পৃথিবীর সবচেয়ে অমানবিক শব্দ মানবতা, মানবতা কথায় থাকে না , কাজে থাকে।
আপনার বোন- মেয়ে বা স্ত্রীর উদ্ধত যৌবনের অনিচ্ছাকৃত হাতছানিতে মানব স্বত্বা থেকে বিকৃত হয়ে যাওয়া কিছু পশু যে কোন উপায়ে তাদের শরীরের আনাচে কানাচে কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে, আপনার কল্পনাতেও অসহ্য হলেও সবাই ওই নারীর পরবর্তী অবস্থা না জানা পর্যন্ত বিনোদনের অনন্য সীমাতে উপভোগ করছে।
ইচ্ছা করেই আপনাকে দিয়েই শুরু করলাম। আমার নিজেরও বোন আছে, আমাকে আর ওই পশু গুলোকে আপনার যা করতে ইচ্ছা করছে, আমাকে কেও এই কথা বললে একই কাজ করতে ইচ্ছা হত । তবু ও আপনাকে রাগানোর কারন আছে।
অনেক বয়স হউয়া পর্যন্ত ও পত্রিকার ধর্ষণের খবর গুলো পড়ে এক বিচিত্র আনন্দ হত। সাথে সাথে মেয়েটা ধর্ষিত হউয়ার সময় কেমন মনভাব ছিল- তা ভাবলে কষ্ট হত। আমার অনুভুতির এই অদ্ভুত ধারাবাহিকতায় সবার শেষে আসত পশু গুলোর ওপর রাগ। যা হয়ত এমন কোন জোড়াল অবস্থান সৃষ্টি করতে পারত না বলেই আবার শুরু হত ধর্ষণের কোন খবর খোঁজা।
হয়ত আমার মানসিকতা খুব বেশি উন্নত না হউয়ায় জঘন্য এ অনুভুতির খেলা চলত।
কিন্তু অবাক হউয়ার ঘটনা ঘটেছিল, যখন দেশের নামকরা এক পত্রিকায় একটা আর্টিকেলে পড়েছিলাম, সম্ভবত ৭০ ভাগ পুরুষ ধর্ষণের ঘটনা পড়ে মজা পায়। তার মানে দলে আমি একা নই। বেশ অনেক দিন আগে হউয়ায় আমি সোর্স লিঙ্ক দিতে পারছি না। আপনাকে হয় আমাকে বিশ্বাস করতে হবে, অথবা নিজেকে দিয়ে বিচার করতে হবে, অথবা শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে অথবা পড়া বাদ দিতে হবে। আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যপার।
তবে দল ভারী হউয়ার একটা কারন ও ছিল। আর্টিকেল টা তে বলা হয়েছিল যে আমাদের দেশের পত্রিকা গুলোতে ধর্ষণের খবর গুলো খুব রগরগে পুরুষ কেন্দ্রিকভাবে ছাপা হয়, যা আমাদের সামাজিকতার সাথে বেড়ে ওঠা মানসিকতায় যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি করে। আমি এত সাইকোলজি জানি না, তবে এটুকু বলতে পারি, ধর্ষণের খবর পড়ে একমাত্র অতি নিম্ন মানসিকতার গোঁড়া অশিক্ষিত নারী ছাড়া কোন নারী বিন্দুমাত্র বিনোদিত হয় না। আর তাদের বিনোদনের উৎস টা হিংসা।
এসব ভেবে আমি জদু মদুর বোনের ধর্ষণের ঘটনা দিয়ে শুরু না করে স্রস্টা কখন ও না করুক , তবু ও আপনার পরিবার কে নিয়েই লেখা শুরু করেছি।
যেখানে অনুভুতির কোন ধারাবাহিকতার সুবাদে বিনোদন বা করুনা সৃষ্টির সুযোগ নেই বলেই আমার বিশ্বাস । আপনার প্রথম রাগ ই গিয়ে পড়বে পশু গুলোর ওপর। আপনি যত বারই আপনার বোন—মেয়ে- স্ত্রীর কথা ভাববেন, তত বারই রাগ বাড়বে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় জদু মদুর ঘরের ধর্ষণের খবরে রাগের চেয়ে ধারাবাহিক অনুভুতির খেলা চলে বেশি। হয়ত আমার মেয়ে- বোন কে আমি দেখে রাখি সব সময়, আমার এলাকায় এমন হতেই পারে না, আমি বিরাট হ্যাডম – এসব ভেবে নিজের পরিবার সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হতে পারেন।
অথবা এসব নেতিবাচক কথা নিয়ে ভাবতেই চান না।
আপনি যাই ভাবুন না কেন, তা জদু মদুর ঘরের মেয়েদের ধর্ষণের ধারাবাহিক অনুভুতি উপভোগের এবং নিশ্চিন্ত হউয়ার কোন ব্যক্তিগত যুক্তি হতে পারে না।
ক্রাইম একটা ভাইরাসের মত। কম সময়ে ছড়িয়ে যায়। ভাইরাস এখন আসঙ্কামুক্ত অবস্থানে আছে বলে চুপ করে বসে থাকা জ্ঞানীর লক্ষন নয়।
দেশে কোন রিদয়াঘাত মুলক ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে তখন তা নারীকেন্দ্রিক ভাবে শোকাহত সব ভাষায় পত্রিকাগুলোতে বড় বড় করে ছাপা হয়। সাধারণের মন ধারাবাহিক অনুভুতির বিনোদনের কথা ভুলে গিয়ে একছত্র ভাবে ক্রোধে ভড়ে ওঠে। এজন্যই মনে হয় ধর্ষকের শাস্তি চেয়ে ছোট খাট বা বড় সড় আন্দোলন গুলো বেশ জনসমর্থিত হয়।
কিন্তু এর মানে কি দেশের অন্যান্য ধর্ষণের ঘটনা গুলো কম অমানবিক??? সম্ভবত ধর্ষিতা শিশু বা বৃদ্ধা বা কোন দামি ঘরের নারী না হলে এবং ধর্ষণ পরবর্তী গুরুতর অবস্থা বা লোহমর্ষক হত্যা বা মৃত্যুর স্বীকার না হলে –তাদের করুন কাহিনী গুলো পত্রিকার পাতায় পুরুষকেন্দ্রিকতার বাহিরে না গিয়ে বিনোদনের খোরাক হয়ে জমা হয়।
আর যাদের ধর্ষণের ঘটনা বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক হউয়ার সমুহ সম্ভাবনায় থাকে তাদের জন্য ধর্ষকের বিচার চেয়ে আন্দলনে বেশি হলে ধর্ষক গ্রেফতার হয়।
কিন্তু যেখানে ধর্ষিতা খবরের সুবাদে হয়ত লাখো মানুষের করুনা পেলে ও নিজ এলাকায়, সমাজে বঞ্চনার স্বীকার হয়, সেখানে আমাদের দেশের আইন কি ধর্ষিতার ন্যায্য বিচারের জন্য যথেষ্ট???
আপনি যদি আপনার বোন –মেয়ের কথা ভুলে গিয়ে থাকেন, তবু ও আপনি ও যেমন চান না, আমি ও চাই না যে, তারা পুরুষকেন্দ্রিক বা নারীকেন্দ্রিক কোন ধর্ষণের খবরের উপজীব্য হোক। তবে জদু মদুর মেয়ে- বোনের জন্য যদি রাগ টা ধরে রাখতে পারেন, তবে জেনে রাখুন।
আমি আইনের ধারা নেট থেকে ঘেঁটে লিখে দিয়ে মাথা পাকিয়ে ফেলতে পারি। কিন্তু তা করতে চাচ্ছি না। শুধু ছোট্ট একটা তুলনা দিতে চাচ্ছি।
হত্যা একটা নিকৃষ্টতম জঘন্য অপরাধ। কিন্তু হত্যা মামলার বিচারের বেলায় কিছু প্রসঙ্গ আসতে পারে। যেমনঃপূর্বপরিকল্পিত ঠাণ্ডা মাথার হত্যা, রাগের বশে হঠাৎ হত্যা, নিজের জীবন বাঁচাতে হত্যা, অন্নের জীবন বাঁচাতে হত্যা বা ভুলবশত হত্যা।
অর্থাৎ হত্যা জঘন্য অপরাধ হলে ও সপক্ষে- বিপক্ষে কিছু যুক্তি থাকার কারনে বিচারে বিভিন্ন ধরনের রায় দেয়া যেতে পারে- বিভিন্ন মেয়াদে জেল জরিমানা, যাবজ্জীবন বা ফাঁসি।
অপরপক্ষে ধর্ষণের জন্য কোন সপক্ষ যুক্তি আমি অন্তত খুঁজে পাই নি।
শুধু মাত্র ধর্ষকের বয়স বিবেচনায় নেয়া ছাড়া, অর্থাৎ ধর্ষক নাবালক নাকি সাবালক তার জন্য আলাদা রায় দেয়া যেতে পারে। সাবালক হলে সকল ধর্ষকের জন্য একই শাস্তির আইন হউয়া উচিত- তা মৃত্যুদণ্ড। সাথে ধর্ষিতাকে ক্ষতিপূরণের ও ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশে কোন হেডিং ধর্ষণের নিউজ নেই, কবে ভারতীয়দের মত কোন রিদয়াঘাত মুলক ধর্ষণের ঘটনা ঘটবে, তার জন্য অপেক্ষা করলে, ধর্ষণ নামক ভাইরাস কে বাড়তে দেয়া ছাড়া আর কিছুই করা হয় না।
আমরা আমাদের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
তবে যেহেতু সংবিধান জনগণের জন্য এবং কোন ধর্ম গ্রন্থ না হউয়ায় পরিবর্তনের সুযোগ আছে। আর এক্ষেত্রে লীগ বা বি এন পি – এর বিরোধিতা করার কোন কারন অন্তত আমার চোখে আসছে না। উল্টো পরবর্তীতে কোন ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক কে দলীয় পর্যায়ে বিবেচনায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ সম্পর্কিত আইন পরিবর্তনের প্রতিবাদে যথেষ্ট রাজনইতিক ইস্যু তৈরির ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।
তাই সংবিধানে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন পরিবর্তন করতে সরকারকে বাধ্য করার এখনি উপযুক্ত সময়। আমি কোন গন জাগরণের পক্ষ বা বিপক্ষ আলচনায় এখন যাব না।
শুধু এটুকু মনে করিয়ে দিতে চাই, শাহাবাগের আন্দোলনের শুরুর দিকে গন মানুষের ব্যাপক সমর্থনের কারনেই সংবিধানে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের আইন সংযুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল।
এখানে কোন ভাই হেফাজতে ইসলামের দাবি তে আইন কেন পরিবর্তন হল না, সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। ছোট্ট করে এটুকু বলতে চাই, রাষ্ট্র পক্ষের আপিল সংক্রান্ত আইন নিয়ে গণতন্ত্রের কোন সংঘর্ষ ছিল না। হেফাজতে ইসলামের দাবি যদি ইসলাম সম্মত ও হয় , ( আমি ভাই এত জানি না ) তবে ইসলামী তরিকার কোন সরকার থাকলে হয়ত বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু গণতন্ত্র নাম ভিত্তিক কোন সরকারের তা বাস্তবায়নের প্রশ্ন আসে না। কারন গণতন্ত্র ও ইসলামী আইন সাঙ্ঘরসিক।
একটা গণতান্ত্রিক দেশ যদি মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ হয় তবু ও নয়।
আমি কোনটা পছন্দ করি, তা জিজ্ঞাসা করলে আমার লেখার প্রসঙ্গকে অপমান করা হয়। আমাকে অপমান করতে চাইলে সেটাও ব্যক্তিগত ব্যপার।
ধর্ষণ একটি ইস্যুবিহীন জঘন্যতম অপরাধ। এই অপরাধের একমাত্র শাস্তি হোক মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষিতাকে প্রদানের জন্য ধর্ষকের কমপক্ষে দশ লক্ষ টাকা জরিমানা।
ব্লগের সম্মানিত ব্লগারগন এবং ব্লগ পাঠক রা সাধারনের চেয়ে বেশি সচেতন বলেই আমি বিশ্বাস করি। তাই খোলাখুলি একটা কথা বলি, আমরা সবাই জানি যে, নিকৃষ্ট তম ঘটনা উদাহরণ ছাড়া আমাদের বাঙালিদের কোন ব্যাপারে আগ্রহ জন্মায় না। তাই কি করনীয় তা নিয়ে নিজস্ব মতামত জানানোর নিবেদন জানাই।
যদি ধর্ষণ এর আইন নিয়ে সত্যি ই আমাদের কিছু করা উচিত বলে মনে হয়, তবে কোন সংস্থা বা বিজ্ঞ ব্লগারদের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার অনুরধ জানাই।
বি ঃ দ্রঃ আইন হলে ও লাভ নাই, কিছুই পরিবর্তন হবে না- এমন নেতিবাচক মানুসিকতা থাকলে কিছুটা দূরে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।
তাদের উদ্দেশে এটুকু বলতে চাই, একটা আগে পরিবর্তন শুরু হোক। সবার আগে পরিবর্তনের সুত্রপাত টাই মুখ্য।
আমাদের আছে ভাষার মাস, স্বাধীনতার মাস, বিজয়ের মাস।
সাথে প্রতিটি দিন ই হোক আমাদের গৌরবের, অর্জনের, আমাদের দেশের
প্রতিনিধিত্তের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।