মধুদার এই গর্বিত উত্তর শুনে মধুর ক্যঅন্টিনের আড্ডাবাজরা তৃপ্ত হতেন, হাসতেন।
মধুদার এহেন সংসারে সুবিধাভোগী গোষ্ঠিটি ছিল বড়োসড়ো। উঠতি লেখক, নাট্যকার, সঙ্গীজ্ঞ, ক্রীড়াবিদ, সেরা ছাত্র, ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও কর্মী। এরা অনেকই এখানে ঘন্টার পর ঘন্টা চুটিয়ে আড্ডা দিতেন চ-সিঙ্গাড়া, চা-বিস্কুট, ওমলেট-টোস্ট-চা সহযোগে।
অনেকেই দাম মেটাতেন, কেউ কেউ লিখে রাখতে বলতেন, কেউ বা কিছুই বলতেন না এই ভেবে যে, মধুদা তো লিখে রাখবেনই। মধুদার মাসিক হিসেবের খাতাকে কেউ কেউ ‘গড় হিসেবের খাতা’ বলে কৌতুক করতেন। যারা ৪/৫ জন মিলে দিনের সিংহভাগ সময় মধুর ক্যান্টিনে আডাডার আসর বসাতো, তাদের গড় হিসেব না ধরে হিসেব রাখা কঠিন হতো। হিসবের বেশি ধরা হয়েছেÑএ প্রশ্ন মধুদাকে কেউ করলে তিনি হেসে জবাব দিতেন, ‘আপনারা তো হিসেব করে খান না, আমার পওে হিসাব রাখা সব সময় সম্ভব হয় না, গড় হিসাব একটা লিখতেই হয়। দেবার সময় না হয় কিছু কমই দেবেন।
’ মধুদার এই জবাবে প্রশ্নকর্তা সঙ্গত কারণেই লা-জবাব হতেন।
মধুদার অপর হিসেবর খাতাটি নিয়েও রঙ্গ-রসিকতার কম ছিল না। খাতাটির শিরোনাম ছিল ‘না দিয়া উধাও’। ঐ খাতায় এককালীন মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, শাহ আজিজ, শামসুর রহমান, আহমদ ফজলুর রহমানসহ অনেক কৃতী ব্যক্তিত্বের নাম ছিল। ঐ বাঁধানো খাতা নিয়ে মধুদা বন্ধের দিনে ঐসব বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি বাড়ি ধাওয়া করতেন।
তাতে যতো না প্রাপ্তি যোগ হতো, তার চাইতে কৃতবিদ্যদের সাথে সাাতের তৃপ্তিযোগ মধুদাকে আনন্দ দিত। যাটের দশকে অনেকেই ‘না দিয়া উধাও’Ñখাতায় স্থান করে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে মিজানুর রহমান শেলী, জিয়াউদ্দীন কাজী জাফর আহমদ, মহীউদ্দিন, আতাউর রহমান কায়সার, রেজা আলী, সাইফু্িদন আহমদ মানিক, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, ওয়ালীউল ইসলাম, কে এম ওবায়দুর রহমান, আবুদর রাজ্জাক প্রমুখ ছিলেন। আমিও ছিলাম এই কালো তালিকাভুক্ত। ”
“এমন হাসি-খুশি, প্রাণবন্ত মানুষ, সারল্যেও এমন এক প্রতিভূকে আমরা হারিয়েছি, যার তুলনা নেই Ñ তিনি নিজেই ছিলেন এক মূর্তিমান ইতিহাস।
আমাদের মুক্তি সংগ্রামের প্রথম প্রহরে ‘শহীদ’ হয়ে তিনি দেশমাতৃকার ইতিহাসেরও অংশ হয়ে গেলেন। তিনি, মধুসূদন দে, আমাদের সবার প্রিয় মধুদা। ”
Ñ রফিক আজাদের কোনো খেদ বই থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।