তাল মেলাতে তালগোলিয় গোলমালেতে যত গণ্ডগোল ; যুগের সাথে যোগ-বিয়োগের বোল বলাতে হচ্ছি ভন্ড মূল !!!!
রাত দুইটার সময় অনুষ্ঠান শেষ হলো !
নতুন জায়গাতে কিছুই চিনি না। বিলাতে আসার শখ ছিলো অনেকদিনের ,আর কী আসা হবে !সব দেখে নিতে হবে। তাই অনেক রিস্ক নিয়ে রক এন' রুলের এই ডিস্কো তে এসেছিলম। খামাখাই ১৫ পাউন্ড গচ্চা দিলাম। ফেরার সময় এখন পড়েছি বিপদে ।
রাস্তা তো চিনিনা । যেই রিলেটিভের বাসায় ওঠেছি তারা জানে আমি এক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি ,ফেরার ঝামেলা নেই !বার বার বলে দিয়েছে রাস্তাতে যেনো একা না বের হই,কালোরা একা কাউকে দেখলেই ছুরি মেরে দেয়। মাইল স্টপ,বিশপ ওয়ে,ভিক্টোরিয়া পার্ক,হোয়াইট চ্যাপেল আরও কী কী নাম মাথার মধ্যে ঘুরছে কেবল।
ইতিউতি তাকাছি, হঠাত্ দেখি সামনে এক বার্বি ডল , তাও আবার জীবন্ত !
আমি অবাক, এতো রাতে .....। পরে মনে হলো হয়ত নিষিদ্ধ নারী ।
আসে পাশে কেউ নেই, পার্টি শেষে সবাই যার যার গন্তব্যে চলে গিয়েছে , কারো হেল্প পাওয়ার আশা নেই।
ধীর পায়ে বারবি ডলের মত তরুণীর দিকে এগিয়ে গেলাম,সে ও জিজ্ঞাসূ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল !
-এক্সকিউজ মি ! আমি আসলে একটু বিপদে পড়েছি ,সাহায্য করবেন?
আমার ইংরেজি উচ্চারণ মোটেই স্ট্যান্ডার্ড নয়, অনেক সময় হাস্যকর শোনায়।
আমার দিকে সে কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল !
অনেক দাপটে কিন্ত ভাঙা উচ্চারণে তার বিরক্ত প্রকাশ করলো,আমার কথা হয়তো বুঝতে পাড়ছে না । কিছুটা হতাশ আমি,নিজের ইজ্জত বাড়ানোর জন্য বললাম ,
"দেখুন আমি যেই সেই ফেলনা নই,আমার কাছে একটা এমন একটা ডকুমেন্ট আছে যেখানে লন্ডনের লোকাল প্রশাসন কে রেকুয়েস্ট করা হয়েছে যেন আমাকে সাহায্য করা হয়"
ঘটনা কিণ্তু মিথ্যে নয় ! ওই রকম একটা চিঠি আমি আমার পদ মর্যাদার বলে আগে থেকে জোগাড় করে রেখেছিলাম।
লাভের লাভ তেমন হলো বলে মনে হলো না,চরম বিরক্ত প্রকাশ করলো মেম সাহেব,কাকে যেনো ফোনে আমার নামে বিচার দিচ্ছে!আমার দিকে তাকিয়ে ফোন রেখে বললো,
-দেখো বললাম তো,আমি এই এলাকার না , আরেকজনের জন্য অপেক্ষা করছি।
তাকে আর ঘাটালাম না , একে তো বিদেশে, তার উপর মধ্য রাত। জান মালের সাথে সাথে নিজ মান সন্মান নিয়েও শংকিত হয়ে পড়লাম ।
আমার শংকার ষোল কলা পূর্ণ হলো তখনই !
লাল রঙের হিপ্পি সাজের একটা গাড়ি এসে থামল ঠিক মেম সাহেবের সামনে। গাড়ির ভিতরে বিশাল এক লম্বু নিগ্রো ,পাকানো ব্যায়াম করা শরীর।
জানালার ভিতর দিয়েই হৈ চই করে মেম সাহেব কে জড়িয়ে ধরলো।
একটু আবেগ কমে আসতেই মহিলা আমাকে দেখিয়ে উত্তেজিত ভাবে কী যেন বলা শুরু করলো !নিশ্চয়ই আমি ডিসটার্ব করেছি এই ধরনের কিছু বলছে!
একবার ভাবলাম ঝেড়ে দৌড় দেই । তাতে অবশ্য কোনো লাভ হবে না । কোনো অলিগলি নেই ! ইস যদি এটা আমাদের ঢাকার বাসাবোর কোনো রাস্তা হত!এই কালাব্যাটা গাড়ি নিয়া খালি চক্কর খেত ,আমার ছায়াও ধরতে পারতো না।
-হেই ইউ !
বাঁজখাই গলার স্বরে চমকে উঠলাম !
খুব মুলায়েম গলাতে বুঝাতে চাইলাম ,সুন্দরী দেখে আমি তার উপর হামলে পড়ি নি । সত্যি বিপদে পড়েছি আমি ।
-আরে বাবা ! আমার বান্ধবী খুব লজ্জিত ,তুমি নাকি তার ভাষা পরাপুরি বুঝতে পরছো না , আসলে ও পেরু থেকে এসেছে , এখানে নতুন। তুমি নাকি বিশ্বাস করছো না যে সে কিছু চিনে না এখানে !
আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম ,দু গাল ভরে হসলাম
- ওঃ আচ্ছা আচ্ছা !কোনো সমস্যা নেই ,থ্যাংক ইউ !
-আরে থ্যাংক্স দিচ্ছ কেনো ,তোমার তো কোনো উপকারেই আসতে পারি নাই এখনো !
-না না ঠিক আছে , আমি ম্যানেজ করে নিবো ।
-বাহাদুরী দেখাইও না ,শনিবার রাত টা খুব খারাপ ,ওঠো দেখি গাড়িতে!
এ আবার কোন বিপদ !
এদিক সেদিক তাকালাম ,চার রাস্তার মোড়ে কালো কয়জন যুবক হেই হল্লা করছ ,আমার দিকে তাকাচ্ছে,মাতাল দৃষ্টি !
আল্লাহর নাম নিয়ে উঠে পড়লাম গাড়ির পিছনের সিটে !
গাড়ি ছেড়ে দিলো ।
আমি যতটুকু খেয়াল করতে পারি বুঝিয়ে আমার ঠিকানা বললাম, আমার সাথে ওরা আর তেমন আলাপ করছে না এবিষয়ে । দুজনে কথায় আর প্রেমে মত্ত !
কোথায় যাচ্ছি কে জানে, কিছুই চিনি না !
আস্তানাতে নিয়ে আমাকে মার ধর করে টাকা কেড়ে নিবে? তার জন্য তো রাস্তাই যথেষ্ট ।
এই কালো দৈত্য ঘুরিয়ে একটা চর মারলে আমার মিনিমাম দুইটা দাঁঁত নড়ে যাবে ! এমন কী হতে পারে আমাকে বন্দী করে মুক্তি পণ আদায় করবে!
তাড়াতাড়ি ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম ,বললাম ,
-জানতো আমরা আসলে খুব গরীব জাতি !
আমার কথার কী অর্থ করলো কে জানে , দেখি ওরা সামনের আসনে মিলে মিশে একাকার হয়ে ঘনিষ্ট হয়ে যেভাবে দুজনে বসে ছিলো তার থেকে নিজেদের আলাদা করে অনেকটা শালিন ভাবে সরে বসল !
- হে: আমার আগেই বুঝা উচিত ছিলো তোমরা অন্যের সামনে এভাবে খোলা মেলা ঘনিষ্টতা পছন্দ কর না!
বুঝলাম,কালোটা ভেবেছে আমি ইংরেজিতে দুর্বল তাই conservative জাতি না বলে বলেছি poor nation !
আমি আর কথা বাড়ালাম না,এদিকে আমার বরং হার্ট বিট বেড়ে গেলো,কারণ আশেপাশে পরিচিত রাস্তা পেয়ে গিয়েছি !
-আচ্ছা তোমরা কী সামনের রাস্তা দিয়ে একটু ডানে যাবে , আমার বাসাটা ওদিকেই !
-আরে যাবো না মানে ,তোমার জন্যই তো এলাম!
মেইন রাস্তা থেকে আমরা পাঁচ মিনিট বামে গিয়ে আমার বিশপ ওয়ের আত্মীয়ের বাসা পেয়ে গেলাম!
আমি গাড়ি থেকে নেমে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা পাচ্ছিলাম না,
-কী ভাবে যে ধন্যবাদ দিব , অন্তত তোমরা পাঁচ মিনিট চলে এসেছ তোমাদের মেইন রাস্তা থেকে ,ভাগ্য ভালো আমার তোমরা এই রাস্তাতেই যাচ্ছিলে!
এইবার আমার অবাক হওয়ার পালা !
-আরে এই রাস্তাতে যাচ্ছিলাম কে বললো , লিণ্ডা তো মাত্র ডিস্কো শেষে লাভ খরচের হিসাব নিচ্ছিল ,যেই ডিস্কো তে তুমি গিয়েছিলে সেটা আমরা দুজনে চালাই ! ও আমার পার্টনার,আমার আজ আসার কথা ছিলো না,অন্য কাজ ছিলো । শো শেষে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তোমাকে হেল্প করতে এসেছিলো লিণ্ডা । একা কথা বুঝছিলনা বলে আমকেও ফোন করে নিয়ে এলো বাসা থেকে ! যাই হোক তোমার কারণে একটা লং ড্রাইভও এনজয় করা গেলো , লিণ্ডার সাথেও দেখা হলো!
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ! আমরা মোটামোটি এক ঘন্টা গাড়িতে পাড় করেছি,আমাকে পৌছে দিতেই তারা এই এক ঘন্টা ড্রাইভ করে এসেছে!
***************
লন্ডনের সেই স্মৃতিটা বিশাল ধাক্কার মত লাগলো।
কালো টি শার্ট আর জীন্স পড়া তরুণ বিজয়ের হাসিটা এখনো ধরে রেখেছে !কালো পাজারু গাড়িটা দিব্যি উল্টো রাস্তা বরাবর চলে যাচ্ছে । ভিতরে বসা বৃদ্ধ ভদ্রলোক তরুণটিকে ধন্যবাদ দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে আছে।
আমি শাজাহানপুরের চার রাস্তার মোড়ে নির্বাক ভাবছি,আমরা কোথায়, কী উদ্ভূত জাতি আমরা!
পাজারুর ড্রাইভার জানতে চাইছিলো সায়দাবাদের রাস্তা কোনদিকে । তরুণটি অমায়িক হেসে কাকরাইলের দিকে উল্টো রাস্তা দেখিয়ে দিলো। গাড়িটা দৃষ্টির আড়ালে যেতেই আমার দিকে তাকিয়ে ফিচেল একটা হাসি দিলো সেই তরুণটি ,
"দিছি ভাই উল্টা রাস্তা ধরইয়া। জামে ঢুকবো ,দুই ঘন্টা শেষ !শালারা পাজারুতে উইঠ্যা যে ভাব নেয়!মরগিয়া এইবার মালিবাগ দিয়া উল্টা রাস্তাতে!"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।