সাভারের গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ‘পরিকল্পিত নাশকতা’। সন্দেহের তীর জামায়াত শিবিরের দিকেই। নাশকতার অভিযোগে জাকির হোসেন ও সুমি বেগম (২৪) নামে দুই গার্মেন্টস কর্মীকে আটক করা হয়েছে। ডেবনিয়ার গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন সুমি বেগম। তাজরিন ফ্যাশন গার্মেন্টসের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে সুমি বেগম যে ডেবনিয়ার গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে তা ধরা পড়েছে।
জামায়াত শিবির তাদের নিয়োগ করেছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আরও ঘটানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে।
সাভারের আশুলিয়ার ডেবনিয়ার গার্মেন্টসে মাত্র ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বলে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে কারখানারই সুমি বেগম নামের এক গার্মেন্টস শ্রমিক। পুলিশ সুমি বেগম ও জাকির হোসেন নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
অপর গার্মেন্টসের কর্মী জাকির হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সুমি বেগম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছেন, কারখানার কর্মকর্তা জাকির হোসেনের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে নিচতলায় ফিনিশিং সেকশনের একাংশে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। গত ২৫ নবেম্বর রবিবার দুপুর আড়াইটায় আশুলিয়ার গোরাটে সরকার মার্কেট রোডে ডেবনিয়ার নামের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়। গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ দ্রুত টের পেয়ে নিজেদের কর্মীদের দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও থেকে সুমি বেগমকে শনাক্ত করে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন কারখানার মহাব্যবস্থাপক নিরোধ বড়ুয়া।
মামলার জের ধরে পুলিশ সুমি বেগম ও জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করে। এরপর সুমি বেগম আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াসিম শেখ এ জবানবন্দী রেকর্ড করেন।
অপর আসামি জাকির হোসেনকে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই ফরিদ আহমেদ। রিমান্ড শুনানিতে জাকিরের আইনজীবী ঘটনার সঙ্গে জাকিরের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলে ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াসিম শেখ বলেন, ‘সুমি বেগম তো স্বীকারোক্তিতে আপনার নাম বলেছে।
আপনি তাকে আগুন দেয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ’
শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট জাকিরের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত রবিবার আশুলিয়া থানাধীন গোরাট, সরকার মার্টেক রোডে অবস্থিত ডেবনিয়ার গার্মেন্টসের ফিনিশিং সেকশনের ফিনিসড মালে আগুন দেয় সুমি বেগম। বিষয়টি গার্মেন্টসের গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ঘটনার পর পরই গার্মেন্টসের ফায়ার ফাইটাররা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে তার আগেই কয়েক হাজার প্যান্ট পিস আগুনে পুড়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ২০ লাখ টাকা। মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামিদের সঙ্গে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসকারী চক্রের সঙ্গে সরাসরি যোগসাজশ আছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার থানার এসআই ফরিদ আহমেদ জানিয়েছেন, ‘সুমি বেগম নিজেই আদালতে বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। ’ আদালতের নির্দেশে সুমি ও জাকির হোসেনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ও জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘নাশকতা ছাড়া এত বড় ঘটনা ঘটতে পারে না। নতুবা এতগুলো প্রাণহানি ঘটতে পারে না। এটি বড় ধরনের একটি ষড়যন্ত্র। নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে।
’
পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার তাজরিন ফ্যাশন লিমিটেডের অগ্নিকা-টি কোন দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিতভাবেই এই তৈরি-পোশাক কারখানাটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাভারের আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনস গার্মেন্টসে অগ্নিকা-ের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে রবিবার গভীর রাতে আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মামলায় অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ১১৪ জনের মৃত্যু ছাড়াও অসংখ্য শ্রমিকের সাধারণ ও গুরুতর জখম করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাংলাদেশ দ-বিধির ৩২৩, ৩২৫, ৪৩৬, ৪০৪-এর-খ ও ৩৪ ধারায় মামলাটির বাদী হয়েছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম। আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তফা কামালকে মামলার তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়েছে।
পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যারা আগুন লাগিয়েছে তারা যতই শক্তিশালী হোন না কেন অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এ পর্যন্ত এ মামলায় সন্দেহভাজনদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার তাজরিন ফ্যাশনস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিইআইজি মোঃ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে উচ্চ পর্যায়ের সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সাত সদস্যের তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক মোঃ আব্দুল রউফ, সিআইডি ঢাকার এসএস মোঃ আশরাফুল আলম, র্যাব-১ উত্তরার মেজর আহসানুল কবির, এসবি ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ গিয়াস উদ্দিন, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং সাভার সার্কেল, ঢাকা জেলার সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মনোয়ার হোসেন পিপিএম। তথ্যসূত্র: জনকণ্ঠ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।