আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন কিংবদন্তী যোদ্ধা

আমি আমিই

৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (বেবি টাইগার্স) ১৯৭১ এর মার্চের শেষের দিকে ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় একটা সফল বিদ্রোহের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। ২ নং সেক্টরের অধীনে থেকে অনেকগুলো ছোটবড় অপারেশন পরিচালনা করে এই ইউনিটটি। এই ইউনিটেরই একটা প্লাটুনের কমান্ডার ছিলেন সুবেদার ওহাব। ১৯৭১ এ সালদা নদী এলাকার এক দূর্ধর্ষ যোদ্ধা হলেন সুবেদার ওহাব। সুবেদার ওহাব তার প্লাটুন নিয়ে অপারেট করে বেড়াতেন সালদা নদী ও তার আশেপাশের ওলাকায়।

তার এক হাতে থাকত একটা এসএমজি, আরেক হাতে থাকত মর্টারের বেস প্লেট। সাথে থাকত তার প্লাটুন। ইন্টেলিজেন্স এবং লোকালসোর্স থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে, নিজ ইনিশিয়েটিভের বলে তিনি অপারেশন চালাতেন। তার পরিচালিত অপারেশনগুলো ছিল একটা থেকে আরেকটা স্বতন্ত্র, ব্যতিক্রমী। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সম্পাদিত করতেন সবকিছু।

পাকিস্তানীদের যেই টহল দল রিপোর্ট দিল যে অমুক এলাকা নিরুপদ্রব - ঠিক এক ঘন্টা পর সেখানেই আরেকটা দল এ্যাম্বুশের শিকার হল। সকালে এক জায়গায় রেইড করে দুপুর নাগাদ আরেক জায়গায় এ্যাম্বুশ পেতে বসে থাকলেন। দেখা যেত এই দুই স্থানের মধ্যে দূরত্ব প্রায় বিশ পঁচিশ মাইল। এই দ্রুত চলাচলের কারণে তার নাম হয়ে গিয়েছিল "জ্বিন"। অনেকে তাকে শুধু নামেই চিনত, চেহারায় নয়।

এমনও হয়েছে তার সামনেই লোকজন তার গল্প করেছে - তাকে না চিনেই। তার পরিচালিত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অপারেশন হল "ঝিকুরা এ্যাম্বুশ"। আগে থেকে খবর পেয়ে দূর থেকে দেখেছিলেন যে রেশন সামগ্রী ভর্তি ৭/৮টা দেশীয় নৌকাকে পাহাড়া দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে একটা স্পিডবোট এবং নদীর পাড় ধরে হেঁটে চলা প্রায় ১০০ সৈন্যের একটা দল। তিনি পরিস্কার বুঝেছিলেন যে স্পিডবোট আবার এই পথেই ফেরত আসবে। যুদ্ধের প্রচলিত কলাকৌশল মনে রেখেই পানিতে টুইটম্বুর হয়ে ওঠা নদীর দুই পাড়ে ঘাস আর ধানের জঙ্গলে গলাপানিতে তিনি তার লোকজনসহ পজিশন নিলেন।

নদীতে ফেরত আসা স্পিডবোটের আরোহীদের এইরকমভাবে রিসেপশন পার্টি থাকার সম্ভাবনা চিন্তারও অতীত ছিল। যথারীতি তারা বিস্মিত এবং নিদারুণভাবে পর্যুদস্ত হয়। শত্রুপক্ষের মোট ১২ জন নিহতের মধ্যে ছিল ২ জন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (এর ১ জন ৩৩ বালুচ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার), ২ জন মেজর, ৩ জন ক্যাপ্টেন (এর একজন ক্যাপ্টেন বোখারী - যে কুমিল্লায় হত্যা ধর্ষন ইত্যাদির জন্য কুখ্যাত ছিল), ১ জন জেসিও (৩৩ বালুচ রেজিমেন্টের এসএম), ৩ জন সৈনিক এবং ১ জন অবাঙ্গালী ব্যবসায়ী। সমগ্র স্বাধীনতার যুদ্ধে সম্ভবত এটাই সবচেয়ে সার্থক মাইনর অপারেশন যেখানে সর্বাধিক সংখ্যক অফিসার নিহত হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সুবেদার ওহাবকে যখন বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয় তখন খালেদ মোশাররফ বলেছিলেন, "....বিশটা বীরবিক্রম খেতাব দেয়া হলেও সুবেদার ওহাবের সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না"।

সুবেদার ওহাব বেশ কিছু দিন হল ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমার একজন বন্ধুর লেখা একটি আর্টিকেলের বিশেষ কিছু অংশ থেকে এই পোষ্টটি লেখা হয়েছে। এই পোষ্টটি সেই লেখারই সংক্ষিপ্ত রুপ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.