প প্রথম তার উভয় চক্ষু বন্ধ করে দেওয়া। অত:পর তার জন্য দোআ করা। হাদিসে বর্নিত হয়েছে :
উম্মে সালামা (রাঃ ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ ) আবু সালামার (মৃত্যুর সময় ) কাছে গেলেন। এসময় তার চক্ষু খোলা ছিলো। রাসুলুল্লাহ (সাঃ ) তা বন্ধ করে দিলেন।
এবং বললেন , যখন রুহ কবজ হয়ে যায় তখন চক্ষু ও তার অনুসরন করে। এরপর তার পরিবারের লোকেরা কান্না-কাটি জুড়ে দিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃ ) বললেন, তোমার নিজেদের উপর ভাল ছারা কোন খারাপ দোআ কর না। কেননা তোমরা যা বলবে তার উপরে 'মালা'ইকা'-রা ( ফেরেস্তারা )আমীন বলবেন। অতপর রাসুল (সাঃ ) বললেন, হে আল্লাহ তুমি আবু সালামাকে ক্ষমা করে দাও।
তার মর্যাদা উচু করে তাকে হেদায়েতপ্রাপ্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন। ( সহীহ মুসলিম ২১৬৯, মুসনাদে আহমদ ২৬৫৪৩ )।
২) একটি চাদর বা কাপড় দিয়ে গোটা শরীর ঢেকে দেওয়া। কেননা হাদীসে বর্নিত হয়েছে :- আয়েশা (রাঃ ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ ) মৃত্যুবরন করলেন তখন তাকে একটি সু-সজ্জিত চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ( সহীহ বুখারী ৫৮১৪, সহিহ মুসলিম২২২৬, আহমদ ২৪৫৮১ )
৩) তবে কোনো মুহরীম যদি ইহরাম পরিহিত অবস্থায় মারা যান তাহলে তার মাথা ও চেহারা ঢাকা যাবেনা।
কেননা হাদিসে বর্নিত হয়েছে:- ইবনে আব্বাস (রাঃ ) বলেন , এক ব্যাক্তি আরাফার ময়দানে রাসুল (সাঃ ) এর সাথে অবস্হান করছিলো। হঠাৎ সে তার উটের পিঠ থেকে পড়ে মারা যায়। রাসুল (সাঃ ) বললেন , তাকে পানি ও বড়ই পাতা দিয়ে গোসল করাও ও দুই কাপড়ে দাফন কর। খবরদার ! খুশবু লাগাবে না এবং তারা মাথা ও চেহারা ঢাকবে না । কেননা সে কিয়ামতের দিবসে 'তালবিয়া' পাঠ করতে করতে উঠবে।
( সহিহ বুখারী ১২৬৬, সহিহ মুসলিম ২৯৪৯ )
৪) মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে গেলে বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব কাফন-দাফন সম্পন্ন করবে। কেননা হাদিসে বর্নিত হয়েছে : " আবু হুরায়রা (রাঃ ) হতে বর্নিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ ) বলেছেন, তোমরা জানাযা নিয়ে দ্রুত চল। কেননা যদি সে ভালো লোক হয়ে থাকে তাহলে তাকে দ্রুত ভালো জায়গায় পৌছে দাও। আর যদি সে বিপরীত হয়ে থাকে তাহলে তাকে তোমাদের ঘাড় থেকে মন্দকে নামিয়ে দাও। ( সহীহ বুখারী ১৩১৫, সহীহ মুসলিম ২২২৯, ২২৩১, তিরমীযী ১০১৫, আবু দাউদ ৩১৮৩ )
৫) যে শহরে মৃত্যুবরন করেছে সেখানে দাফন করা।
দুরে অন্য কোথাও স্থানান্তর না করা। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্নিত তিনি বলেন : "যেদিন উহুদের যুদ্ধ হলো সেদিন শহিদদের মদীনার কবরস্থান 'আল-বাক্বী'তে দাফন করার জন্য তুলে আনা হচ্ছিল। রাসুল ( সাঃ ) এর পক্ষ থেকে একজন ঘোষনাকারী ঘোষনা করলো যে, রাসুল (সাঃ ) আদেশ করেছেন শহীদদেরকে তাদের মৃত্যুর স্থানে দাফন করার জন্য। আমার মা-বাবা ও মামাকে এ ঘোষনার পূর্বেই একই বাহনে ভন করে মদীনায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘোষনার সন্গে সন্গে তাদেরকে ফেরত দিলেন।
( বায়হাক্বী৭৩২১, আবু দাউদ ৩১৬৭ )
৬) মৃত্যু ব্যাক্তির কোনো ঋণ থাকলে তা তার মাল থেকে দ্রুত আদায় করার জন্য এগিয়ে আসা। যদিও তার রেখে যাওয়া সম্পুর্ন মাল চলে যায় তবু তা আদায় করতে হবে। আর যদি তার নিজস্ব কোনো মাল না থাকে অথচ সে ঋণ পরিশোধ করার জন্য যথেস্ট চেষ্টা করেছে তাহলে ইসলামি রাষ্ট্র বায়তুল মাল থেকে পরিশোধ করবে। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে কেউ যদি ব্যাক্তিগত ভাবে পরিশোধ করে তাও জায়েয হবে।
মৃত্যুর পর কি কি কাজ করা হারাম : -
১ ) রাসুল ( সাঃ ) বলেন " জাহিলিয়্যাতের চারটি কাজ আমার উম্মতের মধ্যে চালু রয়ে গেছে যা মুসলিমরা ত্যাগ করতে পারে নাই।
গোত্রীয় গৌরব, বংশ নিয়ে তিরস্কার, তারকার মাধ্যমে বৃষ্টির পানি কামনা এবং বিলাপ করে ক্রন্দন করা। রাসুল (সাঃ ) বলেন বিলাপ করে ক্রন্দনকারিনী মহিলা যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে তাহলে তাকে আলকাতরা পায়জামা ও লোহার পোষাক পরিধান করিয়ে দেওয়া হবে। ( সহীহ মুসলিম ২২০৩ ) ।
হাদিসে আরো বলা হয়েছে:- " আবু হুরায়রা (রাঃ ) বর্নিত রাসুল (সাঃ ) বলেন , দুটি কাজ যা কুফুরী। বিলাপ করে ক্রন্দন করা আর বংশ নিয়ে তিরস্কার করা ।
( মুসনাদে আহমদ ৮৯০৫ )
২) মাথা মুন্ডানো- কেউ মারা গেলে তার শোক প্রকাশের উদ্দেশ্যে মাথা মুন্ডন করা অথবা চুল এলোমেলো করা অথবা দাড়ি, গোফ একাকার করে ফেলা এসব কিছুই নিষিদ্ধ এবং হারাম। ( সহীহ বুখরী ১২৯৬, সহীহ মুসলিম ২৯৮, বায়হাক্বী ৭৩৭০ )।
রাসুল (সাঃ ) বলেন :- " যারা শোক প্রকাশ করার জন্য গাল চাপড়ায়, জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং জাহেলি যুগের লোকদের মত চিতকার করে তারা আমদের কেউ নয়। ( সহীহ বুখারী ১২৯৭ )।
৩) মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের নামে বাড়াবাড়ি করা : মৃত্যুর সংবাদ প্রয়োজন অনুপাতে যায়েজ, যদি তার সাথে কোন প্রকার কুসংস্কার বা বাড়াবাড়ি না থাকে।
বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওয়াজিব। যেমন: গোসল করানো, কাফন-দাফন করানো এবং জানাজা পড়ার মত লোক যদি মৃত ব্যাক্তির কাছে না থাকে সেক্ষেত্রে প্রচার করা ওয়াজিব। রাসুল (সাঃ ) নিজেও হাবশার বাদশা নাজ্জাশীর মৃত্যুর সংবাদ সাহাবাদের মাঝে প্রচার করেছেন। হাদিসে বর্নিত্ হয়েছে :- " আবু হুরায়রা (রাঃ ) হতে বর্নিত তিনি বলেন, যেদিন হাবশার বাদশা নাজ্জাশী মারা গেলেন সেদিন রাসুল (সাঃ ) তার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করলেন এবং ইদগাহে গেলেন। তারপর সকলকে নিয়ে কাতারবন্দী হয়ে চার তাকবীর দিলেন ( অর্থাৎ নাজ্জাশীর গায়েবানা জানাযা পড়লেন।
( সহীহ বুখরী ১২৪৫, মুওয়াত্বা ৫৩২, মুসনাদে আহমদ ১০৮৫২ ) ।
৪) মৃতের জন্য তিনদিন পর্যন্ত শোক প্রকাশের অনুমতি নিয়েছে, তার বেশি নয়।
৫) দাফনে দেরী করা এবং জানাযাকরে বা না করে নিকটাত্মীয় আসার অপেক্ষায় লাশ বরফ দিয়ে রেখে দেওয়া সম্পূর্নরুপে সুন্নাত বিরোধী কাজ।
৬) জানাযার পরে বা দাফনের পূর্বে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সম্মানের নামে করুন সুরে বিউগল বাজানো সহ যা কিছু করা হয় সবটাই বেদ'আত।
৭) তিনদিনা, চল্লিশা ও মৃত্যু বার্ষিকীর মিলাদ দেওয়া।
৮) পারিশ্রমিকের বিনিময়ে খতমে কুরআন, দুআ ও অজিফা পড়ানো।
কবরের কাছে যা করা হারাম :
১) কবর উচু করা, পাকা ও চুনকাম করা, সমাধী সৌধ নির্মান করা, গায়ে নাম লেখা , কবরের উপরে বসা, কবরের দিকে ফিরে সালাত আদায় করা।
২) কবরে মসজিদ নির্মান করা, সেখানে মেলা বসানো, ওরস করা, ধুয়ে মুছে সুন্দর করা এবং কবরকে তীর্থস্থান বাননো।
৩) কবরের কাছে গরু,ছাগল, মুরগী ইত্যাদি জবাই করা। জাহেলী যুগে দানশীল ও নেককার ব্যাক্তিদের কবরের পাশে এগুলিকরা হত।
৪) কবরে ফুল দেওয়া, গেলাফ চড়ানো, শামিয়ানা টানানো ইত্যাদি। রাসুল (সাঃ ) প্রার্থনা করেছেন- " হে আল্লাহ ! তুমি আমার কবরকে ইবাদাতের স্থানে পরিনত করোনা। আল্লাহর গজব কঠোরতর হয় ঐ জাতির উপরে , যারা তাদের নবীর কবরকে সিজদার স্ঠানে পরিনত করে। ( মেশকাত)।
৫) আজকাল কবরকে মাজার বলা হচ্চে।
যারা অর্থ: পবিত্র সফর। অথচ রাসুল (সাঃ ) বলে গেছেন, ( নেকী হাছিলের উদ্দেশ্যে) তিনটি স্থান ব্যাতীত সফর করা যাবেনা, মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুল আকসা ও আমার এই মসজিদ।
তবে ব্যবাসা বানিজ্য ও শিক্ষার জন্য সফর করা যাবে।
রাসুল (সাঃ ) মৃত্যুর পাচদিন পূর্বে উম্মতকে সাবধান করে বলেন :- " সাবধান ! তোমরা কবর সমুহকে সিজদার স্থানে পরিনত করো না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।