আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুদান সামান্য, ঋণই ভরস.............!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!



সিডরের পর সরকার ও উন্নয়ন-সহযোগীরা যৌথ সমীক্ষা চালিযে় বলেছিল, ক্ষয়ক্ষতি পূরণে ১১০ কোটি ডলার প্রযো়জন হবে (বর্তমান বিনিময় হারে যা প্রায় সাত হাজার ৭০ কোটি টাকা)। ২০০৮ সালে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ এই হিসাব তৈরি করে সরকারের পক্ষ থেকে এই অর্থ অনুদান ও সহায়তা হিসেবে চাওযা় হযে়ছিল। উপকূলে ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানার তিন বছর হলো আজ সোমবার। উপকূলে এখনো রযে় গেছে সিডরের ক্ষত। এই সমযে় ক্ষয়ক্ষতি পুষিযে় উঠতে পর্যাপ্ত অনুদানও পাওযা় যায়নি, বরং ঋণ করেই পুনর্বাসনের কাজ করা হচ্ছে।

গত তিন বছরে দাতারা দিযে়ছে ২১ কোটি ৫০ লাখ ডলার (প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা)। প্রতিশ্রুতি অনুযাযী় পর্যাপ্ত সহায়তা না পেযে় সম্প্রতি সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সিডর ও আইলার ক্ষতি মোকাবিলায় সাডে় সাত কোটি ডলার বা ৫২৫ কোটি টাকা ঋণ নিযে়ছে। এদিকে, উন্নয়ন-সহযোগীদের অর্থ-সহায়তার প্রকল্পগুলোর কাজ মাত্রই শুরু হযে়ছে বলে জানা গেছে। অনেকে অর্থ বরাদ্দ দিলেও প্রক্রিযা়গত জটিলতার কারণে এখনো মাঠপর্যাযে় কার্যক্রম শুরু হয়নি। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সিডর পুনর্বাসনে নেওযা় কৃষি পুনর্বাসন প্রকল্প গত মার্চে শুরু হযে়ছে।

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বেডি়বাঁধ মেরামতের কাজও সম্প্রতি শুরু হযে়ছে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডর আঘাত হানার পর ৩ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছে মধ্য ও দীর্ঘমেযা়দি সহায়তা চেযে়ছিলেন। ১২ ডিসেম্বর উন্নয়ন-সহযোগীদের সংগঠন স্থানীয় পরামর্শক গ্রুপ ক্ষয়ক্ষতির বিষযে় একটি যৌথ সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ‘বাংলাদেশে সাইক্লোন সিডর: ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসন সহায়তার প্রযো়জনীয়তা’ নামের এই সমীক্ষায় বলা হযে়ছিল, সিডরে ক্ষয়ক্ষতি পূরণে ১১০ কোটি ডলার প্রযো়জন। বাংলাদেশ, বিশ্বব্যাংক ও ইউরোপীয় কমিশনের করা ওই সমীক্ষায় বলা হযে়ছিল, সিডরে ২৩ লাখ ঘরবাডি় বিধ্বস্ত হয়, মারা যায় তিন হাজার ৪০৬ জন।

এক হাজার একজন নিখোঁজ এবং ৫৫ হাজার মানুষ আহত হয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যায় দশমিক ৫ শতাংশ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব এম আসলাম আলম প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতির সমীক্ষার পর উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে সহায়তা চাওযা় হযে়ছিল। কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা দেওযা়র ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ কম। গবেষণা, সমীক্ষা, নীতি-সহায়তা দিতেই তারা সাহায্যের বড় অংশ ব্যয় করছে।

ক্ষতি বেশি, সহায়তা কম: সিডরের পর তাৎক্ষণিকভাবে ইউরোপীয় কমিশনের মানবিক সহায়তা কার্যালয় দুই কোটি চার লাখ ২৫ হাজার ডলার ত্রাণ সহায়তা দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে এক লাখ পরিবারের প্রত্যেককে নগদ পাঁচ হাজার টাকা করে গৃহনির্মাণ সহায়তা দেওযা় হয়। সিডরের সময় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) তিন কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহ করে। ইউএসএআইডি সিডরে দিযে়ছিল ৮১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা বা ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্যের বৈদেশিকবিষয়ক উন্নয়ন সংস্থা (ডিএফআইডি) সিডরের পর সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে মোট ৭০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বা এক কোটি দেড় লাখ ডলার সহায়তা দেয়।

নভেম্বরে সিডর আঘাত হানার পর ২৫ লাখ ডলার দিযে় তারা সহায়তা শুরু করলেও পরে চার ধাপে বাকি অর্থ দেয় ডিএফআইডি। দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ খুরশিদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, কযে়ক বছর ধরে উন্নয়ন-সহযোগীদের আশ্বাস ও প্রকৃত সহায়তার মধ্যে পার্থক্য বাড়ছে। যুক্তরাজ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো মূলধারার সহযোগীদের চেযে় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বেশি সহায়তা দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণ: গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সাডে় সাত কোটি ডলার ঋণ নেওযা়র একটি চুক্তি করে বাংলাদেশ। এই অর্থে ৮০ কিলোমিটার বেডি়বাঁধ মেরামত এবং ১০০টি বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র ও ৬০টি নতুন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।

এ ছাডা় কৃষকদের লবণাক্ত-সহিষ্ণু ধানের জাত সরবরাহ করা হবে। জাতিসংঘ আন্তসরকার জলবাযু় পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেলের (আইপিসিসি) সদস্য আহসান উদ্দিন আহমেদ বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় বেডে় যাওযা়র জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে দাযী় করে বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে যে ঋণ নিচ্ছে, তা দেশের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক প্রবণতা তৈরি করবে। গত এক দশকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের সক্ষমতা বাড়লেও ঋণ করে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে গিযে় উন্নয়নকাজের অগ্রাধিকারগুলো পিছিযে় পড়ছে। বাড়ছে দুর্যোগের প্রবণতা: বিশ্বব্যাপী প্রায় সবার সমীক্ষাতেই বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়সহ ঝড়-বন্যা বেডে় যাওযা়র জন্য জলবাযু় পরিবর্তন দাযী়। যদিও জলবাযু় পরিবর্তনের পেছনে বাংলাদেশ দাযী় নয়, কিন্তু এই পরিবর্তনের শিকার হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

আইপিসিসির হিসাব অনুযাযী়, গত ৫০ বছরে বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিযা়স বেডে়ছে। আবহাওযা় অধিদপ্তরের হিসাবে জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সমযে় আগে বছরে চার থেকে ছয়টি নিম্নচাপ হতো। গত কযে়ক বছরে তা বেডে় কমপক্ষে হযে়ছে ১২টি। নব্বইযে়র দশকের আগ পর্যন্ত প্রতি তিন বছর পর পর একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝডে় পরিণত হতো। গত ১০০ বছরে বঙ্গোপসাগরে ৫০৮টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হযে়ছে।

এর ১৭ শতাংশ বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ ঝড় কমপক্ষে পাঁচ হাজার মানুষের জীবনহানি ঘটিযে়ছে। আর ২০০৫ সাল থেকে অনেক সময় বছরে একাধিক ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হেনেছে। ঘূর্ণিঝড় মালা, সিডর, নার্গিস, আইলা, লাইলার মতো ঘূর্ণিঝড় গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের উপকূলে এসেছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.