মহাত্মা গান্ধী স্বাধীন ভারতের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়। কিন্তু তিনি সাংবিধানিক কিছু ছিলেন না। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন না। তাকে হত্যার পর ভারতে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার কোনো সংকট দেখা দেয়নি।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি, সয়ৈদ নজরুল ইসলাম ছিলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। সেই সূত্র অনুসারে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। জেনারেল ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। ১৯৭৫ সালের মধ্য আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতাই হত্যা করা হয়েছিল। এরপর লাগাতার হত্যাকাণ্ড চলতে থাকে, একেবারে কনর্লে তাহের পর্যন্ত হত্যার ধারা বেগবান গতিতে চলতে থাকে।
মুক্তিযোদ্ধা নিধন চলতে থাকে নিবর্চিারে আর চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের শিকড় উপড়ানোর কাজ।
বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্েরর ফাউন্ডার এই স্বীকৃতি সংবিধানে দেয়া হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, তার ঘোষণাকে ভিত্তি করে প্রথমে হান্নান তারপর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন, এই স্বীকৃতিও সংবিধানে দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সাংবিধানিক প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, এটাও সাংবিধানিক স্বীকৃতির উজ্জ্বলতম ইতিহাস। তাই বঙ্গবন্ধু হত্যা আর সংবিধান হত্যা প্রায় একই কথা।
২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশের সবর্ােচ্চ আদালত ঐতিহাসিক রায় দিয়ে বলেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন তারা প্রত্েযকে ১৯৭২ সালের জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা প্রণীত সংবিধান লংঘন করে অনিয়মতাš¿িকভাবে এসেছিলেন। সে সময়ের প্রতিটি আইন অবধৈ।
১৫ আগস্টের পর অনায়াসে ঘটতে থাকে সংবিধান লংঘন। কীভাবে জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর প্রধান হলেন? কীভাবে রাষ্ট্রপতি হলেন? কীভাবে তিনি গণভোটের প্রহসন করলেন? কীভাবে তিনি একই সঙ্গে তিনটি পদ দখলে রেখে- রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক- রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছিলেন? ১৯৭৮ সালে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার ঈদগাহ ময়দানে জেনারেল ওসমানীর সমর্থনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেছিলেন, সব ক্ষমতা দুই পকেটে নিয়ে জিয়াউর রহমান নির্বাচনে নেমেছেন, ভাঙ্গা থানার ওসি সাহেব যদি নির্বাচনে নামেন তাহলে তো তার সঙ্গে কেউ প্রতিযোগিতায় পারবে না।
বঙ্গবন্ধু সংবিধান পরিবর্তন করেছিলেন, সরকার পরিচালনার সিস্টেম পরিবর্তন করেছিলেন কিন্তু সংবিধান লংঘন করেননি।
তিনি এ-ও বলেছিলেন, দরকার হলে সিস্টেম আবার পরিবর্তন করে সংসদীয় ধারায় ফিরে আসা হবে। সংসদে দাঁড়িয়ে জাতির সামনে জবাবদিহি করে বলেছিলেন, কম দুঃখে সিস্টেম পরিবর্তন করিনি।
এই জবাবদিহিতা ছিল একজন সিভিল সরকারপ্রধানের বিৈশষ্ট্য। জেনারেল ওসমানী এবং নূরে আলম সিদ্দিকী যখন সংসদে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে তুলোধুনো করে কঠোর সমালোচনা করছিলেন, তখন তিনি হাসছিলেন, ক্রুদ্ধ হননি, ক্ষেপে যাননি। তিনি ক্ষেপে গিয়েছিলেন সিরাজ শিকদারের ওপর।
তিনি কাউকে জোর করে বাকশালে যোগদান করতে বাধ্য করেননি। বঙ্গবিবেক আবুল ফজল, আবু জাফর শামসুদ্দীনসহ তার অগণিত অনুরাগী বাকশালে যোগদান করেননি। ৪টি পত্রিকা রেখে বাকি সব পত্রিকা বন্ধের কুপরামর্শ দিয়েছিলেন এনায়েতুল্লাহ্ খান, বাকশালে যোগদান করেছিলেন আতাউর রহমান খান। এই দুজনই বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর ১৪ পুরুষ শ্রাদ্ধ করে সমালোচনা করেছিলেন। আর আবুল ফজল এবং আবু জাফর শামসুদ্দীন বঙ্গবন্ধুর অপমানের বিরুদ্ধে, ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে আমৃত্যু লিখে গেছেন।
এটাই বোধ করি ইতিহাসের নিয়ম।
দীর্ঘ একুশ বছর আমরা সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলা করেছি বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের অবকাঠামো, তার ¯úিরিট, তার মর্মবাণী সবই ধসে পড়েছিল ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর। সেই সংবিধান আজও মূল অবস্থানে ফিরে আসতে পারেনি। ভেবে মর্মাহত হই, সেদিন বিরোধী দলের এক মহিলা সংসদ সদস্য সংসদে বঙ্গবন্ধুর ৭ মাচর্রে মহাভাষণের প্যারোডি করে, ব্যঙ্গ করে বক্তৃতা দিয়েছেন।
জানি না, এরা ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা কোথায় নিক্ষেপ করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।