হা হা হা পায় যে হাসি!!!
বেশ অনেক দিন বলব না, বেশ অনেক বছর পর আবার আজকে হুমায়ুন আহমেদের একটা বই পড়লাম, ম্যাজিক মুনশি। হুমায়ুন তাঁর সেরা সময় পার করেছেন অন্তত ২০ বছর আগে। তারপরও শুধুমাত্র তাঁর নাম এবং বই পড়ার অভ্যাসের কারনে আরও বেশ কিছুদিন একই কাহিনীর চর্বিত চর্বন হজম করেছি। এরপর বছর দশেক আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে উনি প্রিন্ট বা ভিসুয়াল মিডিয়াতে আর নতুন কিছুই দেবার সামর্থ্য রাখেন না, হি ইজ ডান। তাই ওগুলির জন্য সময় আর পয়সা নষ্ট করার কোন মানে নাই।
আজকে সন্ধ্যায় করার তেমন কিছু পাচ্ছিলাম না, হঠাৎ সামুতেই তাঁর নতুন বই ম্যাজিক মুনশির লিঙ্ক পেলাম। কেন জানি মনে হল, একটা ট্রাই দেয়া যাক! প্রায় দশ বছর পড়ি নাই, এর মধ্যে হয়ত উনি চর্বিত চর্বন থেকে বের হয়ে নতুন কিছু লেখার সামর্থ্য খুঁজে পেয়েছেন। হায় হতোষ্মী! নতুন কিছু তো অনেক পরের ব্যাপার, মনে হল উনি চর্বিত চর্বনের সামর্থ্যও হারিয়ে ফেলেছেন।
প্রায় ৮০ পৃষ্ঠার এই তথাকথিত উপন্যাসের অন্তত ৫০ পৃষ্ঠাই আসলে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ধরনের জাদু বিষয়ক বর্ননামুলক তথ্যমালা যার সাথে মুল উপন্যাসের তেমন কোন সম্পর্ক নাই। জাদু বিষয়ক কিছু বইপত্র এবং ইন্টারনেট থেকে সরাসরি তুলে দেয়া প্রবন্ধ, এর মাঝে ফাঁকে ফাঁকে কিছু টুকরা-টাকরা গল্পাংশ যার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ১৫-১৬ পৃষ্ঠার বেশি হবে না।
কি হিসাব মিলছে না তো! ৫০ পৃষ্ঠা প্রবন্ধ, ১৫ পৃষ্ঠা গল্পাংশ, তাহলে বইয়ের দৈর্ঘ্য ৮০ পৃষ্ঠা হয় কিভাবে? শেষ ১৬ পৃষ্ঠায় উনি এক অবিশ্বাস্য কাজ করেছেন। তারাশংকরের 'ডাইনী' ছোটগল্পটা তুলে দিয়েছেন। আমি এটাকে পুরোপুরিই পাঠকের সাথে প্রতারনা বলব।
যে পাঠক ১০০ টাকা (আমি এই বইয়ের দাম জানি না, ধরে নিচ্ছি এর কাছাকাছিই হবে) দিয়ে হুমায়ুন আহমেদের বই কিনেছেন, তিনি কেন ১৬ পৃষ্ঠার অন্য এক লেখকের গল্প পড়বেন? যেহেতু আমি পয়সা দিয়ে বইটা কিনি নাই, বরং একটা পাইরেটেড কপি ডাউনলোড করে পড়েছি, আমার আইনত বা নীতিগত কোনই অধিকার নাই অভিযোগ করার। কিন্তু একজন স্বনামধন্য লেখক বা প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক এরকম প্রতারনা করতে পারেন কি?
বইয়ের কন্টেন্ট সম্বন্ধে বলার তেমন কিছু নাই।
শুধু জাদু বিষয়ক একটা প্রবন্ধ হিসেবে ধরলে সুখপাঠ্যই হবে। প্রাচীন মিশরের জাদু থেকে শুরু করে মধ্যযুগের ভারতবর্ষের জাদু, ব্ল্যাকম্যাজিক ইত্যাদি অনেক বিষয়ই হালকার উপরে ঝাপসা দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এর বাইরের গল্পাংশটা সেই পুরানো লেখাগুলিরই রিসাইকেল। ম্যাজিক মুনশি টাইপের একটা আধা-রহস্যময় চরিত্র উনি তৈরি করেছিলেন আশির দশকে। গত ২০-২৫ বছরে এই একই কুমীর দেখাচ্ছেন, এবার যা বুঝলাম কুমীরটা বয়স এবং অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে মরেও গেছে।
তাই দেখাতে হলে তাকে যথেষ্ট মেকআপ (৫০ পৃষ্ঠা প্রবন্ধ) এবং দুর্গন্ধ ঢাকবার জন্য আতর-সুগন্ধি (অন্য বিখ্যাত লেখকের শতবর্ষ পুরানো কপিরাইটবিহীন লেখা) ব্যবহার করে আনতে হয়।
------------------------------------------------
পুনশ্চঃ যেহেতু বইয়ের লিঙ্ক সামুতেই কোন এক পোস্টে পেয়েছিলাম, এই ব্লগ লেখার সময় ঠিক করলাম, ওই পোস্টের লিঙ্ক দিয়ে দেব। সার্চ দিয়ে দেখলাম যে দুইজন ব্লগার লিঙ্ক পোস্ট করেছেন যদিও লিঙ্ক আসলে একটাই, মুর্ছনা ডট অর্গের আপলোড করা। কোন এক ম্যাজিকের ফলে দুজনের ব্লগের টাইটেল আবার হুবহু এক! ঠিক কোন পোস্ট থেকে আমি লিঙ্ক পেয়েছি, সেটা মনে করতে পারলাম না বলে দুজনের পোস্টের লিঙ্কই দিয়ে দিলাম ধন্যবাদ সহ।
হুমায়ুন আহমেদের নতুন বই ম্যাজিক মুন্সি পড়ুন
হুমায়ুন আহমেদের নতুন বই ম্যাজিক মুন্সি পড়ুন
পুনঃপুনশ্চঃ বইতে হুমায়ুনের চিশতি হেলালুর রহমান নামের এক বন্ধুর উল্লেখ আছে (পৃষ্ঠা ৬৫)।
খুব সম্ভবত এই ভদ্রলোক প্রথম যে কয়েকজন ছাত্রনেতার উদ্যোগে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার পরিকল্পনা করা হয়, তাঁদের মধ্যে একজন। সচলায়তনের এই পোস্টের ৬ এবং ৯ নম্বর মন্তব্যে তাঁর কথা বলা হয়েছে। অবশ্য এই একই নামে তৎকালীন ছাত্রলীগের দুইজন নেতা থাকতে পারেন!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।