অনুভুতিহীন জীবনের অপেক্ষায়... http://www.raatmojur.com/
ছেলেটা হা হা করে অট্ট হাসি ছাড়ে ওপাশের কথা শুনে।
"ছাগলের মতন হাসিস কেনো?" বিরক্তি ভেসে আসে ওপাশে মেয়াটার গলায়, "ঠিক পাঁচ মিনিট, আমাকে বিয়ে করবি কিনা সেটা হ্যাঁ কি না তে বল!" - চরমপত্র পাঠায় মেয়েটা।
"শোন" - একটু তরল গলায় বলে ছেলেটা, "আগেরবারে তোকে ঠিক এই কথাটাই জিজ্ঞেষ করেছিলাম, জবাবে ঊলুবনে মুক্তা আর সেই মুক্তার হার হয়ে বাঁদরের গলায় উঠানো- কিছু বাকি রেখেছিলি?"
"ফাজলামি করিস না!" - ধমক, রাগ, অধৈর্য্য একসাথে ছুড়ে মারে মেয়েটা ফোনে, "ঠিক ঠাক বল। "
"আমার জবাব আমি জানি, তুই আবার ফসকাবি নাতো?" - জানতে চায় ছেলেটা।
"ধ্যাৎ!" - বিরক্তিতে জবাব দেয় মেয়েটা, "রাজী কি না বল, সময় নেই।
"
"আমি তো সেই কবে থেকেই রাজী, খালি তুই ই কি দেখেছিলি তোর এক্স-বয়ফ্রেন্ডের মধ্যে কে জানে! এবারে তো প্রমান পেলি যা বলেছিলাম, শালা একটা প্লেবয়!" - বলে ছেলেটা, তারপর ত্রস্ত আরো কিছু শব্দ জোড়ে- "আগে দেখা কর, এসব হুট করে নেবার সিদ্ধান্ত না রে, কোথায় আসবো? এখন কৈ তুই?"
"আমি রাস্তায়," জানায় মেয়েটা, "শোন, তোর বাসায় যাবো, সেখানেই কথা হবে, খালা আবার বকবে না তো?"
"মা ডাকা অভ্যেস কর" ফোঁড়ন কাটে ছেলেটা, "নাহ, বকবে কেন? তোকে পছন্দ করে মা, জানিসই তো। "
"ঠিক আছে, তুই অফিস থেকে বেরো" তাড়া দেয় মেয়েটা, "আমি ঘন্টা খানেকে পৌঁছোবো"। - লাইন কাটে।
ফোন রাখার পরে হঠাৎ করেই রক্ত ঝলকে ওঠে বুকের মধ্যে, সেই কবে থেকে ও মেয়েটাকে পছন্দ করে, চায়, এমনকি ওর পরিবারও পছন্দ করে মেয়েটাকে। মেয়ের পরিবারও আপত্তি করবে না, জানে ভালোই।
মেয়েটা ওর খালাতো বোন। সেও জনে ছেলেটা ওকে পছন্দ করে, তবে পাত্তা দেয় না, একবার সোজা বলে ফেলেছিলো, "এই, বিয়ে করবি আমাকে?"
জবাবে মেয়েটা ওকে টাশ টাশ কিছু কথা শুনিয়ে দিয়েছিলো, ঊলুবনে মুক্তো, বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা - এসব। পরে জেনেছে, কলেজের এক সিনিয়ারের সাথে এফেয়ার আছে মেয়েটার।
সেটা ব্রেকআপ হবার পরে ভেবেছিলো আবার প্রপোজ করবে, তবে বিশদ জানার পরে আর সাহস করে নি, কারম মেয়েটাই পুরোনো সম্পর্কটা ভেঙেছিলো, ইউনিতে গিয়ে আরেক বড়ভাইয়ের প্রেমে পড়ে।
যাকগে, ওর অবশ্য কোনো দিকে তাকানো হয়নি পরে আর, স্বভাবে লাজুক, কিছুটা অমিশুকও আছে ছেলেটা।
আর চাকরীতে ঢুকে অফিস নিয়েই ব্যাস্ত - সময় কোথায় মানুষ খুঁজে, তাকে যাচাই বাছাই করে প্রেমে পড়তে?
আজকের এই আচমকা ফোনটা পেয়ে এসব একের পর এক চোখের সামনে ভেসে উঠলো ছেলেটার। "জরুরী পারিবারিক কাজ" - বলে অফিস থেকে কেটে পড়লো।
বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সোজা ছাদে, দুজনে।
ঘন্টা দুই অনেক কথা, মূলতঃ মেয়াটাই ঝাল ঝাড়লো প্রাক্তন "অবিশ্বাসী" প্রেমিকের ওপর। ছেলেটা একবার ভেবেছিলো খোঁচা মেরে মেয়েটার সেই পুরোনো ব্রেকআপ, বিনা নোটিশে একজনকে ফেলে আরেকজনের কাছে চলে যাওয়াটা তুলবে, পরে আর টানেনি, যাক না! যা যাবার তা গেছে! আর বয়েসও ছিলো কম! তার'চে আগামীকালের চিন্তাই ভালো বরং।
এবারে একটু ধাক্কা খেলো ছেলেটা, কালই বিয়ে করতে হবে, যেভাবেই হোক, পারিবারিক ভাবে কাজি ডেকে কবুল অথবা নিজেরা কাজি অফিসে যাওয়া - কালই চাই! এই তড়িঘড়ির কারন, সেই "ধোঁকাবাজ" প্রাক্তন প্রেমিক, তার নাকি পরশু বিয়ে, ওকে বলে এসেছে মেয়েটা, কালই বিয়ে করে ছাড়বে - সেই কথা রাখতেই হবে, হবেই হবে!
"হুম" - একটু ভাবে ছেলেটা, "চল বরং কাজি অফিসেই যাই, নাইলে একদিনে সম্ভব হবে না, দুজনেই দুবাড়ির একমাত্র ছেলে/মেয়ে, সবাই চাইবে ধুমধাম করতে, সেটা অনেক সময়ের ব্যাপার। তুই কি কালই চলে আসবি? নাকি যাষ্ট বিয়ে করে রাখবো আমরা, পরে তোলাতুলি-অনুষ্ঠান?"
"নাহ, কালই চলে আসবো" বলে মেয়েটা জেদি কন্ঠে, "ওকে আমি দেখিয়ে দেব। "
"পাগলামি...." বলে ওঠে ছেলেটা।
"চুপ!" ফুঁসে ওঠে মেয়েটা, "কাল সকালে বের হবো বাসা থেকে, বাকি তোর কাজ, আমি এসাপ সবাইকে জানাতে চাই আমি বিয়ে করে ফেলেছি, বুঝলি? আমি এখন ভাগি, মা কোত্থেকে এক বুইড়া বেটা ধরে এনেছে, সন্ধায় দেখতে আসবে আমাকে, যাইরে। "
"দেখিস, আবার ঝুলে পড়িস না" - টিপ্পনি কাটে ছেলেটা, "আমিতো বিয়ের আগেই বিপত্নিক হবো"
"আরে নাহ!" - মেয়েটা বলে বিরক্তি নিয়ে একরাস, "মা অনেক ঝামেলা করে রাজি করিয়েছে, যাষ্ট ওদের নাকি কথা দিয়ে ফেলেছে, দেখতে আসবে, আমি বলেছি বিয়ে করবো না, তবে মা যেহেতু বলে ফেলছে, তাই আরকি।
"
"ঠিক আছে" কথার শেষ টানে ছেলেটা, "চল বেরোই। "
মোড়ে গিয়ে সিএনজি খুঁজে দেয়, তারপর পরিচিত বন্ধুদের ফোন করতে থাকে, কাজি, রিসিপশন, গোক নিজেরা বিয়ে, একটু ভালো কোন রেস্টুরেন্টে বসতে হবে বৌ আর বন্ধুদের নিয়ে, একটা মাইক্রো আর একটা কার - এইসব টুকটাক।
তবে এসব ভাবনা মাঝে মাঝেই তাল হারাচ্ছিলো, নীচে নামবার সময় সিঁড়ি ঘরে, হঠাৎই ওকে জাপটে ধরে সোজা ঠোঁটের ওপর একটা চুমু এঁকে দিয়েছে আজ মেয়েটা। - এটা কেমন যেনো মাদকতায় ডুবিয়ে দিচ্ছে ওকে।
সেই রাতেই, রাতের খাবার পরে এলো খবরটা, খালা খুব খুশি হয়ে জানিয়েছেন ওর মাকে, মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলো একটু আগে।
যারা দেখতে এসেছিলো, তাদেরতো মেয়ে পছন্দই ছিলো, মেয়েরও পছন্দ হয়ে গেলো ছেলে, তাই কাজি এনে বিয়ে সারা। মেয়ে নিয়ে গেছে জামাই। এরপর বিশদ ফিরিস্তি, তারপর কবে কি প্রোগ্রাম করা যায়, যতোই যা হোক, আনুষ্ঠানিকতা চাই ই চাই কিছু, কোন কম্যুনিটি সেন্টার ভালো হয় -এসব।
ফোন করবে? নাহ! ওরা নতুন বৌ-জামাই, আজকেই ফোন করা ঠিক হবে না। একটা এসএমএস করে ও মেয়েটাকে, শুধুমাত্র তিনটে জিজ্ঞাসাবোধক চিহ্ন।
তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপচাপ একটা ডিভিডি নিয়ে বসে যায়, কমেডি মুভি একটা। রাতে ঘুম হবে না, জানে।
পরদিন একটা এসএমএস আসে বেলা করে, "স্যরি, তোর ক্যারিয়ার কেবল শুরু, আর ও অলরেডি এমএনসিতে টপ লেভেলে। এই পাত্র হাতছাড়া করার মত বোকামি করা ঠিক মনে হয় নি। ভালো থাকিস।
মাফ করে দিস। "
"আই হেইট গার্লস!" - জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বিড়বিড় করে মন্তব্য করে ছেলেটা।
তারপর কাজে ডুবে যেতে চেষ্টা করে...
বিশেষ নোটিশ: কুড়ি মিনিটে এই বাংলা ছিঃনেমা টাইপ ডিজ্যুস প্রেম-ছ্যাঁকা-বিয়ের গল্প লিখছি খালি মেজাজ খারাপ কৈরা, এক শাহরুখের আগমন নিয়া ব্লগে যা শুরু হৈছে, সেইটারে একটু ব্রেক দিবার জন্যেই এই ফাউল গল্প। কারো ভালো না লাগলে মাইনাসটা শাহরুখরে দিয়েন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।