কথায় কথায় প্রশ্ন করি সেলিম মোর্শেদকে, “আপনি কি জানেন,পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুর গল্পটির নাম কি?” “কোনটা?”, পাল্টা জিগ্যেস করেন তিনি।
আমরা কোথাও আডডা দেওয়ার সস্তা জায়গা পাই না, পুরো রাজধানিতেই এই দশা, ফলে প্রায়ই আড্ডা দিতে চলে আসি এই চারুকলার বিপরীতে মোল্রার দোকানের পাশে সাহরোওয়ার্দি পার্কের উত্তর-পশ্চিম কোনাটিতে, যেখানে অনেকক্ষণ আপনমনে বা আড্ডায় কাটিয়ে দিলেও কেউ এসে বলার নাই, ‘ভাই ওঠেন, না হলে বিক্রিবাট্টা কিভাবে করবো!’ যেকোন হোটেলে বসলে আমরা কয়েকজন অল্পকিছু দিনের মধ্যেই ওয়েটার এবং ম্যানেজারের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠি। তাদের চেহারার ভাব দেখে বুঝতে পারি তা, যদিও তার ভাষাগত প্রকাশ থাকে না প্রায়ই। আর প্রায় সবসময়েই আড্তাডার ব্যয় বহন করেন সেলিম ভাই, নয়তো আজম। ছাড়া আমাদের পকেটে তেমন পয়সা নেই বলেই এই পার্কের কোনাটা পছন্দ করি।
বিশেষ করে আমি। আর দোকান এখানেও আছে, আছে দোকানদারও। কিন্তু কয়েকটা গাছ আর দুটা অশ্বথ এই খোলা জায়গাটায় দিনরাত ছায়া দেয়, আমাদেরকে বিনামূল্যে ছায়া দেয়, যদিও সন্ধ্যায় আমাদের আর ছায়ার দরকার নেই, আর আমরা সন্ধ্যায় এসে এখানে বসি। রাস্তার পাশে বয়ে যাওয়া ড্রেনের অল্প উঁচু দেয়ালটা আমরা লম্বা টুল হিসেবে ব্যবহার করি, এর মধ্যে দিয়ে পানি কখনই বয় না, ঝরাপাতায় ছাওয়া জায়গাটা খয়েরি হয়ে থাকে। আর ড্রেনটাও তাই।
একটু দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুজন, চারজন বা পাঁচ-সাতজন গোল হয়ে বা একপাশে বা পাশাপাশি বসে আড্ডা দিচ্ছে। এভাবে পার্কের গভীরে আড্ডা ক্রমশ ছড়িয়ে থাকে। কোথাও কোথাও দেখতে পাই একটা ছেলে একটা মেয়ে পাশাপাশি নিবিড় হয়ে আছে, আশপাশের আর সব মানুষ নিয়ে তাদের কোনভাবনা বা দ্বিধাও নেই। যুগল বলা মানায় না এমন কয়েকটা জোড় এমনই উন্মাদনায় আছে যে, বারবার একে অপরকে ধরে ঝাপটে চুমো খাচ্ছে। আমরা এরই মাঝে ড্রেনের দেয়ালকে চেয়ার হিসেবে ব্যবহার করি এবং গল্প জুড়ে দিই।
এবং আমাদের মাঝে কোন মেয়ে নেই। এ প্রসঙ্গে একদিন তপন বড়–য়ার প্রশ্ন তুলেছিলেন, “তোরা কি গে রে!” তিনি অবশ্য আমাদের আড্ডায় সাধারণত আসেনই না। অন্য জায়গায় মেতে থাকেন। একটু দূরে বসে থাকা এক বাউলের কণ্ঠ থেকে ছড়িয়ে পড়ে লালনের গান_সত্য কাজে কেউ নয় রাজি, সবই দেখি তা না না। বলা যায় আমরা কেউ গানের দিকে কান দেই না, আবার দেইও, কেননা আমাদের কথা একটু ধীর হয়ে পড়ে।
“আমরা পৃথিবীকে এভাবে দেখতে চাইনি কেউ”, একজন বলে। দীপ বলে উঠে, “এ কারণেই হয়তো আমরা এভাবে একসাথে আড্ডা দেই। ” জ্যাবিন তার স্বভাবসুলভ ঘাড় ত্যাড়া করে শব্দ চিবিয়ে চিবিয়ে ছুঁড়ে দেয় আমাদের মুখের উপর , “দেখেন, আমরা কিন্তু তবুও একে অপরকে বিশ্বাস করি না। ” “দূর, এ প্রসঙ্গ বাদ দেনতো”, বলে ওঠে দীপ। সে সেলিম ভাইকে খুবই পছন্দ করে, তার বিপদে আপদে আনন্দে সবসময়েই পাশে থাকে।
সেলিম ভাই তার বরাবরের আবেগ বহুল কণ্ঠে গমগমিয়ে উঠে, “আমার গল্প চাই সবই পড়–ক, কিন্তু অল্পলোকই পড়ে। আসলে আমি সচেতন মধ্যবিত্তের মধ্যে একটা অপরাধবোধ জাগিয়ে দিতে চাই, যা তার নিজের মুখ দেখতে সাহায্য করবে, দেখবে তার কতকিছু করা দরকার, কিভাবে আমার দেশের গরীব মানুষগুলো, যারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারা কি পরিমাণ নিষ্ঠুরতার ভেতর রয়েছে। চাই এই সচেতনতা তাদেরকে ধ্বস্ত করুক। সাধারণ মধ্যবিত্তরাতো আমার গল্প নিতেই পারবে না, কারণ এর ভেতর এদের নিজেদের যন্ত্রনাদায়ক ঘা সবচেয়ে বেশি প্রকাশ হয়ে পড়ে। কে নিজের বিরূপ চেহারা এতো পছন্দ করবে!” সেলিম ভাইয়ের কথার সাথে আমি যোগ করলাম, “সাধারণ মধ্যবিত্তরাই সবচেয়ে বেশি আয়না ঘৃণা করে অথচ তারাই তিনবেলা আয়নার কাছে যায়, যায় মুখ দেখতে নয়, মুখটা ঠিকঠাকভাবে ঢাকা আছে কিনা দেখতে এবং মুখের প্রকৃত রূপ পুরো ঢাকতে আর কি কি করা দরকার নিকেশ করতে, মুখ থেকে বিষাদের দ্বিধার, উদ্বেগের বিশ্বাসঘাতকতার যাবতীয় আত্মঘাতী চিহ্নাবলি চাপা দেয়ার কাজগুলো সারার জন্যই যায়।
মধ্যবিত্তের প্রকৃত হাসিটা আয়নার ভেতরেই পড়ে আছে, প্রচন্ড ব্যাক্তিগত হয়ে, আপনি তবু আয়নাঘেটে সেই চিহ্নের কণাটাও বের করতে পারবেন না। ” সেলিম মোর্শেদ মাথা ঝাঁকালেন, “ঠিক ঠিক। ” আমি হাসলাম একটু। দীপ বললো, “রাফি ঠিকই বলেছে। ” আজম বললো, “হ্যাঁ, তাইতো, তবে এ আর এমন নতুন কি?” আমি নিজেকেই একটা আধভাঙা উদাহরণ হিসেবে কথার ভেতর চালিয়ে দিলাম, “আমার গায়ের দিকে তাকান, সুন্দর এবং দামী একটা শার্ট, একটা প্যান্ট এবং মোটামুটি দামের একজোড়া চামড়ার স্যান্ডেল, দেখে কে বুঝবে আমি এখনো বেকার ঘুরছি, এবং আমি আসলে তিনবেলা ঠিকঠাক খেতে পাই না এবং এসব কাপড় চোপড় আমার ছোটভাই আমাকে কিনে দিয়েছে, যেনো তারা গরীব এটা লোকে না বোঝে এবং এর মধ্যে দিয়ে আমার আমাদের অভাব সংকট চাপা দেয়ার একটা করুণ প্রচেষ্টা আছে কিন্তু।
এটা অস্বীকারের মধ্যে কোন সমাধান বা কৃত্তিব কিছই আছে কি! তো একদিন, জুতা ছিড়ে গেলে আমি শাহবাগে স্পঞ্জের স্যান্ডেল পড়ে আসতে থাকলাম, আজম তা দেখে রেগে গেলো, আপনার শো আছে না, সেটা পড়ে আসবেন, স্যান্ডেল পড়লেন কেনো? ফকির সেজে থাকবেন না। তো বুঝলেন অবস্থা আমাদের, আত্মপ্রতারণার, আমাদের সামাজিক স্টেটাস। ” সেলিম মোরশেদ এর সাথে নিজের অবস্থা কিছুটা যোগ করে দিলেন, “আমিও তো কিছু করি না, থাকার মধ্যে যশোরের বাড়িটা তাও কয়েকজন মিলে, এভাবেই বেঁচে থাকা। আপনার ভাবি অনেকটা চালায় আমাকে, না হলে কি হতো একবার ভাবেন! না হলে সারাক্ষণ গল্প আর পড়াশোনা নিয়ে কি পড়ে থাকতে পারতাম! তো শুনি, আমার গল্প কি আজম পড়েছে?” আজম বললো, “আপনার সাথে কথা ছিলো, আপনি আমার কবিতাগুলো পড়বেন, তাহলেই আমি আপনার গল্প পড়বো, না হলে আমার কি লাভ বলেন, আপনি তো এখনো একটামাত্র কবিতাই পড়েছেন আমার, তাই না?”বলে হাসলো আজম, আহলো সেলিম ভাই, আমিও। দীপ কিছুই বললো না, তার মুখের অভিব্যাক্তি থেকেও কিছুই প্রকাশ পেলো না।
“আমি ঠিকই পড়ে নেবো আজম”, বললেন সেলিম মোরশেদ। “কিন্তু আমার গল্প দেখলেন তো আপনিও পড়েন না। ” আমি হাসলাম, ফান করলাম, যদিও এই ফান ততটা পান নয়, যতোটা নির্মম, আমাদের জন্য: “তো সেলিম ভাই যদি সবার জন্য পাঠ্য হয়ে উঠতে চায়, তা হলে তো মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাংলাবিভাগকে অনুরোধ জানানো উচিত। ” “আরে না, এরা আমাদের চিন্তাভাবনা থেকে একশ বছর পিছিয়ে আছে,” প্রতিবাদ করলেন সেলিম মোরশেদ, “কোন টেবু ভাঙার গল্প তারা কখনও পাঠসূচির অন্তর্ভুক্ত করবে না। ” আমি জানালাম, “আমরা যখন ক্লাশ নাইনে পড়তাম, তখন আমাদের বিজ্ঞান গ্র“পের জীববিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় চ্যাপ্টার ছিলো জীবদেহের গঠন বিষয়ে, সেখানে ‘কেন ছেলে বা মেয়ে হয়’ অংশটি ছিলো।
বায়োলজি ম্যাডামের অনুপস্থিতিতে ক্লাসে বাংলাস্যার এলে তাকে ‘এটা আজকে পাঠ হবে’ আমরা জানাই, তিনি ধমকে উঠেন এবং আমাদেরকে অন্য কোন চ্যাপ্টার দিতে বলেন, আমাদের পেছন থেকে একজন হেসে উঠে এবং স্যার তাকে ডেকে নিয়ে কান টেনে দেয় এবং পরদিন ম্যাডাম এলো, ম্যাডাম তো জানেনই তিনি আমাদেরকে কি পড়াবেন আজ, তাকে ঐ বিষয়ের পৃষ্ঠাটা খুলে টেবিলে এগিয়ে দিলে, তিনি এটা বেশি গুরত্বপূর্ণ নয়, পরীক্ষায় এখান থেকে সাধারণত প্রশ্ন আসে না বলে পরের চ্যাপটারে চলে যান। এ অংশটা ছিলো দ্বিতীয় চ্যাপ্টারটার শেষাংশ। ” আজম ফিক কের হেসে উঠলো এবং দীপ বললো, “আপনারা পোলাপানরাও বেশ ঠ্যাটা। ” সেলিম ভাই হাসলেন, আমিও হাসলাম, “এ অবস্থার পরিবর্তন এখনো হয়নি। আমাদের বুদ্ধিজীবি কিংবা রাজনীতিবিদরা মনে করেন সত্য কঠিন, এর মুখোমুখি শিশুদের হওয়া উচিত নয়, এগুলো তাদের মনকে বিকৃত করে ফেলবে, তাদেরকে সত্যের পৃথিবী থেকে বিযুক্ত রাখা দরকার, তাদেরকে যুদ্ধ, যৌনতার মতো ভয়াবহ বিষয়ে জ্ঞান দেয়া উচিত নয়, কেবল রূপকথা পড়ে তারা মনের রূপ বাড়াবে আর পৃথিবীর সৌন্দযর্, কোমলতা, সততা, বড় বড় স্বপ্ন দেখা, ইত্যাদিই শিখবে এবং অসততা, কদর্য, কাঠিন্য, বড় বড় ব্যর্থতা, যুদ্ধ, রক্তপাত ইত্যাদি সম্পর্কে তাদের কোমল মনে কোন আঘাত না দেয়াই ভাল।
তাই এসব বিষয়ে কোন ধরণের আলোচনা, গল্প পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। আপনি কি জানেন, আমাদের কোন বাংলা অভিধান নাই?” সেলিম মোর্শেদ: “না, আছে তো, আমি কয়েকটা ডিকশোনারি ব্যবহার করি। ” “কিন্তু কোনটাই পূর্ণাঙ্গ বাংলা অভিধান নয়, প্রত্যেকটাই মধ্যবিত্তের প্রয়োজনের মাপে বানানো শ্রেণীগত ভাষার অভিধান। দেখবেন এসব ডিকশনারীতে পাছামারা, তোর মায়রে বাপ, ইত্যদি শব্দ বা বাগবিধি নেই, সাধারণমানুষের ব্যবহারের আঞ্চলিক শব্দাবলি বা বাগবিধির যেগুলো তাদের কাছে অসংস্কৃত, মানুষ দিনরাত ব্যবহার করলেও তাদের মতে সেগুলো ভাষার শব্দ বা বাগবিধি নয়, সেগুলো পরিত্যাজ্য বা অপভাষার আলাদা অভিধানে স্থান পেতে পারে, একই অভিধানে নয়, কয়েকটা পেলেও দেখবেন এদেরকে স্লেং হিসেবে শুদ্র বানিয়ে রাখা। তো বুঝলেন, বাংলাভাষার অভিধানই নেই।
আর আপনার গল্প, বলেন, কিভাবে আমরা পাঠ্যবইয়ে অন্তুর্ভুক্ত করবো? আপনি সুযোগ পেলেই মানুষের মধ্যে সরাসরি না হয়, আড়াল আবডালে যৌনতার প্রচলভাঙা কাজকারবারে ঠেসে রাখেন, মনে হয় মনুষের জীবনে যৌনতা অন্যসববিষয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ” “না না, সমগুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু সমাজটা যেহেতু এসব ঢেকে রাখে এবং প্রচলিত গল্পবাজরাও যেখানে সুযোগ পেলে একে এড়িয়ে বা আকারে ইংগিতে এর ঝামেলা চুকাতে চায় সেখানে আমি এসব বিষয় সামনে তুলে ধরি, আমাকে এইসব বিষয় বিষেশভাবে উপস্থাপন করতে হয় আমার গল্পে, এটা একটু বেশি জায়গা দখল করে ফেলে, মনে হয় যৌনতা বেশি গুরুত্বপূণর্, আসলে আমার দেশের সাহিত্যিক প্রেক্ষাপট আমাকে বাধ্য করে এভাবে উপস্থাপনে এবং তখন স্বাভাবিকটাই মনে হয় অতিরিক্ত বলা। আসলে তা নয়। আর যদি কদাচিত্ কোথাও বাহুল্য মনে হয়, সেটা আসলে আমার একার দায় নয়, এই সাহিত্য সমাজের এবং এ দেশের চলতি সংস্কৃতির দায়। ”সেলিম ভাই বেশ আবেগী অথচ দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন এসব কথা।
তার কথার প্রতিধ্বনি করলাম আমি, “ভারসাম্যহীন সমাজের বিপরীতে ভারসাম্যহীন সাহিত্যবস্তুই অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্পাদিত হয়। না হলে প্রচল ভারসাম্য অর্জিত হয় না। আপনি কি মনে করেন, প্রকৃত ভারসাম্যপূর্ণ কোন সমাজে সাহিত্যবস্তু বলে কিছু থাকবে!” আরও বললাম, “আমাদের বুদ্ধিজীবিরা এতো প্রখর প্রহরী, দেখুন, তবু ক্লাস ফোরের বাংলা বইয়ে একটা গল্প রয়েছে, গল্পটা তাদের এই সর্তকতা এড়িয়ে কিভাবে পাঠ্যসূচিভুক্ত হলো, ভাবুন তো!" সেলিম মোর্শেদ বললেন, "কোন গল্পটা?" আমি বললাম, “বাঁশিওলা পুরো নির্দোষ একটি প্রজন্মকে ভুলিয়ে নিয়ে গেলো আর পুরোশহরটা প্রজন্মশুন্য, ইতিহাসশূন্য করে ফেললো, বুঝেন ঠ্যালা, শিশুগুলো মরে গেলো না কি অন্যকোন রাজ্যের পত্তন ঘটালো তার কিছুই আমরা জানতে পারি না। যদি ঘটাতো সম্ভবত কোনদিন অন্যকোন গল্পে বা ইতিহাসে এর একটা ইঙ্গিত অন্তত পাওয়া যেতো, পাইনি,” বললাম, “মনে হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুর গল্প, এমন নিষ্ঠুর গল্প আমি এখনো দ্বিতীয়টি পড়ি নি, আপনি কি পড়েছেন?” সেলিম মোর্শেদ বললেন, “তাইতো তাইতো, এর আগে এভাবে ভাবিনি তো। ” আরো জানালেন, “কোন সাক্ষাতকারে আমি অবশ্যই বলে দেবো পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম গল্পটি নিঃসন্দেহে হ্যামিলনের বাঁশিওলা।
” আমি প্রস্লাতাব কলাম, “চাইলে এও বলতে পারেন যে, এ গল্প পড়লে শিশুদের কোমল মনে আঘাত লাগে না। ” সামনে দেখতে পেলাম একজোড়া ছেলেমেয়ে এখন তাদের পার্কের দাম্পত্য উপভোগ শেষে কলহ চালিয়ে যাচ্ছে, হয়তো প্রায় বিকেলে ঘরে ফিরে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে আর এখানে পৌঁছে বাড়ে প্রেম, আর বড়জোর চুম্বনে সমাপ্ত হয় বা ঝগড়ায়, ‘তোমার সমস্যা কত আর লুকিয়ে রাখা যায় বলো’, রেগে চেঁচিয়ে ওঠে মেয়েটি ও চলে যায়, ছেলেটিকে ফেলে, বাসনার সাথে জৈবিকতার সাথে সামাজিকতার আর অর্থনীতির রেশারেশি। ছেলেটি পিছু পিছু গিয়ে ফিরে আসে বিষণ্ন হয়ে, একটু আগের এতোসব চুম্বনের আনন্দ কোথায় বাস্প হয়ে গেলো যেনো, দাঁড়িয়ে থাকে চায়ের দোকানের সামনে এসে ছেলেটা, এবং একটা সিগারেট ধরায়, নিচের দিকে চেয়ে কী ভাবে কে জানে, এরপর পায়চারী তার থামে না। তবু শুক্রাণোর মতো আমাদের আকাঙ্ক্ষারকণাগুলো তীব্র ছুটে যায় ডিম্বাণুর মতো এক প্রিয় পৃথিবীর দিকে, তার বুকে আছড়ে পড়বে বলে, সম্ভাবনার ডাকে লক্ষ আত্মাহুতির বিনিময়ে একটা শুভ বিস্ফোরণের শব্দ নিশ্চয় শুনতে পাবো বলে।
আমরা চায়ের দোকানে পঞ্চমবারের মতো চা দিতে বলি।
এবং ভাবি বাড়ি ফেরা উচিত, রাত অনেক হয়ে এসেছে, এই আমরা, মার্চের এক সন্ধ্যার আড্ডায় ফুটে উঠা আমাদের মুখ চিবুকের নানান রেখার কিছুটা: কেমন যেনো কৌতুক ও কান্নায় মাখা। আমরা অন্যদিনের মতো আজ্ও আবার বাসায় ফিরি।
২৮.০৩.২০০৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।