আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন দাদাভাই আর টুনটুনির গল্প

সকাল আর আসেনা গোলাপ হয়ে ফোটেনা কিশোরীর হাতে

আজ হঠাৎ করে মুক্তার সাথে সদর মার্কেটে দেখা হয়ে গেল সুমনের। প্রথমে সে চিনতেই পারেনি। চেনার অবশ্য কথাও না। সুমনকে যখন বাড়ি থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেয় তখন মুক্তার বয়স ছিল চার কি পাঁচ। সে এখন চতুর্দশী বালিকা।

একটা ট্রাংকে বইপত্র ,কাপড় চোপড় ণিয়ে যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসছিল তখন মুক্তা তাকে জড়িয়ে বলেছিল 'তুমি যাইও নাগো ,আমারে লইয়া যাও গো দাদাভাই' মুক্তা সুমনের ছোট বোন। পুতুলের মত দেখতে। সুমন হচ্ছে মুক্তার নায়ক। পুকুরে সাঁতার কাটতে গিয়ে সুমন যখন মুক্তাকে কাঁধে নিয়ে পুকুরের মাঝখানে নিয়ে যায় তখন মুক্তার যে কী আনন্দ!সুমন ডুব দিয়ে পুকুরের তল থেকে কাদামাটি তুলে এনে সবাইকে দেখায়। একপ্রান্তে ডুব দিয়ে অন্যপ্রান্তে ভেসে উঠে ।

মুক্তা চিন্তায় অস্থির। দাদা ভাই এখনো উঠছে না কেনো?সুমন ভেসে উঠলেই মুক্তার মুখে হাসি। এমন একটা ভাব যেন 'দাদা ভাই! আমার দাদা ভাই পৃথিবীর সেরা। ' আদর করে সুমন তাকে ডাকে টুনটুনি। মুক্তাও তাকে অনেক ভালবাসে।

সুমন স্কুল থেকে না ফেরা পযন্র্ত ভাত খায় না। বাবা মা কারো কথাতেই কিছু হয় না। দাদা ভাই আসছে না যে!দাদা ভাই আসলে একসাথে খাব। এতটুকু মেয়ে। মাথাভর্তি লম্বা চুল।

দাদা ভাই মাঝে মাঝে নিজ হাতে চুল আঁচড়িয়ে দেয় ,চুলে ফিতা বেঁধে দেয়। কপালে টিপ আর ঠোঁটে লিপ স্টিক যেন পুতুল একটা। মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে থাকলে মা যখন চুল আচড়িয়ে দিতে যায় তখন টুনটুনি বলে' না তুমি পার না তুমি পঁচা। দাদা ভাই পারে । ' সুমন প্রায়ই টুনটুনির জন্য টিপ,চুলের ফিতা,পুতুল আর খেলনা এনে দেয়।

তখন টুনটুনি তার খেলার সাথিদের নিয়ে এসব দেখায় আর বলে 'দেখো আর কত্ত কিছু আছে!' সুমন খেলতে যাবে টুনটুনি বলে -দাদা ভাই তুই কই যাস আমারে লইয়া যা। মাঠের এককোণে বসিয়ে রেখে তারপর খেলে। মাঝেমাঝে সুমন বিরক্ত হয়ে যদি বলে টুনটুনি আর জ্বালাইস নাতোর লাগি আমি কোনখানে যাইতে পারিনা তখন টুনটুনি একটু ছাড় দিয়ে বলে তুই কই যাবি? সুমন যদি বলে জাহান্নআমে তখন টুনটুনি বলে- আচ্ছা তাড়াতাড়ি চইলা আসবি। সুমন রাগ করতে গিয়েও হেসে ফেলে। এমনি ছিল একজন দাদা ভাই আর একজন টুনটুনির জীবন।

বাবার সাথে সুমনের সবসময় একটা দ্বন্ধ চলে। বাবা খুব মেজাজী আর অন্তমুখী কিনা। সে যখন হাইস্কুলে পড়ে তখনো বাবার কাছ থেকে চেয়ে টাকা নিত না। টিউশনের শুরু তখন থেকেই। স্কলারশীপ আর টিউশন এভাবেই চলে যেত।

সেই সাথে বাড়তে থাকে পিতা পুত্রের দূরত্ব। মাধ্যমিক পাস দিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কয়েকমাস আগে অনাকাঙ্খিত ভাবে একটি প্রতিবন্ধী বোবা মেয়েকে বিয়ে করে বসে। এত অল্প বয়সে বিয়ে তার উপর বোবা সবার মাথায় যেন বাঁজ পড়ে।

শ্বশুর শাশুড়ি চাঁদ হাতে পায। তাদের এই মেয়েটি ছাড়া কেউ ছিল না। টাকা পয়সা যা-ই আচে পাহারা দেবার লোক ও কেউ ছিল না। সুমনের আত্বীয় স্বজন সবাই চেয়েছিল ছেলেকে চাপ দিয়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে যেভাবেই হোক ফিরিয়ে আনবে। তারা চেষ্টা ও কম করেনি।

শেষে সুমন বল প্রয়োগে সবাইকে আত্বহত্যার হুমকি দেয়ায় সবাই থেমে যায়। তবে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বলে। যাবে কোথায় ,বউকে খাওয়াবে কী?অকূলে পড়লেই সব ভূত মাথা থেকে নামবে। কিন্ত্ত সে হার মানেনি। বাড়ি থেকে সোজা বেরিয়ে যায়।

অভিমানে ,ক্ষোভে আগপাছ কিছুই ভাবেনি। ভাবেনি এর শেষ কী ? একবাসায় জায়গীর থেকে ফাইনাল পরীক্ষা অনেক কষ্টে শেষ করে। পরীক্ষা শেষ হলে শ্বশুর শাশুড়ী এসে নিয়ে যায়। কয়েক মাসের জন্য তার আশ্রয় হয় শ্বশুর বাড়ি। তারা তাকে ভেঙ্গে পড়তে নিষেধ করেন।

পাশে থাকার কথা বলেন। বলেন পৃথিবীতে যারা কষ্ট পায় তারাই একসময় বড় হয। ভেতরে জ্বালা না থাকলে জ্বলে উঠা যায় না। তাদের সংসারে সুখ নেমে আসে ,হাসিখুশিতে মেতে উঠে সবাই। বকুল কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দেয়া ফুল।

মুখে তার ভাষা নেই। কিন্ত্ তার হৃদয়ের ভাষা চোখের দৃষ্টিতে, মায়াময় মুখশ্রীতে ফুটে উঠে যা ছাড়িয়ে যায় পৃথিবীর সকল ভাষা। তার শরীর শিশির ভেজা মটর ডগা, লাউয়ের ডগার মত কোমল। তার হাসি সকালের রোদের মত ঝলমল করে । বিষাদে বেজে উঠে অস্তগামী সূর্যের মত বিকেলের করূণ কান্না।

সুমন সবকিছু ভুলে যায়। যেন কিছুই হয়নি। সে চিরকাল এমনই ছিল। প্রথম প্রথম বকুলের ভাষা বুঝতে কষ্ট হত। বকুলও বুঝাতে না পারার কষ্টে কুঁকড়ে যেত।

সে তার দূর্বলতা দূর করার কষ্টে নীল হয়ে যেত। এ দেখে সুমন অস্থির হয়ে যেত। সে বকুলের হাতে হাত রেখে বুঝায়- ভয় নেই। পাশে আছি। থাকব।

অভয় পেয়ে বকুলের চোখে সকাল হেসে উঠে। কাউকে কিছুই বলতে হয় না। একপলকের চাহনিতে লেনদেন হযে যায় অনেক কথা। চোখের আড়াল হলে একে অপরের জন্য অস্থির হয়ে উঠে। সুমনের এ সমপর্কের পেছনে কি কারণ আমরা জানি না।

তারপরও ধরে নিই যে মানুষের একটা বয়স থাকে যখন কিছু একটা করে ফেলার জন্য আগপাছ ভাবতে হয় না। কারণ ঐ বয়সটা ভাবার নয় । কিছু একটা করার। সে বয়সটাকে আমরা যোদ্ধা বয়স বলতে পারি। বোদ্ধারা কি ভাবল যোদ্ধারা তা আমলে নেয় না।

এ দৃষ্টিকোণ থেকে এবার সামনে যাওয়া যাক। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে আশানুরূপ মার্কস না পেলেও ফলাফল তেমন খারাপ হয়নি। সে এবার উচ্চশিক্ষার জন্য উঠে পড়ে লাগে। ভর্তির জন্য কোচিং করতে ঢাকায় চলে যাবার চিন্তা ভাবনা করে। এদিকে সুমনের পড়পরেখার প্রতি আগ্রহ দেখে শ্বশুর শাশুড়ির মুখের হাসি মিলিয়ে যেতে থাকে।

একটা অজানা আশংকায় কেঁপে উঠে। যদিও বিয়ের আগে পড়লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন প্রকার চাপ দেবে না বলে কথা দিয়েছিল। পরোক্ষ ভাবে পড়ালেখার প্রতিবন্ধকতা তৈরী করতে সচেস্ট থাকে। নতুন নতুন উপদ্রবে সুমন বিরক্ত হয়ে উঠে। সুমন তাদের মুখে হাসি দেখতে পায় না।

কোন কথা জিজ্ঞেস করলে কোন রকম গাছাড়া একটা জবাব পায়। সে বুঝতে পারে তাকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। কিন্ত্ত কোন কারণ খুঁজে পায় না। রাতে যখন বকুল আর সুমন ঘুমাতে যায তখন সুমন বুঝতে পারে একটা অদৃশ্য দৃষ্টি যেন তাদের পাহারা দিযে চলেছে অনবরত। বিশেষ কোন মূহুর্তে হঠাৎ ঘরের দরজার কড়া নড়ে ওঠে।

দরজা খুলতেই আর নেই। বিরক্তিতে বিষিয়ে উঠতে থাকে। এই যে শোনছো? -বলো কি বলবে। -জামাই যে এখন পড়ালেখার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে এ ব্যপারে কিছু ভাবছো। তুমি কি মনে করো পড়ালেখা করলে জামাইর মন ঠিক থাকবে?কতরকম মেয়েছেলের সাথে উঠাবসা হবে।

এতে করে আমার মেয়ের সংসার একদিন না একদিন নষ্ট হবেই। -তো এখন কি করবো?তোমার মেয়েকে যখন বিয়ে করে তখনোতো জামাই কলেজে পড়েছে । মেয়ে ছেলের সাথে মিশেছে । তারপরও তো তোমার মেয়েকে বিয়ে করলো। -তুমি আসলে কিচ্ছু বুঝোনা।

যখন করেছে তখন জামাইয়ের বয়স কম ছিল। এখন ইউনিভার্সিটিতে পড়লে মন বিগড়ে যাবে। তাই এখনই সময় থাকতে যা করার করতে হবে। দশ বছর পরে সংসার নষ্ট হওয়ার চেয়ে এখনই নষ্ট হওয়া ভালো। যা করার এখনই করো।

আব্দুল হক সাহেব। আর কিছু ভাবতে পারেননা। বলেন দেখা যাক কি হয়। কিন্ত্ত কথাগুলো একেবারে মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন না। তার একটি মাত্র মেয়ে আল্লাহ তাকে দিয়েছেন।

তাও তাকে পরিপূর্ণতা দেন নি। তার সুখের জন্য যা দরকার তাকে তাই করতে হবে। শুধু এতটুকুই বুঝেন। একদিন ঘরভর্তি মানুষ আসে। ডাক পড়ে সুমনের ।

এত মানুষ দেখেই সুমন বুঝতে পারে কিছু একটা হতে যাচ্ছে। গুরুজন যারা এসেছে তাদেরকে আগে থেকেই বলে দেয়া হয়েছে সুমনকে কি বলতে হবে। প্রথমে শুরু করলেন মোতাহের সাহেব। তিনি একসময় আব্দুল সাহেবের সাথে চাকরি করতেন। -তো বাবা তুমি মনে হয় আমাকে চিনতে পারবে না।

আজকে আমরা কিছু কথা তোমাকে বলার জন্য এখানে ডেকেছি। শুনেছি তুমি নাকি পড়তে শহরে যেতে চাও? -হ্যাঁ । -তা বাবা তোমার শ্বশুর শাশুড়ীর মতামত নিয়েছ? -এ ব্যপারে উনারা জানেন। -শুধু জানলেই তো হবেনা । তোমার শ্বশুর শাশুড়ী রাজী কিনা জিজ্ঞেস করেছ? -পড়ালেখা করবো এব্যপারে উনারা অমত কিনা তা জানিনা।

তবে আমার এখন পড়ালেখার সময় আমাকে তাই করতে হবে। আর যদি উনারা অমত থাকেন তবে আমার কিছু করার নেই। বিয়ের আগে উনারা আমাকে কথা দিয়েছেলেন আমার পড়াশোনায় ব্যঘাত করবেন না। -কিন্ত্ তোমাকে তো এটা বুঝতে হবে বাবা তোমার শ্বশুরের আর কোন ছেলেমেয়ে নাই। ছেলে হলেও তুমি জামাই হলেও তুমি।

এখন যদি তুমি দূরে দূরে থাক তাহলে চলবে কিভাবে?তাদের এখন অনেক বয়স হয়েছে। আর তোমার আর পড়াশোনা না করলেও চলবে । আল্লাহর রহমতে তোমার শ্বশুরের তো কোন কিছুর অভাব নাই বাবা। এখন তুমি চিন্তাভাবনা করে আমাদের সামনে বলো । তোমার শেষ কথাটা আমরা শুনতে চাই।

-আমাকে পড়াশোনা করতে হবে আমি শুধু এইটুকুই বুঝি। আমি অন্য কিছু চিন্তা করতে পারছি। এসময় উঠে দাঁড়ায় সুমনের শাশুড়ী। বলে এইটা তোমার শেষ কথা হলে আমাদের শেষ কথা তুমি শুনে রাখ আমাদের মেয়ের সাথে তোমার সংসার চলবে না। আমরা বিকল্প চিন্তা করতে বাধ্য হবো।

এরকম আচমকা বক্তব্যে সুমন কোন কথা বলতে পারেনা। সে বুঝতে পারে আরো কিছুক্ষণ এখানে থাকলে ব্যাপার আরো খারাপ হতে পারে। তাই সে চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। তার মাথার উপর আকাশ ঘুরতে থাকে। পথভোলা পথিকের মত হাঁটতে থাকে যতদূর চোখ যায়।

সে ভাবতে থাকে যদি এই হয় শেষ ফল তাহলে কার জন্য আর কি হলো?তার সবকিছু এলোমেলো হতে থাকে। এখন সে কি করবে ভেবে পায়না। কোথায় যাবে পথ খুঁজে পায় না। তার সব পথই মনে হয় রুদ্ধ। সে কি ফিরে যাবে আবার আদি ঠিকানায় যেখানে একটি বাছানা একটি ঘর এখনো তার অপেক্ষায় আছে।

তার জন্মদাত্রী তার পথ চেয়ে আছে। সে যে ঘরটাতে থাকতো সে ঘরটাতে এখনো সে ফিরবে বলে আলো জ্বলে । তাহলে কেন আর এতদূর আসা!শুধুই কি কয়েক দিনের খেলা ?একটা ড্রামা?সে কি এখনই পিছু ফিরে যাবে?মাত্র দু'ঘন্টার মেঠোপথ। হাটতে হাটতে ইমন সদরের মাকর্েেটে চলে আসে কথন যে পাঁচ ছয় কিলোমিটার পেড়িয়ে আসলো সে বুঝতেই পারেনা । চায়ের স্টলে বসে চা খাচ্ছিল আর এলোমেলো ভাবছিল এমন সময় একটি ছেলে ডেকে বলে ভাই আপনার নাম কি সুমন ? হঠাৎ প্রশ্নে তার সম্বিৎ ফিরে।

সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই বলে ঐ কাপড়ের দোকানটায় আপনাকে একজন ডাকছে আপনার পরিচিত। -কিরে কেমন আছিস?তোর এই অবস্থা কেনো? সুমন সালাম দিয়ে দাঁড়ায় একটি কাঠের মূর্তির মত । কোন কথা বলতে পারেনা। যেন এখনই মাথাঘুরে পড়ে যাবে । বিউটি বুঝতে পারে ভয়ানক কিছু একটা হয়েছে।

তাই তিনি বলেন চল তোর সাথে কথা আছে। সুমন তাঁ পেছনে হাঁটতে থাকে। গ্রামের স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন সুমনের এবং সুমনকে অনেক পছন্দও করতেন । নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন। তিনি আগেই জেনেছেন সুমনের ইতিবৃত্ত।

টুকটাক প্রশ্ন আর ছোট উত্তরের মধ্যে তারা পথ চলতে থাকে। গোধূলীর রং মিলিয়ে আকাশে সুন্দর চাঁদ উঠে। ফসলের মাঠ থেকে শরীর জুড়ানো বাতাস উঠে আসে। সুমনের এমন একটা বাতাস খুবই দরকার ছিল। সুমন হঠাৎ বলে উঠে আপা আমি কিন্ত্ত বাড়ি যাবনা।

-ঠিক আছে তোদের বাড়িতে না যাস আমার বাড়িতে আয় আগে শোনি তোর হাল হাকিকত। তারা বিউটির বাড়িতে এসে পৌছে। হাত মুখ ধুয়ে এসে উটানে পাটি পেতে বসে তারপর টুকটাক গল্পো জুড়ে বসে। কিছুটা দূরেই সুমনের বাড়ি অথচ সে যেতে পারছে না। নিজের গ্রাম অথচ কি অপরিচিতই না লাগছে।

শুধু ম্যাডামের গলাটায় অনেক পরিচিত আগের সেই কথা বলার ভাব। আপন আপন। সুমন ভাবে ম্যাডামের মত মানুষই হয় না। -তারপর কি খবর পাকনা মিয়া কি খবর?এবার বলো তোমার কিচ্ছা। সুমনের গলায় কথা আটকে যায় সে অনেক কিছু বলতে চায় কিন্ত্ত কথা আসছে না।

-শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে বাড়ি ফিরছিস কবে ? সুমনের চোখ ছলছল করে উঠে তারপরও সে বলে আর বেশিদিন না। -তারমানে তুই বাড়ি ফিরছিস? -না আপা আমার বাড়ি ফেরা সম্ভব না। -আচ্ছা তুই কি বলবি কেনো এততাড়াতাড়ি ছোট বয়সে বিয়েটা করলি?মোটা অংকের টাকা পেয়েছিলি? -পয়সা টায়সা কিছু না ভালোলেগেছে তাই । একবন্ধুর সাথ তার মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তাকে দেখেছিলাম। সুমন দৃঢ়ভাবে উত্তর দেয়।

কিন্ত্ত তার চোখে পানি চলে আসে। কান্না যেন আর সামলিয়ে রাখা যাচ্ছেনা। এ অবস্থা দেখে ম্যাডাম কিছুটা বিব্রত। -তো এখন কি অবস্থা ?তোকে এমন লাগছে কেনো?তুই আমাকে সব বলতে পারিস। তুই বল আমি শুনছি।

সুমন যেন কূল পায়। সে সব কিছু খুলে বলে। সর্বশেষ পরিস্থিতি। কষ্টে ,ঘৃণায়, লজ্জায় সে এতদিন যেন মরেই গিয়েছিল। সবকিছু শুনে ম্যাডামের কণ্ঠে দৃঢ়তা প্রকাশ পায়।

তিনি বলেন -তোর বউ যদি তোকে পছন্দ করে ভালবাসে তাহলে তারা ইচ্ছে করলেও সম্পর্কটা ভাঙতে পারবে না। আর শ্বশুর শাশুড়ীর প্রতি কোন রাগ নিস না তারা যা করছে তোর বউয়ের নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা ভেবে করছে তুই কি তা চাস না? সুমন এ কথায় থ হয়ে থাকে। সে ভাবে কথাটাতো মিথ্যানা। -এখন তোর কাজ হলো যেভাবেই হোক তোর বউকে আস্বস্থ করা যে তুই পড়তে যাচ্ছিস। এটা কোন সমস্যা না।

সমস্যা তৈরী করছে তার মা বাবা। সুমন যেন অকূলে কূল পায়। বকুলের দিকটা সে ভুলেই গিয়েছিল । বকুল তাকে অনেক ভালবাসে এটা সে জানে। আর এটাও এখন বুঝতে পারছে বকুলকে বুঝাতে পারলে তারা কোনভাবেই কিছু করতে পারবে না।

-আর শোন একটা কথা তোকে বলি একটা জিনিস ভাঙ্গা অনেক সহজ কিন্ত্ত গড়া কঠিন। আমরা যারা দু'কলম শিখেছি আমরা ইচ্ছা করলেই যা কিছু তা করতে পারিনা । আমাদেরকে বিবেকের কাছে জবাব দিতে হয়। জীবনে যারা নিজের কাছে জবাব দিতে শিখে তারা কোন অপরাধ করতে পারেনা। আমিও চাই তোর শ্বশুর শাশুড়ী যে কারণে তোকে সন্দেহ করছে সেটা যেন মিথ্যে হয়।

চল এবার রাতের খাবার খাই। ঘরে চল। খাবার পর্ব শেষ হলে সুমন বলে আপা আমি চলে যাব। আজই একটা ব্যবস্থা করতে হবে। -সকালে যা রাতে এতদূর যাবি কি করে? -না আপ আমাকে আজই যেতে হবে।

আপনার সাথে দেখা না হলে আমি আজকে কি করতাম বুঝতে পারছি । আমার দজন্য দোয়া করবেন আপা। আপনার কথা আমি কোন দিন ভুলব না। আপনি সত্যি অনেক ভালো। -ভালো থাকিস তুইও মাঝে মাঝে জানাবি খবরাখবর।

আর পড়ালেখা ঠিকমতো করবি। ফিরে যাবার পথে সুমন তার বাড়ির কাছাকাছি এসে থমকে দাঁড়াল কিছুক্ষণের জন্য। ঐতো তার বাড়ি। তার ঘর। একটি প্রদীপ জ্বলছে।

সে ভাবে এখন কে থাকে আমার ঘরে? টুনটুনি এখন কি করছে ?সে ভালো আছে তো?টুনটুনির কথা মনে পড়তেই তার শরীরটা কেঁপে উঠল এতকাছে তবুও কতদূর!! চললেও চলতে পারে না চালালে কেমন হয়য?যারা পড়বেন অবশ্যই নিজ দায়িত্বে লেখার পর আমিও পড়ি নাই কি লেকছি। গরু খাইতে গেলাম।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.