আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরিষার মধ্যে আজব রঙের ভুত

নাজমুল ইসলাম মকবুল

নাজমুল ইসলাম মকবুল ঢাকায় জাতীয় প্রেসকাব চত্বরে সাংবাদিক মহাসমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম ক’দিন পূর্বে। সেখানে সারাদেশের নবীন প্রবীণ হাজার হাজার সাংবাদিকের সাথে মুলাকাত করার ও তাদের মুল্যবান বক্তব্য শুনার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তন্মধ্যে একজন বক্তার একটি লাইন আমার হৃদস্পন্দনে বার বার প্রতিবিম্বিত হচ্ছে এখনো। লাইনটি হচ্ছে ‘হাটে হাড়ি ঙেঙ্গে দিলাম জানিনা বাড়ী ফিরতে পারবো কি না’। আমিও এই লেখাটির মাধ্যমে গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়ে আজ হাটে হাড়ি ভেঙে দিলাম এটা জেনেও যে, এর মাধ্যমে অনেক তথাকথিত সাংবাদিক বন্ধুদেরই বিরাগভাজন হতে হবে হয়তো আজীবনের জন্য।

তাছাড়া কোন কোন সম্পাদক লেখাটি পড়ে গোস্বা করে তা না ছাঁপাতেও পারেন। তবুও বিবেকের তাড়নায় কলম না ধরে পারলামনা। ছয় বছরেরও অধিককাল যাবত নিতান্ত শখের বসে সাংবাদিকতার জগতে কিছুটা হলেও বিচরণ করে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সম হয়েছি তা রিতিমতো আতকে উঠার মতো। আমাদের দেশে জাতিয় স্থানীয় দৈনিক সাপ্তাহিক পাকি মাসিক ত্রৈমাসিক অনেকগুলি পত্র পত্রিকা সুনামের সাথে অগণিত পাঠকের মনের খোরাক যুগিয়ে যাচ্ছে। যে সময় যে সরকারের শুভাগমন ঘটে তাদের সুনাম সুখ্যাতির পাশাপাশি গঠনমুলক সমালোচনা ছাড়াও দেশ বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ও নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে সর্বোপরি বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্টির অন্যায় অবিচার অনাচারের সচিত্র বিবরণ প্রকাশ করে দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রায় অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছে।

গণতন্ত্রের পরে একটি মজবুত হাতিয়ার হলো সংবাদপত্র বা সংবাদমাধ্যম। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাথে গত ক’বছরে দেশ বিদেশের অনেকগুলি অনলাইন পত্রিকাও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সম হয়েছে। আর এসব সংবাদ মাধ্যমে পেশাদার সাংবাদিকরা কাজ না করলে তা সচল থাকা সম্ভব নয়। এখনও নবীন প্রবীণ অনেক সাংবাদিক ভাইয়েরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে শক্ত হাতে কলম চালিয়ে যাচ্ছেন লুটেরাদের বিরুদ্ধে। বিনিময়ে পাচ্ছেন দেশের মানুষের ভালোবাসা।

মরনের পরও মানুষ যুগ যুগ ধরে তাদের স্মরণ করবে তাদের কর্মের জন্য। ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম লেখা থাকবে স্বর্নারে। পরকালেও এর জন্য পাবেন উত্তম প্রতিদান। কথায় বলে সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। সংবাদপত্র জাতির দর্পণ।

সাংবাদিকরাই সমাজের বিভিন্ন স্থরের মানুষের, রাষ্ট্রের উপরতলা থেকে নিচতলার জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা কর্মচারীদের সর্বোপরি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সুনাম দুর্নাম সফলতা ব্যর্থতা ও ব্যর্থতা থেকে শুধরানোর সুপারিশ তুলে ধরেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু জাতির বিবেক যারা তাদেরওতো আত্মসমালোচনার দরকার। বেড়ায় যদি ধান খায় তাহলেতো এই বেড়া আরও বিপজ্জনক। যাদের কাছে জাতি তথা বিশ্ববাসী অনেক কিছু পেতে আশা করে তাদের মধ্যে যদি ত সৃষ্টি হয় সেই তের উপসম করবে কে? এরা যদি সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার পরিবর্তে নিজের আখের গোছাতে স্বার্থ হাসিলের ধান্দায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাহলে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালি মাধ্যম মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রন করবে কে? ধানে কিছুটা চিটা থাকাটা একেবারে অস্বাভাবিক নয় তবে তা যদি হয়ে যায় মাত্রাতিরিক্ত তবেতো কথা থেকেই যায়। এই জাতির বিবেকদের উত্তরনের পথ কি খোলা নেই? এ পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কেহ সমালোচনা করলেও মুখে করতে শুনা যায় বিভিন্ন স্থানে, কিন্তু লেখনির মাধ্যমে সমালোচনাটা তেমন একটা হচ্ছেনা।

আর লেখনির মাধ্যমে সমালোচনা করলে চাকরি চলে যাবে, স্যার নারাজ হবেন কিংবা দেশ বিদেশের মানুষ হাড়ির খবর জেনে যাবেন, তখন নিজেরও মান ইজ্জত তলানিতে পড়ে যাবে হয়তো এই ভয়ে। আমার এই লেখাটি পড়ে যাদের আতে ঘা লাগবে তারা হয়তো বদদোয়া দিবেন আর কেহ কেহ হয়তো বলতে পারেন ‘সমালোচনা না হলে শুধরাবে কে’। এখন শুরু করি আসল বয়ান। ব্যাপক অনুসন্ধানে দেখা যায় সিংহভাগ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মালিকরা গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে অফিস খুলেন। অফিস প্রধান বা ব্যুারো প্রধান এবং ষ্টাপ রিপোর্টার নিয়োগ করেন।

দেশের অনেক জেলা, উপজেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদেশের গুরুত্বপুর্ণ শহরেও প্রতিনিধি নিয়োগ দেন। এসব প্রতিনিধির কাজ হলো নিজ এলাকার কোথায় কি ঘটছে ইতিবাচক ও নেতিবাচক খবর সংগ্রহ করে নিজ নিজ পত্র পত্রিকায় বা টিভি চ্যানেলে প্রেরণ করা। অনুসন্ধানে দেখা যায় হাতেগোনা কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম তাদের প্রতিনিধিদের নিয়োগ প্রদান করে নিয়োগপত্রের মাধ্যমে এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে বাছ বিচার করে। নিয়োগপত্রে উল্লেখ থাকে চাকুরীর শর্তাবলী। পাশাপাশি উল্লেখ থাকে প্রতিনিধির বেতন টেতন সুযোগ সুবিধা কিংবা ভাতার কথাও।

এর মধ্যেও দু-একটি পত্র পত্রিকা ছাড়া প্রায় সকল পত্রিকা কর্তৃপই এই ভাতার যে অংক উল্লেখ করেন তা শুধু লজ্জাজনকই নয় চরম লজ্জাজনকও বঠে। দু-তিন বছর জুতোর তলা য় করানোর পর এই নিয়োগপত্রও দেন মুস্টিমেয় কিছু পত্রিকা কর্তৃপ। দু-চারটি পত্র পত্রিকা ছাড়া নিয়োগপত্রে উল্লেখিত বেতন বা ভাতার সামান্য টাকা এবং ফেক্স ফোন ও ই-মেইলের বিলও পরিশোধ করেননা কিংবা তাদের কাছ থেকে আদায় করতে হলে শুধু শুধু জুতোর তলা য় করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। আজ দেবো কাল দেবো, এক বছরের একসাথে দেব, বছর শেষে পরের বছর দেব ইত্যাদি নানান ধরনের প্রতিশ্র“তি শুনতে শুনতে পরান শেষ। আরও মজার খবর হচ্ছে নিয়োগপত্র দিলে তাতে বেতন ভাতার উল্লেখ থাকতে হয় তাই অধিকাংশ পত্রিকা কর্তৃপ কিন্তু নিয়োগপত্রও প্রদান করেনা।

শুধু একটা কার্ড বা পরিচয় পত্র দেন এবং কাজ চালিয়ে যেতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়ে নিয়োগপত্রের প্রলোভন দেখিয়ে বছরের পর বছর কলুর বলদের মতো খাটাতে থাকেন এবং বেশি বেশি বিজ্ঞাপন দেবার জন্য কতো যে ফোন করেন তা বলা মুশকিল। এছাড়া বছরে দু-একবার অফিসে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নীতিবাক্য শুনান আর বিজ্ঞাপন বাড়াতে নির্দেশ দেন। নিয়োগপত্র, বেতন বা ভাতার কথা বললে কৌশলে এর জবাব এড়িয়ে অনেকেই বলে থাকেন বিজ্ঞাপন দেন। তবে কোন কোন পত্রিকা কর্তৃপ আগেই বলে দেন বেতন টেতন ফেক্স ই-মেইলের বিল টিল দিতে পরবোনা। আমাদের আয় রুজগার নাই অবস্থা খারাপ।

বিনা বেতনে পুষালে ফ্রি মেহনত করতে পারেন। অনেকেই সে ধরনের প্রস্তাবেই দারুন খুশি হয়ে শুধুমাত্র একটি কার্ডের জন্য এবং সাংবাদিক লেভেল লাগিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সুযোগ সুবিধা ভোগ করার জন্যই এসব প্রস্তাবে রাজি হয়ে নিজের পকেটের পয়সা খরছ করে ফ্রি মেহনতে আত্মনিয়োগ করেন। তবে এশ্রেণীর বেশিরভাগই অদ অশিতি বেকার কিংবা অর্ধশিতি। আবার কেহ কেহ শখের বশে কিংবা অভিজ্ঞতা লাভের পর পরবর্তীতে ভালো একটি পত্রিকায় সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়ার টার্গেট নিয়েও ফ্রি সার্ভিস দিতে দেখা যায়। মাগনা খাটানোতে পত্রিকা কর্তৃপরে পুরো ১০০% লাভ।

তবে যাদেরকে মাগনা খাটানো হয় তারা মাগনা খেটে আয় রুজি কেমনে করেন নিজে কেমনে চলেন সে প্রশ্নটাই থেকে যায়। অনেক সময় স্থানীয় প্রতিনিধিদের সংবাদ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন জায়গায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয়। গাড়ি ভাড়া পকেট থেকে দিতে হয় কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে তেল ভরতে হয়, মোবাইলের বিল পরিশোধ করতে হয়, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মুল্যবান সময় ও অর্থ নষ্ট করে সংবাদ সংগ্রহ করে নিজের বাপের পয়সায় ক্যামেরা কিনে ছবি তুলে আবার কম্পিউটারে সংবাদ লিখে ছবিকে ঠিকঠাক করে ক্যাপশন লিখে ই-মেইলের বিল নিজের পকেট থেকে পরিশোধ করে পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দিয়ে আবার বার্তা সম্পাদককে বিনয়ী কন্ঠে নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে ফোন করে সংবাদ প্রেরণের কথা জানিয়ে পরের দিন ছাপানোর জন্য বার বার তাগিদ দিয়ে মজবুতভাবে অনুরোধ করা হয়। অনেকে বলে থাকেন প্রায় পত্রিকার বার্তা সম্পাদককে নাকি মাঝে মধ্যে সম্মানসূচক ফেক্সিলোড না পাঠালে বেচারা নাকি ফোনও ধরতে সময় পাননা কিংবা দেবো বলে কষ্ট ও খরছ করে পাঠানো সংবাদটিও না দিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হাতটা একবারও কাপেনা। তাদের নাকি মোবাইলে কোন দিন নিজ থেকে ফেক্সি লোড করা লাগেনা বরং বিনা মেহনতে পাওয়া সম্মানসূচক ফেক্সিলোড থেকে বউ বাচ্ছা শালা শালিদের আরও লোড দিয়ে শেয়ার করতে পারেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রতিনিধিদের পকেটের অর্থে প্রেরিত শ্রম ও ঘামে ঝরা সংবাদ দিয়ে মালিকেরা পত্রিকা ছাঁপেন ও চুটিয়ে ব্যবসা করেন, তাদের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন আদায় করেন, সংবাদ পাঠাতে বিলম্ব হলে অথবা তাদের ফরমায়েশমতো যথাস্থানে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে কোন কোন সময় ধমক দিতেও কসুর করেননা। ডান বাম কিংবা বিভিন্ন মতাবলম্বী পত্রিকা হলে এই ধাচে সংবাদ প্রেরণেরও ফরমায়েশ থাকে। নতুবা চাকরি কচুপাতার পানির মতো চলে যাবারও নির্দেশনা আগেই দেয়া থাকে। এখন আলোচনা করা যাক কলুর বলদের মতো কাদেরকে খাটাতে অসাধু সংবাদমাধ্যমের মালিকদের আরাম বেশি। অনুসন্ধানে দেখা যায় হাতে গোনা দু’চারটি পত্রিকা বাদে অধিকাংশ পত্রিকা কর্তৃপ জেলা উপজেলা প্রতিনিধিদের নিয়োগ দেন যোগ্যতার বা শিা দীার ভিত্তিতে নয়।

খাতির সুপারিশ নতুবা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আদায়ের বিনিময়ে। এই অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বহু ধরনের হতে পারে যা জানতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বকে পুঁজি করে অধিকাংশ পত্রিকা কর্তৃপ বিভিন্ন জেলা উপজেলা প্রতিনিধিদের বিনা বেতনে খাটিয়ে তাদের লুটেরা বানাচ্ছেন এবং তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করছেন ঠিকই। কিন্তু তাদের এটা ভালোভাবেই জানা যে, বিনা বেতনে ইচ্ছেমতো খাটাতে হলে অযোগ্য অশিতি গন্ডমুর্খ বেকার অদ লোকদের দরকারই বেশি। তাই প্রতিনিধি নিয়োগ দেবার সময় শিাগত যোগ্যতা পাঠশালা পাশ কি না, হাই স্কুলের বারান্দায় কোন দিন গিয়েছে কি না, শুদ্ধভাবে একটি সংবাদ লেখা দুরের কথা তিন দিনের ছুটি চেয়ে প্রধান শিকের নিকট একটি ছুটির দরখাস্ত লিখতে পারবে কি না এ ধরনের প্রতিনিধিদের নিয়োগ প্রদান করেন অধিকাংশ তথাকথিত শ্রদ্ধাভাজন সম্পাদক বা তাদের প্রতিনিধিরা।

কোথাও কোথাও দেখা যায় ইতিপুর্বে বিভিন্ন ধরনের যেমন রিকসা ভ্যান ঠেলা ভটভটি করিমন নছিমন ইমা লেগুনা বাস ট্রাক বা রাইসমিলের ড্রাইভার, হেলপার, রাজ কাট রং মেস্তরি, যোগালি, ধুপা, নাপিত, মুছি, দালাল, টাউট, চোরাকারবারী, আদম ব্যাপারী, হুন্ডি ব্যবসায়ী ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিত ছিল বা আছে কিন্তু পরবর্তীতে এরাও সাংবাদিকের খাতায় নাম লেখাতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়না। অনুসন্ধানে দেখা যায় দেশের প্রায় অধিকাংশ জেলা উপজেলাতে প্রতিনিধিদের বিরাট একটি অংশ হাই স্কুলের বারান্দায় না গিয়েও সাংবাদিকতার কার্ড বুকে ঝুলিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হম্বি তম্বি করে বেড়াচ্ছে এবং টাউট বাটপারীসহ বিভিন্ন মাধ্যমে টু-পাইস কামিয়ে এ মহান পেশাকে কলুষিত করছে। আবার কোন কোন সংবাদ মাধ্যমের মালিক বিভিন্ন স্থানে একাধিক প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে এমনকি ইউনিয়ন ওয়ার্ডে ও গ্রামে গ্রামে প্রতিনিধি দিয়ে খেলা লাগিয়ে নিজে রেফারির ভুমিকা নিয়ে বিজ্ঞাপন টিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন ধরনের ফায়দা হাসিল করেন এবং সময় সুযোগমতো ছুড়েও ফেলে দেন। এখন কথা হলো বেতন ভাতা না পেয়ে এরা মাগনা কাজ করে কিসের বিনিময়ে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে কিছু কিছু অসাধু তথাকথিত সাংবাদিক বুদ্ধি শুদ্ধি বাতলিয়েও নাকি দেন কিভাবে কামাই রোজগার করতে হয়।

আবার অনেকে টু-পাইস কামানোর ধান্দা শিখে নেয় বিভিন্ন মাধ্যমে। প্রায় এক যুগ পুর্বে এক সাংবাদিকের বেতন ভাতার খবর জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন ‘ভাইছাব এ পেশায় মাল কামাতে হলে অবৈধ পন্থা ছাড়া উপায় নেই। বেতন টেতন নেই, তবে সিস্টেম জানা থাকলে বিশ পচিশ হাজার টাকা কামানো মামুলি ব্যাপার, এর থেকে বেশিও রুজি করা যায়। কোন কোন সময় একদিনেও বড় দান মারা যায়। ’ বললাম বুঝলামনা! বিষয়টা একটু খোলাসা করে বলো।

বলল যেমন ধরুন পুলিশ স্পর্শকাতর কোন বিষয় নিয়ে কিংবা সাজানো মামলায় একটা আসামী ধরে থানায় আনলো, বেচারা হয়তো সম্মানিত অথবা টাকাওয়ালা লোক। তখন ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলা হলো। সুযোগমতো জানানো হলো আপনার ছবি ও সংবাদ কাল পত্রিকায় আসবে। লোকটা মান ইজ্জতের ভয়ে তখন বলবে ভাই দয়া করে আমার ছবিটা পত্রিকায় দিয়েননা। তখন বলতে হবে ভাই আমি চাকরি করি, ছবিটা আমার দিতে হবে।

তখন লোকটা পাঁচ দশ হাজার কিংবা সামর্থমতো একটা অংকের টাকার মাধ্যমে দফারফা করে আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে পকেটে দিয়ে দিলে আর সে ছবি ও সংবাদ পাঠানো হয় না। কেহ কেহ বড় অংকের টাকার বিনিময়ে তার সিন্ডিকেটের সকলের কন্ট্রাক্টও নিতে শুনা যায়। এছাড়া বিপরীতও আছে যেমন, রাজনৈতিক পাতি নেতাকে গ্রেফতার করা হলে তার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ার জন্য ও নেতৃত্বে প্রমোশন হওয়ার জন্য ছবি তুলে পত্রিকায় দেওয়া দরকার। তখন ছবি তুলে পত্রিকায় দেবার জন্য কোন কোন েেত্র টাকাও মিলে। আবার অনেকের চরিত্র হননের জন্য বা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যও তার প্রতিপ অসাধু রিপোর্টারের কাছে গিয়ে বিভিন্ন অংকের টাকা দিয়ে রিপোর্ট করায়।

প্রতিপরে কোমর শক্ত হলে কিংবা মানহানির মামলা করবে বলে আশংকা করা হলে বুদ্ধি শুদ্ধি বাতলিয়ে দেওয়া হয় যে, উনাকে আসামী করে এসব বিবরণ এজাহারে উল্লেখ করে একটি সাজানো মামলা কিংবা জিডি অথবা টিএনও বা এসপির কাছে অভিযোগ বা স্মারকলিপি দায়ের করে রিসিভকৃত কপির ফটোকপি দিয়ে দেন তখন নিউজ করতে আর অসুবিধে নেই। আমাদের দেশে মিথ্যা মামলা করতে তেমন একটা তকলিফ করতে হয়না তা প্রায় সবারই জানা। মামলা বা অভিযোগ দায়েরের পরণেই সত্য মিথ্যা উদঘাটন না করে অমুকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে মামলা দায়ের কিংবা জিডি বা স্মারকলিপি পেশ। মামলার বিবরণে বা এজাহারে অথবা জিডিতে প্রকাশ........... ইত্যাদি ইত্যাদি লিখে ভালো মানুষেরও চরিত্র হরন করে টু-পাইস কামানোর চটকদার সুযোগ হলো অভিযোগ, মামলা, জিডি, স্মারকলিপি। অনেক সময় বিভিন্নজনের স্পর্শকাতর যে কোন বিষয়আশয় জেনে ফোনে বা বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদপত্রে প্রকাশের হুমকী ধামকী দিয়েও টু-পাইস কামানোর সংবাদ শুনা যায়।

এছাড়া সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন স্থরের কর্মকর্তা কর্মচারীর ঘুষ দুর্নীতির কিংবা অপরাধীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তাদের মুখোশ উদঘাটনের হুমকী দিয়েও নিয়মিত কিংবা মাসোহারা ভিত্তিতে টু-পাইস কামাতেও শুনা যায়। কোথাও কোথাও থানার দালালী করারও অভিযোগ শুনা যায়। কতিপয় অসাধু স্টাপ রিপোর্টার বা বার্তা সম্পাদকরা নিউজ ছেপে কিংবা আটকে রেখেও টু-পাইস কামাতে শুনা যায়। আরও বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম চলে যা মহান আল্লাহপাক তাওফিক প্রদান করলে সময়মতো সিরিজ লেখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। এসব অদ অযোগ্য অশিতি লোকেরা সাংবাদিকতার মহান পেশাকে কলুষিত করে জাতির যে ভয়াভহ তি করে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা না হলে তা দিন দিন আরও ভয়াবহ আকার ধারন করবে সন্দেহ নেই।

সিলেটের এক সিনিয়র সাংবাদিক একদিন কথা প্রসঙ্গে বললেন, প্রেসকাবে যেতে মন চায়না। কারণ বিভিন্ন বাজে পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল এমন কিছু অদ অশিতি ছেলেদের সাংবাদিকতার কার্ড দিয়ে থাকে সেখানে গেলে ওদের পাশাপাশি বসতে লজ্জা করে। টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ও স্ট্যান যারা বহন করে ওদেরকেও সাংবাদিকতার এক ধরনের কার্ড দেয়া হয়। আর দেখা যায় এসব অদ অযোগ্য ও অশিতি তথাকথিত সাংবাদিকদের কারণেই দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা উপজেলায় সাংবাদিক ও প্রেসকাবের মধ্যে বিভেদ বিভ্রান্তি গ্র“পিং লবিং কাদা ছোড়াছুড়ি একাধিক ও বহুসংখ্যক প্রেসকাবের জন্ম। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় সর্বেেত্র অযোগ্য অশিতি দালাল লুটেরারাই সকল অশান্তির মুল।

সংবাদপত্র হচ্ছে জাতির দর্পণ। দেশ ও জাতির উন্নয়ন অগ্রগতি, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের ত্র“টি বিচ্যুতি তুলে ধরে তা সংশোধনের পথ বাতলে দেয়ার ধারক ও বাহকের বিরাট অংশকে যদি কোন বেতন ভাতা না দিয়ে পাল্টা নিয়োগ দেবার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা পয়সা আদায় করে বেশিরভাগ েেত্র অশিতি অর্ধশিতি মুর্খ দুর্নীতিবাজ ঠগ ও লুটেরাদের দিয়ে মহান এ পেশাকে কলুষিত করা হয় আর কতিপয় সংবাদমাধ্যমের মালিকেরা নিজের পকেট ভারি করে, তবে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের গতিপথ কোন দিকে যাবে সে বিচারের ভারাভার বিজ্ঞ পাঠকমহলের উপরই ছেড়ে দেয়া হলো। অশিতি অর্ধশিতি মুর্খ ও দুর্নীতিবাজ তথাকথিত সাংবাদিকেরা নিজে সংবাদ লিখতে না পেরে অন্যের কাছ থেকে ধার করে সংবাদ প্রেরণ করে। এজন্যই দেখা যায় অধিকাংশ পত্রিকায় একই সংবাদ একই ধরনের লেখা যাতে কোন পরিবর্তন নেই, একেই বলে সিন্ডিকেট নিউজ। আবার কোথাও কোথাও কর্তৃপ নাকি বেতনতো দেওয়া দুরের কথা প্রতিনিধিদের কাছ থেকেও নাকি টু-পাইসের অংশ বা মাসোহারা নিয়ে থাকেন নিয়মিত।

এজন্য অনেকেই ব্যঙ্গ করে সাংবাদিক ভাইদের সম্বোধন করেন সাংঘাতিক বিশেষনে। তবে এত্তোসব ভেজালের ভিড়ে এখনও কিছু নির্ভীক কলম সৈনিক সৎ সাংবাদিক আছেন যারা সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগাচ্ছেন নিঃস্বার্থভাবে, প্রকাশ করে যাচ্ছেন পত্র পত্রিকা, সর্বোপরি দেশ ও সমাজের উন্নয়নে রেখে যাচ্ছেন তাদের অসামান্য অবদান। তাদের সততার নজির দেখলে শ্রদ্ধা জানাতে হয় বিনয়ের সাথে। লেখকঃ সভাপতি, সিলেট লেখক ফোরাম। মোবাইল নং ০১৭১৮৫০৮১২২


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.