আমি আঁধারে তামাসায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।
জোসনা বেঁচে থাকার তাগিদে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া একটি নাম, একটি জীবন। বাবা গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের একজন শিক্ষক। যে বেতন পান তাতে করে সংসার হয়ত কোন রকম টানাটানি করে চলে যায় কিন্তু ছেলে – মেয়েদের পড়াশোনা করাতে হিমশিম খেতে হয়। স্ত্রী আছে কিন্তু বছর কয়েক হল উন্নত চিকিৎসার অভাবে বিছানায় পরে আছে মরন ব্যাধি নিয়ে।
গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা কোন রকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে। তিন বোনের সংসারের বড় মেয়ে জোসনা । তার বাবা লোকমান মাস্টার শিক্ষিত হয়েও যে কি করে এমন একটি হীনমন্যতার পরিচয় দিলেন সেটা বোধগম্য নয় তার কাছে। শুধুমাত্র একটি ছেলের আশায় তিনটি মেয়ের জন্মদাতা পিতা হলেন। হয়ত স্ত্রী সুস্থ থাকলে তিনি আবারো একটি ছেলের জন্য চেষ্টা করতেন কিন্তু তার সেই সাধ অপূর্ণ রয়ে গেল।
সব ভেবে জোসনা সিদ্ধান্ত নিল এভাবে আর কতদিন চলবে নিজেই এখন কিছু কাজ করে সংসারের হাল ধরবে। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাবে। তাদের কয়েক বাড়ি পরেই মালতিদের বাড়ি। মালতি শহরে নাকি একটা গার্মেন্টসে কাজ করে। বেশ ভালই তার রোজগার তাই সে ঠিক করল মালতির সাথে শহরে যেয়ে কাজ করবে গার্মেন্টসে।
শহরে এসে তার সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়। একটি গার্মেন্টসে কাজ করার সুযোগ হয়। সেই গার্মেন্টসের ফ্লোর ইনচার্জ বেলাল তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। বেশ কিছু দিন ভালই কেটে যায় তার প্রেমের । একসাথে রিক্সায় ঘোরা, পার্কে বসে বাদাম খেতে খেতে প্রেমের কথামালা, ফুচকা – চটপটি কোন কিছুই বাদ যায়নি।
চোখে সংসারধর্ম করার রঙিন স্বপ্ন। এরই মাঝে চলেছে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ সম্পর্ক। কিন্তু যখন বুঝতে পারে জোসনা ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যায়। এই সমাজ তার অভিযোগ মেনে নেয় নাই তাই তাকে লজ্জায় আত্মহত্যার পথে এগিয়ে যেতে হয়। কিন্তু সেখানেও ভাগ্য তার জন্য রেখেছিল অন্যরকম এক জীবনের প্রণোদনা ।
আত্মহত্যার জন্য রেললাইনের উপর শুয়ে ছিল কিন্তু এক ব্যাক্তি তাকে দেখতে পেয়ে সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসে। জোসনা প্রথম ভেবেছিল আহারে এমন লোকও আছে কিন্তু সেখানেও জোসনার ভুল ভাঙে । লোকটি তাকে নিয়ে বিক্রি করে দেয় যৌন পল্লীতে। তারপর থেকে একে একে জীবনের দিনগুলো কেটেছে অসীম যন্ত্রণায়। আর জোসনার তার পরিবারের বাবা,মা,বোনদের খবর নেয়া হয়নি।
আজ জোসনার বয়স হয়েছে তাই হয়ত তার মূল্য কমে গেছে। বহুদিন কোন কাজ না পেয়ে ধীরে ধীরে খুধার যন্ত্রণা আবারো তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার কথা স্মরন করিয়ে দিচ্ছে। এভাবে বেঁচে থাকা যায় না। এভাবে বেঁচে থাকতে নেই।
পুনশ্চ
কিছুদিন আগে আমি একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম প্রভু নামে।
সেই পোস্টে দেখিয়ে ছিলাম রাস্তায় একজন অভাগী ঘুমিয়ে আছেন। এলাকায় অনেকের ধারনা সে একটা পাগলী। খুব অল্প দিনই নাকি এই পাগলীকে দেখা যায় কিন্তু আজ আবার সেই পাগলীকে দেখলাম ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকতে। এবার আর আমি আমার কৌতূহল ধরে রাখতে পারলাম না। তাকে জাগালাম আর একটি হোটেলে নিয়ে বসিয়ে ভাত খাওয়ালাম।
তার কাছ থেকেই জানলাম তার জীবনের এই করুন পরিনতির ইতিহাস। একসময় সে প্রায় পাগলের মতন হয়ে যায় এবং রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষাব্রিত্তি করে জীবন যাপন করা শুরু করে। তবে সে আর আত্মহত্যা করতে চায় না কিন্তু মৃত্যুর অপেক্ষায় তার জীবন নাকি বেশ কেটে যাচ্ছে। কারো প্রতি এখন তার আর কোন ক্ষোভ নাই, এই সমাজের কাছে আর তার কিছু চাওয়ার নেই। আমি তাকে বিদায় দিয়ে শুধু অথর্বের মত কান্না লুকিয়ে রেখে বাসায় চলে এলাম।
জানিনা তার দেখা আমি আর পাব কিনা তবে টের পেলাম এক ধরনের নীরব রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে আমার বুকের ভেতর।
---------------------------------------------
আজ নিলাম ঘর শূন্য
---------------------------------------------
প্রণয়ের দাসীরা ফিরেছে প্রভাতে,
কেবল একা জোসনা বসে রয়
নিলাম ঘরের দুয়ারে;
আর একবার নিলামের আশায়।
এখানেই নিলাম হয়েছিলো সে,
কোন এক প্রনয় দেবতার কাছে;
বিস্মৃতি সেসব আজ কলঙ্কের গুহায়।
নিলাম ঘরটিতে একদিন ছিলো
কোলাহল - ব্যাস্ততা,
প্রণয়ের দাসীদের ক্রেতা – বিক্রেতা;
আজ নিলাম ঘর শূন্য,
শূন্য জোসনার বেহুলা জীবন;
কোথায় বেসামাল ঘাতকেরা !
দিয়ে যাও মৃত্যুর স্বপন;
শূন্য নিলাম ঘরের দুয়ারে প্রতীক্ষায়
জোসনা একজন প্রণয়ের দাসী ।
বয়সের রেখাগুলো ফুটেছে শরীরের ভাঁজে,
আজ তাই বেকারত্বের জীবনে প্রচণ্ড ক্ষুধা।
এ কেমন নিঝুম রাত্রির সহবাস ?
বসন্তের দুপুর কোথায় অন্তর্বাস তোমার ?
মরু আকাস – বিষণ্ণ মাটি,
এইতো বিষাদ।
তুমি বিক্রি করেছিলে তোমায় সেদিন,
তবে কি আজ এমনি রাতের জন্য;
অহংকারী আগুন আজ তাতেই ধন্য।
আজ নিলাম ঘর শূন্য;
নষ্ট সমাজ – প্রণয়ের দাসী,
প্রণয় দেবী – নারী রূপসী,
ছাইদানীহীন ছাই – পচাঁ ন্যাপকিন,
নগ্ন জীবিকা – অভিসারী মন,
নিদাঘে উদ্বাস্তু মাছিদের গুঞ্জরন,
প্রবন্ধ – প্রহসন;
আজ নিলাম ঘর শূন্য,
শূন্য জোসনার বেহুলা জীবন।
২৬/০২/২০১৩
( ছবিগুলো প্রতীকী হিসেবে নেট থেকে নেয়া )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।