আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকাকে হয়ত কোনদিন সেভাবেই দেখা হবে।



চার অথবা পাচ বছর আগে ঢাকার রাস্তায় চলাচল করার সময় কে বা কাহারা ভেবেছিল আজকে এতই যানজট আর বিড়ম্বনা সহ্য করতে হবে। অফিসে যেতে আসতে দুই-দুই চার ঘন্টা, সাথে অফিসের ভিতর আটঘন্টা, গেল বারটি ঘন্টা। আট ঘন্টা ঘুম। ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাবার তোরজোর প্রস্তুতি , তাওতো ঘন্টাখানেকের মামলা। তবে কি যানজট অফিস আর ঘুমে বাকী জীবণটা কাটবে?? নিজের সময়টা বলে কি কিছু থাকবেনা? এখনই এ অবস্থা, দু বছর পর কি আবন্থা হবে কে জানে....কিন্তু কার কারণে এত যানজট, কেইবা দায়ী?চলুন দেখি’’’ আসলে ঢাকার আকারটি লম্বাটে ধরণের, ঢাকার পূর্ব দিক এবং পশ্চিম অংশ জলাবদ্ধ , পূর্বে বালু , দক্ষিণে বুড়িগংগা, পশ্চিমে বিল।

এই অংশগুলো নরম মাটিতে গড়া; যা ঢাকাকে এই তিন দিকে বাড়িয়ে নিতে বাধা দিয়েছে সবসময়। তাই ঢাকা বেড়েছে সুবিধামত উত্তরে। আসলে আগের দিনে প্রচলিত নেৌ-ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার জন্য আর নিরাপত্তার খাতিরে ঢাকার জন্য এমন স্থান নির্বাচন। লম্বাটে এই শহরে গড়া গেছে মাত্র তিনটি মূল সড়ক বা আটেরিয়াল, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত। সাথে হাতেগোনা কয়েকটি অ্যভেনিউ যারা আটেরিয়ালগুলোকে লিংক্ড করেছে।

নতুন রাস্তা করার জায়গা খুজে পা্ওয়া কঠিন। সম্রাট জাহাঙ্গীর যদি সেসময় ঢাকার জন্য অন্য জায়গা বেছে নিতেন ভাল হতো। সম্রাট জাহাঙ্গীর তাই বর্তমান ঢাকার জ্যামের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। নেতা নাকি ভাই আপনি? চারশ বছর আগে যে লোকটা মরে গেল তার উপর আমাদের নেতাদের মত দোষ চাপায়ে ট্রাফিক জ্যাম সমস্যার সমাধান করতে পারবেন?’’’’ আচ্ছা জাহাঙ্গীর সাহেবকে না হয় ছাড়া গেল, কিন্তু আবাসিক এলাকায় সপিং কমপ্লেক্স, ভার্সিটি, অফিস যারা বানাল তাদের দায়িত্বজ্ঞান কতটুকু? হাতের কাছে সব থাকলে সুবিধা হয় বটে। কিন্তু এই সুবিধাটুকুর জন্য আমরা এখন যে কষ্ট উপভোগ করছি তা বুঝছি না।

শহর পরিকল্পনায় ভুমির ব্যবহার (Land Use)বলে একটা কথা আছে। যার অর্থ হলো পুরো শহরে আবাসিক এলাকা, কমার্শিয়াল এলাকা, গুরুত্বপূর্ন অফিস, আদালত পাড়া, ভার্সিটি এলাকার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা জায়গা জমি বরাদ্ধ থাকবে। আবাসিক এলাকায় বানিজ্যিক কাজ চলবে না, যেমন উল্টোটা সত্য। যেমন ধরুন ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার কথা। এর ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হয় এর যথেচ্ছ বানিজ্যিকি করণের জন্য; এখানে প্রাইভেট ভার্সিটি, হাসপাতাল, সপিং প্লাজা করার আগে কেই ভাবেনি এর সুয়েরেজ ব্যাবস্থা, পানি-সরবরাহ , সড়ক নেটওয়ার্ক নিদিষ্ট সংখ্যক পরিবারের কথা বিবেচনায় রেখে করা, অসংখ্য ছাত্র, রোগী বা চাকুরীজীবিদের জন্য নয়।

আবার শহরের ভিতর তেজগায় বিস্কুটের কারখানা, লালবাগের জেলখানা, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে বিমানবন্দর এখনি সরানো যায়। কেবল শহরের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলেই কান্টনমেন্ট, বিডিআর দপ্তর শহরে রাখার কথা যুক্তি পায়। এদিকে ঢাকার রাস্তাগুলো দেখলে মনে হবে গাড়ীর একটা বিশাল শো-রুম। একটি প্রাইভেট কারে একজন করে স্কুলগামী বাচ্চা। এই একজনের জন্য যে জায়গা লাগে , এমন তিনটি গাড়ীর সমান জায়গায় ৫০জনের একটি বাস চলে।

বাংলাদেশে গাড়ী কিনলে রাস্তা ফ্রী। যেখান বাইরে অনেক দেশে গাড়ী রাস্তায় বের হলেই টাকা গুনতে হয়, পার্কিং চার্জ অনেক বেশী, তাই গাড়ী রাস্তায় বের করলে তিনবার চিন্তা করতে হয়। আবার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সেক্টরে ইনসেন্টিভ থাকায় সুবিধা বেশী, সাথে সাথে জনপ্রিয়তাও। আবার দেশের দক্ষিণ অন্ঞল থেকে উত্তর বা পূর্বান্ঞলে যেতে আপনাকে ঢাকার একেবারে মাঝে দিয়ে যেতে হবে যাতে ট্রাফিক জ্যামে আপনি অবদান রাখতে পারেন। কমিউটারদের জন্য বাইপাস অথবা রিং-রোড থাকা উচিত বটে।

সেখানে আবার জায়গার প্রাপ্যতার কথা আসছে। হকাররা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সহানুভুতির জায়গায় থাকলেও এরা আসলে শহরমুখী ছিন্নমূল মানুষ, ক্রেতারাও অধিকাংশ তাই। যানজট সহনীয় মাত্রায় রাখত হলে হকারমুক্ত ফুটপাতের বিকল্প নেই। শুধু ট্রাফিক জ্যাম কেন, ঢাকাকে বাচাতে হলে শহরমুখী মানুষের স্রোত বন্ধ করা চাই, সেজন্য যাই বা বিকেন্দ্রীকরণ করতে লাগুকনা কেন। তা আর একটু হইলেই আমরা প্রায় ঢাকাকে যানজট মুক্ত করে ফেলেছিলাম।

ঢাকাকে হয়ত কোনদিন সেভাবেই দেখা হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.