আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও আমার ব্যাক্তিগত কিছু মতামত ।

খুব ছোটবেলা থেকেই বড়দের কাছে শুনে আসছি কিংবা বইতে পড়ে আসছি ৭১ এ স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আমাদের দেশেরই অপশক্তির কথা । তাদের সকল অপকর্মের কথা একটা একটা করে জানতে থাকলাম আর তাদের উপর ক্ষোবটা বারতে থাকল । আমার সেই ২৫ বছরের সঞ্চিত ক্ষোভের বহিপ্রকাশ হল শাহবাগে আন্দোলনে যোগদানের মাদ্ধমে । অনেকের মতে শাহবাগের আন্দোলনটা নিতান্তই নাস্তিকদের আন্দোলন । কেউ ভাবেন আওয়ামিলীগ চক্রান্ত করে বিরোধী দলকে চাপে ফেলার জন্য এসব করাচ্ছে ।

কেউ আবার ভাবেন স্বাধারনের সতস্ফুর্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে শুরু হলেও তা অনেকটাই গতি হাড়িয়েছে সরকারি দলের সুবিধা নেওয়ার কারনে , কিংবা আহবায়ক নিযেই আওয়ামিলীগের অঙ্গ সংগঠনের লোক বলে । কেউতো বলেই ফেললেন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিয়ে লাভটা কি ? দেশে আরো অনেক সমস্যা আছে সেগুলো নিয়ে পারলে কথা বলেন, নইলে চুপ করে বসে থাকেন, এত নাচানাচি করার কিছুই নাই । । দলগত ভাবে চিন্তা করলে এই আন্দোলন যাচ্ছে ১ টা দলের কিছু অনৈতিক কিছু নেতাদের বিরুদ্ধে , তবে তবে এখানে সবার সংলিষ্টতার কারন খুবই স্পষ্ট , এক কথা বলতে গেলে জাতীয়তাবোধ। তবে ৯০ ভাগেরও বেশি মুসলানের দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা যাবেনা দেশের জনগন তা মেনে নেবেনও না ।

প্রথম কথা , ব্লগার রাজীব নিঃসন্দেহে কুরুচি পুর্ন মন্তব্য করেছেন, আর এর জন্য তার শাস্তিও হওয়া উচিৎ । প্রশ্ন হল শুধু ইসলাম নয় কোন ধর্মই এভাবে কাউকে হত্যা করা সমর্থন করেনা । আর তার আলোচিত লিখাগুলো অনেক আগের লিখা , এতদিন পর তাকে হত্যা এবং লিখাগুলো দৈনিক পত্রিকায় ছাপানোর লক্ষতো স্পষ্ট । যদিও এসব করে প্রচারবিমুখ একজন লোককে তার নাস্তিকতা প্রচারের মাদ্ধমে সমগ্র দেশবাশির কাছে পরিচিত করে দেয়া হয়েছে । সেদিক থেকে ব্লগার রাজীব তার নাস্তিকতা প্রকাশে সফল ।

এর পর নাস্তিক বলে যাদের নাম উঠে আসবে, তাদের কেউই নাস্তিকতা জনিত কোন কথা কিংবা কোন ধর্মের বিরুদ্ধে কোন কথা শাহবাগের আন্দোলন থেকে বলেনি বলবেওনা আশা করি । আর এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে নাস্তিক বা কাফির বলে গালি দিলে , যে গালি দিল তার ঈমান সম্পর্কে সন্দিহান হওয়া যায় । ধর্মিয় অনুভূতি সবারই আছে, তার সাথে জাতীয়তাবোধের আন্দোলনের কোন বিরুপ সম্পর্ক নেই । দেশকে ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ , আর সেই দেশের প্রতি অসদাচরনকারীর বিচার মানুষ চাইতেই পারে । তবে যারা এসব কুরুচিপুর্ণ লিখা দেশে সাম্প্রদায়িক দাংগা সৃষ্টি করার লক্ষে জাতিয় দৈনিক পত্রিকায় ছাপিয়েছে, তাদের বিচার হওয়া কি আরও জরুরী নয় ? তদুপরি ধর্মের নামে মানুষ হত্যা, বাইতুল মুকাররম মসজিদের দেয়াল ভেঙ্গে সেই ইট দিয়ে মানুষের উপর হামলা, মজজিদের ভেতর আগুন লাগানো, জাতীয় পতাকা ছিরে ফেলা , এসব করে একটা গোষ্ঠী ধর্মীয় ও জাতীয়তাবোধে আঘাত হেনেছে বলে আমার বিশ্বাস ।

চক্রান্ত করে কিংবা টাকা ক্ষরচ করে বস্তির মানুষ ভাড়া করে বহু লোক জমায়েত করা যায় । সাধারনত আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিযেদের সমাবেশের সময়ে এই কাজটাই করে থাকে । কিন্তু শিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে কেউ টাকা দিয়ে বা যাচ্ছেতাই বুঝিয়ে কোথাও দিন-রাত আন্দোলন করানোতো দুরের কথা, নিয়েও যেতে পারবেনা বলে আমার বিশ্বাস । এখানে সংস্লিষ্টদের প্রায় ৯০ ভাগ কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সংযুক্ত নয় । তবে এখানে সবার সংলিষ্টতার কারন খুবই স্পষ্ট , এক কথা বলতে গেলে জাতীয়তাবোধ।

স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ৪২ বছরের আক্রোশ আর আমার ২৫ বছরের আক্রোশ মিটিয়ে ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের জন্যই জীবনের সর্ব প্রথম ভোটখানি দিয়েছিলাম আওয়ামিলীগকে, কারন এটা ছিল তাদের নির্বাচনী ওয়াদা । আর এও জানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেউ যদি করে তারা হবে আওয়ামিলীগ এর সরকার অন্য কোন দল এই বিচার করবেনা, যদিও আওয়ামিলীগও বর্তমানে জনমনে একটা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে । আর আওয়ামিলীগ ছিল ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, উপরন্তু এখন ক্ষমতায় । এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেকোন দলই সুবিধা গ্রহন করত যা আওয়ামিলীগ এখন করছে । তাতে আমার বা আপনার কি ? আমরা চাই যুদ্ধাপরাধীর বিচার, রাজনীতির জট পাকানো নয় ।

কেউ সুবিধা গ্রহন করবে বলে আমিতো আমার ২৫ বছরের চাওয়াকে বিসর্জন দিতে পারিনা । আমাদের জাতীয় প্রতিটি আন্দোলনই দেশের জন্য শুভ কিছু এনে দিয়েছে, উদাহরন স্বরূপ বলব স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের কথা । প্রেসিডেন্ট এরশাদ এর পরবর্তি পরিনতি দেখে বর্তমান ও ভবিশ্বতের সকল উচ্চপদস্থ সেনা সদস্যরা শিক্ষা নিয়েছেন । যার নজির ২১ আগষ্ট কিংবা ১/১১ এর মত পরিস্থিতিতেও তাদের কেউ রাষ্ট্র ক্ষমতা দক্ষলের চেষ্ঠা করেননি, আশা করি কোনদিন করবেন ও না । মানে এই প্রজন্মের এই আন্দোলন যদি সফল হয় , ‘‘সবার মাঝে একটা বিশ্বাস জন্মাবে, ‘আমরা জোট বেধে যেকোন জনস্বার্থ উদ্ধারে ঐক্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে পারি ’’।

যেই যিষয়টি বর্তমান রাজনীতিতে দেখা যায়না । দেখা যায় শুধু দুই রাজনৈতিক দলের কাদা ছুড়াছুড়ির রাজনীতি । বলতে পারেন এটা আমাদের জাতির এগিয়ে যাওয়ার নতুন একটা সুচনা । শুরুটা একেবারে শুরু থেকেই । এই প্রেক্ষাপটটা তৈরি করতে আমাদের সময় লেগেছে ৪২ বছর ।

শুরুটা যদি সফল হয় খুব শিগ্রই সকল চোর , বাটবার, খুনীদের বিচারই হবে ইনশাল্লাহ । এগুলো একান্তই আমার ব্যাক্তিগত ভাবনা, অনেকের মতামতই আমার সাথে নাও মিলতে পারে । আপনি অন্যকিছু ভেবে থাকলে মন্তব্য আবশ্যক । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.