আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।
প্রবল বৃষ্টিতে রুক্ষ প্রকৃতি অবশেষে মুখ তুলে মানুষের পানে চেয়েছে । ভেজা রাস্তায় একটি অসাবধান হলেই স্লিপ কেটে রক্তারক্তি কান্ড ঘটে যেতে পারে বিধায় মানুষ সচেতনভাবে পা ফেলে । অন্যান্য দিনের চাইতেও গাড়িঘোড়া তুলনামূলকভাবে কম চলছে বিধায় ট্র্যাফিকের অবস্থা শোচনীয় আকার ধারণ করেনি । গরম গরম জিলাপী ভাজা হচ্ছে ।
বিক্রেতাওয়ালারা মনের খুশীতে ভাজছে । জানে বৃষ্টি হবার পর যেই মৃদু ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে পাবলিকের এটাই তাদের চুম্বকের মত দোকানে টেনে নিয়ে আসছে এবং টেনে নিয়ে আসবে । মানুষজন পটাপট তড়িৎ গতিতে ঢুকছে আর খেয়ে তৃপ্ত মনে বের হয়ে যাচ্ছে । পাড়ার ছিঁচকে মাস্তানেরা এখনো পা ফেলেনি । হয়তো একটু পর তোলা নিতে দোকানে দোকানে দল বেঁধে ঢুকবে হয়তো ঢুকবেনা ।
গতকাল নিজেদের মধ্যে খুনোখুনিতে তিনজন মারাত্মক আহত হওয়ায় আজকে তাদের গা ঢাকা দেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে । ফলে এইদিকে হয়তো আসবেনা ।
প্রধান সড়কের কিছু দূরে এক নির্জন বাড়ি । বাড়ির কিছু সামনেই ঝোপ-ঝাড়ে ভর্তি । কার্বলিক এসিড নিয়মিত দেওয়া হয় ঘরগুলোতে সেই কারণে সাপের ভয় নেই ।
তবে পাতায় পাতায় সাপ হেঁটে চলে গেলে হিসহিস শব্দ শোনা যায় । চারপাশ নিঃস্তব্ধতায় পরিপূর্ণ বলে সেই শব্দেও গায়ে কাঁপুনী ধরিয়ে দেয় । প্রবল বাতাস হলে আবার গাছের পাতাগুলো আমোদে দুলতে থাকে সেই দৃশ্যও মনোহর । আরবান মেট্রোপলিটনে এমন দৃশ্য সন্দেহাতীতভাবেই অকল্পনীয় এবং সেই কারণেই প্রার্থিত । কলাপাতার শরীরে শরীরে বৃষ্টির ফোঁটার স্পর্শে পাতাগুলো যেন নিজেকে মেলে ধরেছে নতুন সৃষ্টির আনন্দে উদ্ভাসিত লেখকের মত ।
নিয়মমাফিক বাড়িটির জানালার শিক ধরে বসে থাকে অবস্থান করা মানুষটি । কেউ একজন এসে টাইমমত হাতে একটি পত্রিকা দিয়ে যায় । পরিচিত একজনকে বলা আছে বিধায় সে সন্ধ্যাবেলা এসে একটি দৈনিক পত্রিকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে যায় । মানুষটি ক্ষীণ আলোতে রিডিং গ্লাস পরে নিয়ে পড়তে শুরু করে । হেডলাইনের গার্বেজের উপর কোনভাবে চোখ বুলিয়ে ভেতরের পাতাগুলো দেখতে থাকলে একসময় পৃষ্ঠা নম্বর পাঁচের ডানের নীচের দিকের একটি খবরের উপর চোখ পড়ে ।
খবরটি দেখে মনের ভেতর কি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় বোঝা যায়না । প্রথমবার পড়ে , দ্বিতীয়বার দেখে নিয়ে পত্রিকাটি ভাঁজ করে রেখে দেয় । বাইরে এখন গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে বৃষ্টির গতি একটু বেড়েছে । মানুষটি তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনা । বৃষ্টির মধ্যে ক্রাচে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায় ।
ধীরে ধীরে বাড়ির বাইরে এসে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে বয়সের কথা ভুলে গিয়েই । নিজেকে শুদ্ধ করতে চাওয়ার তীব্র আকুতিতে সমর্পণ করে বৃষ্টির কাছে । খবরটিতে কি ছিলো জানা যায়না তবে পড়ে মনে হয়েছিলো অনেকের কথা । আচ্ছা কে হতে পারে সে ? নিকারাগুয়ার সান্দিনিস্তা ? নাকি ভিক্ষুক বেশে ক্রান্তিকালের দ্বিপ্রহরে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে থাকা অসীম চ্যাটার্জী ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।