আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ (ষষ্ঠ পর্ব)

সবাইকে সাথে নিয়ে এগুতে চাই।

ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ সকল মানুষের জন্য মহা বিপজ্জনক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ফলে মানুষ প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হতে বাধ্য। তদুপরি ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় সুবিধাবাদ, গোত্রীয় লাভ ক্ষতি, বর্ণগত, দেশগত ও এলাকাগত সংকীর্ণতা বিশ্বমানবতাকে যে জটিল ব্যধিতে নিমজ্জিত করছে তা আমরা বাস্তবেই দেখতে পাচ্ছি। আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে যে মহাশক্তির যোগান দিয়েছে তা একমাত্র স্বার্থপর মূল্যবোধের ফলেই মানবজাতির অকল্যাণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। আজকের বিশ্বে পৃথিবীর পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্টের আশংকা দেখা দিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী গ্রীন হাউজ ইফেক্ট এর প্রচারণা চলছে ব্যাপকভাবে। একদিকে প্রচারণা অন্যদিকে পারমাণবিক বোমা সহ মারাত্মক অস্ত্রের চলছে যথেচ্ছ ব্যবহার। মরণব্যাধি এইডস, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু সহ নিত্য নতুন,রোগের প্রদুর্ভাবে বিশ্ববাসী আতংকগ্রস্থ। কিন্তু এর চাইতেও মারাত্মক-ভয়াবহ হচ্ছেঃ মানবজাতির আল্লাহর হুকুমের লংঘন-অশ্লীলতা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, মদ-জুয়া, জেনা ব্যভিচার মারামারি হানাহানি ইত্যাদি পাপজনিত ইবলিসী অপতৎপরতা। যার ফলে বিশ্বসমাজের ভারসাম্য আজ ধ্বংসম্মুখ।

সুতরাং ধর্মের প্রভাবকে পরিত্যাগ করে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত মানবজাতির ধ্বংসের পথই প্রশস্ত করে চলেছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমে এরশাদ করেন - وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِي هَذَا الْقُرْآنِ مِن كُلِّ مَثَلٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ قُرآنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِي عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ “আমি এ কুরআনে মানুষের জন্যে সব দৃষ্টান্তই বর্ণনা করেছি যাতে তারা অনুধাবন করে; আরবী ভাষায় এ কুরআন বক্রতামুক্ত যাতে তারা সাবধান হয়ে চলে। ”(যুমার -২৭,২৮)। সূরা তাওবার ১২৬ নং আয়াতে আল্লাহপাক উল্লেখ করেছেন, أَوَلاَ يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ فِي كُلِّ عَامٍ مَّرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ لاَ يَتُوبُونَ وَلاَ هُمْ يَذَّكَّرُونَ “তারা কি দেখে না যে, তারা প্রতি বছর একবার কিংবা দু‘বার কোন না কোন বিপদে পতিত হয়ে থাকে? তথাপী তারা তাওবা করে না এবং বিপদ থেকে উপদেশও গ্রহণ করে না। ” পবিত্র কুরআনে পৃথিবীর সফল ও ব্যর্থ মানবগোষ্ঠীর দৃষ্টান্ত বিবৃত করেছেন।

যা থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল মানুষই দীক্ষা নিয়ে চলতে পারে। এ পৃথিবীতে যখনই কোন জনপদের বাসিন্দা, কোন মানবগোষ্ঠি-সম্প্রদায় মহান আল্লাহর নিয়ম-বিধান ভুলে গিয়ে মনগড়া মতবাদের ভিত্তিতে চলে সীমালংঘন করেছে তখনই সে জনপদের উপর ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, খরা, মুষলধারে বৃষ্টি,মহাপ্লাবন ইত্যাদি নানাভাবে আল্লাহর গজব নাযিল হয়েছে। আল্লাহপাকের ঘোষণা হচ্ছেঃ أَلَمْ يَأْتِهِمْ نَبَأُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ قَوْمِ نُوحٍ وَعَادٍ وَثَمود وَقَوْمِ إِبْرَاهِيمَ وِأَصْحَابِ مَدْيَنَ وَالْمُؤْتَفِكَاتِ أَتَتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ فَمَا كَانَ اللّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَـكِن كَانُواْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ তারা কি তাদের অগ্রবর্তীদের অবস্থা সম্পর্কে শুনতে পায়নি? যথা নূহ, আদ, সামুদ, ইব্রাহীম ইত্যাদির গোত্র এবং মাদায়েনবাসীদের দেশসুদ্ধ উজাড় করে দেয়া হয়েছিল, তা কি তারা জানে না? তাদের সবার কাছেই আল্লাহর নবী গিয়েছিলেন এবং সঠিক ও সত্য পথের নিদর্শনাবলীও তাদের দেখিয়েছিলেন। অথচ তারা অন্যায় পন্থা অবলম্বন করেছিল। তাই ধরার বুক থেকে তাদের নিশ্চিহ্ণ করে দেয়া হলো।

আল্লাহতায়ালা তোমাদের কারোর ওপরে জুলুম করেন না, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করে থাকে। ” (তাওবা -৭০)। আল্লাহপাক রাসূলদের মাধ্যমে ভুল পথ অবলম্বন করার অনিষ্টকর ফলাফল সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন এবং সুস্পষ্টভাবে তাদেরকে সাফল্য ও ধ্বংসের পথ বাতলে দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন তারা অবস্থার সংশোধনের কোন একটি সুযোগেরও সদব্যবহার করলো না এবং ধ্বংসের পথে চলার ওপর অবিচল থাকলো তখন তাদের অনিবার্য পরিণতির সম্মুখীন হতেই হলো। অনুরূপ ঘোষণা হচ্ছেঃ وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَارْجُوا الْيَوْمَ الْآخِرَ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ وَعَادًا وَثَمُودَ وَقَد تَّبَيَّنَ لَكُم مِّن مَّسَاكِنِهِمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَكَانُوا مُسْتَبْصِرِينَ وَقَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَلَقَدْ جَاءهُم مُّوسَى بِالْبَيِّنَاتِ فَاسْتَكْبَرُوا فِي الْأَرْضِ وَمَا كَانُوا سَابِقِينَ فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنبِهِ فَمِنْهُم مَّنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُم مَّنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُم مَّنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُم مَّنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاء كَمَثَلِ الْعَنكَبُوتِ اتَّخَذَتْ بَيْتًا وَإِنَّ أَوْهَنَ الْبُيُوتِ لَبَيْتُ الْعَنكَبُوتِ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ আমি মাদায়েনবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শুয়াইবকে প্রেরণ করেছি।

তিনি বললেন, হে আমার কাওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। এবং শেষদিনের আশা রাখ। আর পৃথিবীতে অরাজকতা সৃষ্টি করো না। কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলল, অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হলো এবং স্বগৃহেই উপড় হয়ে পড়ে রইলো। আমি আদ ও সামুদ জাতিকে নির্মূল করেছি।

তাদের বাড়ীঘর থেকেই তাদের অবস্থা তোমাদের জানা হয়ে গেছে। শয়তান তাদের কর্মকে তাদের দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করে, অতঃপর তাদেরকে সরলপথ হতে বাধা দেয় এবং তারা ছিল সজাগ। আমি কারূন,ফিরাউন ও হামানকে ধ্বংস করেছি। মুসা (আঃ) ও তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আসেন। অতঃপর তারা জমীনে দাম্ভিকতা প্রদর্শন করে।

কিন্তু তারা বিজয়ী হতে পারেনি। আমি প্রত্যেককেই তাদের অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। পরিণতিতে তাদের কারো প্রতি প্রেরণ করেছি পাথরসহ প্রচন্ড বাতাস, কাউকে ধরাশায়ী করেছে বজ্রকঠিন আওয়াজ, আর কাউকে দাবিয়ে দিয়েছি ভূগর্ভে। কাউকে করেছি পানিতে নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুম করেন নী।

কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করেছে। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে তারা মাকড়সার মতো। সে বাসা তৈরী করে। আর অবশ্যই মাকড়সার বাসা সব ঘরের মাঝে দুর্বলতম যদি তারা জানতো। ” (আনকাবুত-৩৬-৪১)।

অতএব দেখা যাচ্ছে, যখনই কোন জনপদের অধিবাসী মূল ধর্মকে বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া মতবাদের ওপর চলে তখন তাদের উপর আল্লাহর গজব অবধারিত হয়ে যায়। আর গজব আসলে বাধ্য-অবাধ্য যাদের কারণেই হোক কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ,মহামারি-ভূমিকম্প,ঝড় জলোচ্ছাস,মহাপ্লাবন সংঘটিত হলে তা পৃথিবীবাসী সকলের জন্যই বিপজ্জনক। কাজেই ধর্মনিরপেক্ষমতবাদ প্রগতি নয় মানুষের জন্যে মহা দুর্গতি। তাই পৃথিবীর বিপর্যয় ঠেকাতে ইবলিসী অপতৎপরতারূপী বিশ্ববিধ্বংসী ধর্মনিরপেক্ষমতবাদ রুখতে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। এবং মহান আল্লাহর দেয়া বিধান মতে চলতে হবে।

নইলে সুনামী ও ভূমিকম্পের মতোই একেক করে সকল জনপদ ধ্বংস হয়ে যাবে যা কোন বৈঠক,সম্মেলন,চুক্তি করে মহা বিশেষজ্ঞ দিয়েও রোধ করা সম্ভব হবে না। فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَن تَأْتِيَهُم بَغْتَةً فَقَدْ جَاء أَشْرَاطُهَا فَأَنَّى لَهُمْ إِذَا جَاءتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ আল্লাহর বাণী, “তাহলে তারা কি সেই চরম মূহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে যা তাদের ওপরে আকস্মাৎ আবির্ভুত হবে? তাই যদি হয়, তাহলে তার লক্ষণ তো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তা দেখেও চেতন না হলে যখন তাদের ওপরে সেই মহা বিপদ আসবে তখন আর কি করার থাকবে?”(মুহাম্মদ-১৮)। সূরা আন‘আমের ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে, أَلَمْ يَرَوْاْ كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّن قَرْنٍ مَّكَّنَّاهُمْ فِي الأَرْضِ مَا لَمْ نُمَكِّن لَّكُمْ وَأَرْسَلْنَا السَّمَاء عَلَيْهِم مِّدْرَارًا وَجَعَلْنَا الأَنْهَارَ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُم بِذُنُوبِهِمْ وَأَنْشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قَرْنًا آخَرِينَ “তারা কি ভেবে দেখেনি যে, আমি তাদের পূর্বে বহু দল ও সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছি, যাদেরকে দুনিয়ায় এমন শক্তি, সামর্থ্য ও প্রতিপত্তি দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকে দেইনি, আর আমি তাদের প্রতি আকাশ হতে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছি এবং তাদের নিন্মভূমি হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করেছি, কিন্তু আমার নিয়ামতের না শোকরীর দরুন গুনাহের কারণে আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি, এবং তাদের পর অন্য নবতর জাতি ও সম্প্রদায়সমূহ সৃষ্টি করেছি। ” বিগত জাতিসমূহের ধ্বংসের ইতিহাস থেকে যদি আমরা শিক্ষা না নেই, তাহলে আমাদের জীবনেও বিপদের সম্ভাবনা থেকেই যায়।

আল্লাহর সতর্কবাণী, أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَن يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا بَيَاتاً وَهُمْ نَآئِمُونَ أَوَ أَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَن يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا ضُحًى وَهُمْ يَلْعَبُونَ أَفَأَمِنُواْ مَكْرَ اللّهِ فَلاَ يَأْمَنُ مَكْرَ اللّهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ “রাত্রিকালে যখন তারা ঘুমন্ত থাকে তখন আমার শাস্তি এসে তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে এটা হতে কি জনপদের অধিবাসীগণ নির্ভয় হয়ে পড়েছে? অথবা জনপদের লোকেরা কি এই ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাদের উপর তখন আপতিত হবে যখন তারা আমোদ-প্রমোদে রত থাকবে? তারা কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে?” ( আ‘রাফ ৯৭-৯৯)। সীমালংঘনকারী জনপদে আল্লাহর গজব নাযিলের ঘটনা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের সতর্ক করার জন্যেই বর্ণনা করেছেন। আর ধর্মনিরপেক্ষমতবাদ মহাপরাক্রমশালী বিশ্ব স্রষ্টা আল্লাহ পাকের কালামের প্রতি চরম বেয়াদবী প্রদর্শন করে যা সকল মানুষের জন্যই মহা বিপজ্জনক। কাজেই স্রষ্টার বিধান ছাড়া কারো পক্ষেই বিশ্বের মানুষের জীবন ও জগত সুখ-শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.