আন্দোলন কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগরীকে ঘিরে এবার এক মহাপরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে কর্মসূচি সমন্বয়ের। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারা দেশের গ্রামাঞ্চলের মতো ঢাকাও এবার ফুঁসে উঠবে বলে আশা করছেন নেতারা। আর ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট নেতাদের পদ-পদবির ক্ষেত্রেও রদবদল হতে পারে। ফলে ঢাকার নেতাদের সামনে আগামী দিনের কর্মসূচিগুলো অগ্নিপরীক্ষার শামিল।
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের ঢাকাভিত্তিক কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের এবার সরাসরি মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি নগরীর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদেরও আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, যে করেই হোক এবার ঢাকায় আন্দোলন সফল করতেই হবে। প্রয়োজনে এবার তিনি নিজেই মাঠে নামার কথাও ভাবছেন বেগম খালেদা জিয়া।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, এবার যারা ঢাকায় আন্দোলন সফল করতে ব্যর্থ হবেন তাদের পদ-পদবি কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন দলীয় নেত্রী। ইতোমধ্যেই তিনি কেন্দ্রীয় চার নেতাসহ ঢাকা মহানগরী বিএনপির পাঁচজন নেতাকে শোকজও করেছেন।
জানতে চেয়েছেন ঢাকার ১৫টি আসনের মনোনয়ন প্রার্থী নেতারা বসে বসে কি করছেন? গুলশানের এম এ কাইয়ুম, মিরপুরের এস এ খালেকসহ ১৫ আসনের সাবেক এমপি, মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সদস্য সচিবসহ যুগ্ম-আহ্বায়করা কি করছেন? তাদের সবাইকেই এবার সতর্ক করে দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, যারা এবার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবেন তারা পদ-পদবি ছেড়ে দিয়ে যারা কাজ করতে চান তাদের সুযোগ করে দেবেন। অন্যথায় দলের পক্ষ থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কিছুতেই সরকারকে আর কোনো রকমের ছাড় দেওয়া হবে না। বিরোধী দলসহ জনগণকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের খায়েশ মিটিয়ে দিতে হবে। আন্দোলন জোরদার করলে কোনো ষড়যন্ত্রই আর কাজে আসবে না।
দলের যেসব নেতাকে বিএনপি ছাড়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা রকমের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে হাইকমান্ডের সাফ কথা হলো- যারা যাওয়ার তাদের কেউ আটকে রাখবে না, বরং এর মাধ্যমে দল থেকে 'ভাইরাস' দূর হবে। আর এই 'ভাইরাস' যদি আওয়ামী লীগ গ্রহণ করে তো করবে, তাতে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই। আর এসব ভাইরাস নিয়ে বিএনপি চিন্তিতও নয়। এ ছাড়াও বিএনপির যেসব নেতা তলে তলে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন তাদের গতিবিধির ব্যাপারেও বিএনপি চেয়ারপারসনের একটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে এমন দুই একজন রয়েছেন, যারা চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ভিত্তিক নেতৃত্বে আছেন।
কিছু দিন আগেও তাদের মধ্যে ক্ষমতায় চলে আসার একটি ভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল। এমনকি কে কোন মন্ত্রণালয়ে যাবেন তলে তলে সেই ক্যাবিনেটের একটি ছকও তারা তৈরি করে রেখেছেন। অথচ এদের কেউই আন্দোলনে মোটেও সক্রিয় নন। হরতালের মতো কর্মসূচি থাকলে এই গ্রুপের নেতারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে অজ্ঞাত স্থানে গিয়ে আরাম-আয়েশে দিন কাটিয়ে হরতাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলশান অফিসে এসে হাজির হয়ে নেতৃত্ব নেন। মাঠের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এদের কোনো যোগাযোগ নেই।
এদের ব্যাপারেও চরম ক্ষুব্ধ বেগম খালেদা জিয়া। আর দুয়েক সপ্তাহ দেখার পর এদের ব্যাপারেও হাইকমান্ড নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা যায়। অন্যদিকে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব কেন গোপনে পালিয়ে আছেন, চলমান আন্দোলনে তার ভূমিকা কি? তার মতো অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের কার কি ভূমিকা তারও হিসাব চেয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশে আন্দোলনে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করলেও রাজধানী ঢাকা নিষ্প্রভ অবস্থায় থাকায় চরম ক্ষুব্ধ বেগম খালেদা জিয়া সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজধানীতে আন্দোলন চাঙ্গা করতে এলাকা নির্ধারণ করে দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ও দলের ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুস সালাম ও ঢাকার (ডেমরা) সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
একই সঙ্গে ঢাকার আসনগুলোতে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থী ছিলেন তাদেরও সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে আন্দোলনের মাঠে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে সামনের কর্মসূচিগুলো কেন্দ্রীয় ও মহানগরসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের জন্য এটি একটি অগি্নপরীক্ষা হিসেবে উপনীত হয়েছে। আন্দোলনের পারফরমেন্সের এই পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হতে পারবেন না তাদের যার যার পদ-পদবি থেকে রদবদল করার সিদ্ধান্তও নিয়ে রেখেছেন বেগম খালেদা জিয়া। গত পাঁচ বছর ঘরে বসে থাকা সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাদের সম্পর্কে উত্তীর্ণ হতে পারবেন না নেতাদের মনোভাব হলো কাউকে নতুন বউয়ের মতো 'ধান-দুর্বা' দিয়ে ঘরে তোলার মতো সময় বিএনপির নেই। তবে চলমান আন্দোলনে তাদের কেউ যদি দলের পক্ষে শক্ত ভূমিকা পালনের মাধ্যমে নিজের অবস্থান করে নিতে পারেন, আর এলাকায় যদি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে- অর্থাৎ নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার মতো জনপ্রিয়তা থাকে, তবে সেসব সংস্কারপন্থি নেতার ক্ষেত্রে দল নির্বাচনের সময় নতুন করে বিবেচনা করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।