আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ও বাংলাদেশ...

চোখের আলো যেখানে কালো মনের আলো সেখানে আলোকিত...তাই আলোকিত মানুষ দেখার আশায় এই খানে আগমন....

মানুষ জন্মগতভাবে জ্ঞান নিয়ে জন্মেনা। অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, চিন্তা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে সে জ্ঞান অর্জন করে। জ্ঞানার্জন না করলে বা করার সুযোগ না পেলে সে অজ্ঞই থেকে যায়। পশু জ্ঞান নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। মহান প্রভু আল্লাহ পাক জন্মগত বা প্রাকৃতিকভাবেই জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা তাদের প্রদান করেন।

সুতরাং জ্ঞানার্জন করেই মানুষকে মানুষের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে হয়। জ্ঞানার্জন না করলে তার অবস্থান হয় পশুর চাইতেও নিচে। ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বোঝানো হয় কিছু নির্দিষ্ট প্রথা বা প্রতিষ্ঠানকে ধর্ম বা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে থেকে পরিচালনা করা। ধর্মীয় প্রবণতাকে মানুষের ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ রেখে সমাজ জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে আল্লাহ ও রাসূলের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার নামই ধর্মনিরপেক্ষতা। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ধর্মকে পরিত্যাগ করাই এর লক্ষ্য ।

অনেকে এইটাকে বলে থাকেন ধর্মহীনতা কিংবা ধর্ম বিরোধিতা, বাস্তবে ঠিক তা নয়, এটার মানে হল আমার ব্যাক্তিজীবনে শুধু বিবাহ, নামাজে, রোজা ইত্যাদিতে ধর্মকে সীমাবদ্ধরাখা; পারিবারিক, সামাজিক,রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মকে দূরে রাখা। রাজনৈতিক ব্যবহারের দিক থেকে বলা হয়, ধর্মনিরপেক্ষতা হল ধর্ম এবং রাষ্ট্রকে পৃথক করার আন্দোলন,যাতে ধর্মভিত্তিক আইনের বদলে সাধারণ আইন জারি এবং সকল প্রকার ধর্মীয় ভেদাভেদ মুক্ত সমাজ গড়ার আহবান জানানো হয়। প্রকৃতপক্ষে সেকুলারিজম অর্থে উপমহাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা ব্যবহার করা হয় না। উপমহাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা হল, ব্যাক্তির ধর্ম থাকবে তবে রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকবে না। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের মতে ধর্ম নিতান্তই একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার।

দু’ বা ততোধিক মানুষের সকল প্রকার পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণে ধর্মকে অনধিকার প্রবেশ করতে দেয়া চলে না। কেননা সমাজ জীবনে ধর্মের প্রভাব সম্পূর্ণ প্রগতি বিরোধী এবং প্রতিক্রিয়াশীলতার পরিচায়ক। মার্টিন লূথারের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘আপোষ আন্দোলন’ নামে খ্যাত সেই প্রস্তাব ছিল এরকম "ধর্ম মানুষের ব্যক্তিতগত জীবনে সীমাবদ্ধ থাকুক এবং মানুষের ধর্মীয় দিকের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা চার্চের হাতে থাকুক। কিন্তু সমাজের পার্থিব জীবনের সকল দিকের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত থাকবে এবং পার্থিব কোন বিষয়েই চার্চের কোন প্রাধান্য থাকবে না । অবশ্য রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দকে চার্চের নিকটই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবার শপথ গ্রহণ করতে হবে।

” কিন্তু বেশি দিন যায়নি এর অপমৃত্য ঘটেছে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ইতিহাস পাঠ করে কারো এ ধারণা করা উচিত নয় যে, পনের শতাব্দীর পূর্বে কোন কালেই এ মতবাদ দুনিয়ার প্রচলিত ছিল না। প্রকৃতপক্ষে পূর্ণাঙ্গ ধর্মের সাথে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের লড়াই চিরন্তন। যখনই আল্লাহর নিকট থেকে প্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান মানব সমাজে কায়েম করার উদ্দেশ্যে নবী ও রাসূলগণ আওয়াজ তুলেছেন তখনই শাসক শ্রেণীর পক্ষ থেকে নানা অজুহাতে প্রবল বিরোধিতা হয়েছে । ইব্রাহীম (আ) এর সময় নমরুদ ও মূসা (আ) এর সময় ফিরআউন কঠোরভাবে পূর্ণাঙ্গ ধর্মের বিরোধিতা করেছে।

অথচ তারা আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসাবে স্বীকার করত। ধর্মকে কোন সময়ই তারা অস্বীকার করেনি। নমরুদের দরাবরে রাজ পুরোহিত ছিল ইব্রাহীম (আ) এর পিতা আযর। আল্লাহকে ও ধর্মকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে পরিচালক শক্তি হিসাবে গ্রহণ করতে তারা কিছুতেই রাজী ছিলনা । সুতরাং আধুনিক পরিভাষায় তাদেরকেও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীই বলতে হবে।

হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর যুগে আবু লাহাব এবং আবু জেহেল ধর্মনিরপেক্ষতাদীই ছিল । মুসলমান হিসাবে এর অবস্তান দেখি: ব্যক্তি জীবনে ধর্মীয় বিধান মেনে চলা এবং সমাজ জীবনকে ধর্মের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার মতবাদ অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক । যারা এ মতবাদের প্রচারক তারা ব্যক্তি জীবনেও ধর্মের বন্ধন স্বীকার করতে রাজী হয় না। “ধর্ম যদি ব্যক্তিগত ব্যাপার বলেই স্বীকার কর তাহলে তোমরা ব্যক্তি জীবনেও ধর্মকে মেনে চলো না কেন?” বর্তমানে বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলেতে গিয়ে আমাদের মূর্খ প্রধানমন্ত্রী বার বার একটা কোরআনের আয়াতের কথা বলেন "তোমাদের দীন তোমাদের জন্য এবং আমার দীন আমার জন্য"। প্রথম প্রশ্ন হল উনি ধর্মনিরপেক্ষতা প্রমানের জন্য রাষ্টের প্রধানমন্ত্রী হয়ে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের উপমা দিলেন কেন? এটা কি ধর্মনিরপেক্ষতা? দ্বিতীয় কথা হলে কোরআনের ঐ আয়াত কি আসলে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে নাকি ধর্মীয় স্বাধীনতার এবং সর্বক্ষেত্রে ধর্মের স্বাধীন ব্যবাহারের কথা বলে? চলুন দেখা যাক আসল ঘটনা।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন , কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললো : আপনি শুধু আমাদের একটি কথা মেনে নেবেন --- আমাদের উপাস্যদের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকবেন। এ প্রস্তাবটি আপনার পছন্দ না হলে আমরা আর একটি প্রস্তাব পেশ করছি। এ প্রস্তাবে আপনার লাভ এবং আমাদেরও লাভ। রসূলুল্লাহ (সা) জিজ্ঞেস করেন , সেটি কি ? কুরাইশরা বলল: এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদাত করবেন এবং আমরাও এক বছর আপনার উপাস্যদের ইবাদাত করবো। ইবনে আব্বাসের (রা) অন্য একটি রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে , কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললো :“ হে মুহাম্মাদ ! যদি তুমি আমাদের উপাস্য মুর্তিগুলোকে চুম্বন করো তাহলে আমরা তোমার মাবুদের ইবাদাত করবো।

” একথায় এই সূরাটি নাযিল হয়। ( আবদ ইবনে হুমাইদ ) "বলে দাও , হে কাফেররা ৷আমি তাদের ইবাদাত করি না যাদের ইবাদাত তোমরা করো৷আর না তোমরা তার ইবাদাত করো যার ইবাদাত আমি করি না৷আর না আমি তাদের ইবাদাত করবো যাদের ইবাদাত তোমরা করে আসছো৷আর না তোমরা তার ইবাদাত করবে যার ইবাদাত আমি করি ৷তোমাদের দীন তোমাদের জন্য এবং আমার দীন আমার জন্য ৷" সহজে বলা যায় আমার দ্বীন আলাদা এবং তোমাদের দ্বীন আলাদা ৷ আমি তোমাদের মাবুদদের পূজা - উপাসনা - বন্দেগী করি না এবং তোমরা ও আমার মাবুদের পূজা - উপাসনা বন্দেগী কর না। এইখানে ধর্মনিরপেক্ষতা তথা রাষ্টীয় জীবনে ধর্ম না রাখার কথ বলা হয় নাই, বরং বলা হয়েছে ধর্মের পক্ষে থাকার কথা, সবাই নিজ নিজ ধর্মের পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (১৮-১০-২০১০) সোমবার তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের বলেছেন, সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আদালতের রায় অনুযায়ী সংবিধানকে পুনর্বিন্যস্ত করার জন্য সরকার, জাতীয় সংসদে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই, সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করবে। কেননা, এর মধ্য দিয়ে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা ফেরত আসবে।

প্রধানমন্ত্রী অতঃপর তার সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন – তারা যেন জনগণকে বুঝিয়ে বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃপ্রবর্তনের মধ্য দিয়ে ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ হবে না! ইসলামপন্থী দলগুলো তো নয়ই। এটা কি স্ববিরোধীতা নয়? রাষ্ট ষদি ধর্মনিরপেক্ষই হয় কেন ধর্মীয় অনুষ্টানে রাষ্টপ্রধানরা বানী দেন? কেননা রাষ্টের তো কোন ধর্ম নেই? রাষ্ট ষদি ধর্মনিরপেক্ষই হয় তাহলে রাষ্টীয় তথ্যে ধর্মীয় পরিচয় কেন দিতে হয় যেমন সরকারী চাকুরীতে উল্লেখ করতে হয়? রাষ্ট ষদি ধর্মনিরপেক্ষই হয় তাহলে রাষ্টীয় সংবিধানে কোন একটা ধর্মের কথা উল্লেখ থাকে কেমন করে? আসলে ধর্মনিপেক্ষতা বলতে যা বুজায়, তা কখনো আমাদের দেশে চালু করবে না কেউ, আওয়ামীলীগ ও একথা ভাল জানেন যে উনারা এইটা চালু করতে পারবে না কারন ভোটের জন্য উনারা আবার গিয়ে না বিপদে পড়ে যায়, উনাদের নেত্রীরই অভ্যাস আছে ধর্মকে ব্যাবহার করার, ১৯৯৬ সালে উনি তজবি আর বোরকা-হিজাব পড়ে গিয়েছিল ভোট চাইতে। অতএব উনি কথায় বললে ও যখন যেটা সুবিধা হয় ক্ষমতায় যাবার জন্য কিং ক্ষমতায় ঠিকে থাকার জন্য ঐটাই করবেন আর হয়ত ঐটাকেই ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে চালাই দিবেন। সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ আসলে চালু করা বর্তমান যুগে কোন মুসলিম দেশে অসম্ভব যার নমুনা তুরষ্ক। একজন মুসলামান হিসাবে রাষ্টের সর্বক্ষেত্রে ধর্মের ব্যবাহার নিশ্চিত করা ফরজ, তাইতো রাসুল (সাঃ) মক্কায় ইসলামী রাষ্ট কায়েম করতে না পেরে মদিনায় হিজরত করেছিলেন এবং মদিনাথেকে শক্তি সংগ্রহ করে আবার মক্কায় এসে ইসলামী রাষ্ট প্রতিষ্টা করেছিলেন।

পবিত্র কোরআনে এর ঘোষনা দেয়া হয়েছে আর কোরআন মানা সকল মুসলামানের জন্য ফরজ। সুরা আল-মায়েদাহ ৪৪ নং আয়াত-"আমি তাওরাত নাযিল করেছি৷ তাতে ছিল পথ নির্দেশ ও আলো৷ সমস্ত নবী, যারা মুসলিম ছিল, সে অনুযায়ী এ ইহুদী হয়ে যাওয়া লোকদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা করতো৷ আর তাদেরকে আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এবং তারা ছিল এর রক্ষনাবেক্ষনকারী৷ কাজেই তোমরা মানুষকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় করো এবং সামান্য তুচ্ছ মূল্যের বিনিময়ে আমার আয়াত বিক্রি করা পরিহার করো৷ আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী যারা ফায়সালা করে না তারাই কাফের৷" এইখানে শেষে বলা হল "আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী যারা ফায়সালা করে না তারাই কাফের৷" সুরা আল-মায়েদাহ ৪৫ নং আয়াত-"আমি এই গ্রন্হে তাদের জন্য এ বিধান লিখে দিয়েছিলাম যে প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং সব রকমের যখমের জন্য সমপর্যায়ের বদলা৷ তারপর যে ব্যক্তি ঐ শাস্তি সাদকা করে দেবে তা তার জন্য কাফ্‌ফারায় পরিণত হবে৷ আর যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না তারাই জালেম৷" এইখানে শাস্তির কিছু বিধান সহ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা যে করে না তাকে জালেম বলা হয়েছে। উপরোক্ত আয়াতে এটাই প্রমান যে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করা ফরজ আর না করলে সে কাফের কিংবা জালেম। ৪৫ নং আয়াতে সে শাস্তির বিধান দেয়া আছে সেটা কি ব্যাক্তিগত শাস্তি? এই শাস্তি অবশ্যই রাষ্টকে দিতে হেব অর্থাৎ রাষ্টকে কোরআনের বিধান অনুসায়ী শাস্তি দিতে হবে। তাহলে ধর্মকে পারিবারিক জীবনে সীমাবদ্ধ রাখা চলবে না, অর্থাৎ ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া চলবে না।

[পোষ্টের বেশিরভাগ তথ্য সংগৃহীত, কোন ভুল তথ্য থাকলে সংশোধন করে দিল উপকৃত হব। ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.