১৮ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হেরে গেল ফরিদপুরে গণধর্ষণের শিকার রূপা আক্তার। ঘাতকদের লাঞ্ছনা ও অপমান পায়ে ঠেলে সে চলে গেল না ফেরার দেশে। রূপালী আর ফিরবে না। সমাজের পাপ পঙ্কিলতা আর তাকে কখনোই স্পর্শ করবে না। রূপালীর চিরবিদায়ে বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে তার পরিবার।
প্রাণের বিনিময়েও রক্ষা পাচ্ছে না পরিবারের অন্য সদস্যরা। মামলা করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। খবর : শীর্ষ নিউজ ডটকম।
এলাকাবাসী ও রূপালীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে গণধর্ষণের শিকার স্কুল ছাত্রী রূপালী সোমবার ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ২৮ অক্টোবর রাতে সে ধর্ষণের শিকার হয়।
ধর্ষকদের ভয়ে মেয়েটির পরিবার মামলাও করতে পারেনি। উপরন্তু থানায় নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলেও মৃত্যুর আগে ধর্ষিতা অভিযোগ করেছিল। এতেও ধর্ষকরা ক্ষান্ত হয়নি। মেয়েটিকে পাগল হিসেবে আখ্যায়িত করে পাগলা গারদে পাঠানোরও প্রস্তুতি চলছিলো। আর এ সব ঘটনায় অভিযোগের আঙ্গুল চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজ মাস্টারের ছেলে মামুনের দিকে।
উপজেলার চর সালেপুর গ্রামের ওয়াহেদ মোল্যার মেয়ে হাজীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী রূপা আক্তার পড়াশোনার সুবিধার্থে বিদ্যালয় সংলগ্ন সহকারী শিক্ষক বাবুল মাস্টারের বাড়িতে থাকত। ঘটনার রাতে রূপার সঙ্গে সালমা নামের আরেক সহপাঠী এক ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। এসময় একই এলাকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজ মাস্টারের ছেলে মামুন ও তার সহযোগীরা রূপাকে ধরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সহপাঠী সালমা আক্তার সকালে ঘুম থেকে উঠে রূপাকে বাড়ির উঠানে বসে বিলাপ করতে দেখে। এরপর থেকেই রূপা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
পরদিন রূপা ধর্ষক চক্রের এক সদস্যের তৈরি পোশাকের দোকানে গিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় তারা রূপাকে পাগল আখ্যায়িত করে চরভদ্রাসন থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে সেখানেও রূপার ওপর চালানো হয় অমানসিক নির্যাতন। এ ঘটনা জানাজানি হলে বিভিন্ন মানবাধিকার এবং নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের চাপে রূপাকে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পুলিশ হেফাজতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়েও ধর্ষকরা তাকে পাগল আখ্যায়িত করে পাগলা গারদে পাঠানোর চেষ্টা করে।
এসময় তার পরিবার তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে গেলে ধর্ষকদের এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
ঘটনার ভয়াবহতা এবং ধর্ষকদের হুমকিতে রূপা মানসিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে শেষ পর্যন্ত বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলে। রোববার রূপার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর ধর্ষকরা হাসপাতাল থেকে রূপার লাশ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।
কিন্তু স্থানীয়দের বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।