আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানুষ মানুষের জন্য: উত্তর বঙ্গের শীতার্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ান



দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমে জানা যায়, হাড় কাপানো শীতের অঞ্চল হিসেবে পরিচিত উত্তর বঙ্গের মঙ্গা পীড়িত প্রতিটি মানুষের ঘরে-ঘরে এখনও শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অন্যান্য বছরের তুলনায় শীতের প্রকট বেশী। এইসব এলাকার অধিকাংশ পরিবার দরিদ্র ও কৃষিজীবী। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এসব এলাকার মানুষ অন্যান্য জেলার মানুষের তুলনায় নদী ভাঙ্গনের শিকার বলে খড়ের ছাউনি এবং মাটি দিয়ে ঘর বানায়।

এইসব ঘরে অভাবী ও দরিদ্র মানুষেরা বসবাস করে। দরিদ্র পরিবারে অপুষ্টিহীনতা ও অসচেতনতার কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা বেশী। বিশ্বস্ত সুত্র মতে বাংলাদেশের এক কোটি চলিস্ন¬শ লাখ বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উত্তরবঙ্গ তথা রাজশাহী বিভাগে বসবাস করে। এবছর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার উর্ধ্ব গতি থাকায় কোন মতে বেঁচে থাকা দূঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অন্যান্য মানুষসহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা একদিকে মানবেতর জীবন যাপন করছে অন্যদিকে প্রচন্ড শীতে দূর্বিসহ জীবন অতিবাহিত করছে।

দেশে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, সাধারণ মানুষের ব্যস্ততাসহ নানা কারণে উত্তর বঙ্গের মঙ্গা পীড়িত এলাকার লাখ-লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সাধারণ খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষ শীত বস্ত্রের অভাবে অতি কষ্টে জীবন যাপন করলেও শীতার্তদের মাঝে সরকারি, বে-সরকারি উদ্যোগে শীত বস্ত্র বা পুরাতন গরম কাপড় বিতরণের যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা সন্তসজনক নয় বললেই চলে। এখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতার্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তিগণ স্ব-উদ্যোগে উত্তর বঙ্গের মঙ্গা পীড়িত অঞ্চলে শীতার্ত ব্যক্তিদের মাঝে গরম কাপড় বিতরণ করছে । ফলে অনেক গরিব,অসহায় মানুষেরা প্রচন্ড শীত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু এবছর শীতের তুলনায় গরম কাপড় বিতরণের হার কম।

সঠিকভাবে শীত নিবারণের অভাবে শীতকালীন অসুখ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ল্যাথারিজম রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার প্রায় ৩০ হাজার শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থা খুবই নাজুক। এসব ল্যাথারিজম রোগীদের এমনিতে হাত-পা অবশ হয়ে যায়। কনকনে শীতে হাটা, চলা, প্রোসাব, পায়খানা কন্ট্রল করার মত শক্তিও থাকে না ল্যাথারিজম রোগীদের। এদের অধিকাংশই ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

কিন্তু কনকনে শীতে বেঁচে থাকার তাগীদে ভিক্ষাবৃত্তি করার জন্য ঘরের বাইরে পর্যন্ত যেতে হিমশীম খাচ্ছে। আর যেসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা স্ব-উদ্যোগে ছোট-খাট ব্যবসা বা কাজ করে, এরাও কনকনে শীতের তীব্রতার কারণে সঠিক সময় নির্দিষ্ট কাজে যেতে পারছেনা। এতে ঘরে অভাবও জেঁকে বসেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন সংস্থা দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতার্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে নির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন ধরনের শীত বস্ত্র বিতরণ করেছে। অথচ এ দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে এধরনের প্রায় তিন’শ বে-সরকারি সংস্থা রয়েছে।

কিন্তু আমাদের দেশে যে অনুপাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা, সে অনুপাতে শীতবস্ত্র বিতরণের হার অতি নগন্য। এছাড়াও বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থা সমূহ উত্তর বঙ্গের শীতার্ত মানুষের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণকালে তাদের সংগঠনের সদস্যদের গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের সবচে অবহেলিত, লাঞ্চিত এবং অভাবী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে না। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলায় শীতের তীব্রতা কমলেও উত্তর বঙ্গে এখনও কনকনে শীত বিরাজমান। ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও দূর্বল মানুষের মাঝে নতুন করে দেখা দিয়েছে শিতকালীন নানা ধরনের অসুখের মধ্যে হাপানী, শরীরে ব্যথা, সর্দী জ্বর, চর্ম রোগ এবং হাত-পা ফেটে যাওয়া ইত্যাদি।

একদিকে কনকনে শীতের তীব্রতা, অন্যদিকে নানা অসুখ-বিসুখের দরুণ বেড়ে গেছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভোগান্তি। তাই শীতের শেষ প্রান্তে উত্তর বঙ্গের শীতার্ত প্রায় ৫০ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশের ধনাঢ্য, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, চাকুরীজীবীসহ সকল পেশাজীবীর মানুষকে এগিয়ে আসা উচিত। লেখক- আজমাল হোসেন মামুন () উন্নয়নকর্মী এবং সাংবাদিক বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যান সমিতি (বিপিকেএস) বিপিকেএস কমপে¬¬ক্স, দক্ষিনখান, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। মোবাইল নং-০১১৯১০৮৯০৭৫.

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.