Miles to go before I sleep..... ব্লগার ডটু রাসেল, নেমেসিস/শয়তান এবং সুব্রতকে গ্রেফতার করেছে, সকাল বেলা উঠে তাদের ছবি দেখলাম। আমি একজন গোঁড়া আস্তিক মানুষ, সব জায়গায়, রাস্তা-ঘাট-স্টেশান-এয়ারপোর্টে, সবার আগে নামাজের জায়গা খুঁজি বলে কাছের মানুষেরাও অনেক সময় বিরক্ত হয়। কিন্তু পত্রিকায় এদের ছবি দেখে আমার এত খারাপ লেগেছে বলে বুঝাতে পারবনা। আমি কোনমতেই ইমোশনাল লোক নই, কিন্তু আজ এত বেশী খারাপ লাগছে! আমি আস্তিক-নাস্তিক তর্কও করতে আসি নি, আমি শুধু আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ করতে এসেছি।
এদের মধ্যে নেমেসিস/শয়তানের সাথে আমার বেশ খাতির ছিল একসময়, পরে ২০০৮ সালের দিকে নাস্তিক-আস্তিক ক্যাচাল হয়েছিল, সেসব অন্য ব্যাপার।
সেসময় শয়তান (আগে নিক ছিল মদনকুমার) আমার উপর হতাশ হয়েছিলেন, তাঁর হতাশার কারন ভুল ছিল বলে মনে করলেও এবং তিনি এর পরে বেশ কয়েকবার আমার নামে একটা ভুল অভিযোগ করলেও ব্যক্তিগতভাবে তাঁর প্রতি আমার ভাললাগা ছিল, এখনও আছে। তিনি সজ্জন লোক, মধ্যপন্থী সংশয়বাদী, উগ্রবাদি কোনদিনই নয়। মাইল্ড ব্যক্তিত্বরা অনেক সময়ই উগ্রবাদীদের ছায়াতলে থেকে বা আউটকাস্ট হওয়ার ভয়ে হয়ত একটু-আধটু উগ্রবাদীদের কাজেকর্মে নীরব সম্মতি দেয়, উনিও মাঝে মাঝে সেরকম করেছিলেন, কিন্তু কোন ডেফিনিশানেই তিনি উগ্র নন বলে মনে করি। তাঁকে গ্রেফতার হতে দেখে খুবই অবাক হয়েছি। সরকারের ভোটের রাজনীতির কাছে নিরপরাধ ব্লগাররা বলি হচ্ছেন।
ডটু রাসেল সেই ২০০৮ সালের দিকে শেষ উগ্রবাদী লেখা লিখেছিলেন। এর পরে তাঁর কোন লেখাতেই আমি উগ্রবাদী কিছু পাইনি। উনার মত এত কিন অবজার্ভেশান-সম্পন্ন ব্লগার বাংলা ব্লগে হাতে গুনা। বাংলা ব্লগে কারো অনেস্টি নিয়ে আমাকে রেকমেন্ড করতে বললে আমি সবার আগে ডটু রাসেলের নাম নিব। উনি ইসলাম বিরোধী হলেও ইসলামকে উনার মত করে খুব কম লোকেই বুঝেছেন।
আমি উনার সাথে প্রায়ই একমত হই না, ফেইসবুকে দেশে রিসার্চ কার্যকলাপ বাড়ানো-কমানো নিয়ে জাফর ইকবালের এক কলামের প্রেক্ষিতে তাঁর সাথে একবার বেশ কথা কাটাকাটি হয়েছিল। তাছাড়া ২০০৮ সালে উনার একটা উগ্রবাদী লেখায় প্রতিবাদও করেছিলাম। কিন্তু সেসবই ব্যক্তিগত দ্বিমত, উনার মত এত অসাধারণ ব্লগার আমার চোখে খুব কমই পড়েছে।
অন্য ব্লগার সুব্রতকে আমি চিনি না, ছবি দেখে বাচ্চা ছেলে মনে হয়েছে। আমি সবসময়ই উগ্রাবাদী নাস্তিকদের বিপক্ষে এদের সাথে নানা ঝামেলা হয়েছে নানাসময় আমার, অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে, নাস্তিক ব্লগারদের সার্কেলে আমার নামে বেশ কিছু অসত্য কথাও প্রচলিত আছে, আমার এর আগের পোস্টও নাস্তিকদেরকে বিদ্রুপ করে লেখা।
কিন্তু কোন অবস্থাতেই কোন ব্লগারের বাকস্বাধীনতা হরণ হোক সেটা চাই না, এমনকি উগ্রবাদী হলেও না। শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি সরাসরি হুমকির কারন হলেই কাউকে গ্রেফতার করা যেতে পারে। ডটু রাসেল বা শয়তান, কাউকেই কোনভাবেই উগ্রবাদী মনে করছি না।
আস্তিক ব্লগাররা, আপনাদের হয়েছেটা কি? আপনারা নবীর আদর্শ লালন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন, কিন্তু তায়েফের ময়দানের কথা ভুলে যান। মহানবী (সাঃ)-কে সারা শরীর পাথর নিক্ষেপ করে শরীর রক্তাক্ত করেছিল, পাগল বলে বাচ্চা ছেলেদের পাথর নিক্ষেপ করার জন্য লেলিয়ে দিয়েছিল।
সারা শরীরের রক্ত বেয়ে পাায়ের জুতায় আটকে গিয়েছিল, জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে গিয়েছিল, রক্তে তাঁর পবিত্র পা জুতার সাথে লেগে গিয়েছিল, তিনি পা জুতা থেকে টেনে আলাদা করতে পারছিলেন না। এই অবস্থায়ও তিনি তায়েফের লোকদেরকে বদদোয়া করেন নি। বলেছিলেন "এদের জ্ঞান দাও প্রভু, এদের ক্ষমা কর। " মক্কার কাফেররা তাঁকে এবং তাঁর সাহাবাদেরকে এত বেশী কষ্ট দেওয়ার পরও তাদেরকে মক্কা বিজয়ের পর ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিন বছর মুসলমান এবং বনু হাশিম গোত্রকে মক্কার কাফিররা একঘরে করে রেখেছিল, না খেতে পেরে মায়ের বুক শুকিয়ে যেত, বাচ্চাদের স্তন পান করানোর জন্যও তাদের বুকে দুধ থাকত না, তাঁরা নবীর কাছে এসে বলত "আমরা কি করব।
"।
মহানবীর চোখ বেয়ে পানি পড়ত কারন কোন জবাব তাঁর কাছে ছিল না। এরকম কঠিন অত্যাচার মানব ইতিহাসে কেউ কোনদিন দেখেনি, মহানবী (সাঃ)-এর অপরাধ ছিল তিনি বলেছিলেন তোমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড় আর সফলকাম হয়ে যাও। অথচ তিনি মক্কা বিজয়ের পর সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন। ইসলামের সব নবীদের কমন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানুষের প্রতি তাঁদের অপরিসীম ভালবাসা।
মানুষের প্রতি কি মায়া, কি মমতা তাঁরা অনুভব করতেন সেটা আমরা কল্পনাই করতে পারিনা। তাই সবচেয়ে বড় নবীঅলা গুন হচ্ছে মানুষের জন্য প্রচন্ড ভালবাসা অনুভব করা। আপনি যদি সেটা পারেন তাহলেই আপনি নবীকে ভালবাসেন, আপনি নবীর কাছে যেতে পারবেন। আমার নবী সমস্ত সমালোচনার উর্ধ্বে, মানুষ যদি তাঁর মহত্ব বুঝতে না পারে সেটা সে মানুষেরই অক্ষমতা, কার সাধ্য আছে সমালোচনা করে নবীর মর্যাদা হানি করার? নবীর মর্যাদা কি কোন পৃথিবীর মানুষ দিয়েছে? নবীর মর্যাদা হানি করার ক্ষমতা পৃথিবীর মানুষের আছে? নবীর মর্যাদা আমার প্রভু দিয়েছে, নবীর মর্যাদা হানি করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। নাস্তিকরা বুঝে না, নবীকে বুঝার মত যে ধরনের মনোগঠন দরকার, যে ধরনের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দরকার, সে তাদের নেই, তাই নবীর সমালোচনা বা কুৎসা করলে আমরা তাদের জন্য বড়জোর করুণা অনুভব করতে পারি, কোনমতেই তাদের সমালোচনা বা কুৎসা দ্বারা আমরা প্রভাবিত হতে পারি না।
আজকে ডটু রাসেল, নেমেসিস আর সুব্রতদের গ্রেফতার দেখে এতই মনখারাপ হয়েছে, আমার আস্তিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ আপনারা মহানবীর আদর্শ ধারণ করুন, ব্লগারদের গ্রেফতারের বিরুদ্ধ প্রতিবাদী হোন। আমার নবী কোনদিনই তাঁর জীবদ্দশাই তাঁকে সমালোচনা বা তাঁর বিরুদ্ধে কূৎসা রটনার জন্য কাউকে শাস্তি দেন নি। আমরা তাঁর উম্মত, আমরা কিভাবে নবীর উদাহরণ থাকা সত্বেও তা ভঙ্গ করতে পারি? আমার নবী বিশ্বের সর্বকালের সেরা মানব, কোন ধরণের অনুচিৎ সমালোচনা বা কূৎসা তাঁর মর্যাদা হানি করতে পারে না। গত চৌদ্দশ বছরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বই যার বিরুদ্ধে রচিত হয়েছে, অরিয়েন্টালিস্টরা গড়ে গত দেড়শ বছরে প্রতি মিনিটেই নবীর বিরুদ্ধে বই লিখেছে, কিন্তু আজ পশ্চিমে মানুষ কোরান পড়ে, নবীর জীবনী পড়ে কাতারে কাতারে মুসলমান হচ্ছে, মসজিদগুলোর ডেমগ্রাফি পাল্টে যাচ্ছে, আল্লাহ পশ্চিমাদের থেকেই ইসলামের দাওয়াত শুরু করে দিয়েছেন। ৯/১১-এর পরে ইসলামকে নিয়ে এত কূটসা রটনার পর মানুষের মুসলমান হওয়ার হার অনেক বেড়ে গিয়েছে, মানুষ কি কোনদিন ইসলামের অবমাননা করতে পারে? মানুষ কি কোনদিন নবীর মর্যাদা হানি করতে পারবে? আল্লাহ বলেছেন,
"Remember how the Unbelievers plotted against thee, to keep thee in bonds, or slay thee, or get thee out (of thy home). They plot and plan, and Allah too plans; but the best of planners is Allah." (৮:৩০)
তাই আমার আস্তিক ভাইদের প্রতি হাতজোড়ে অনুরোধ করছি আপনারা প্রতিবাদী হোন, আমাদের যারা মনে কষ্ট দিয়েছে, আমরা তাদের জন্যই আমাদের মন উজার করে প্রতিবাদ করব।
আমাদের নবীকে যারা অপমান করতে চেয়েছে, আমরা সেই মহানবীর অনুসারী হয়েই তাদের যাতে অপমান না হয় সেজন্য লড়ব। আমাদের ধর্মকে যারা খারাপ ভেবেছে, আমরা সে ধর্মের অনুসারী হয়েই তাদের পাশে দাড়াব।
"আমার এ কূল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কূল বাঁধি,
যে গেছে বুকে আঘাত করিয়া তার লাগি আমি কাঁদি।
যে মোরে দিয়েছে বিষে-ভরা বাণ,
আমি দেই তারে বুকভরা গান,
কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম-ভর,-
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর। "
আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার সামর্থ দিন! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।