যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.
আজ বহুদিন পর কলিকে তাদের বাসার বারান্দায় বসে থাকতে দেখলাম। কেমন জানি একটা উদাস উদাস ভাব কলির চোখে মুখে। দূর এ কোন অজানা সীমানায় তার দৃষ্টি আটকে আছে। উদ্দেশ্যহীন চাহনী তে তাকে যেন অজানা লাগছে। মুখটা কালো হয়ে আছে।
চুল উস্কো খুস্কো। হাতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। আগের তুলনায় অনেক শান্ত লাগছে তাকে আজকে।
অথচ ভাগ্যের কি খেলা!! এই তো ৩ বছর আগেও কলি এতটা শান্ত ছিল না। খুব দুষ্ট না হলেও পাড়ায় সবাই তাকে এক নামে চিনতো।
দেখতে তেমন অপুরূপ সুন্দরী না হলেও কলির চেহারায় এক মাদকতা ছিল। আর সেই মাদকতা দিয়েই সে পুরো পাড়া মাথায় রাখতো। এলাকার বড় ভাইয়ারা তার কথা ফেলতে পারতো না। সবাই তার সান্নিধ্য পেতে চাইতো।
একটু কথা বলার জন্য পাড়ার ছেলেরা কলিদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকত ঘন্টার পর ঘন্টা।
সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি। যা একটা নিয়মে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কলি এসবে পাত্তা না দিলেও মাঝে মাঝে কিছুটা ছাড় দিত তাদের। আর তাতেই আস্কারা পেত ছেলেরা। এভাবে করেই কলি এর দিন কেটে যাচ্ছিল।
কলি পড়াশোনা করতো মাষ্টার্স এ। এত বড় ক্লাস এ পরার পর ও তার মধ্যে একটা শিশু সুলভ ভাব থেকে যেত। তাই ছোটরা ও তার সাথে দুস্টামী করত।
মাষ্টার্স এর পড়া যখন শেষ তখন কলির বাবা তার বিয়ের দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। কিন্তু কলি তার বাবাকে বলে দিল যে সে আরো পড়াশোনা করবে আর চাকরি করবে।
বিয়ে এখন তার করার ইচ্ছা নেই। কলিরা ৩ বোন। সে সবার বড় হওয়াতে তার বিয়ে আগে দিতে চাইছিল তার বাবা আর মা। কিন্তু সেটা কলির জন্য পারছিল না। কোনভাবেই যখন তাকে রাজি করানো যাচ্ছিল না তখন কলি নিজে থেকেই মুখ খুললো একদিন তার বাবা আর মায়ের সামনেই।
কলি বিয়ে করেছে আরো ২ বছর আগে! এটা তার বাবা মাকে সে জানিয়ে দিল। তার বাবা এই কথা শুনে স্ট্রোক করলেন। হাসপাতাল, বাসা এসন করে করেই পার হল আরো ১ মাস। তারপর যখন সুস্থ হয়ে বাবাকে তারা বাসায় নিয়ে আসলেন তখন সবার সামনেই আবার তোলা হল সেই কথা। কলি প্রথমে ইতস্তত করছিল।
পরে কিছু ধাতস্ত হয়ে সে তার বিয়ের কাহিনি জানালো সবাইকে। সে যাকে বিয়ে করেছে সে থাকে আমেরিকায়। আর তার সাথে কলির পরিচয় ইন্টারনেট এ।
যখন সে কলেজ পাশ করেছিল সেই সময় থেকেই ছেলেটার সাথে তার সম্পর্ক। আসতে আসতে এই সম্পর্ক ভালবাসায় রূপ নিতে থাকে।
কলি ও তখন এ আবেদনে সাড়া দেয়। কারণ সে ততদিন এ ভালবেসে ফেলেছিল ছেলেটাকে। আমেরিকায় সে ভাল বেতন এ চাকরি করে। গাড়ি বাড়ি সবকিছুই আছে। ছেলের বাবা আর মা ঢাকা তে থাকেন।
আর ছেলের প্রতি বিশ্বাস তার আছে। সময় যত গড়াতে থাকে ততই তারা ২ জনের আরো ঘনিষ্ট হতে থাকে। একসময় তারা বিয়ের ডিসিশন নেয় তবে কাউকে না জানিয়ে। এটা সেই ছেলের ই প্লান ছিল।
যখন সময় আসবে তখন সবাই কে জানানো হবে তাদের বিয়ের বিষয়টা।
কলি রাজি হয়ে গেল এই ব্যাপারে। পরের মাস এ ছেলে বিদেশ থেকে চলে আসে কলি এর সাথে দেখা করতে। ওইটাই ছিল তাদের প্রথম দেখা। সেদিন এর দেখা পর তাদের ঘন ঘন দেখা হতে থাকে। পরে তারা বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলে।
বিয়ের দিন বাসায় কাউকে কিছু না জানিয়ে ভালবাসার মানুষ কেই বিয়ে করে ফেলে কলি। এতে সাক্ষী থাকে কলির এক বান্ধবী আর ছেলের এক বন্ধু। আর বিয়ের কিছুদিন পর ই কলি কে রেখে আবার আমেরিকায় চলে যায় ছেলে। এভাবেই সব ঘটনা সেদিন পরিবার কে প্রথম জানিয়ে দেয় কলি।
সব শুনে প্রথমে কলির বাবা এটা মেনে নিতে পারেন নি।
কিন্তু মেয়ের ভবিষ্যত এর কথা ভেবে উনি রাজি হয়ে জান। আর যেহেতু এখন সবাই জেনে গিয়েছে তাই ছেলের সম্পর্ক এ খোঁজখবর করার ইচ্ছা পোষন করেন কলির বাবা। কলি এতে বাধা দেয় না। ছেলের বাসার ঠিকানা অনুযায়ী কলির বাবা লোক পাঠান খোজ খবর নেয়ার জন্য। তারা এসে যা জানায় তা শোনার জন্য আসলে কেউ প্রস্তুত ছিলেন না।
কলি যাকে বিয়ে করেছে তার বাবা মা পরিবারের কেউ জীবিত নেই। ছেলে বড় হয়েছে তার এক সৎ মামা এর কাছে। আর সেই ছেলে বিয়ে করেই আমেরিকায় চলে গিয়েছে। ২ টা বাচ্চাও আছে তার সেখানে।
কলিকে প্রেমের ফাদে ফেলে সুযোগ বুঝে বিয়ে করে চলে গিয়েছে ছেলে।
কলি এই ধাক্কা কিছুতেই সামলে উঠতে পারছিলো না। এরপর আর কখন ও সেই ছেলেকে ইন্টারনেট এ দেখতে পায় নাই কলি। ফোন দিলেও সে ধরে না। একরকম যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায় তার। জীবনটা যেন তার এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।
কলির পরিবারের কেউ কলির উপর বিশ্বাস রাখতে পারছিল না। কলির মা কলিকে খুব ভালবাসতেন। উনি এসব কথা শুনে সেই যে বিছানা ধরলেন তারপর আর তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন নি। এর কিছু দিন পরই তিনি মারা যান।
পাড়ায় লোকজন ছি ছি করা শুরু করে দিল।
কলি কে নষ্টা মেয়ে বলে গাল দিতে থাকল। অবস্থা এমন ভয়াবহ হয়ে গেল যে তারা তাদের বাসা বদল করে অন্য পাড়ায় নিয়ে গেল। ধিরে ধিরে কলির বাবাও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি খুব একটা বাসা থেকে বের হতেন না। সংসার চালাতে হলে কলিকেই চাকরিতে নামতে হয়।
আর সেটাই সে করা শুরু করল। কিছু দিন পরই বাবাও দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। এদিকে কলির ছোট বোন আত্যহত্তা করল বাবা মারা যাওয়ার পর। লোকমুখে শোনা যায় সেই বোন নাকি রেইপড হয়েছিল তার সহপাঠির মাধ্যমে।
ছেলেটাকে নাকি সে পছন্দ করতো।
কিন্তু একদিন নাকি সেই ছেলে তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে তাদের বাসায় নিয়ে তাকে রেইপড করে। আর এই ব্যাপারটা কিছুতেই সইতে না পেরে সে সবাইকে ছেড়ে বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে। আর এরই মধ্যে আলাদা এক অনুভুতি জাগ্রত হয় কলির। কলি যে প্রেগনেন্ট সেটা সে বুঝে যায়। অনেক ভাবে সে এটা নিয়ে।
তার মধ্যে এখন আর কোন আনন্দ অনুভুতি অবশিষ্ট নেই। আর তাই কাউকে কিছু না বলে একদিন সে ডাক্তার এর কাছে গিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে ফেলে।
এতে তার শারীরিক অনেক সমস্যা ধরা পরে। ফলে সে যে আর কোনদিন মা হতে পারবে না সেটা ডাক্তার তাকে জানিয়ে দেয়। কলি নিজেকে যেন হাড়িয়ে ফেলে।
তার চোখ এর জল ও এখন শুকিয়ে গিয়েছে এত কষ্টের মধ্যে থাকতে থাকতে। একের পর এক ঝড় তাকে নিয়ে খেলা করছে। সেখান থেকে যেন উঠে দাড়াতেই পারছে না কলি। এভাবে করেই সুন্দর এক সাজানো পরিবার আজ তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে শুধু ওই একটা ভুলের কারণে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।