এবার থেকে আমার লেখা আমার কথা বলার চেষ্টা করবে।
এখন, যখন বয়েস বিকেলের দিকে ঢলে পড়েছে, একটু একলা হলেই মনে পড়ে, দিদিমার মুখে শোনা গাঁঠি কচু দিয়ে রাঁধা ইলিশের ঝোল বা তেমতি (টমাটো) দিয়ে রাঁধা ইলিশের স্টু বা কাগজিলেবুর রস দিয়ে রাঁধা ট্রামফাড়ু অথবা কাঁচা তেঁতুলের ছড়া কেটে বানানো ইলিশের লটপটির না-খাওয়া সব স্বাদ। আর আমাদের, যাদের এমন অনির্বাচ্য স্বাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা কোন দুঃখে জানতে যাবো যে আষাঢ়ের বর্ষায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিঠে জলের টানে ডিম ছাড়তে উপরে চলে আসে, বা যেখানে ইলিশের ঝাঁক থাকে সেখানকার জলের রঙই যায় বদলে কারণ সেখানে ভাসতে থাকে ইলিশের লালা যা দেখে অভিজ্ঞ জেলেরা বুঝতে পারে ইলিশ-ঝাঁকের অবস্থান অথবা স্বচ্ছ চোখা জলেই ইলিশ পাওয়া যায় কিংবা ইলিশ ধরা হয় ছাঁচি জাল দিয়ে।
ইলিশ নিয়ে শেষ কথা যা বলা যায় তা হলো এ হয় এক প্রতিবাদী মাছ, যে আনলাইকলি অধিকাংশ সমুদ্রের মাছ, উল্টো স্রোতে সাঁতার কাটে বলেই পাতে পড়লে অমন সুস্বাদ হয়ে ওঠে। আর কে না জানে, এসময়, প্রতিবাদের কী আহামরি স্বাদ! প্রতিবাদ করলেই এখন প্রচারের আলো পাওয়া যায় আর এখন কোনো না কোনো অছিলায় আলো খেতে চায় না কে? কিন্তু এ ব্যাপারটা চুপ করে লক্ষ্য করার যে সরাসরি সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলে আমরা যতো বেশি আলোড়িত হই, দৈনন্দিন জীবনের প্রায়-অজ্ঞাত নিশ্চুপ সন্ত্রাসের অহোরহ ঘটনাগুলোর ব্যাপারে আমাদের প্রতিবাদী প্রাণ যেন তেমনভাবে সাড়া দিতে চায় না। কোনো মেয়েকে যখন ধর্ষণ করা হয় বা পুড়িয়ে ফেলা হয় তখন আমরা যতোটা প্রতিক্রিয়া-শীল হয়ে পড়ি, যখন আমাদের নিজেদের বাড়িতে, প্রায় প্রত্যহ, একটা মেয়েকে, আমাদেরই মা কিংবা দিদিকে, আমাদের চোখের সামনে, সামান্য কোনো কারণে, পরিবারেরর বাবা নামক কর্তাগ্রামশিলাটির কাছে মৌখিক অপমানের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তখন আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাই খুব সামান্য, অথবা দেখাই না। আমরা যখন মাছের কথা বলি তখন ইলিশের কথাই বলি।
(শেষ)
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।