shamseerbd@yahoo.com
গাড়ীতে আমরা চারজন। সুনসান নীরব রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছি। পুরো রাস্তায় অদ্ভুত একটা প্রশান্তি ছড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে ডানে মোড় নিয়ে গাছপালা শোভিত একটা গেট দিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকে গেলাম। অন্যরকম এক যাত্রা শুরু হল।
হাজারো গাছে ভরপুর চারপাশ। নুয়ে যেন কূর্নিশ করছে তারা। সারি সারি গাছের মাঝ দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, ঠিক সরাসরি সূর্যের আলো প্রবেশ না করলেনা আলোকিত চারপাশ। আগে দেখা কোন জায়গার সাথে মিল খুজে পাচ্ছিনা, অবাক হয়ে চারপাশ দেখছি মুগ্ধ চোখে। আমরা এগিয়ে চলি হাতছানি দিয়ে ডাকা প্রশান্তির মধ্য দিয়ে ।
একটা মোড় পেরিয়ে দেখা পেয়ে যায় সাগর সৈকতের। ছোট কিছু বাচ্চা বালিয়াড়িতে স্বপ্নের আঁকিবুঁকি করছে। সেখান থেকে আমরা আবার প্রশান্ত সবুজে প্ড়বেশ করি। কিছু মানুষজন দেখা যায়, এদিক ওদিক হেঁটে বেড়াচ্ছে সুখী সুখী ভাব সবার চোখে মুখে। গাড়ী সামনে এগিয়ে যাচ্ছে , এমন সময় ঘুমটা ভেঙ্গে গেল পাশের সিটে বসা বন্ধু জামিল এর ডাকে , যাত্রা বিরতি সিরাজগঞ্জের ফুডভিলেজে........
আমি, জামিল, দিদার আর তৌহিদ ছুটে চলেছি রংপুর অভিমুখে।
রংপুর যাওয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন কি আছে ঐখানে, কোন মানে নেই রংপুর যাবার। আমার কথা হল ৫০ এর অধিক জেলা ঘুরে ফেললাম আর রংপুর গেলামনা, ব্যাপারটা কেমন কেমন হয়ে গেলনা। আর না গেলে জানব কেমনে কি আছে। ইন্সট্যান্ট ডিসিশানে এই যাত্রা।
এ্যানথ্রাক্স এর শহরে মধ্যরাত্রিতে ভরপেট গরুর মাংস আর পরোটা খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পরলাম।
না অমন সুন্দর স্বপ্নটা আর ফিরে আসেনি, আমার দেখা সেরা স্বপ্নও বটে, যেটা আসলেই স্বপ্নের মতন !!!!
ভোর ছয়টায় রংপুর নেমে পড়লাম আরেক বিপদে। বাসে আমার সিটের পাশে একটা মোবাইল পরে থাকায় তুলে নিলাম হাতে। কেন যেন মনে হয়েছিল ওটা দিদারের। ওরটা ওর পকেটে থাকায় শুরু হল নতুন ভোগান্তি, এর মালিককে কই খুজে পাই, শুরু হল অপেক্ষার পালা, কখন মালিকের খেয়াল পরে। অবশেষে প্রায় আধাঘন্টা পর মালিকের খোজ পাওয়া গেলে, ফোনটা বাস কাউন্টারে রেখে আমরা দুটো রিক্সা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
চালককে বলে দিলাম ঘুরিয়ে দেখান রংপুর। পুরো শহরই মোটামুটি ঘুরে আমরা চলে গেলাম কার মাইকেল কলেজে, বিশাল ক্যাম্পাস।
গাছপালা ভরপুর মনোরম পরিবেশে সুন্দর ভোরটা কেটে গেল। রংপুর নেমেই টের পেয়েছিলাম শীতকালে এখানে কেমন ঠান্ডা পরে, কারন এ সময়েই ভোরে বেশ ভাল ঠান্ডা পরছিল।
প্রাতঃরাশ শেষে আমাদের গন্তব্য তাজহাট জমিদার বাড়ী ।
যেটা নব্বই এর দশকে হাইকোর্টের একটা বেঞ্চ হিসেবে কিছুদিন ব্যবহার হবার পর জাদুঘরে রুপান্তর করা হয়। ২৪টি কামরা সম্বলিত মার্বেল পাথরের ফ্লোরের এই বাড়ী। সংলগ্ন পুকুরগুলো ভর্তি আমাদের জাতীয়ফুল শাপলায়। পাশে অনেক গাছগাছালির বিশাল কালেকশন।
সেখান থেকে আমাদের যাত্রা বাঙ্গালী নারীর মুক্তির অগ্রদুত বেগম রোকেয়া শাখাওয়াৎ এর স্মৃতি বিজরীত পায়রাবন্দে ।
বেগম রোকেয়ার ভিটেমাটি ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক আগেই। সেখানে তৈরি হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকমপ্লেক্স, যেখানে বেকেএমই বিনামূল্যে পোশাকশিল্প শ্রমিকদের প্রশিক্ষন দিয়ে কর্মসংস্হানের ব্যবস্হা করে দেয়।
রংপুরের ভিন্নজগতের কথা শুনেছি অনেকবার, যাবার ইচ্ছাও ছিল। ব্যাটারি চালিত যানে করে আমরা হাজির হই ভিন্নজগতে। বিশাল জায়গা নিয়ে ব্যক্তি উদ্যেগে তৈরি এই এ্যামিউজমেন্ট পার্ক।
সারাদিন কাটানোর মতই একটা জায়গা। ভালো লাগবে গাছপালা শোভিত এই এলাকাটা, এখানেই দেখলাম "মুক্ত বিহঙ্গ" , স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরনে নির্মিত ভাস্কর্য, যেটা এই বিষয়ে নির্মিতগুলোর মাঝে সেরা মনে হল আমার ।
যাবার সময় এক বন্ধু বলে দিল রংপুর চিড়িয়াখানাটাও নাকি অনেক সুন্দর। হাতে যেহেতু সময় আছে...........তাই ওদিকটাও এক চক্কর দিয়ে আসলাম !!!
বানরের খাঁচার সামনেই জগতের সকল আনন্দ......
রাতে আবার ঢাকার পথে। স্বপ্নে দেখা সে প্রশান্ত বাগানে না ঘুরলেও একদিন চমৎকার ভাবে কাটানোর জন্য ঘুরে আসতে পারেন রংপুর।
আর সবচেয়ে বড় কথা হল প্রিয় বন্ধুরা সাথে থাকলে আসলে যেকোন জায়গায় ঘুরে আসা যায়- বন্ধুতা আর ভাললাগা যে আসলে সমার্থক !!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।