Real knowledge is the knowledge about "The Real", or at least, that which leads to "The Real" - rest is just conjecture!
এর আগের পর্বটায় আমরা কথা বলছিলাম “ফাস্টফুড কালচারের” সমস্যা নিয়ে। সাধারণ যুক্তিতে মনে হতে পারে যে, আমার উপার্জন যদি হালাল হয় - আর যে মাংস দিয়ে বার্গার বা সসেজ বানানো হচ্ছে, তা যদি হালাল হয়ে থাকে - তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আমরা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সমস্যাগুলো নিয়ে গত সংখ্যাগুলোয় আলোচনা করেছি! আসুন আমরা চতুর্থ তথা শেষ সমস্যাটা আজ ভেবে দেখি:
৪) কিছুদিন আগে আমার আপনজন একজন মা, তার মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন ‘O’-level পরীক্ষার হলে। মেয়ের পরীক্ষা শেষে বাড়ী ফিরে এসে আমাকে বলছিলেন যে, পরীক্ষা দিতে আসা ছেলে-মেয়েগুলোকে (বিশেষত ছেলেগুলোকে) দেখে তার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল - তার অবচেতন মনে কোথাও একটা কিছু খটকা লাগছিল - অথচ, তিনি তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারছিলেন না, কেন তার অস্বস্তি লাগছিল। পরে তিনি বোঝেন যে, পরীক্ষা দিতে আসা ছেলেগুলো হয় plump (বা নাদুস-নুদুস) অথবা obess (বা স্থূলকায়) দেখে তার অস্বস্তি হচ্ছিল। এর আগে নিজের ছেলে বা তার ভাগ্নেকে নিয়ে তিনি যখন এস,এস,সি পরীক্ষার প্রথম দিনে হলে গিয়েছেন - তখন আমাদের দেশের ঐ বয়সের ছেলেরা গতানুগতিক দেখতে যেমন হয়, অর্থাৎ রোগা পটকা - পরীক্ষা দিতে আসা ছেলেগুলোকে তেমনই দেখেছেন।
অথচ, ‘O’-level পরীক্ষার হলে একটা বিশেষ শ্রেণী থেকে আসা ছেলেমেয়েগুলোকে দেখে, তাদের আমাদের সন্তান বলে মনে হচ্ছিল না - যেন কোন ভিন গ্রহবাসী মনে হচ্ছিল। তার মেয়ে, (আলহামদুলিল্লাহ্) স্কুলের শিক্ষার বাইরে কোন প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে না পড়ে ‘O’-level দিয়ে থাকলেও, এ ব্যাপারে সে সত্যিই এক বিরল প্রজাতি। ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলের উপরের ক্লাসে পড়া ৯৯% ছেলেমেয়েই প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়ে। প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে যাওয়া এবং ঢাকার কোন ‘অভিজাত’ ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলের উপরের ক্লাসে অধ্যয়নরত কোন একটি ছেলের একমাসের পড়াশোনার খরচ অনায়াসে ৩০,০০০/- হতে পারে। মাননীয় পাঠক! কোন সৎ আমলার কথা বাদই দিলাম, মোটামুটি সৎ কোন মাঝারি শ্রেণীর ব্যবসায়ীর জন্যও ব্যাপারটা কত দুঃসাধ্য, সেটা অনুধাবন করতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু ‘বাৎসরিক’ আয় ৩৫,০০০ টাকার মত। আমার তো মনে হয় দুর্নীতি সংক্রান্ত যে কোন তদন্ত এসব ইংরেজী মিডিয়াম স্কুল সূত্র থেকেই শুরু হতে পারে। যাহোক্, একথা তাহলে নিরাপদেই ধরে নেয়া যায় যে, দেশের স্বনামধন্য ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা সন্তান পাঠান, তাদের অধিকাংশই, বালজাকের সেই বিখ্যাত বাণী: “Behind every fortune there is a crime” মোতাবেক অসৎ, দুশ্চরিত্র, জনসম্পদ আত্মসাতকারী ও সুবিধাবাদী। তাই আমাদের সর্ব-সাম্প্রতিক “ঘোড়ারোগের” একটি - ‘ফাস্টফুড-প্রীতি’ নিঃসন্দেহে তাদেরই বেশী মানায় এবং তাদের সন্তানরাই সে সব বেশী afford করতে পারে। এজন্যই পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশের একটি - বাংলাদেশের - এই বিশেষ শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা মেদবাহুল্য বা obesity সমস্যায় ভোগে।
কুফফার-শ্রেষ্ঠ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “অতিশয় স্থূলতা” বা obesity একটা জাতীয় রোগ হতেই পারে, কারণ সে দেশের নাগরিকেরা পৃথিবীর জনসংখ্যার ৫% হলেও, তারা পৃথিবীর সম্পদের ৬০% ভোগ করে থাকে এবং সেদেশের ছেলেমেয়েরা একদিনে গড়ে ২২বার খাবারের সংস্পর্শে আসে - বলতে পারেন গবাদি পশুর মত সব সময়ই তাদের মুখ নড়তে থাকে। কিন্তু এশিয়ার অপেক্ষাকৃত গরীব দেশগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে “বার্গার-সংস্কৃতি” রফতানী করাতে, এসব দেশেও obesity, এক জাতীয় সমস্যার রূপ ধারণ করছে। এই তো সেদিন, ‘এশিয়ার নতুন প্রজন্মের মাঝে “অতিশয় স্থূলতা” সমস্যাকে’ প্রচ্ছদে স্থান দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিকী। প্রচ্ছদের ছবিটা ছিল কতিপয় অতিশয় স্থূলকায়া চীনা বালিকার/তরুণীর - কমব্যাট জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় তারা কুচকাওয়াজরত - বুঝিবা তারা গণচীনের সামরিক বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যা। যে চীন, অন্নের সংস্থান করার মুখের সংখ্যা সীমিত রাখতে - পরিবার প্রতি মাত্র একটি সন্তানের আইন পাশ করতে পারে, সেখানে “অতিশয় স্থূলতা” বা obesity একটা সমস্যা হওয়াটা নিয়তির কি নির্মম এক পরিহাস! বহির্বিশ্বের কাছে সত্যিকার অর্থে নিজেদের উন্মুক্ত করার দেড় দশকের মধ্যেই, একদিকে অন্য অনেক কিছুর বেসরকারীকরণের সাথে সাথে দুর্নীতির যেমন ফ্রি-স্টাইল বেসরকারীকরণ ঘটেছে, তেমনি ঐ দেশের সংরক্ষিত বাজার উন্মুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাংস্কৃতিক-প্যাকেজ’ আমদানির জন্য।
বলা আবশ্যক যে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা গণচীনের বিশাল বাজারে জেঁকে বসা অন্যতম প্রধান ব্যবসায় হচ্ছে ‘ফাস্টফুডের’ ব্যবসায় - আর সেই সুবাদে তাদের এই “অতিশয় স্থূলতার” সমস্যা।
উপরে আলোচিত খাওয়া-দাওয়া বিষয়ক ব্যাপারগুলো সম্বন্ধে ইসলামের নবী (সা.) কি বলেছেন বা তিনি কি মনে করতেন, আজ আমরা হয়তো তা আর মনেও করতে পারি না। তা না হলে মোল্লা/মৌলবীদের সাথে বা ইসলামজীবীদের সাথে, দাওয়াত খাওয়া বা ভুরিভোজনের এমন নিবিড় সম্পর্ক কি থাকতে পারতো? রোজার মাসে, রোজা ভাঙ্গার পরে খাবারের মহোৎসবে আত্মনিয়োগ করে আমরা কি আমাদের ওজন বাড়াতে পারতাম?? আমরা তো কেবল লম্বা কুর্তার ঝুলে নবীর সুন্নত দেখতে পাই! আমরা কি জানি যে, অতিরিক্ত খাওয়াকে নবী(সা.) কাফিরের বৈশিষ্ট্য বলে বর্ণনা করেছেন?? আমি নীচে দুটো হাদীস তুলে দিচ্ছি, যেগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেবে যে, আমাদের নবী(সা.) অতিরিক্ত খাওয়া দাওয়াকে কত অপছন্দ করতেন:
# Sahih Al-Bukhari HadithHadith 7.305 Narrated by Nafi
Ibn 'Umar never used to take his meal unless a poor man was called to eat with him. One day I brought a poor man to eat with him, the man ate too much, whereupon Ibn 'Umar said, "O Nafi'! Don't let this man enter my house, for I heard the Prophet saying, 'A believer eats in one intestine (is satisfied with a little food), and a kafir (unbeliever) eats in seven intestines (eats much food).' "
উপরে বর্ণিত এই হাদীসে রাসূল(সা.) বলেছেন যে, একজন বিশ্বাসী এক পেটে খায় - অর্থাৎ অল্প খাবারে সন্তুষ্ট থাকে। অথচ, একজন কাফির সাত পেটে খায় - অর্থাৎ, তার অনেক খেতে হয়। উপর্যুক্ত হাদীসের বর্ণনা করতে গিয়ে স্কলাররা বলেন যে, আখেরাতে বিশ্বাস নেই বলেই, কাফির পৃথিবী থেকে ভোগ-বিলাস, সুখ-স্বাচ্ছন্দ এবং ঐশ্বর্য-সম্পদ সম্ভাব্য সর্বাধিক আহরণ করার জন্য মরীয়া হয়ে ওঠে - তারই প্রতিফলন ঘটে তার ‘খাই খাই’ মনোভাবে ও আচরণে।
##Sahih Al-Bukhari HadithHadith 3.819 Narrated by Zahdam bin Mudrab
I heard Imran bin Husain saying, "The Prophet said, 'The best people are those living in my generation, then those coming after them, and then those coming after (the second generation).' " Imran said "I do not know whether the Prophet mentioned two or three generations after your present generation. The Prophet added, 'There will be some people after you, who will be dishonest and will not be trustworthy and will give witness (evidences) without being asked to give witness, and will vow but will not fulfill their vows, and fatness will appear among them."
দ্বিতীয় হাদীসটিতে দেখুন, নবী (সা.) বলছেন যে, প্রথম তিন প্রজন্মের মুসলিমদের পরেই, কিছু মানুষ অসৎ ও অবিশ্বস্ত হবে - তারা মিথ্যা সাক্ষী দেবে এবং প্রতিজ্ঞা করে তা রক্ষা করবে না। আর এর সাথে সাথেই আরো যে ‘খারাপত্ব’ মানুষের মাঝে দেখা দেবে বলে তিনি বলেছেন, সেটাকে সহজ বাংলায় বলতে চাইলে বলতে হবে যে, মানুষের মাঝে ‘মেদ-ভূঁড়ি’ দেখা দেবে বলে তিনি ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন! পাঠক, ভেবে দেখুন! আল্লাহ্-প্রদত্ত অসাধারণ দৈব-দৃষ্টিগুণে, খারাপ ব্যাপারগুলোর সাথে ‘মেদ-ভুঁড়ি’ বা ‘স্থূলত্বকে’ তিনি কি সুন্দর সম্পৃক্ত করে গেছেন - প্রায় দেড় হাজার বছর পরে আজকের আলোচনার প্রস্তাবনায় আমরা যা দেখানোর চেষ্টা করলাম এতক্ষণ ধরে।
মাননীয় পাঠক! আমাদের আলোচনার প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি আমরা। অক্টোপাসের যেমন অনেক কয়টি শুঁড় বা tentacles রয়েছে, তেমনি কুফরের যে দানব মুসলিম উম্মাহকে আজ আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে এবং ক্রমাগত নিষ্পেষিত করে চলেছে, তারও অনেক ক’টি শুঁড় রয়েছে। বহু শুঁড় বিশিষ্ট কুফরের এই দানবকে আসলে হত্যা করে সম্পূর্ণ পরাজিত করতে হবে - তা না হলে এর একটি শুঁড়কে কেটে, এর কাছ থেকে মুক্তি পাবার কোন উপায় নেই।
তবু আমি চেষ্টা করেছি ‘কুফরি-কালচারের’ বহুমাত্রার বিপদের একটি বিপদকে অন্তত পাঠকের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে। আমি জানি আপনি ‘আকাশ-সংস্কৃতির’ আগ্রাসনের বিহিত না করে, কেবল “ফাস্টফুড কালচার” ত্যাগ করে বেশীদূর অগ্রসর হতে পারবেন না। তেমনি ধরুন আপনি আকাশ সংস্কৃতি বর্জন করলেন কিন্তু কুফফারের শিক্ষা ব্যবস্থায় ডুবে রইলেন - আপনি কি দ্বীন কায়েম করতে পারবেন ? পারবেন না! আপনাকে বুঝতে হবে যে, দ্বীন ইসলামের মতই কুফরও হচ্ছে একটা integrated system এবং integrated whole বা পরিপূর্ণ ব্যবস্থা - বলা যায় ইসলামের ‘এন্টি-থেসিস’। তাই সেই ব্যবস্থার হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে সেটাকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করতে হবে - খানিকটা ত্যাগ করে লাভ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।