আনন্দ করার, উৎসব করার অনেক উপলক্ষ রয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রথম উৎসব করার উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়ে। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রিকেটাররা উৎসবের রঙে রাঙিয়েছিলেন পুরো দেশকে। ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে পুরো দেশকে পরিণত করেছিল মিছিলের নগরীতে। সেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে গতকাল রচিত হয়েছে এক কালো অধ্যায়।
যার ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে গেছে এদেশের ক্রিকেট। যার লজ্জায় লজ্জিত হয়েছে ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালি জাতি।
অবশ্য এবারই প্রথম বাংলাদেশের ক্রিকেট কালিমা লিপ্ত হয়নি। ২০০৮ সালে বিতর্কিত ও নিন্দিত আইসিএলে ঢাকা ওয়ারিয়র্স নামে বাংলাদেশের একটি দল অংশ নিয়েছিল। ওই দলে খেলেছিলেন বর্তমানে নির্বাচক ও এদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার সুমন, অলক কাপালি, ফরহাদ রেজা, শাহরিয়ার নাফিস, মোশাররফ হোসেন রুবেলসহ একাধিক ক্রিকেটার।
আইসিএলে অংশ নিতে ১৫ জন ক্রিকেটার একযোগে অবসর নিয়েছিলেন তখন। ক্রিকেটারদের অবসরের ঘোষণায় জাতীয় দল গঠন করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছিল বিসিবির পক্ষে। দেশকে ছোট করে আইসিএলে অংশ নেওয়ায় ঢাকা ওয়ারিয়র্সের ক্রিকেটারদের ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল বিসিবি। পরবর্তীতে সেটা কমিয়ে ৬ মাস করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বিসিবি। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় ফরহাদ, মোশাররফ, বাশার, কাপালি, নাফিসরা ফিরেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।
এদের কয়েকজন আবার খেলেছেন জাতীয় দলে। সেই ঘটনার পাঁচ বছর পর আবারও কালো অধ্যায় রচিত হলো গতকাল।
৫ মাস তদন্ত করে গতকাল আইসিসি ও বিসিবি যৌথভাবে বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকায় ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ফ্র্যাঞ্চাইজিসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করেছে। যাদের মধ্যে আশরাফুল ছাড়া রয়েছেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। রয়েছেন কয়েকজন ক্রিকেট সংগঠক ও সাবেক ক্রিকেটার।
গতকাল অভিযুক্তদের কথা বলা হলেও জানানো হয়নি নাম। তারপরও ক্রিকেটাঙ্গনে আশরাফুল ছাড়া ওঠে এসেছে অনেক ক্রিকেটারের নাম। মোশাররফ হোসেন রুবেল, মাহবুবুল আলম রবিন, দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি সেলিম চৌধুরী ও শিহাব চৌধুরী এবং সাবেক ক্রিকেটার মো. রফিক, সানোয়ার হোসেন, ড্যারেন স্টিভেন্স, লোকুরাচ্চি, ইয়ান পন্ট, মো. মিথুন, এনামুল হক বিজয়, অঞ্জন গাঙ্গুলী, কাস্তুভ লাহিড়ির নাম শোনা যাচ্ছে। অভিযুক্তদের গতকাল সকালেই দেওয়া হয়েছে চার্জশিট।
এদেশের ক্রিকেটের কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে নাজমুল হাসান পাপনের রাজত্বকালেই।
লজ্জার ভাগটা তারই বেশি। তাই অভিযুক্তদের বিপক্ষে কোনো ছাড় দিতে রাজি নন বিসিবি সভাপতি, 'অভিযুক্ত যাদের নাম এসেছে, তারা সবাই এদেশের ক্রিকেটের এক একজন তারকা। তাদের সবাই বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তারা বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। এই বিশ্বাস ভঙ্গে আমি কষ্ট পেয়েছি সবার মতো।
একটা বিষয় নিশ্চিত করে বলছি, অভিযুক্তদের কখনোই ছাড় দেওয়া হবে না। ' এবারই প্রথম অভিযোগ উঠেনি বিপিএল নিয়ে, প্রথম আসরে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার শরীফুল হক প্লাবন ম্যাচ পাতাতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের তৎকালীন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। তদন্ত করে বিসিবি প্লাবনকে আজীবন নিষিদ্ধ করেছে সব ধরনের ক্রিকেটে। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকায় ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হলেও শাস্তির মেয়াদ ঘোষণা করা হয়নি গতকাল। ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শাস্তির মেয়াদ ঘোষণা করা হবে।
সেই শাস্তিতেই হয়তো কালো অধ্যায়ের কিছুটা কালিমা দূর হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।