যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.
ক্লাস এ বরাবরই দেরিতে যায় শফিক। এ জন্য সে কম বকা খায়নি স্যারদের কাছে। তারপর ও সে নিজেকে শোধরাতে পারেনি। যতই শোধরাতে গিয়েছে ততই জগাখিচুরী লেগে গিয়েছে। ঘুম থেকে সে সকাল বেলা উঠতেই পারে না।
ক্লাস যদি তার ৮ টায় থাকে সেখানে শফিক ওঠে ৭.৩০ এ। এই যেমন সেদিন ইউনিভার্সিটি যেতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। কোন মতে ক্লাস এ পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়েছিল স্যার এর চোখ ফাঁকি দিয়ে। কিন্তু ক্লাস যখন শেষের দিকে তখন তার খেয়াল হল সে ভুল রুম এ চলে এসেছে। তার ক্লাস ৩ তলায় কিন্তু সে এসেছে ৪ তলায়।
এভাবেই চলছে শফিক এর দিনকাল।
ঘুম থেকে জেগে তোলার জন্য শফিক এর মা প্রতিদিন মিনিট দশেক ডেকে তারপর বিরক্ত হয়ে চলে যান। শফিক এর একটা এ্যালার্ম ঘড়ি থাকলেও তা দিয়ে কোন কাজ হয় না। সেটা ঠিক সময় মত বেজে উঠলেও শফিক সেটা বন্ধ করে আবার ঘুম দেয়। মাঝে মাঝে শফিক এর বাবা এসে তার গায়ে পানি ঢেলে দেয়।
আর তখনই হুড়মুড়িয়ে উঠে পরে সে। এতে যে ভালই কাজ হয় সেটা বাসার সবাই জানে কিন্তু সকাল সকাল এভাবে ছেলেটাকে কষ্ট দিতে মন চায় না কারো। তাই এরকম বেশি একটা করে না বাবা।
শফিক এর বন্ধু বলতে আছে জনি এবং নিলয়। এ দুজনের সাথে তাকে বেশি দেখা যায়।
গলায় গলায় খাতির এদের সাথে তার। তিন জন একই জায়গায় পড়ালেখা করে। তাই এরা ৩ জন যখন একসাথে হয় তখন আড্ডা, গান, দুস্টামী তুমুলভাবে চলতে থাকে। কেউ কারো থেকে কম নয়। তবে শফিক একটু বেশি আমোদী আর হাশিখুশি বলে বাকি ২ জন খুব বেশি পছন্দ করে তাকে।
ক্লাস এর মধ্যমনি বলতে গেলে শফিকই। স্যাররা তাকে পছন্দ করে খুব। কিন্তু তার মধ্যে এই আলসেমীটা না থাকলে আরো হয়ত বেশি কদর পেত স্যার ম্যাডামদের।
এরই মধ্যে ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শফিকদের ব্যাচকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে সবকিছু দেখভাল করার। এর ফলে অনুষ্ঠান পরিচালনা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া, আপ্পয়ণ সব কিছু শফিকদের দেখতে হবে।
তারাই ঠিক করবে কে কোথায় কাজ করবে। তবে এসব কাজ তদারকি করার জন্য ব্যাচ এর সব স্যার আর ম্যাডামদের সহযোগিতা পাবে তারা। এর ফলে অভিবাবক হিসেবে পাবে তাদের শফিক।
অনুষ্ঠান গুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের সবকিছু বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এছাড়াও নোটিস বোর্ড এ নোটিস দেয়া হয়েছে যারা গান, নাচ, মডেলিং এরকম কোন কিছু ইভেন্ট এ অংশ নিতে ইচ্ছুক তারা যেন যোগাযোগ করে। গান এর জন্য বাছাই শুরু হয়েছে। একে একে সবাই গান গেয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোনটাই যেন মনপুতো হচ্ছে না শফিকদের। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না তারা। কারণ অনুষ্ঠানে গানটাকেই বেশি প্রাধাণ্য দেয়া হয়েছে।
গান এর জন্য শিল্পী বাছাই করা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৩ দিন। পর পর ২ দিন তেমন বলার মত কেউ ভাল কিছু করে দেখাতে পারল না। এটা দেখে বেশ অবাকই হল যেন সবাই। এই ইউনিভার্সিটিতে গানের শিল্পী সংকট আছে এটা কারো মাথাতেই আসে নাই এতদিন। আর এদিকে বাহিরে থেকে ব্যান্ড দল আনবে কি না তা নিয়েও আলাপ আলোচনা শুরু করে দিয়েছে সবাই।
৩ দিনের দিন সবাইকে অপেক্ষা করতে বলে সেদিনের মত সবাই বিদায় নিয়ে চলে আসল।
এদিকে ৩ দিনের দিন সকালে শফিক ঘুম থেকে ঊঠতে দেরি করায় ইউনিভার্সিটি যেতে দেরি হয়ে গেল। যখন সে ইউনিভার্সিটিতে পৌছালো তখন তার বন্ধু নিলয় এসে জানালো যে গানের শিল্পী পাওয়া গিয়েছে। অসাধারণ গান করে। আর সেই শিল্পী নাকি ভাল নাচতেও পারে।
একজনের মধ্যে এত প্রতিভা আছে এটা শুনে বেশ অবাক হল শফিক। ক্লাস এ যেয়ে পরিচিত হল সেই প্রতিভার সাথে।
মেয়েটার নাম জুলিয়া। দেখতে অসাধারণ সুন্দরী। প্রথম বর্ষে পড়ে সে।
গত ২ দিন সে ঢাকার বাহিরে থাকাতে জানতে পারে নি এই অনুষ্ঠানের কথা। আজকে যখন ইউনিভার্সিটিতে এসেছে তখনই তার চোখে পড়েছে এই ব্যাপারটা। তাই দেরি না করে নাম লেখাতে চলে এসেছে সে। এদিকে শফিক তো মহা খুশি। কারণ শিল্পী পেয়ে গিয়েছে সে।
তার খুশির আর একটা কারণ হল জুলিয়াকে প্রথম দেখেই তার ভাল লেগে গিয়েছে। এত ভাল যে সে কল্পনাও করতে পারবে না। অবস্য এ কথা অন্য সবার কাছে সে গোপন রেখেছে।
অনুষ্ঠানে একটা ছোট নাটিকা করা হবে। সেখানে অভিনয় করবে শফিক, জুলিয়া সহ আরো অনেকে।
এখানে একটা দৃশ্যে জুলিয়াকে প্রোপোজ করবে শফিক। নাটক এ কে কে অভিনয় করবে সেটা জুলিয়া নিজেই ঠিক করে দিয়েছে। তাই শফিক তেমন কিছু বলে নি। মনে মনে যেন এটাই চাচ্ছিল সে। তাই ভাল মতই অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিল তারা।
কিন্তু শফিক কেন জানি রোমান্টিক কোন সিন এ জুলিয়ার চোখে চোখ রাখতে পারছিল না। কেমন জানি একটা অন্যরকম অনুভুতি কাজ করছিল। জুলিয়া এটা হয়ত বুঝতে পেরেই সেদিনের মত অনুশীলন বাদ দিল। আর এদিকে অন্য সব ইভেন্ট এর অনুশীলন সমান তালে চলতে লাগল।
এদিকে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিন চলে এল।
যে যার মত পারফর্ম করল। অনুষ্ঠান খুব জমজমাট হচ্ছে। আয়োজন এর শেষের দিকে শুরু হল নাটিকা পর্ব। একসময় যখন জুলিয়াকে প্রোপজ করা দৃশ্য অভিনয় করার সময় আসল ঠিক সেই সময় সেট এ যেয়ে শফিক সবকিছু ভুলে গেল। নিজেকে সে যেন হাড়িয়ে ফেলল।
কারণ জুলিয়া শাড়ি পরে এসেছে। চুল বাতাশে দোল খাচ্ছে, হাল্কা সাজগোজ করেছে সে। অসাধারণ লাগছে তাকে আজকে। এক দৃষ্টিতে শফিক তাকে দেখছিল। চোখ সড়াতে পারছিল না।
জুলিয়া সেটা বুঝেই হয়ত মুচকি হেসে সেট এ গেল। শফিকও সেট গিয়ে দাড়ালো। তার কি বলতে হবে সেটা যেন ভুলে গেল। মনের মধ্যে কেমন জানি করতে লাগল তার। যা হবার হবে।
আজকে কিছু একটা বলতেই হবে এই তাগিদ থেকেই শফিক হাটূ গেড়ে বসে জুলিয়াকে তার ভালবাসার কথা জানালো। চোখে চোখ রেখে জুলিয়া লজ্জা পেয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। এর পরেই নাটক শেষ হল। সাথে পুরো অনুষ্ঠান ও। বিপুল প্রশংসা পেল শফিকরা।
কারণ আয়োজন সফল হয়েছে।
এদিকে শফিকের মন পরে আছে জুলিয়ার কাছে। মনে শান্তি নেই তার। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার ১ সপ্তাহ পড়ে ইউনিভার্সিটিতে দেখা গেল জুলিয়াকে। বেশ গম্ভীর ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার মধ্যে।
শফিক ইতস্তত না করে জুলিয়ার সামনে জেয়ে সরাসরি বলল “তোমার উত্তর চাই”। জুলিয়া একটা চারপাশে তাকিয়ে শফিক এর দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে চলে গেল। শফিক বেশ অবাক হল। কাগজ এ কি আছে তা দেখতে শফিক সেটা খুললো। তাতে লেখা “YES” ।
আর এতেই মনে হল শফিকের যে সে যেন আকাশের চাদ হাতে পেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।