মোমিন মেহেদী
ঘরে ফেরা নেই যুদ্ধটা চলবেই। একাত্তরের রক্তক্ষয়ি মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও যিনি মুক্তিযুদ্ধের কবি হিসেবে ব্যাপক পরচিত সেই সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন কবিতাটি। যেখানে নতুন প্রজন্মকে দিয়েছেন নতুন শপথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। লিখেছেন- লেখার টেবিলে মগ্ন হয়ে আছি, কখনো আর কখনো ল্যাপটপে/ অক্ষরগুলো শব্দগুলো বাক্যগুলো করোটির ভেতরে সরবে/ যে ফেটে পড়ছে, তার লিপি কী দ্রুতই না গড়ে উঠছে,/ আর ওদিকে ওরা ওই তরুণেরা পায়ে পায়ে যে এসে জুটছে/ শাহবাগ সড়ক মোহনায়থ এও তো এক কবিতাই!/ খাতার শাদা পৃষ্ঠায় ল্যাপটপের দুধ শাদা পর্দায় তাকাই!/ কবিতা কবিতা আজ, আমাকে লিখিয়ে নিচ্ছে নতুন একটা দিন/ কতদিন পরে! আর কত দিনের না পরেই রক্তের ঋণ/ শোধ করতে ওরাথ গ্রথিত হচ্ছে পঙক্তির পর পঙক্তিতে/ বাংলা মায়ের সবুজ আঁচলে ফের লাল সূর্য ফিরে এনে দিতে। / ফিরে এনে দিতে সত্যের উজ্জ্বলতাথ যা ছিলো অমাবস্যা ঢাকা/ কত দীর্ঘ রাত ছিলো বাংলাদেশ নামে একটি দেশের জেগে থাকা/ ওই ওদেরই জন্যে।
আর আমার কবিতাওথ একাত্তর থেকে!/ আজ এই ল্যাপটপের পর্দায় বা খাতায় পাতায় আমার হাত লেখে/ যে কবিতা, আজ তারচেয়েও এক মেধাবী কবিতা লেখা হয়ে যাচ্ছে/ ওদেরই একের পর এক সমাগমেথ যেন শব্দের পর শব্দ পাচ্ছে/ একটি কবিতার পঙক্তির শরীর। আমি লেখা ছেড়ে রাজপথে এবার। / ওদের কবিতাটিই তো আজ আমারথ আমাদেরথ কণ্ঠে তুলে নেবার/ আর সেই কবিতাটির শিরোনাম লাল সবুজ অক্ষরে এই/ পতাকা যারা পোড়ায়থ তাদের ক্ষমা নেই নেই!/ যতদিন না বাংলার মাটি হয় দালাল-ঘাতক মুক্তথ ঘরে ফেরা নেই!/ যতক্ষণ না মায়ের বুকে দুধ ফিরে দিতে না পারি যুদ্ধটা চলবেই...
এত সুন্দর কবিতা তৈরি করেছেন নতুন প্রজন্মের জন্য; যা সত্যি-ই প্রশংসার দাবীদার। তবে বাংলাদেশের ইতিহাস সবসময় বলেছে যে, যখন যেদিকে বাতাস পেয়েছেন কবি সৈয়দ শামসুল হক পাল তুলে দিয়েছেন; অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের বাইরে অবস্থন করলেও স্বাধীনতার পরে তিনি নূরলদীনের সারা জীবন উপহার দিয়ে হয়ে গেছেন স্বাধীনতার স্বপক্ষের বড় সৈনিক। আবার একইভাবে বাংলাদেশের-ই শুধু নয়; সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতের পর কবি সৈয়দ হক হয়ে ওঠেন জাতীয়তাবাদী সরকারের খাস লোক।
এসময় তিনি সরকারী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছিলেন রাষ্ট্রিয় কবি(এখনো তিনি সেই স্থানেই রয়েছেন, রাষ্ট্রিয় কবি হিসেবে বাংলাদেশের সকল সুবিধা ভোগ করছেন)। বঙ্গবন্ধু থেকে শহীদ জিয়া, পল্লীবন্ধু থেকে খালেদা জিয়া এবং এরপর শেখ হাসিনা থেকে নতুন প্রজন্ম পর্যন্ত সৈয়দ হক আছেন নিজের জায়গাটি শক্ত করেই। কথাগুলো এজন্য বলছি যে, সৈয়দ শামসুল হক একদিকে নতুন প্রজন্মের সাথে একাত্মতা পোষন করছেন, অন্যদিকে জামায়াত-শিবির পরিচালিত পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত লেখার পাশাপাশি তাদের টিভিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন সময়। আমি দেখেছি স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমান মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নয়াদিগন্তের সাহিত্য সম্পাদক জাকির আবু জাফরকে এড়িয়ে গেলেও সৈয়দ শামসুল হক দেখলেই কথা বলেছেন, খোঁজ খবর নিয়েছেন। নয়া দিগন্তের সাথে সর্ম্পক ভালো রেখে নিয়মিত লিখেছেন নির্মলেন্দু গুন, মহাদেব সাহা, অসীম সাহা, অঞ্জনা সাহা, আসাদ চৌধুরী, আসলাম সানী, মুহাম্মদ সামাদ, ফারুক নওয়াজ, হুমায়ুন কবীর ঢালী, সুজন বড়–য়া, রেজাউদ্দীন স্টালিন, জামসেদ ওয়াজেদসহ শতাধিক স্বাধীনতার স্বপক্ষের কবি; তারাই এখন শাহবাগের সাথে সংহতি প্রকাশ করছেন-নয়া দিগন্ত বন্ধের দাবী জানাচ্ছেন।
অথচ ২০১২ সালের জুলাই মাসে নাঈমুল ইসলাম খান-এর প্রকাশিত ও জব্বার হোসেন-এর সম্পাদিত পত্রিকা সাপ্তাহিক কাগজে এ বিষয়ে লেখার পর আমাকে কঠিনভাবে কথা শুনিয়েছিলেন অনেকেই। বলেছিলেন, নয়া দিগন্তে না লিখলে মোটা অংকের সম্মানি থেকে বঞ্চিত হবো, তুুমি দেবে সেই সম্মানি?
প্রশ্নবোধক এই সময়কে কাছে রেখে এগিয়ে যেতে যেতে পাল্টে যেতে দেখলাম স্বয়ং সৈয়দ হককে, পাল্টে যেতে দেখলাম অনেককেই। যারা নয়া দিগন্তে না লিখলে পেটের ভাত হজম হতো না; শান্তি পেতেন না ছাত্র শিবিরের মুখপত্র ডাকটিকিট-এ না লিখলে তারা সংহতি প্রকাশ করতে শাহবাগে আসছেন; যা সত্যি অবাক করার মত।
এই অবাক হতে হতে খেয়াল করলাম, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে সমালোচনা। অথচ এই বীরের যুদ্ধের কাছে পরাজিত হয়ে হানাদার-রাজাকররা অত্ম সমর্পন করেছিলো।
সেই বঙ্গবীরকে নিয়ে সমালোচনার পর অবশ্য তিনি বলেছেন যে, মুক্তিযুদ্ধ দেখলে শাহবাগ আন্দোলনকারীরা আমাকে অপবাদ দিত। শাহবাগে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী আন্দোলনকারীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে নিয়ে কটূক্তির ব্যাপারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, যারা তাকে নব্য রাজাকার কিংবা এ ধরনের অপবাধ দিচ্ছে, তারা হয় তো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। তারা মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখলে তাকে এ ধরনের অপবাদ দিতে পারত না। শাহবাগের আন্দোলনটি প্রথম দিকে নির্দলীয় থাকলেও এখন সেখানে দলীয়করণ হচ্ছে। বিষয়টির দিকে নতুন প্রজন্মকে খেয়াল রাখতে হবে।
শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশে গণজাগরণ মঞ্চ ও শহীদ মিনার ভাংচুরের ঘটনাকে নিন্দনীয় উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ইসলাম পছন্দের দলগুলোর রাজনীতি শেখা দরকার। রাজনীতি আর গু-ামি এক কথা নয়। আর পুলিশের এমন আচরণও ঠিক হয়নি। কোনো আন্দোলনকে মোকাবেলা করতে হলে পুলিশকে উচিত আরো সহনশীল হওয়া । শাহবাগের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শাহবাগের আন্দোলনকে সবার সম্মান করা উচিত।
এখানে তারুণ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এটাকে চাপিয়ে রাখা উচিত নয়। প্রথম দিকে আন্দোলনটি নির্দলীয় ছিল। মাঝে এখানে দলীয় পরিচয়ের লোকজন ঢুকে গিয়েছিল। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয় মন্তব্য করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশ খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে।
কেউ কোনো কথা শুনে না। সবাইকে ঘোড়া রোগে ধরেছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সব থেকে বেশি সরকারকে দায়িত্বশীল হতে হবে। তারপর বিরোধী দল এবং অন্য দলগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে। কিন্তু তা না করে একজন আরেকজনকে প্রভাবিত করতে চাচ্ছেন।
আগামী নির্বাচনে কোনো জোটের সঙ্গে নিজের গড়া দলকে সম্পৃক্ত করবেন কী না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাত্র অল্প কিছুদিন হয়েছে দল গঠন করেছেন। কোনো জোটে গিয়ে নির্বাচন করার ইচ্ছা আপাতত পোষণ করছেন না। এখন যে অবস্থা, তাতে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। এখন তার মূল লক্ষ্য দলকে সুসংগঠিত করা। এর আগে একটি সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন।
খুব সুন্দর সম্মেলন হয়েছে। তারা বছরব্যাপী একটি গণসংযোগ শুরু করেছেন। সিলেট শাহ জালাল (রহ.) ও শাহ পরাণ (রহ.) মাজার থেকে যার সূচনা করা হয়েছে। পথে নারায়ণগঞ্জ পড়েছে, তাই নারায়ণগঞ্জে আসা। তবে তার মনে হয়, প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জে আসতে পারলে ভালো হতো।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা হচ্ছে চেতনার ব্যাপার। সরকার ও জনগণ সবাইকে স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করতে হবে। স্বাধীনতা মানে হলো স্বাধীনতা রক্ষা করা। কিন্তু সবার সেই বোধ নেই। কেউ সেই চেতনাকে লালন করে না।
বঙ্গবীরের এই যে বীর বচন; সেই বীর বচন-ই বলে দেয় তিনি একজন আদর্শ মানুষ- নেতা এবং বীর। এই বীরের প্রতি তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে আমি জানাই শ্রদ্ধা এবং সংগ্রামী অভিনন্দন। আমি একজন ব্লগার, একজন তরুণ রাজনীতিক এবং কলামিস্ট। তাই বলে অন্ধ নয়; যা দেখি-তা লেখি। তুলে ধরি আলোচনা এবং সমালোচনার রঙধনু।
যাতে কালো মেঘ মুক্ত হয় আমার এ দেশ। এ কারনে নতুন প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ জানাবো বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবতে হবে। যুুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির মধ্য দিয়ে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার যে ব্রত তা বাস্তবায়ন এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হলেও আগামীতে তরুণ প্রজন্মকে সঙ্কটাপূর্ণ এই দেশকে রক্ষা করতে তৈরি হতে হবে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে।
সম্প্রতি এক বৈঠকে দেশের বরেণ্য একজন চলচ্চিত্রকার বলেছিলেন, পাকবাহিনীর সাথে একজন মহিলা চিকিৎসকও সেদিন আত্ম সমর্পন করেছিলেন, সেই চিকিৎসক ডা. সৈয়দা আনোয়ারা হক। একথা শোনার পর আমিতো একেবারে আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা।
কেননা, তার লেখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাময় বিভিন্ন বই পড়তে পড়তে বড় হয়েছি।
এখন ভাবছি, নতুন প্রজন্মের যে জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলাম, লিখেছিলাম বিভিন্ন রকম লেখা; সেই জোয়ারে না ভেসে সত্যিকারের একজন নতুন বীর হিসেবে বাংলাদেশকে বাঁচাতে তৈরি হবো। যাতে করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি আর জামায়ত-শিবিরমুক্ত দেশ গড়তে লড়তে পারি নিরন্তর। সেই লড়াইয়ে আমন্ত্রণ নতুন প্রজন্মের সবাইকে। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা এবং পরবর্তী সময়ের সঠিক ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে।
কেননা, আমরা কোন সুুবিধাবাজ কবি-সাহিত্যিক-নেতা-নাট্যজন-সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বর দ্বারা প্রভাবিত হতে চাই না। আমরা চাই সঠিক ইতিহাস, সঠিক গবেষণ এবং সঠিক চেতনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে। যাতে করে সেই সময়ে আর কোন স্বাধীনতার স্বপক্ষের পত্রিকা যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক-এর বিজ্ঞাপন না ছাপে, যেন আর কোন স্বাধীনতার স্বপক্ষের কবি নয়া দিগন্ত-সংগ্রাম-সোনার বাংলা-ডাকটিকিট-কানামাছি-টিনএটটিন-কিশোর কন্ঠ-ছাত্র সংবাদসহ কোন যুদ্ধাপরধী বা তাদের সমর্থকদের পত্রিকায় না লেখে। বয়কট করে দেশ বিরোধী জামায়াত-শিবিরের মিশন গ্রুপ, আল ফালাহ-ই্য়ূথ গ্রুপ-ওশান গ্রুপ-মাস্তুল গ্রুপসক সকল ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানকে। প্রত্যয়ে পথ হাঁটতে হাঁটতে বলছি- আসুন নতুন প্রজন্ম সত্যিকারের দেশ প্রেমিক হয়ে দেশ-মাটি মায়ের জন্য লড়ি...
মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)।
মোমিন মেহেদী: ঘরে ফেরা নেই যুদ্ধটা চলবেই। একাত্তরের রক্তক্ষয়ি মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও যিনি মুক্তিযুদ্ধের কবি হিসেবে ব্যাপক পরচিত সেই সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন কবিতাটি। যেখানে নতুন প্রজন্মকে দিয়েছেন নতুন শপথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। লিখেছেন- লেখার টেবিলে মগ্ন হয়ে আছি, কখনো আর কখনো ল্যাপটপে/ অক্ষরগুলো শব্দগুলো বাক্যগুলো করোটির ভেতরে সরবে/ যে ফেটে পড়ছে, তার লিপি কী দ্রুতই না গড়ে উঠছে,/ আর ওদিকে ওরা ওই তরুণেরা পায়ে পায়ে যে এসে জুটছে/ শাহবাগ সড়ক মোহনায়থ এও তো এক কবিতাই!/ খাতার শাদা পৃষ্ঠায় ল্যাপটপের দুধ শাদা পর্দায় তাকাই!/ কবিতা কবিতা আজ, আমাকে লিখিয়ে নিচ্ছে নতুন একটা দিন/ কতদিন পরে! আর কত দিনের না পরেই রক্তের ঋণ/ শোধ করতে ওরাথ গ্রথিত হচ্ছে পঙক্তির পর পঙক্তিতে/ বাংলা মায়ের সবুজ আঁচলে ফের লাল সূর্য ফিরে এনে দিতে। / ফিরে এনে দিতে সত্যের উজ্জ্বলতাথ যা ছিলো অমাবস্যা ঢাকা/ কত দীর্ঘ রাত ছিলো বাংলাদেশ নামে একটি দেশের জেগে থাকা/ ওই ওদেরই জন্যে।
আর আমার কবিতাওথ একাত্তর থেকে!/ আজ এই ল্যাপটপের পর্দায় বা খাতায় পাতায় আমার হাত লেখে/ যে কবিতা, আজ তারচেয়েও এক মেধাবী কবিতা লেখা হয়ে যাচ্ছে/ ওদেরই একের পর এক সমাগমেথ যেন শব্দের পর শব্দ পাচ্ছে/ একটি কবিতার পঙক্তির শরীর। আমি লেখা ছেড়ে রাজপথে এবার। / ওদের কবিতাটিই তো আজ আমারথ আমাদেরথ কণ্ঠে তুলে নেবার/ আর সেই কবিতাটির শিরোনাম লাল সবুজ অক্ষরে এই/ পতাকা যারা পোড়ায়থ তাদের ক্ষমা নেই নেই!/ যতদিন না বাংলার মাটি হয় দালাল-ঘাতক মুক্তথ ঘরে ফেরা নেই!/ যতক্ষণ না মায়ের বুকে দুধ ফিরে দিতে না পারি যুদ্ধটা চলবেই...
এত সুন্দর কবিতা তৈরি করেছেন নতুন প্রজন্মের জন্য; যা সত্যি-ই প্রশংসার দাবীদার। তবে বাংলাদেশের ইতিহাস সবসময় বলেছে যে, যখন যেদিকে বাতাস পেয়েছেন কবি সৈয়দ শামসুল হক পাল তুলে দিয়েছেন; অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের বাইরে অবস্থন করলেও স্বাধীনতার পরে তিনি নূরলদীনের সারা জীবন উপহার দিয়ে হয়ে গেছেন স্বাধীনতার স্বপক্ষের বড় সৈনিক। আবার একইভাবে বাংলাদেশের-ই শুধু নয়; সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতের পর কবি সৈয়দ হক হয়ে ওঠেন জাতীয়তাবাদী সরকারের খাস লোক।
এসময় তিনি সরকারী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছিলেন রাষ্ট্রিয় কবি(এখনো তিনি সেই স্থানেই রয়েছেন, রাষ্ট্রিয় কবি হিসেবে বাংলাদেশের সকল সুবিধা ভোগ করছেন)। বঙ্গবন্ধু থেকে শহীদ জিয়া, পল্লীবন্ধু থেকে খালেদা জিয়া এবং এরপর শেখ হাসিনা থেকে নতুন প্রজন্ম পর্যন্ত সৈয়দ হক আছেন নিজের জায়গাটি শক্ত করেই। কথাগুলো এজন্য বলছি যে, সৈয়দ শামসুল হক একদিকে নতুন প্রজন্মের সাথে একাত্মতা পোষন করছেন, অন্যদিকে জামায়াত-শিবির পরিচালিত পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত লেখার পাশাপাশি তাদের টিভিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন সময়। আমি দেখেছি স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমান মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নয়াদিগন্তের সাহিত্য সম্পাদক জাকির আবু জাফরকে এড়িয়ে গেলেও সৈয়দ শামসুল হক দেখলেই কথা বলেছেন, খোঁজ খবর নিয়েছেন। নয়া দিগন্তের সাথে সর্ম্পক ভালো রেখে নিয়মিত লিখেছেন নির্মলেন্দু গুন, মহাদেব সাহা, অসীম সাহা, অঞ্জনা সাহা, আসাদ চৌধুরী, আসলাম সানী, মুহাম্মদ সামাদ, ফারুক নওয়াজ, হুমায়ুন কবীর ঢালী, সুজন বড়–য়া, রেজাউদ্দীন স্টালিন, জামসেদ ওয়াজেদসহ শতাধিক স্বাধীনতার স্বপক্ষের কবি; তারাই এখন শাহবাগের সাথে সংহতি প্রকাশ করছেন-নয়া দিগন্ত বন্ধের দাবী জানাচ্ছেন।
অথচ ২০১২ সালের জুলাই মাসে নাঈমুল ইসলাম খান-এর প্রকাশিত ও জব্বার হোসেন-এর সম্পাদিত পত্রিকা সাপ্তাহিক কাগজে এ বিষয়ে লেখার পর আমাকে কঠিনভাবে কথা শুনিয়েছিলেন অনেকেই। বলেছিলেন, নয়া দিগন্তে না লিখলে মোটা অংকের সম্মানি থেকে বঞ্চিত হবো, তুুমি দেবে সেই সম্মানি?
প্রশ্নবোধক এই সময়কে কাছে রেখে এগিয়ে যেতে যেতে পাল্টে যেতে দেখলাম স্বয়ং সৈয়দ হককে, পাল্টে যেতে দেখলাম অনেককেই। যারা নয়া দিগন্তে না লিখলে পেটের ভাত হজম হতো না; শান্তি পেতেন না ছাত্র শিবিরের মুখপত্র ডাকটিকিট-এ না লিখলে তারা সংহতি প্রকাশ করতে শাহবাগে আসছেন; যা সত্যি অবাক করার মত।
এই অবাক হতে হতে খেয়াল করলাম, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে সমালোচনা। অথচ এই বীরের যুদ্ধের কাছে পরাজিত হয়ে হানাদার-রাজাকররা অত্ম সমর্পন করেছিলো।
সেই বঙ্গবীরকে নিয়ে সমালোচনার পর অবশ্য তিনি বলেছেন যে, মুক্তিযুদ্ধ দেখলে শাহবাগ আন্দোলনকারীরা আমাকে অপবাদ দিত। শাহবাগে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী আন্দোলনকারীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে নিয়ে কটূক্তির ব্যাপারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, যারা তাকে নব্য রাজাকার কিংবা এ ধরনের অপবাধ দিচ্ছে, তারা হয় তো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। তারা মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখলে তাকে এ ধরনের অপবাদ দিতে পারত না। শাহবাগের আন্দোলনটি প্রথম দিকে নির্দলীয় থাকলেও এখন সেখানে দলীয়করণ হচ্ছে। বিষয়টির দিকে নতুন প্রজন্মকে খেয়াল রাখতে হবে।
শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশে গণজাগরণ মঞ্চ ও শহীদ মিনার ভাংচুরের ঘটনাকে নিন্দনীয় উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ইসলাম পছন্দের দলগুলোর রাজনীতি শেখা দরকার। রাজনীতি আর গু-ামি এক কথা নয়। আর পুলিশের এমন আচরণও ঠিক হয়নি। কোনো আন্দোলনকে মোকাবেলা করতে হলে পুলিশকে উচিত আরো সহনশীল হওয়া । শাহবাগের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শাহবাগের আন্দোলনকে সবার সম্মান করা উচিত।
এখানে তারুণ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এটাকে চাপিয়ে রাখা উচিত নয়। প্রথম দিকে আন্দোলনটি নির্দলীয় ছিল। মাঝে এখানে দলীয় পরিচয়ের লোকজন ঢুকে গিয়েছিল। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয় মন্তব্য করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশ খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে।
কেউ কোনো কথা শুনে না। সবাইকে ঘোড়া রোগে ধরেছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সব থেকে বেশি সরকারকে দায়িত্বশীল হতে হবে। তারপর বিরোধী দল এবং অন্য দলগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে। কিন্তু তা না করে একজন আরেকজনকে প্রভাবিত করতে চাচ্ছেন।
আগামী নির্বাচনে কোনো জোটের সঙ্গে নিজের গড়া দলকে সম্পৃক্ত করবেন কী না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাত্র অল্প কিছুদিন হয়েছে দল গঠন করেছেন। কোনো জোটে গিয়ে নির্বাচন করার ইচ্ছা আপাতত পোষণ করছেন না। এখন যে অবস্থা, তাতে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। এখন তার মূল লক্ষ্য দলকে সুসংগঠিত করা। এর আগে একটি সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন।
খুব সুন্দর সম্মেলন হয়েছে। তারা বছরব্যাপী একটি গণসংযোগ শুরু করেছেন। সিলেট শাহ জালাল (রহ.) ও শাহ পরাণ (রহ.) মাজার থেকে যার সূচনা করা হয়েছে। পথে নারায়ণগঞ্জ পড়েছে, তাই নারায়ণগঞ্জে আসা। তবে তার মনে হয়, প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জে আসতে পারলে ভালো হতো।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা হচ্ছে চেতনার ব্যাপার। সরকার ও জনগণ সবাইকে স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করতে হবে। স্বাধীনতা মানে হলো স্বাধীনতা রক্ষা করা। কিন্তু সবার সেই বোধ নেই। কেউ সেই চেতনাকে লালন করে না।
বঙ্গবীরের এই যে বীর বচন; সেই বীর বচন-ই বলে দেয় তিনি একজন আদর্শ মানুষ- নেতা এবং বীর। এই বীরের প্রতি তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে আমি জানাই শ্রদ্ধা এবং সংগ্রামী অভিনন্দন। আমি একজন ব্লগার, একজন তরুণ রাজনীতিক এবং কলামিস্ট। তাই বলে অন্ধ নয়; যা দেখি-তা লেখি। তুলে ধরি আলোচনা এবং সমালোচনার রঙধনু।
যাতে কালো মেঘ মুক্ত হয় আমার এ দেশ। এ কারনে নতুন প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ জানাবো বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবতে হবে। যুুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির মধ্য দিয়ে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার যে ব্রত তা বাস্তবায়ন এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হলেও আগামীতে তরুণ প্রজন্মকে সঙ্কটাপূর্ণ এই দেশকে রক্ষা করতে তৈরি হতে হবে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে।
সম্প্রতি এক বৈঠকে দেশের বরেণ্য একজন চলচ্চিত্রকার বলেছিলেন, পাকবাহিনীর সাথে একজন মহিলা চিকিৎসকও সেদিন আত্ম সমর্পন করেছিলেন, সেই চিকিৎসক ডা. সৈয়দা আনোয়ারা হক। একথা শোনার পর আমিতো একেবারে আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা।
কেননা, তার লেখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাময় বিভিন্ন বই পড়তে পড়তে বড় হয়েছি।
এখন ভাবছি, নতুন প্রজন্মের যে জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলাম, লিখেছিলাম বিভিন্ন রকম লেখা; সেই জোয়ারে না ভেসে সত্যিকারের একজন নতুন বীর হিসেবে বাংলাদেশকে বাঁচাতে তৈরি হবো। যাতে করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি আর জামায়ত-শিবিরমুক্ত দেশ গড়তে লড়তে পারি নিরন্তর। সেই লড়াইয়ে আমন্ত্রণ নতুন প্রজন্মের সবাইকে। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা এবং পরবর্তী সময়ের সঠিক ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে।
কেননা, আমরা কোন সুুবিধাবাজ কবি-সাহিত্যিক-নেতা-নাট্যজন-সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বর দ্বারা প্রভাবিত হতে চাই না। আমরা চাই সঠিক ইতিহাস, সঠিক গবেষণ এবং সঠিক চেতনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে। যাতে করে সেই সময়ে আর কোন স্বাধীনতার স্বপক্ষের পত্রিকা যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক-এর বিজ্ঞাপন না ছাপে, যেন আর কোন স্বাধীনতার স্বপক্ষের কবি নয়া দিগন্ত-সংগ্রাম-সোনার বাংলা-ডাকটিকিট-কানামাছি-টিনএটটিন-কিশোর কন্ঠ-ছাত্র সংবাদসহ কোন যুদ্ধাপরধী বা তাদের সমর্থকদের পত্রিকায় না লেখে। বয়কট করে দেশ বিরোধী জামায়াত-শিবিরের মিশন গ্রুপ, আল ফালাহ-ই্য়ূথ গ্রুপ-ওশান গ্রুপ-মাস্তুল গ্রুপসক সকল ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানকে। প্রত্যয়ে পথ হাঁটতে হাঁটতে বলছি- আসুন নতুন প্রজন্ম সত্যিকারের দেশ প্রেমিক হয়ে দেশ-মাটি মায়ের জন্য লড়ি...
মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।