সবার উপরে মানুষ সত্য!
রাশিয়ার সাবেক দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনকে উদাহরণ দিয়েই লেখাটা শুরু করলাম। ভদ্রলোকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি (নিজের অর্জিত অর্থে কেনা) বলতে একটি ৭৭ বর্গমিটারের ফ্ল্যাট এবং ১৯৬০ সালের মডেলের ২ টি গাড়ি আছে (তাও এই গাড়ি ২ টি উনার বাবা উনাকে দিয়েছেন)। আর ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। এইটার চেয়েও বড় কথা হল, ভদ্রলোক নাকি উনার দলের (ইউনাইটেড রাশিয়া) মধ্যে প্রথম ১০০ জন সম্পদশালী নেতার তালিকায় নাই। এর মানে হল, ভদ্রলোকের চেয়ে কমপক্ষে আরোও ১০০ জন সম্পদশালী নেতা ওই রাজনৈতিক দলে আছেন।
এই রকম সাদাসিদে ভাবেই উনি বিগত ১০ বছর রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছেন।
এইবার আসা যাক বাংলাদেশের কথায়। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সম্পত্তি বলতে ঢাকার গুলশান এভিনিউতে ৩২ কাঠার আর সেনানিবাসে ১৬৮ কাঠার দুইটি জমিসহ বাড়ি আছে (বলে রাখা ভালো যে এই জমিসহ বাড়ি ২ টি উনার নিজের অর্জিত অর্থে কেনা নয়, বরং সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়)। উনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে ৮ টি বিলাসবহুল গাড়ি আছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলিতে এর চেয়ে বেশি আর কোনো খবর পেলাম না।
আজ মনে প্রশ্ন জাগ্রত হল, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী যদি এত্তো সম্পদশালী হন তাহলে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কতটা সম্পদশালী ? অন্য নেতা-কর্মীদের কথা বাদই দিলাম। এইটাকে কি তাহলে ধরে নিব দেশসেবার নামে আত্মসেবা? এটা কি তবে গণতন্ত্রের নামে রাজতন্ত্রের পূর্বাভাস? আমার মনে হয় এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের কারোরই জানা নাই।
রাশিয়ার আয়তন বাংলাদেশের তুলনায় ১১৫ গুন বেশি। অশিক্ষিত আর নিম্নবিত্ত দরিদ্র মানুষের দেশ এই বাংলাদেশ। তবুও এইদেশের একজন রাজনৈতিক নেতাকে এদেশ ২০০ কাঠার জমি দিয়েছে।
অন্যদিকে পৃথিবীর অন্যতম ধনী আর শিক্ষিত দেশ রাশিয়া। কিন্তু তারা তাদের একজন রাজনৈতিক নেতাকে ১ কাঠা জমিও দেয় নাই। এর মানে আমরা জাতি হিসাবে অনেক বেশি মহান।
আজ আমাদের নিজের পেটে খাবার নেই, তবুও আমাদের দেশের মাথাদেরকে আমরা অভুক্ত রাখি নাই। আজ আমাদের নিজের থাকার জায়গা নেই, তবুও আমাদের দেশের মাথাদেরকে আমরা গৃহহীন রাখি নাই।
আজ আমাদের একটা রিকশা কেনার সামর্থ নেই, কিন্তু আমাদের দেশের মাথাদেরকে আমরা কমপক্ষে একটা করে মার্সিডিজ বেনজ দিয়েছি। আমরা জাতি হিসাবে আসলেই অনেক অনেক বেশি মহান আর উদার।
আজ দেশে বিদ্যুত, পানি, গ্যাস, তেল, প্রযুক্তি, আইন-শৃঙ্খলা কিছুই নেই। আমার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরি কিছুই নেই। তাতে আমরা বিচলিত হইনা।
কিন্তু দেশের মাথার যদি চুন থেকে পান খসে, তাহলে আমরা পুরা দেশকে অচল করে দেই। কেননা উনারা যে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তার্জিত স্বাধীন দেশের মাথা। উনারা যে আমাদেরও মাথা।
আমি নিজে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে পারি, কিন্তু উনাদেরকে তো বিদেশ থেকে আমদানি করা পানীয় খাওয়াতে হবে। দেশের মাথার যদি সম্মান না থাকে, তাহলে যে আমাদের সম্মানেরই প্রশ্ন আসে না।
হ্যাঁ হ্যাঁ, তাইত আসুন আজকে নিজের মাথার বলি দিয়ে উনাদের মাথাকে এভারেস্ট-শৃঙ্গ তুল্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করি.................
__________________________________________________________________________________________
উপরের ছবিটায় দেখা যাচ্ছে অস্ত্র হাতে ৭১' এর একজন মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতা অর্জনের জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। ছবিটা বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা (২০.১২.১৯৭১)। উপরে লেখা আছে, "বাংলাদেশের রক্তাক্ত জন্ম"। অসাধারণ একটা ছবি। এ যেন আমাদের ভাতৃত্য, একতা আর মুক্তির প্রতিকৃতি।
পরশু দিন দেখলাম আমার এক বন্ধু এই ছবিটার সাথে একটা মম্তব্য করেছেন। মন্তব্যটা হল এমন: "আবার এরকম একটা কাভার পেজ দরকার এখন"।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর 'বিদ্রোহী' কবিতায় হুঙ্কার দিয়ে উঠেছিলেন:
"বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!
বল বীর -
আমি চির উন্নত শির!"
এই বীর আর কেউ নয়, এই বীর হলো আজকের তরুণ সমাজ। আমরাই পারি এইসব অর্থ লালসা, ব্যক্তিগত রেষারেষি, ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি আর প্রতিশোধের আগুন নিভৃত করার কথা ভুলে গিয়ে দেশকে আবার স্বাধীন করতে। আজ আমাদের শির উঁচু করে দাঁড়ানো শিখতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে দারিদ্রতা দূর করে পৃথিবীর বুকে উন্নত দেশ হিসাবে তুলে ধরতে হবে। রুখে দাঁড়ানোর এখনি সময়। এই বিদ্রোহ দেশাদ্রহ নয়, এই বিদ্রোহ হল স্বদেশানুরাগীর দেশপ্রেম।
তাইতো আজ যেন আমরা প্রত্যেকেই বলে উঠি "আমি চির-বিদ্রোহী বীর" !!!
[তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া, আমার দেশ এবং দৈনিক প্রথম আলো]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।